কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

প্রদোষ ভট্টাচার্য

 

বড় পর্দায় হিন্দী ছবি - পর্ব ১০ – ভিন্ন যৌনতার ছবি

 


গত দুই পর্বে এই বিষয়ের স্পষ্ট উল্লেখ ছিল ২০১৬-র কাপুর অ্যান্ড সনস-এ আর ইঙ্গিত ছিল ২০১৯-এর সোনু কে টিটু কি সুইটি-তে।

২০১৬-তেই মুক্তি পায় হনসল মেহতা পরিচালিত এবং সত্য ঘটনার ওপর আধারিতআলিগড়। সংবিধানের ৩৭৭ ধারা সমকামিতাকে দণ্ডনীয় অপরাধের আখ্যা দিয়েছিল। ২রা জুলাই ২০০৯ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রথমবার এই ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে।

ডাঃ শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাস (অনবদ্য রূপায়ণে মনোজ বাজপেয়ী) ছিলেন মহারাষ্ট্র থেকে আলিগড়ে আগত মারাঠী ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। প্রথম প্রথম তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে, নিজের বয়ান অনুযায়ীই, যথেষ্ট সমাদর-সম্মান পান। এমনকি তাঁকে ভাষাবিজ্ঞান (Linguistics) অনুষদের ‘চেয়ারম্যান’ও করা হয়। কিন্তু ধিকি-ধিকি জ্বলছিল এই ‘বহিরাগতে’-র বিরুদ্ধে তাঁর গুণধর সহকর্মীদের অসূয়াজনিত বিদ্বেষের আগুন। আলিগড় ছবিতে আমরা অধ্যাপক সিরাসকে বলতে শুনব যে ২০০৯-এ জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে এক সহকর্মী তাঁকে শাসান যে তাঁর চেয়ারম্যানশিপ আর বেশীদিন থাকবে না। আর ৮ই ফেব্রুয়ারী রাতেই অতর্কিতে অধ্যাপক সিরাসের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে দুই দুর্বৃত্ত, একজনের হাতে লাঠি, অপরজনের হাতে ক্যামেরা। লাঠিধারী নির্মমভাবে অধ্যাপক সিরাস এবং তাঁর পুরুষ সঙ্গী ইরফানকে (প্রশান্ত কুমার) প্রহার করতে থাকে, তাদের জামাকপড় খুলে নেয়, আর অপরজন পুরো ব্যাপারটি ভিডিও করতে থাকে। সিরাস ও ইরফান সম্পূর্ণ সম্মতিসূচক শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন, এবং ওই সময়ে সমকামিতা অপরাধ বলে গণ্য ছিল না।

এর পরেই অকুস্থলে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করেন অধ্যাপকের চার সহকর্মী। পুরো ঘটনাই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পরের দিন একাধিক সংবাদপত্রে সিরাসের সমকামিতার খবর ফলাও করে ছাপা হয়, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাসপেন্ড করে, তাঁর ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়, এবং সাত দিনের মধ্যে তাঁকে বাসস্থান ত্যাগ করতে বলা হয়। আপাত-সহানুভুতিশীল সহকর্মী অধ্যাপক শ্রীধরণ (কে আর পরমেশ্বর) সিরাসকে দিয়ে নিজের ‘অপরাধ’ স্বীকার করে তিনি যে ক্ষমাপ্রার্থী এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি চিঠি লিখিয়ে নেন। এর পরেও সিরাস বরখাস্ত হন।

দিল্লী-নিবাসী সাংবাদিক দীপু সিব্যাস্টিয়ান (রাজকুমার রাও) এসব জানতে পেরে আলিগড়ে আসে এবং সিরাসের ব্যাপারে তার সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করে। সিরাসের সমর্থনে এগিয়ে আসেন সমকামী অধিকার কর্মী অঞ্জলি গোপালন (নূতন সুরাইয়া), এবং আদালতে সিরাসের হয়ে দাঁড়ান যে উকিল ৩৭৭ ধারা রদ হওয়ার ব্যাপারে সওয়াল করেছিলেন, সেই আনন্দ গ্রোভার (আশিস বিদ্যার্থী)। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের মহিলা উকিল সিরাসের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়কেই জনমানসে ‘ভিকটিম’-এ পরিণত করেছে বলেন, গ্রোভার প্রত্যুত্তরে বলেন যে সিরাসের বিনা অনুমতিতে তাঁর বাসস্থানে প্রবেশ করে তাঁকে নির্যাতন করা সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারকে লঙ্ঘন করার সামিল।

আদ্যোপান্ত ভদ্র, নিরীহ সিরাস আদালতে বসে নিজের কবিতার বইয়ের ইংরেজী অনুবাদকর্মে ব্যাপ্ত থাকেন। গ্রোভারের সহকারী উকিলকে তিনি এ প্রশ্নও করেন যে গ্রোভার সিরাসের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন, তবে “is he a gay?” সহকারী উকিল সহাস্যে উত্তর দেন যে গ্রোভার সমকামী নন, এবং ‘গে’ শব্দের আগে ‘এ’ বসে না!

আদালতের রায় সিরাসের পক্ষেই যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁকে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিশ্রান্ত সিরাস দীপুকে জানান যে তাঁর অবসর গ্রহণের আর কয়েক মাস বাকি। তারপর তিনি আমেরিকায় চলে যাবেন, যেখানে তাঁর মতো মানুষেরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন। সেই রাত্রেই সিরাসের মনে হয় তাঁর ঘরে কেউ যেন ঢোকার চেষ্টা করছে। পরদিন পুলিশ তাঁর ঘরে তাঁর মৃতদেহ আবিষ্কার করে। তাঁর রক্তে বিষ পাওয়া গেলেও শেষ অবধি কেউ শাস্তি পায়নি! পরের দিন আদালতের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছোয়! বুঝো জন যে জানো সন্ধান! ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ আদালত আবার সমকামিতাকে অপরাধ-শ্রেণীভুক্ত করে! নির্বিরোধ, নিরীহ, কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০২-এ মহারাষ্ট্র সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক পুরস্কৃত এই মানুষটির মর্মান্তিক পরিণতির মতোই তাঁর জীবনের অন্তিম পর্ব নিয়ে করা আলিগড়-ও (বাণিজ্যিকভাবে) ব্যর্থ, কিন্তু শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসাধারণ! প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অবশেষে ৩৭৭ ধারার অবলুপ্তি ঘটে।

দীর্ঘ চারবছর কেটে গেলে পরপর তিন বছরে ভিন্ন যৌনতা নিয়ে তিনটি আলাদা আলাদা স্বাদের ছবি হয়। তাদের নির্মাতারা বোধহয় সজ্ঞানেই স্থির করেছিলেন যে বাস্তব জীবনে ব্যতিক্রমী মানুষজন যে রকম বিয়োগান্ত পরিণতির সম্মুখীন হন, ছবিতে তা আর কিছুতেই হবে না। ছবিগুলিও, আলিগড়-এর অসদৃশে, বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখে।

২০২০-র চতুর্থ সফলতম ছবি শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান-এ দ্ব্যর্থহীনভাবে দেখানো হয়েছে যে দুই  প্রধান চরিত্র কার্তিক লোহার (আয়ুষ্মান খুরানা, বাধাই হো) আর অমন ত্রিপাঠী (জীতেন্দ্র কুমার) হল দিল্লীনিবাসী এক প্রেমিক যুগল, যাদের পদবীতে এও প্রকাশ পায় যে অমন উঁচু জাতের আর কার্ত্তিক নীচু বর্ণের। অমনের বাবা শঙ্কর (রূপায়নে একমেবমাদ্বিতীয়ম গজরাজ রাও, বাধাই হো) রক্ষণশীল কৃষিবিজ্ঞানী যিনি কালো ফুলকপি উৎপাদন করে এলাহাবাদে চাষীদের মধ্যে প্রায় দাঙ্গার পরিস্থিতি উদ্ভাবন করেছেন। মা সুনয়না (নীনা গুপ্তা, সেই বাধাই হো) ছেলের জন্য ‘কুসুম’ নাম্নী এক কন্যা নির্বাচন করেছেন (পাঙ্খুরি অবস্থী)।

অমনের খুড়তুতো বোন গগল/রজনীর (মানবী গাগ্রু) বিয়ের জন্য সবাই ‘বিবাহ এক্সপ্রেসে’ চেপে বসে, যেখানে শঙ্কর দৈবদুর্বিপাকে অমন আর কার্তিককে চুম্বনরত দেখে ফেলে প্রথমে বমি করে ফেলেন ও পরে সজ্ঞা হারান। জ্ঞান ফেরার পর স্টেশনে জলের হোসপাইপ দিয়ে তিনি অমনকে আপাদমস্তক ধুয়ে তাকে ‘পরিষ্কার’ করার প্রয়াসী হন। কিন্তু গগলের বিয়ের আসরে আবার দুজনে চুম্বন করায় গগলের বিয়ে ভেঙে যায়। শঙ্কর নিজের ভাই চমনকে (মনু ঋষি) দিয়ে কার্তিককে ট্রেনে তুলে দিতে পাঠান। স্টেশনে কার্তিক দেখে গগলও সেখানে। সাতাশ বছর বয়সে দোজবরে পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ভণ্ডুল হবার দুঃখে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। কার্তিক তাকে বিরত করে এই বলে যে বিয়ে কখনোই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না। প্রতিদানস্বরূপ গগল কার্তিককে উদ্বুদ্ধ করে ফিরে গিয়ে অমনকে পাবার চেষ্টা করতে, এবং কার্তিককে জানায় যে ছোটবেলা থেকেই গগল জানত যে অমন সমকামী।

ফিরে এসে অমন লাউডস্পীকারে ঘোষণা করে যে তার আর অমনের কোন দোষ নেই, বরং শঙ্কর এক মানসিক রোগে আক্রান্ত যার কোন চিকিৎসা নেইঃ সমকাম-বিদ্বেষ বা হোমোফোবিয়া। ক্ষিপ্ত শঙ্কর কার্তিককে লাঠিপেটা করে অজ্ঞান করে ফেলেন। প্রেমিককে বাঁচাতে অমন সুমনকে বিয়ে করতে রাজী হয়। উৎফুল্ল সুনয়না যাবতীয় স্ত্রী-ধনের গয়না কুসুমকে দিয়ে দেন।

অনেক আগেই ধূর্ত কুসুম অমনকে জানিয়েছে যে সে আসলে রাকেশ নামে এক গাড়িচোরকে ভালবাসে। রাকেশের নামে খুনের অভিযোগও আছে, আর সে নীচু জাতের বলে তার সঙ্গে কুসুমের বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দেবেন না। অতএব অমন যেন কুসুমকে বিয়ে করার ভাণ করে। বিয়ের পর দিল্লীতে যে যার পছন্দের মানুষের সঙ্গে সহবাস করবে। পালিয়ে রাকেশকে বিয়ে করার কথা অমন বললে স্বভাব-তঞ্চক কুসুম প্রতিবাদ করে, “সে কী! তাহলে স্ত্রী-ধন পাব কী করে?”

সুনয়নার কাছ থেকে গয়না পেয়েই কুসুম তা নিয়ে পালায়, আর পুরো ব্যাপার কবুল করে একটি চিঠি লিখে রেখে যায়। এই চিঠি পড়ে কার্তিক আপাদমস্তক বিয়ের শাড়ীতে ঢেকে বিয়ের পিঁড়িতে হাজির হয়। শঙ্কর সন্দিগ্ধ হয়ে তাকে ঘোমটা খুলতে বলায় কার্তিক স্বরূপ উন্মোচন করে পণ্ডিতকে বিবাহের মন্ত্র পড়তে বলে। পণ্ডিত অস্বীকার করলে অমন তাকে প্রশ্ন করে যে শাস্ত্রে আছে বিবাহ দুই আত্মার এক হওয়া; আত্মার কোন লিঙ্গ হয় কি? এরপর দুই বন্ধু অগ্নি-প্রদক্ষিণ করে ধরে শোলে ছবির সেই গান – ‘ইয়ে দোস্তি হম নেহি তোড়েঙ্গে’। (ছবির শেষে voiceover-এ বলা হয়েছে যে এবার মানুষে লায়লা-জুলিয়েট, রোমিও-মজনু, সিমরন-অঞ্জলি, বা জয়-বীরুর প্রেম কাহিনী শুনবে) । সবাইকে স্মরণ করাব শোলে সম্বন্ধে টাইম পত্রিকার সমালোচকের উক্তিঃ ‘Maybe the burliest male love story ever made.’।

হঠাৎ আসরে হাজির হয় পুলিশ। সুমনকে বামাল সমেত ধরে তার মারফৎ তারা জেনেছে যে অমন-কার্তিক সমকামী, যা সেই মুহূর্তে আইনত অপরাধ। অতএব তারা প্রেমিক যুগলকে গ্রেপ্তার করতে চায়। এবার আসরে নামেন অমনের আইন-পড়া কাকা, গুগলের বাবা চমন। তিনি পুলিশকে মনে করান যে পরদিনই সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারা – যা অনুসারে সমকামিতা অপরাধ – নিয়ে নতুন নিদান শোনাবে। পুলিশ অপেক্ষা করতে রাজী হয়। পরদিন কোর্টের রায়ে সমকামিতা অপরাধদোষমুক্ত হয়।

শঙ্কর নিজের দু-চাকার যানে শঙ্কর-অমনকে স্টেশনে ছেড়ে দেন। অধোবদনে তিনি ছেলের কাছে স্বীকার করেন যে তিনি হয়তো কোনদিনই ছেলের স্বভাব বুঝতে পারবেননা, কিন্তু তাঁর বোধের অভাবের জন্য ছেলেকে নিজের মতো করে বাঁচা থেকে তিনি আটকাতে পারেননা। সুনয়না এই মুক্তমনের পরিচয় দিতে পারেননি, বরং খানিকটা উষ্মার সঙ্গে বলেছেন যে অমন-কার্তিকের প্রত্যাশা – যে একদিনে সুনয়না নিজের এতদিনের ধ্যানধারণা পাল্টে ফেলবেন – অবাস্তব (এবং অনুচিত?)

হাস্যরসে জারিত এক অসাধারণ ছবি যেখানে হাসির আড়ালে মানুষের যৌন অভিযোজন এবং তা নিয়ে সমাজের অবাঞ্ছিত গোঁড়ামি, যা বোঝা যায় না শুধু সেই কারণেই তার বিরোধিতা করা, এবং মানসিক পরিবর্তনে যে মেয়েদের চেয়ে পুরুষরাই এগিয়ে – শেষ অবধি ছেলের সমকামিতা মেনে নেন শঙ্কর, সুনয়না নয় – এ সব দেখানো হয়েছে। এবং বারবার এসেছে অতীতের হিন্দী ছবির প্রতি উল্লেখ। শোলে-র কথা বলাই হয়েছে। এর চেয়েও বেশী এসেছে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। বারবার কার্তিক অমনকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ট্রেনে তুলেছে; শেষে শঙ্কর সস্নেহে অমনকে বলছেন, “যা, সিমরন!” একটি ছবি যা প্রেমকে আদ্যোপান্ত অপমান করে এসেছে (এ নিয়ে আলোচনা ভবিষ্যৎ পর্বে), তার কাহিনি ব্যবহার করে বিকল্প প্রেমের এক গাথা রচনা অভিনব এবং প্রশংসনীয়।

একটি দৃশ্যেই শুধু সুর কেটেছে। চোর কুসুমকে সাময়িকভাবে আপ্লুত সুনয়নার কুসুমের চুরি করা গয়না প্রত্যর্পণ। কুসুম স্বভাবে চোর, চোর (এবং সম্ভবত খুনী) রাকেশের সঙ্গে তার আঁতের পীরিত। কুসুমের স্থান জেলখানা, সুনয়নার গয়নায় তার কোন অধিকার বর্তায় না।

২০২১-এর পঞ্চম সফলতম ছবি চণ্ডীগড় করে আশিকী-তে মজা প্রচুর আছে বটে, তবে তুলনায় গুরুগম্ভীর ভাবনা ও সংলাপের ভাগ আগের ছবিটির চেয়ে কিছু বেশী।

উক্ত শহরে মনবিন্দর (মনু) মুনজাল (আয়ুষ্মান খুরানা) শরীরচর্চার ‘জিম’ চালায়, দুই (সম্ভবত জমজ) ভাই ‘রিজ’ (গৌতম শর্মা) আর ‘জোমো’-র (গৌরব শর্মা) সাহায্যে। জিমে তেমন খদ্দের জুটছিল না।তাদের ভাগ্য ফেরে যখন অম্বালা থেকে সুন্দরী মানবী ব্রার (বাণী কাপুর) এসে জিমে ‘জুম্বা’ (নাচ আর এয়ারোবিক্স-এর মিশেল) শেখানো শুরু করে। মনুর ৩২ বছর বয়স। তার বিপত্নীক বাবা নবীন (গিরীশ ধামিজা) এবং দুই কর্তৃত্বপরায়ণ এবং স্বভাবে দীর্ঘনাসা বোন প্রীত (তানিয়া আব্রোল) আর মীত (শাওন রূপোওয়ালী) এতদিন তাকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি। এক বোন তো ভাইকে প্রশ্ন করেই বসে, “তোর সবকিছু ঠিক আছে তো? মানে, মেয়েদেরই পছন্দ করিস তো?” এবার মনু মানবীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। হোলির দিন সে মানবীর সঙ্গে সঙ্গমের প্রস্তাব রাখে।মানবী বলে, “শোন, আমার কিছু বলার আছে,” কিন্তু তাকে চুপ করিয়ে মনু তার সঙ্গে শরীরী সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একাধিকবার তা ঘটার পর মনু বিয়ের প্রস্তাব দিলে মানবী তাকে জানায়, “আমি জন্মেছিলাম তোমারই মতো ‘মনু’ হয়ে, কিন্তু মনেপ্রাণে নিজেকে নারী মনে করতাম। যথাসময়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে আমি ‘মানবী’ হয়েছি!”

মনু প্রথমে হতভম্ব তার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার মনে হয় সে এক পুরুষের সঙ্গে সমকামী সম্পর্ক করেছে, এবং সে মানবীকে শাসায় চণ্ডীগড় ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু রিজ আর জোমো যখন মানবীকে ‘ছক্কা’ বলে, মনু তাদের বেদম প্রহার করে! তার মনে মানবীর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা জন্মে গেছে! আর এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে বহু-প্রচলিত রূপান্তরকামীদের প্রতি এই অপমানজনক শব্দটির ব্যবহার নিয়ে প্রতিবাদও রাখা হলো। (শাহরুখ খানের ছবিতে এই সচেতনতা একেবারে অনুপস্থিত; তা নিয়ে আলোচনা ভবিষ্যত পর্বে।)

এরপর দেখি মানবীর বাবা ব্রিগেডিয়ার মহিন্দর (কানোয়ালজিৎ) সন্তানকে একাধারে নিজের পুত্র ও কন্যা মনে করে স্নেহ করেন। শ্রীমতী ব্রার (সোনিয়া ভাটিয়া) এই সহমর্মিতা দেখাতে অপারগ। শোনা যায় বঙ্গসমাজে নিজের কন্যা পুত্রে রূপান্তরিত হলে পিতা, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তা মেনে নিয়েছিলেন। গোঁড়ামি, অসহিষ্ণুতা এমনিতে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ মনুষ্যপ্রবৃত্তি, কিন্তু, বিশেষ করে বিকল্প যৌনতার ক্ষেত্রে এই দুই গুণের প্রকটতা সমাজে নারীকুলের মধ্যে যে বেশী তার ইঙ্গিত শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান­-এ ছিল। বর্তমান ছবিতে মনুর বাবা প্রথমে প্রবল আপত্তি জানিয়েও ব্যাপারটি মেনে নেবেন, কিন্তু মনুর দুই বোনের পঙ্কিল আচরণ ভাই এবং বাবার ক্ষেত্রে এবার আমরা দেখব।

অনুতপ্ত মনু এবার রাস্তায় এক রূপান্তরকামী মহিলার সঙ্গে যেচে আলাপ করে তাঁর সঙ্গে নিজের বিভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করবে এবং সদুপদেশ পাবে। দুই বোন এসব দেখে এবং ভাইকে স্থানীয় বেসরকারী হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগে যেতে দেখে, দুই গুণধরী বোনের একজন মানবীর পিছু নিয়ে, যে হাসপাতালে সে নিয়মিত পরামর্শ নেয়, সেখানে আড়ি পেতে মানবী যে রূপান্তরিত তা জেনে নেয়। এরপর দুজনে জিম-এ গিয়ে সর্বসমক্ষে অশ্রাব্য ভাষায় মানবীকে হেনস্থা করে, যে পুণ্যকর্ম আরেক মহিলা নিজের ফোনে তুলে নিয়ে শহর জুড়ে ‘ভাইরাল’ করে দেন। মানবীর এক নাবালিকা ছাত্রী কিন্তু তার ‘জুম্বা’ শিক্ষিকার প্রতি নিজের আনুগত্য ব্যক্ত করে মানবীকে কাজ চালিয়ে যেতে বলে।

ইতিমধ্যে মানবীকে তার মামাতো ভাই ফোন করে জানায় যে মানবীর বাবা হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মানবী সেখানে ছুটে গেলে তার অসামান্যা মা বাবার দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি মেয়েকে দায়ী করেন! ‘মনু’ থেকে সে ‘মানবী’ হওয়ার জন্যই নাকি মহিন্দর নিজের দুঃখ ভুলতে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করে হৃদরোগ ডেকে এনেছেন! অসুস্থ মানুষটির কাছে তাঁর নিকটাত্মীয়রাই থাকবে, অতএব মানবী যেন চলে যায়! কিন্তু ডাক্তার এসে সবাইকে জানান যে মহিন্দর একমাত্র মানবীরই নাম ধরে ডাকছেন, অতএব সেইই রুগীর কাছে থাকবে।

এবার মনুও হাসপাতালে এসে মানবীর পাশে দাঁড়ায়, এবং মনুর বাবা এবং দুই বোন এসে দুজনের ওপর চোটপাট করা শুরু করলে মনু নিজের শক্তি ব্যবহার করে ওই তিনজন সমেত তাদের গাড়ী দু’হাত দিয়ে তুলে উঁচু করে নীচে আছড়ে ফেলে। সে বাবাকে বলে যে সে নিজের মতেই মানবীকে বিয়ে করবে, আর বিপত্নীক বাবাও যেন তাঁর পছন্দের মুসলমান মহিলাকে বিয়ে করেন, যা শুনে দুই বোন এবার বাবার ওপরেও বিষোদ্গার করতে থাকে।

পরের দিন শহরে শরীরচর্চার G.O.A.T. প্রতিযোগিতা, যা জেতা মনুর অনেকদিনের অসম্পূর্ণ ইচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখি দুই বোন এবং প্রণয়িনী-সহ বাবাকে। নেই শুধু মানবী! বহুবারের চ্যাম্পিয়ন সন্দীপ/স্যান্ডি (অভিষেক বাজাজ)-এর কাছে প্রায় প্রতিটি দফায় ‘দ্বিতীয়’ হয়ে মনু এসে পৌঁছোয় ভারোত্তোলনে। স্যান্ডি ১৪০ কিলোগ্রাম সফলভাবে তোলে। মনু এবার ১৫০ কিলোগ্রাম তুলতে উদ্যত হয়। তখন রিজ আর জোমো ফোনে মানবীকে ‘মেসেজ’ করে, “ভাবী (বৌদি), ওর আপনাকে খুব দরকার!” দেখে, মানবী তার আপোষ-ইচ্ছুক মাকে বাবার কাছে বসিয়ে শেষ মুহূর্তে স্টেডিয়ামে হাজির হয়। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মনু ১৫০ কিলো সফলভাবে তুলে G.O.A.T. খেতাব জেতে এবং সর্বসমক্ষে মানবীকে আলিঙ্গন করে। মধুরেণ সমাপয়েৎ!

এত ভাল ছবির শুধু একটি বড় খামতি রয়ে গেছে। নির্মাতারা মানবী-চরিত্রে কোন আসল রূপান্তরকামীকে অভিনয় করাবার সাহস দেখাতে পারেন নি। অবশ্য একই সাহসের অভাব দেখা গেছে বাঙালী পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর ক্ষেত্রে যখন তিনি তাঁর নগরকীর্তন ছবিতে একাধিক রূপান্তরকামীদের পার্শ্বচরিত্রে রেখে, মূল চরিত্রটির জন্য নির্বাচন করেন ঋদ্ধি সেনকে।চণ্ডীগড়-এর নির্মাতারা তবু দাবি করতে পারেন যে বাণিজ্যিক ছবির জগতে বাণী কাপুরের নয়-নয় করেও একটু ‘বাজার’ আছে, তিনি হয়তো কিছু দর্শক টানতে পেরেছেন, যা হয়তো একজন অখ্যাত রূপান্তরকামী পারতেন না। কিন্তু ঋদ্ধি সেন?

এখানে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে তাহলে কি সমকামী চরিত্রেও আসল সমকামীদেরই অভিনয়ের অধিকার থাকবে? উত্তরে বলব যে মূলধারার অভিনেতাদের মধ্যে যদি স্বীকৃত সমকামীরা থাকতেন – রূপান্তরকামীরা কিন্তু আছেন – তাহলে তা করাই যেত! কাপুর অ্যান্ড সনস-এ তো সমকামী বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয়ের সাহস বলিউডের কেউ দেখাতে পারেন নি!

২০১৫ (আলিগড়) আর ২০১৯-এ (শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান) বিষয় ছিল ‘এল-জি-বি-টি’-র ‘জি’ বা Gay, অর্থাৎ পুরুষ-সমকামিতা । ২০২১-এর চণ্ডীগড় করে আশিকী ছিল একজন ‘টি’, Transgender, রূপান্তরকামীকে নিয়ে। ২০২২-এর বাধাই দো-র কেন্দ্রে এই প্রথম দেখি ‘এল’, Lesbian, বা নারী-সমকামী এবং ‘জি’, Gay – অর্থাৎ দুরকমেরই সমকামিতা।

পুলিশ অফিসার শার্দূল ঠাকুর (রাজকুমার রাও) ডেরাডুনের এক মহিলা পুলিশ থানায় কর্মরত closeted queer বা গোপন সমকামী। তার কাছে সুমন ‘সুমি’ সিং (ভূমি পেডনেকর) নাম্নী এক শারীরবিদ্যা শিক্ষিকা এই অভিযোগ নিয়ে আসে যে এক যুবক সমাজ মাধ্যমে মহিলা সেজে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অপচেষ্টা করেছে। এইরকম ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কু-উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টাকে বলা হয় catfishing। শার্দূল উক্ত যুবককে থানায় তুলে এনে উচিৎ শিক্ষা দেয়। সেই যুবক শার্দূলকে জানায় যে সুমি আদতে সমকামী।শার্দূল তখন সুমির কাছে প্রস্তাব রাখে যে দুজন একে অপরকে বিয়ে করলে পারিবারিক উৎপীড়নের হাত থেকে (দুজনেই ত্রিশোর্দ্ধ হওয়ায় দুজনের ওপর পরিবার থেকে বিয়ে করার চাপ আছে) দুজনেই রক্ষা পাবে। সুমি এই প্রায়-অপরিচিত পুরুষের প্রস্তাবে সম্মত হয়।

এই ‘আদর্শ’ সমাধানের ফল অচিরেই তিক্ত হয়ে ওঠে। শার্দূল তার প্রেমিক কবীরের (দীপক অরোরা) সঙ্গে সহবাস শুরু করে, এদিকে সুমির প্রেমিকা কোমল (অপেক্ষা পোরোয়াল) আগেই পরিবারে চাপে বিয়ে করে সন্তানের জননী হয়েছে, এবং সেই শিশুটির সাময়িক সংস্পর্শে এসে সুমি সন্তান দত্তক নেবার বাসনা পোষণ করে। সংসারে খরচ এবং সাংসারিক কাজকর্মের (কে অতিথিদের চা করে দেবে, বাসন কে মাজবে) নিয়ে শার্দূল আর সুমির মধ্যে সংঘাত লাগতে থাকে।

কবীর শার্দূলের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানে – ঠিক যেভাবে শার্দূল তার প্রথম প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছিল। আর সুমি, নিজের বাবা প্রেম সিং (নীতেশ পাণ্ডে)-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে পরীক্ষাগারের কর্মী রিমঝিম জংকির (চুম দারাং) – যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আগত – সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় এবং দুজনে শার্দূল-সিমির পুলিশি ফ্ল্যাটে সহবাস শুরু করে। বাথরুম-ব্যবহার নিয়ে শার্দূল-সিমি-রিমঝিমের সংঘাত শুরু হয়, এবং শার্দূল নিদান দেয় যে সাংসারিক খরচ এবার তিন ভাগে ভাগ হবে। প্রতিবেশীদের কৌতূহল এড়াতে রিমঝিমের পরিচয় দেওয়া হয় শার্দূল-সিমির জ্ঞাতি বলে!

রিমঝিমের সঙ্গেও সুমির মন কষাকষি হয়। সর্বসমক্ষে সুমি-শার্দূলকে ‘স্বাভাবিক’ স্বামি-স্ত্রীর মতো সস্নেহ আচরণ করতে দেখে ক্ষুব্ধ রিমঝিম সুমিকে ‘bi’, অর্থাৎ bisexual বা উভকামী বলে (এলজিবিটি-র ‘বি’), এবং এও বলে যে সুমি রিমঝিমকে সমকামী সেজে প্রতারণা করেছে।অবশ্যই, এ কথা ঠিক নয়, এর উৎস রিমঝিমের সাময়িক অসূয়া।

বিয়ের বৎসরপূর্তি হলে দুই পরিবার থেকেই এবার সন্তান উৎপাদনের চাপ আসা শুরু হয়। চাপের মুখে শার্দূল তার ডাক্তার ভগ্নীপতি অনুপ পরিহারকে (শশী ভূষণ) বলে ফেলে যে সুমি বন্ধ্যা। ফলে পরিবারের মহিলারা সুমির ডাক্তারী পরীক্ষা করিয়ে প্রমাণ করে যে সে সন্তানধারণে সম্পূর্ণ সক্ষম। এবার দুজনের ফ্ল্যাটে পাঠানো হয় শার্দূলের মাকে (শীবা চাড্ডা) যাতে তিনি দুজনকে সঙ্গম করতে বাধ্য করতে পারেন! সুমি শার্দূলের ওপর শোধ নেয় শাশুড়িকে এই বলে যে তাঁর পুত্রই আসলে বীর্যহীন। এরপর সুমিই শার্দূলকে বুদ্ধি দেয় রিমঝিমের পরীক্ষাগারে তার যাবতীয় পরীক্ষা করাতে যাতে রিমঝিম দেখাতে পারে যে শার্দূলের শুক্রাণুর সংখ্যা সন্তান উৎপাদনের পক্ষে অপ্রতুল! এবার দুই পরিবারই সন্তান দত্তক নেবার ব্যাপারে সম্মতি দেয়।

ইতিমধ্যে শহরে এক ‘প্রাইড প্যারেড’ এবং এক সমলিঙ্গ বিবাহের তদারকী করতে গিয়ে শার্দূলের সঙ্গে গুরু নারায়ণ (গুলশন দেবাইয়া) নামের এক সমকামী আইনজীবীর সম্পর্ক শুরু হয়। আর ঘটনাচক্রে শার্দূলের মা সিমি আর রিমঝিমকে এক বিছানায় দেখে ফেলে হাটে হাঁড়ি ভাঙেন। প্রথমে শার্দূলের বাড়িতে সিমির উদ্দেশ্যে বর্ষিত হয় কুৎসিত মন্তব্যের ধারা, বিশেষভাবে পরিবারের নারীকুলের পক্ষ থেকে। সুমির নিজের বাড়িতে তার মা মেয়ের মৃত্যুকামনা করেন , তার ভাই দিদিকে বিকৃতকাম আখ্যা দেয়। বাবা কিছু না বলে বেরিয়ে যান। পরে কাতর সুমিকে প্রশ্ন করেন, “আমার পরিবারেই কেন?”

শার্দূল এবার রুখে দাঁড়ায় এবং নিজের সমকামিতা প্রকাশ করে। সে সবাইকে জানায় যে এ এক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যা কেউ কেউ নিয়েই জন্মায়। মহিলাকুল চরম ক্রোধ ও অবজ্ঞা ব্যক্ত করে। একমাত্র ব্যতিক্রম, শার্দূলের মা, ছেলেকে বুকে টেনে নেন।

আরেকটি ‘প্রাইড প্যারেডে’ শার্দূল মিছিলকারীদের একজনের কাছ থেকে একটি রামধনু মুখোশ চেয়ে নিয়ে নিজের পুলিশ সহকর্মীদের কাছেও নিজের যৌন অভিযোজন প্রকাশ করে।

এক বছর অতিক্রান্ত। শার্দূল আর সিমি তাদের দত্তক সন্তানকে নিয়ে পূজোর অনুষ্ঠান করছে। শার্দূলের ঊর্ধ্বতন কর্তা, ডি এস পি সাহেব সস্ত্রীক উপস্থিত হলে রিমঝিম সুমির পাশ ছেড়ে সসংকোচে উঠে যায়। তখন সুমির বাবা বলেন, “রিমঝিম, ফিরে গিয়ে বসো! সন্তানের মার উপস্থিতি আবশ্যিক!” এরপর শার্দূলও গুরুকে ডেকে পাশে বসায়। ক্ষুব্ধ ডি এস পি আসর ত্যাগ করতে উদ্যত হলে এবার তাঁর স্ত্রী তাঁকে আটকান!

নিখুঁত ছবি, কাহিনির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা লক্ষ্যণীয়। শার্দূল ‘জি’, সুমি ‘এল’, শার্দূল চাপে পড়ে সুমিকে বন্ধ্যা বলে তো সুমি শার্দূলকে বীর্যহীন আখ্যা দেয়, শার্দূলের মা ছেলের অভিযোজন মেনে নেন, তো সুমির বাবা রিমঝিমকে মায়ের সম্মান দিয়ে মেয়েকে সমর্থন করেন!

কিন্তু পূজোর অনুষ্ঠানে যখন সুমির বাবা রিমঝিমকে মা’র স্বীকৃতি দেন, শার্দূলের মা কিন্তু, ছেলে তাঁর দিকে তাকালেও, গুরুকে ছেলের পাশে গিয়ে বসতে বলেন না। অনুষ্ঠানে সুমির বাবা ও ভাই উপস্থিত, তার মা নন! আর সম্পর্কের শুরুতেই রিমঝিম সুমিকে জানিয়েছিল যে রিমঝিমের নিজের দিদি, যার কাছ থেকে রিমঝিম সহমর্মিতা আশা করেছিল, তাকে বোনঝির কাছে ঘেঁষতেই দেয় না!

নারীকুলের এই অনুদার, সঙ্কীর্ণ মনোবৃত্তি শুধু হিন্দী ছবিতে নয়, বিদেশের ছবিতেও দেখা যায়। শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে অস্কারপ্রাপ্ত ২০১৬ সালের মুনলাইট ছবিতে কেন্দ্রীয় কৃষ্ণাঙ্গ চরিত্র শাইরন শৈশবে (তখন তার ডাকনাম ‘লিটল’, রূপায়নে অ্যালেক্স হিবার্ট) সস্নেহ লালন-পালন পায় মাদক-ব্যবসায়ী জুয়ানের (রূপায়নে মহেরশালা আলি, সহ-অভিনেতা হিসেবে অস্কার বিজয়ী প্রথম মুসলমান অভিনেতা) কাছ থেকে, যেখানে শাইরনের মাদকাসক্ত মা পলা (রূপায়নে সাম্প্রতিক তিনটি জেমস বন্ড ছবিতে ‘মানিপেনি’-রূপে পরিচিত নাওমি হ্যারিস) ছেলের – যে তার সমকামিতার জন্যই সমবয়সীদের হাতে উৎপীড়িত হয় – ওপর নিজের যাবতীয় নৈরাশা উগরে দিয়ে তার প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং অপমানসূচক faggot অভিধা প্রয়োগ করেন। এরপর জুয়ানই শাইরনকে আশ্বাস দিয়ে বলবে যে সমকামী হওয়া কোন অপরাধ নয় এবং শাইরন যেন অন্যের অবজ্ঞা সহ্য না করে।

বন্ধুপ্রতীম প্রাক্তন ছাত্র অভিরূপ মাশ্চরক জানিয়েছেন যে নারীচরিত্রদের এই একই বৈশিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গসমাজকে নিয়ে তৈরি একাধিক বিদেশি ছবিতে প্রকট। উদাহরণ পারিয়া (২০১১), স্যাটারডে চার্চ (২০১৭, যদিও এখানে মা সহানুভুতিশীল, কেন্দ্রীয় চরিত্র ইউলিসিসের Aunt Rose গোঁড়া), দি ইন্সপেকশন (২০২২, এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রের মা এবং সামরিক দুনিয়ার পুরুষেরাও সমকাম-বিদ্বেষী), এনিথিং’স পসিবল (২০২২) ।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন