![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৫০ |
গ্রাফিতি
সাইকেলের চাকার দাগে যে অতীত রিদম জড়ায় তার সাথে
খালের শেওলা জলের কোনো সম্পর্ক নেই – সমুদ্রের ঢেউয়েরা আসে না এখানে — শিরীষ ফুলের
ভোরবেলায় ধোঁয়ার গ্রাফিতি আর পথের উদাস ইশারার মাঝখানে আমাদের দৃশ্যে শুধু ধানকাটার
উষ্ণতা
ক’কাঠা জমি আমাদের – সূচকের আবেশে বুজে আসে চোখের
পাতা –
কিংবা কত লিটার ঘামে গামছা ভেজে, শুধু অনারিয়াম কম পড়ে, ফিকে হয়ে আসে মেঘের
মানচিত্র, অসীম দূরত্বের বিস্তারিত অস্তিত্ব নির্জন হয়ে আছে!
ঋ-কার উচ্চারণ
খড়পোড়া ছাইয়ের উপর ছায়া পড়তেই কপাটহীন দরজায় দখিনা
বাতাস হু হু করে ওঠে, কালসিটে ভারাক্রান্ত শরীরে অব্যয় পদগুলি ঋ-কার উচ্চারণ করতে পারে
না আর, ডাহুক পাখির ডাকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্ষয়জাত বিকেলের শিরা উপশিরা, আলপথ পেরিয়ে
যায় চিবুকে লেগে থাকা ধানগন্ধ
শেষ হয়ে যাচ্ছে সময় – অথচ আমার কোন হালখাতা নেই,
গাছ থেকে ঝরে পড়ছে বাঁধনহীন ভোকাট্টা কয়েকটা পাতা
– তারপর আমার শরীরের সব মৃত্যু খুলে নাও – হাইড্রোজেন মেঘে সাঁতরাতে সাঁতরাতে
শূন্যতা প্রকাশিত হোক প্রতিটি খেয়াঘাটে
ঝাপসা একক
আকন্দ ঝোপের পাশে মিতাক্ষর হয়ে উঠেছে ধূসর নারীটি,
বাতাসে প্রসারিত ক্লান্তি ছিল কি তার উপহার?
আমি দ্রুতি বাড়িয়েছি মাধুরি ও বেদনায়
ঝোপ জংলার ভেতর থেকে ঝিঁঝিঁ গন্ধের আত্মগোপনে বাড়তে
থাকে প্রাহরিক প্যাপিরাস
যেতে যেতে যদি পাই ঝুরো মাটির প্রোটিন, নিষাদ দৃষ্টিতে
প্রান্তপুকুরের জলাদেশে ডাহুকের বিন্দু বিন্দু নিঃসঙ্গ–
নিটোল শ্যামদীর্ঘ তরঙ্গটি এস্রাজের সুরে স্থির
এ আখ্যান পর্বের সঙ্গে আমি এক ঝাপসা একক পার হয়ে
যাই সাইকেল চাকার প্রথম ধাক্কা দ্বিতীয় ধাক্কা
মীন রোদের ভিতর
ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শুনে বিস্মৃত সময়টি মেঘের আড়াল
থেকে বেরিয়ে আসে, চাতকের অনুনাদে ভাঙাচোরা আপোশ, মৃত নিমপাতার পুবদিক ঘেঁসে লক্ষ্মীপেঁচার
করুণ আহ্বান ভাসে; ভয় অথবা কোনো সন্দেহ নেই যে — আমি বিচরণ করি তার বুকে, আর সর্বাংশে
সন্ধ্যা নামাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সজল ক্রান্তিরেখা
আগড়া ওড়ানোর সাথে সাথে কারা যেন উড়িয়ে দিচ্ছে বেগুনি
ঘনত্বের ঘনক, উলুঘাসের বিভ্রান্তির ভিতর ভেঙে যাচ্ছে আবেগের অনিত্য খণ্ড; তবু তুমি
ছুঁয়ে যাও নরম মাটির ফাটল; মীন রোদের ভিতর মুখচোরা ছায়া অনাথ হয়ে যায়
হলদেটে হরফ
চতুর্দিকে আরোগ্য খোঁজার এই হলদেটে হরফে এখন আর
নিমফুল ঝরে না
ধর্ষিত রাস্তার ধারে পার্থেনিয়ামের রোম উড়ে
শিরীষ গাছ ভেঙে খড়কুটো নিয়ে আসছে নিরাকার ঝড়
যেন উরুভাঙা বুদ্ধমূর্তির মৃদুস্বরে ঠোঁট নাড়ে
সারি সারি নিঝুম বৃক্ষ
চির শূন্যতম প্রান্তরে উঁকি মারে আলোর ছায়া
তবুও শাদাই চলাচল করে জাগ্রত গ্রীষ্মে
আর অন্ধকার পর্দা ছুঁয়ে যায় চাঁদের বেদনার থৈ থৈ
বনবাদাড়
সহস্র বছরের তারাভরা আকাশে ভাসে ঝোড়পোকার ভাষা
এই বুঝি দু'হাতে আঁকড়ে ধরি দূর্বাঘাস
ফ্যাকাশে অস্তিত্ব নিয়ে এহাত ওহাত করি মাটি ও শিকড়ের
সম্পর্ক
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন