কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / অষ্টম সংখ্যা / ১৩৫

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

দেবাশিস ঘোষ

 

সমকালীন ছোটগল্প


 

সিংহবাড়ি

 

বাড়িটির প্রসিদ্ধি অনেকদিনের, অর্কবাবু তো মালিক হয়েছেন এই সবে তিনবছর। অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সেই প্রসিদ্ধিকে আজও সম্মান দিয়ে চলেছেন। লোকে এখনও সেটাকে সিংহবাড়ি বলেই চেনে। রাজবাড়িও বলে কেউ কেউ, গড়নে গঠনে সাদৃশ্য দেখতে পায় বলে। অর্কবাবু সেসব ব্যাপারে পরিবর্তন আনার বা ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা কখনও করেননি এমনকি বাড়ির কাজে কখনও হাত দিতে হলে সবার আগে অনুপ সিংহ মহাশয়ের সাথেই যোগাযোগ করেন। তাঁর সাথে আলোচনা করেন, সসম্মানে তার পরামর্শ গ্রহণ করেন। সেখানে এখন নানান রকম ট্রেনিং চলে যাতে লোকে প্রথার বাইরে গিয়ে অন্য পেশায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, আর্থিক ভাবে সচ্ছল হতে পারে। এছাড়া আছে ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ সহায়তা দেওয়ার জন্য কোচিংসেন্টার যাতে উৎসাহ হারিয়ে কেউ পড়াশোনা ছেড়ে না দেয়। অতিরিক্ত আছে একটা কাউন্সেলিং সেন্টার, নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নত জীবন’। সেটা একটা ক্লাবও বটে, লাইব্রেরিও বটে, আবার একটা আশ্রমও বটে যেখানে গিয়ে নেশাগ্রস্ত হবে তারা, বেঁচে থাকার নেশায়, জীবনকে ভালবাসার নেশায়। যা হারিয়েছে তা আগামী দিনের থেকে উশুল করে নেওয়ার পরিকল্পনা তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন।

অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগে চিনতেন না অনুপ সিংহ মশাই, কিন্তু পরিচয় যখন পেলেন তখন যেভাবে নিজেকে দুষলেন তাঁর পরিচয় জানতেন না বলে, তার মধ্যে বিশেষ সমীহ ছিল। "কী আশ্চর্য! আপনিই আমাদের রামগতি পন্ডিত মশাইয়ের ছেলে? কত গল্প এসেছে কানে, লোকে বলে এলাকার গর্ব, অথচ কিনা আলাপ হলো না এযাবৎ!” বন্দ্যোপাধ্যায়মশাই লজ্জায় জিভ কেটে বলেছিলেন, "না, না, ছি ছি এসব কী বলছেন! তেমন কিছু নয়, নেহাত চাকরি বাকরিই তো, সবাই যেভাবে সংসার প্রতিপালন করে, তেমনই। তার বেশি কিছু নয়। দেশে ভাত জোটেনি বলে বিদেশে গিয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিল। দেশে থাকলে নিশ্চয় দেখা সাক্ষাত আরো আগেই হতো"। বয়েসে অনুপ সিংহমশাই বছর আট দশেকের বড়ই হবেন অর্কবাবুর থেকে, তাছাড়া চোখ যার আভিজাত্যে প্রশিক্ষিত, বিনয় চিনতে তাঁর ভুল হবে কেমন করে! বলেছিলেন, "তা বললে হবে কেন? হাটে মাঠে যেকোনো জায়গায় ভাত বেড়ে থালা এগিয়ে দিলেই কি সবাই খেতে বসতে পারে? কে কোথায় বসে খায়, কেমন করে ভরণ পোষণ চালায়, তা কি কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নাকি?" তাই সমীহ যে তাঁর যথোপযুক্ত পাওনা তা মর্মে মর্মে মানতেন অনুপ সিংহমশাই আর সেই সমীহ'র কারণেই অনেক বেশি লাভের সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়ে এবং নিজের ছেলেদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সেই বাড়ি অর্ক বাবুকেই বিক্রি করেছিলেন। এর ওর কাছে বলেছিলেন, "এমন যে বাড়ি, যার সাথে বংশের অস্মিতা জুড়ে থাকে, হস্তান্তর করতে হলে তা স্বজাতির বা স্বগোত্রের কাউকে করাই শ্রেয়"। আভিজাত্যে অর্কবাবুর গোত্র স্থিরীকৃত হওয়ার আরো একটা কারণ ছিল, সেইখানেই অন্যদের থেকে অর্কবাবুকে আলাদা করে দেখেছিলেন সিংহবাড়ির অনুপ সিংহমশাই। বাড়ি কিনতে আর যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তারা সকলেই উদ্যোগপতি। বাড়ি নয়, আসলে সম্পত্তিটি কিনতে চেয়েছিলেন তারা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ হিসাবে। কিন্তু অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বাড়িটিই কিনতে চেয়েছিলেন। কিনতে চেয়েছিলেন নিজে বসবাস করবেন বলে, বাড়িটির প্রসিদ্ধি বা আভিজাত্যই তাঁর আগ্রহের কারণ।

বাড়ি হস্তান্তরিত, মালিকানা এখন তাঁর নিজের, তবু অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় মশাই মাঝে মাঝে ফোন করেন, এখনও পরামর্শ চান অনুপ সিংহ মশাইয়ের কাছ থেকে, যখনই কোনোরকম সংস্কার করার কথা মাথায় আসে। অনুপ সিংহমশাই কৌতুক করার সুযোগ ছাড়েন না, বলেন, "এসব কথা ফোনে হয় না, বাড়িতে আসতে হবে, বসে আলোচনা হবে। দু দশ মিনিটের ব্যাপার তো আর নয়, একটা দিন থাকতে হবে এখানে"। বলতে বলতে তিনি যেমন হাসেন, অর্কবাবুও তেমনি। অর্কবাবু জানেন আসল ব্যাপারটা কী, জানেন আপ্যায়ণের ঘটা হবে কতখানি! এও জানেন যে কেবল ঐ জন্যই ডাকা, নইলে বাড়ির ব্যাপারে আলোচনায় বিন্দুমাত্র উৎসাহ দেখা যায় না তাঁর। প্রতিবারই মুখে তাঁর ঐ একই কথা, "আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল তো বাড়ি আপনাকে বিক্রি করে! বাড়ি আপনার, বাড়ির সত্ত্বাধিকারী এখন আপনি, আমি নাক গলাই কেমন করে?" তখন চমৎকার শোনায় অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় মশাইয়ের উত্তর, যদিও সেটাও পুনরাবৃত্তি। "ঐ বাড়ির যত ইট কাঠ পাথর কড়ি বরগা ঝাড়লন্ঠন, সব আমার, সেগুলোর সত্ত্ব হস্তান্তর করতে পেরেছিলেন আপনি, কিন্তু ভাবনার যে যত্নে সেগুলোর সন্নিবেশ তা আপনি দিয়ে আসতে পারেননি। ওটুকু দেওয়ার বাকি ছিল বলেই তাগাদা করতে আসি"। অমনি আভিজাত্যের সংস্কার ডিঙিয়ে সজোরে হেসে ওঠেন অনুপ সিংহ মহাশয়। সজোরে, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত নয়। তবু কলকাতার প্রশস্ত তিনতলার ফ্ল্যাটের পরিধি ছাড়িয়ে যায় সে হাসি। হাসেন বটে, কিন্তু বুকের ভিতরে যেন তখন হাতুড়ির ঘা পড়তে থাকে একের পর এক, যে আভিজাত্য ছিল তাঁদের গোপন অহংকার, তার নীরব বিদায় ঘটতে দিতে হলো, আত্মসমর্পণ করতে হলো পারিপার্শ্বিকতার কাছে। কিন্তু সেই একই সময়ে, যখন মনে হলো এই আভিজাত্য আর রক্ষা করা সম্ভব নয়, তখন একজন এসে সাদরে গ্রহণ করল সেই আভিজাত্যের চিহ্ন। নীরবে সেই বেদনা সহ্য করেন অনুপ সিংহমশাই, কিন্তু তখনও হাসেন, হাসতে হাসতে বলেন, "খোঁজ করলে আপনার মধ্যেও অনেক ভাবনা পাবেন। দেশ বিদেশে কাটিয়ে এসেছেন এতগুলো বছর, কতকিছু দেখেছেন ঐ চোখে, আপনার মন কি আর বোবা হয়ে থাকতে পারে?" অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় মশাইয়ের উত্তরটাও তেমনি, "বোবা নয় নিঃসন্দেহে, অজস্র কথা বলে সে, কিন্তু প্রাণ জুড়ানো একটা কীর্তনের সুর কম্পোজ করতে পারছে -- এমন কখনও দেখিনি। অ আ ক খ বর্ণমালার অতিরিক্ত কোনো অবলম্বন রবি ঠাকুরেরও ছিল না। ওগুলো তো আমারও জানা, আমিও তো তার ব্যবহার করেছি অঢেল, তবু তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টির মতো একখানাও তো রচিত হতে দেখলাম না"। হাসতে ভুলে যান তখন  অনুপ সিংহমশাই, চোখে তাঁর ঘোর লাগে। সোফা থেকে উঠে দাঁড়ান, দুইহাতে কোমরের দু পাশ ধরে কোমর সোজা করে পৃর্ণ উচ্চতায় পৌঁছন, শীতলপুরের সিংহবাড়ির অনুপ সিংহের মতো। হৃত পদচারণার ভঙ্গি পুনরুদ্ধার করতে করতে পাশের ঘরে যান পুরনো দলিল দস্তাবেজ কাগজপত্র সবে বয়ে আনবার জন্য। দেখে লজ্জা পেয়ে অর্কবাবু বলেন, "বড্ড অত্যাচার করি আপনার উপর!" চোখ না সরিয়ে কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে তিনি বলেন, "আর এই সুখটুকু চোখে পড়ে না? নইলে অকারণে কেউ এসব যত্ন করে রাখে।" অমনি চুপ হয়ে যান অর্কবাবু, চুপ মানে একেবারেই চুপ, আর তখন পুরনো কাগজপত্র ঘেঁটে ঘেঁটে ইতিহাস উদ্ধার করতে থাকেন সিংহমশাই, কোনটা কবে হয়েছিল, কী পরিকল্পনা ছিল তার পিছনে বা পরবর্তীতে যদি কোনো সংস্কার সাাধন হয়ে থাকে তবে তা কেন হয়েছিল, ইত্যাদি। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, "কী করবেন এসব দিয়ে! সবই তো কোন দূর অতীতের ব্যাপার, এখন কি আর ওসবের চল আছে? নাকি সেসব পুরনো দিনের শিল্পী বা কারিগরদের আজ কোথাও খুঁজে পাবেন?"

অনুপবাবু ছিলেন এই বাড়িতে সিংহ বংশের শেষ বাসিন্দা, তাঁর আমলেই হস্তান্তরিত হয়েছে মালিকানা, তাঁর হাত থেকেই। ছেলেরা ছিল, যদিও প্রাপ্তবয়স্ক তারা সকলেই, কিন্তু অনুপবাবু বেঁচে থাকতে শরিকের স্ট্যাটাস তাদের পাওয়ার কথা নয়। তবে আইন অনুসারে শরিক ছিলেন যারা, সংখ্যায় তাঁরাও কম ছিলেন না। দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিলেন তাঁরা, তাদের কাছ থেকে অনাপত্তি বা স্বত্ব ত্যাগের শংসাপত্র সব যোগাড় করে আনার ধকল একা সামলে ছিলেন অনুপবাবু। সময় লেগেছিল তার জন্য, অর্কবাবু ব্যস্ত হয়ে পড়লে বুঝিয়ে বলেছিলেন, "এটা ঠিক যে ইচ্ছে করলে নিজেই রেজিস্ট্রি করে দিতে পারি, আমার মুখের উপর কথা বলার কেউ নেই। তাতে হয়ত আপাতত আপনার মলিকানা পেতে অসুবিধা হবে না ঠিকই, কিন্তু আমার অবর্তমানে কেউ যে কোনো একটা ফ্যাকড়া তুলে আপনাদের মুশকিলে ফেলবে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়? স্বার্থবোধের কাছে আভিজাত্য এখন হার মেনেছে। বংশ গৌরবের থেকেও ব্যক্তিগত লাভালাভের আকর্ষণ এখন অনেক বেশি, ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে। তখন আপনার মালিকানা নিঃশর্ত নয় এই আপত্তি তুলে আপনার কাছ থেকেই হোক বা আপনার বংশধরদের কাছ থেকেই হোক দুপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কেউ করতেই পারে। তখন বদনাম হবে সিংহ বংশের, কল্পনাতেও তা সহ্য করতে পারব না"।  অর্কবাবু সেকথা মেনে নিয়েছিলেন, হৃদয়ংগম করতে পেরেছিলেন আভিজাত্যের সেই দুর্মূল্য অভিমান। হোক সে আভিজাত্য অস্তপ্রায়, তবু এখনও শীতলপুর ছাড়িয়ে আরো দূর অবধি লোকে সিংহবাড়ি বলতে যে এই বাড়িকেই বোঝে তা তার অজানা থাকবে কেন, এই শীতলপুরেই তো তার জন্ম!

চোখের সামনে দিনে দিনে কত পাল্টে গেল শীতলপুর। দরকার পড়লে সমস্ত সামর্থ্য ও খুইয়ে বসছে লোকে, তবু দালান বাড়ির ভিড়ে যোগ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বসতি বাড়ছে, তাই জমির দাম এখন আগুন। প্রমোটার আর রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের পা পড়েছে শীতলপুরে। ঠিক সেই সময় চারিদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছিল খবরটা, সিংহবাড়ির আভিজাত্যের এবার বিসর্জন, বাড়ি সম্পত্তি সব বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় ফ্ল্যাট বাড়িতে গিয়ে উঠবে তারা। অমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা। অনেকখানি জমি, অনেকগুলো ফ্ল্যাট, অনেক অনেক লাভের সম্ভাবনা। অর্কবাবুরও এই খবর পেয়েই যাওয়া, কিন্তু তাঁর অফারের আর্থিক পরিমাণ ছিল অনেক কম। পরিমাণে তা খুব বেশি বাড়ানোর অসামর্থ্যের কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি কারণ বাড়িটি নিয়ে তার আর যা যা পরিকল্পনা তার বাস্তবায়ন যথার্থই ব্যয়সাধ্য।

তবু অনুপ সিংহমশাই বাড়িটা তাঁকেই দেবেন মনস্থির করেছিলেন। বড় বড় অফারগুলো হেলায় অগ্রাহ্য করতে পেরেছিলেন যে কারণে তা হলো মায়া। বাড়ির প্রতি মায়া, বাড়ির ঐতিহ্যের প্রতি মায়া। অগ্রাহ্য করতে পেরেছিলেন এই আশার আলো দেখে যে বাড়িটা থাকবে, ভাঙ্গা পড়বে না। যিনি নিচ্ছেন তিনি নিজে থাকবেন বলে নিচ্ছেন, অনেক কালের লালিত বাসনা তাঁর। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে বাড়িটির প্রতি তাঁর আগ্রহ যতখানি, তা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাড়িটির আভিজাত্যের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা। তাঁর মুগ্ধতার ইতিহাসই সেই বাড়ির অতিরিক্ত দাম। তিনি না বলে দেওয়া পর্যন্ত অনুপ সিংহমহাশয় জানতেনই না যে তাঁর জন্ম এই শীতলপুরেই। ভেবে চিন্তে এটুকু অবশ্য মনে করতে পেরেছিলেন যে তাদের শীতলপুরেরই কোনো এক  রামগতি পন্ডিত মশাইয়ের ছেলে, একসময় যে স্কুলে তাঁরই মায়ের নামে মঞ্জুর করা বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছে, পরে সে খুব বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবল এইটুকুই জানা ছিল, এর অতিরিক্ত আর কিছু জানা ছিল না ছেলেটার সম্পর্কে। এও জানতেন না যে সেই রামগতি পন্ডিতমশাই আর না থাকলেও তাঁর বাসভূমি এখনও আছে এই শীতলপুরে এবং এতদিনে  প্রৌঢ় হয়ে যাওয়া তাঁর ছেলেটি আমেরিকায় তাঁর সমস্ত প্রতিষ্ঠা ফেলে এসে এখন সেই বাড়িতেই বাস করে। অনুপ সিংহমশাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনিই রামগতি পন্ডিত মশাইয়ের ছেলে? এখানেই আপনার বাড়ি?" অর্কবাবু হেসে বলেছিলেন, "আজ্ঞে, হ্যাঁ"।

--- এখানেই থাকতেন? কানে তো আসেনি তেমন কোনো কথা?

--- মাঝেমাঝে আসতাম। বিদেশে যাওয়ার পর স্থায়ীভাবে এখানে আর থাকা হয়নি।

--- তাহলে নিচ্ছেন কেন এই বাড়ি? যখন সেই দেশেই আবার ফিরে যাবেন? বাড়িটা তো অব্যবহৃত পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাবে!

--- নিজে থাকব। নিজের ইচ্ছেয় যতটুকু, তার চেয়ে অনেক বেশি আমার বাবার ইচ্ছেয়।

--- তাই নাকি? পন্ডিতমশাই আপনার সাথেই আছেন?

--- না, বাবা আর নেই, কিন্তু বাবা যা ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন তা পূরণ করার দায় আমার উপর রয়ে গেছে।

--- ওহ্। সে কি অনেকদিন হয়ে গেছে?

--- হ্যাঁ, অনেকদিনই, প্রায় একযুগ হতে চলল, বারোবছর। জন্মভিটেতে মরতে চেয়েছিলেন বাবা, তাই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল, তখন তার প্রায় শেষ অবস্থা। মনে করলে এখনও চোখে জল আসে। তবু ঐখানেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সফলতা, ভাবলে বুক ভরে যায়।

--- সফলতা তো বটেই! এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের খরচ কম নাকি! সকলে কি তা পারে!

--- না, না, খরচের কথা নয়, তার কত গুন তারপর রোজগার করেছি! সেটা অত বড় ব্যাপার নয়। আমি নিজে যেটাকে সফলতা মনে করি সেটা হলো তাঁর শেষের দিনগুলোতে তাঁর কাছে থাকতে পারা। বিদেশে যারা সেটল করেছে, ক'জন তারা এ সুযোগ পায়? ব্যবসা তখন নতুন, সদ্য বছর দুই এক, কর্মচারীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। আমি এখানে পড়ে ছিলাম বাবাকে নিয়ে, এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে যাইনি। না, একটু ভুল হলো, গিয়েছি। ভোর রাত্তিরে বেরিয়ে যেতাম আসানসোল, ওখানে আই এস ডি করার সুযোগ ছিল। ফোন করে ব্যবসার খোঁজ নিয়ে বা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বাবা জেগে ওঠার আগেই ফিরে আসতাম। অবশ্য নার্স আর আয়া তখন থাকত।

--- ওহ্, বাবা চেয়েছিলেন বুঝি আপনি দেশে ফিরে আসুন, এইখানেই থাকুন!

--- মুখে কখনও কিছু বলেননি, তবু মনে হয় তেমনই চেয়েছিলেন।

--- সেই কথা ভেবেই বরাবরের মতো দেশে ফিরে আসবেন ঠিক করেছেন?

--- হ্যাঁ, অনেকটা তাই। চলে এসেছি বরাবরের মতই।

--- ওখানকার সেটলমেন্ট?

--- বিদেশে যা কিছু করেছি সব ছেড়ে এসেছি, বাড়ি ঘরদোর, অফিস, বিজনেস সব। ছেলেরা আছে সেসব নিয়ে। তারা প্রতিষ্ঠিত, সেখানে আমার যা দায় ছিল, সব মিটিয়ে এসেছি, কারো প্রতি কর্তব্যে কোনো বাকি রাখিনি।

--- সব প্রতিষ্ঠা এক কথায় ফেলে রেখে এলেন?

--- হ্যাঁ, তখনও বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে বাকি থেকে গিয়েছিল বলে।

--- তখনও বাকি থেকে গিয়েছিল? পেয়েছেন তারপরে?

--- দেখা যাক, পাওয়া হয়ে ওঠে কিনা শেষ পর্যন্ত! এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আপনাদের উপর।

-- আমাদের উপর?

--- আজ্ঞে হ্যাঁ। হঠাৎই এই যোগাযোগ ঘটে গেল তাই, নইলে খোঁজ খবর তো আজ থেকে করছি না। বাবা তখন বেঁচেছিলেন, তখন থেকেই। দেশে বিদেশে কম বাড়ি তো দেখলাম না। দেশে যখন ছিলাম তখন দিল্লিতে বাড়ি কিনেছিলাম, এমনকি কলকাতাতেও। মনে মনে বাবার পছন্দের কথা ভেবে কিনতাম, কিন্তু বাবাকে নিয়ে গিয়ে দেখানোর পর বাবার পছন্দ হতো না বলে সেগুলো একসময় আবার বেচে দিয়েছি। কখনও কেনার আগেও বাবাকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছি, বাবার পছন্দ হয়নি বলে কেনা হয়নি। বাবার চোখে প্রতিষ্ঠা মানে বিশেষ ধরনের একটা বাড়ি, আর এমন একটা বাড়ির ছবি তাঁর চোখে গেঁথে ছিল যে কোনো বাড়িই আর  তার তুল্য মনে হতো না তার কাছে। চলে গেলেন সেই ছবি চোখে নিয়েই, বেঁচে থাকতে সেই বাড়ি তাঁকে কিনে দিতে পারলাম না। অবশ্য হুকুম দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি গত হলেও যেন আমার খোঁজ বন্ধ না হয়। খোঁজ করে যেদিন পাব সেদিন একটা ঘর রাখা থাকবে তাঁর জন্য। বড় করে বাঁধানো তাঁর একটা ফটো রাখা থাকবে সেই ঘরে। আর থাকবে একটা খাট, তার উপর বিছানা পাতা। যখন তাঁর জন্যে মন খারাপ হবে আমার, তখন সেই বিছানায় গিয়ে শোব। বাবা তখন বিছানা হয়ে আমায় ছুঁয়ে থাকবেন। আমি আজও বাবার সেই স্বপ্নের বাড়ির খোঁজ করে চলেছি।

এত কথা শোনার ধৈর্য্য সাধারণত থাকে না অনুপ সিংহমহাশয়ের, বাক্যালাপ চিরকালই সংক্ষেপে সারার অভ্যাস তাঁর। এমনকি কঠিন সাংসারিক সমস্যা বা গুরুত্বপূর্ণ বৈষয়িক ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েও দীর্ঘ বাক্যালাপের সুযোগ কখনও রাখেন না, অকারণ কালক্ষেপে তাঁর তীব্র আপত্তি। আদতে এটা তাদের বংশের বৈশিষ্ট্য। এ কথা অর্কবাবুও জানতেন, বাবার কাছ থেকে শুনেছেন। কেউ বলত ধৈর্যের অভাব, তাই এই অনীহা। এই সুযোগে ঠকিয়ে অন্যায্য লাভ আদায় করে নেওয়া বেশ সহজ হতো, এবং অনেকেই সে সুযোগের আশ্রয় নিত। তাই কেউ কেউ নির্বুদ্ধিতা সনাক্ত করত, কেউ কেউ বলত আভিজাত্যের অহংকার। কিন্তু অর্কবাবু তাঁর বাবাকে অন্যরকম বলতে শুনতেন। তিনি এটাকে বলতেন আভিজাত্যের বৈশিষ্ট্য, জয় ভিখারির করে অনায়াসে জয় লিখে দিতে পারেন, তাই অতিরিক্ত বাক্যালাপের প্রয়োজন দেখতে পান না। বাক্যালাপে যখনই অভিপ্রায় দেখতে পান, তা সে বস্তুগত লাভের জন্যই হোক বা আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যই হোক, তখনই তা পরিহার করেন পাছে সে আবর্জনা গায়ে এসে লাগে।

কিন্তু অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ বাক্যালাপ তিনি মন দিয়ে শুনছিলেন, বোধহয় তা বিজাতীয় বলে। প্রতিষ্ঠা যার অনায়াসে করায়ত্ত, তিনি আজ প্রতিষ্ঠা খুঁজছেন এই শীতলপুরে এসে, তাও আবার নিজেদের সন্তানদের বিদেশে ফেলে রেখে এসে। কথার মাঝখানে কথা বলা অনুপ সিংহমশাইয়ের স্বভাব নয়, তবু বললেন-   “আপনার বাবা কি চেয়েছিলেন এখানে এই শীতলপুরেই আপনি প্রতিষ্ঠিত হ'ন?"

--- ঠিক জানি না তাঁর মনের কথা, কোনোদিন ব্যক্ত হতে দেখিনি তাঁর নিজের চাওয়া। আর নিজের চাওয়া দিয়ে সন্তানের মনের চাওয়া ঢেকে দেওয়া তো কখনোই নয়। তবু একটা কিছু টের পেতাম যেমন করে বোবা মানুষের কথা চেষ্টা করে বুঝে নিই আমরা। যখন একটু উচু ক্লাসে উঠেছি, বাবা আমায় সাইকেলে করে নিয়ে যেতেন টিউশন পড়াতে। এই বাড়িটার সামনের ঐ রাস্তা দিয়ে যেতে হতো। বাবার আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে ঐ প্রাইভেট টিউশন পড়তে যাওয়ায় আমার আপত্তি ছিল বলে, সাইকেলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন বোঝাতে বোঝাতে যেতেন, "এইটুকু আর্থিক কষ্ট মেনে নিলে যদি অনেক বড় প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব হয়, তবে সে সুযোগ কি কখনও ছেড়ে দিতে আছে? তুই পারবি, আমি জানি, তাই সেই কথা ভেবে এই কষ্ট স্বীকার করছি"। জিজ্ঞেস করতাম, "প্রতিষ্ঠা? কাকে বলে প্রতিষ্ঠা"। তখন শব্দটার শব্দগত অর্থ জানলেও ভাবগত অর্থ ভাল জানতাম না। বাবা বোঝাতেন, বোঝানোর চেষ্টা করতেন। একটা চারাগাছ যেমন দিনে দিনে তার আয়তন বৃদ্ধি ঘটিয়ে মহীরুহ হয়ে ওঠে, অথচ বিন্দুমাত্র কোনো কোলাহল থাকে না, কোনো কাড়াকাড়ি থাকে না, ঐটা হলো প্রতিষ্ঠা। যেতে যেতে যখন এই বাড়িটা চোখে পড়ত তখন বলতেন, "ঐ দেখ, ঐটা হলো প্রতিষ্ঠা, সেই কবে থেকে আছে সম্ভ্রমের দাবী নিয়ে! কোনোদিন যদি নিজে বাড়ি করতে পারিস তবে ঐরকম বাড়ি করবি"।

--- কিন্তু এ তো অনেক পুরনো দিনের বাড়ি?

--- তা হবে। ঠিক জানা হয়নি তাঁর পছন্দের কারণ, কিন্তু বাবার পছন্দের বাড়ি বাবা বেঁচে থাকতে দেশে বিদেশে কোথাও খুঁজে পেলাম না! যত বড় যত আধুনিক বাড়িই দেখাই না কেন, কোনোটাই বাবার পছন্দ হয় না। তাই বাবা গত হওয়ার পর এখন পড়েছি আরো বেশি মুশকিলে, বাবার পছন্দ ঠিক কেমন ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানব কেমন করে! কিন্তু মুশকিল আসান হলো হঠাৎ এই যোগাযোগ হয়ে যাওয়ায়, এই বাড়ির মতন বাড়ির কথাই তো বাবা বলতেন! তাই এই বাড়িটা পেলে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

--- এ বাড়িতে আপনি বসবাস করবেন কেমন করে? দেশ বিদেশের যেসব বাড়িতে আপনি এযাবৎ থেকেছেন, সেসব সুবিধা তো পাবেন না এখানে!

--- বাবা থাকবেন। বাবা যেমন বলেছিলেন তেমন করেছি, খুব বড় করে একটা ফটো বাঁধিয়েছি তাঁর, সেটা রাখার ব্যবস্থা আর এর থেকে ভাল কোথায় হবে! আর বাবা যেখানে থাকবেন আমাকেও সেখানেই থাকতে হবে।

--- অসুবিধা হবে না?

--- যখন তা আর হবে না তখন বুঝব আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হলাম।

--- সহনশীলতার কথা বলছেন?

--- পেরিয়ে যেতে হবে সেটাও, তবেই পৌঁছন যাবে আভিজাত্যে। আমি আভিজাত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছিলাম। সেসব কথা আপনাকে আর কী বলব, সেসব হয়ত জন্ম থেকেই মজ্জাগত আপনাদের! জলজ প্রাণীর কি আর সাঁতার শিখতে হয়?

হেসে ফেলেছিলেন অনুপ সিংহমশাই, বোধহয় আভিজাত্যের কথা শুনেই। মনে মনে তার আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন বাড়ি তাঁর হাতেই দিয়ে যাবেন। সিংহবাড়ির পরিমণ্ডলের মধ্যে আভিজাত্যকে যেভাবে চিনেছিলেন, তা থেকে এখন বিদায় নেওয়ার সময়, এবার থেকে থাকতে হবে কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়িতে, চেনা জীবনযাপনের পরিধির মধ্যে নয়, সংক্ষিপ্ত পরিধিতে সংক্ষেপে বেঁচে থাকা। ঠিক তখন শুনতে হচ্ছে আভিজাত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা, যা ঠিক বিদায় সভার ভাষণের মতো নয়। প্রশস্তি হয়ত উচ্চারিত হলো ঠিকই, যখন তিনি বললেন আভিজাত্য সিংহমশাইদের মজ্জাগত। কিন্তু বোধহয় জেনেই বললেন যে তা নয়। যা মজ্জাগত তা মজ্জায় ধৃত হলে ইচ্ছামাত্র খসিয়ে ফেলা যায়? তবু ম্লানতার ছায়া পড়তে দিলেন না চোখেমুখে, হাসতে হাসতে বললেন, "সাঁতার শিখতে হয় না বটে কিন্তু সাঁতারের প্রয়োজনীয়তাও তাদের আলাদা করে শেখা হয় না। আভিজাত্যের ব্যাপারেও সেটা সত্যি, যা আয়ত্ত করা নয়, আপনা থেকে পাওয়া, তার উপর নিশ্চিত অধিকার থাকে না। শুনি আপনি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছেন"।

--- আমি যতটুকু বুঝেছি, দরকার একটা সমঝোতায় আসা, পরিস্থিতির সাথে একটা মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। কর্মসূত্রে দেশ বিদেশের অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়েছে, দেখেছি আধুনিকতার আবহাওয়ায় কেমন দূষিত হয়ে গিয়েছি আমরা, আমরা এখন কেবল অসন্তোষকে সনাক্ত করতে পারি কেবল অভাব আবিষ্কার করতে পারি। অগত্যা, যেমন স্বভাব তেমন কর্ম, নিয়ত দাবী করে চলি আর চাহিদা জানাই। দুনিয়া জুড়ে সর্বত্রই দেখি হাত পেতে আছে সকলে আর নিয়ত বলে চলেছে, "আমায় দাও, আমায় দাও, আমার আরো চাই, আরো"। রাজা হওয়ার পরেও কারো ভিখারির দশা যাচ্ছে না। একদিকে চাওয়া, আর অন্যদিকে অভিযোগ। আসলে দুটোই সমার্থক। এই দীনতার সাথে আভিজাত্যের ঘোর বিরোধ, ঘেন্নায় তাদের মুখ দেখে না আভিজাত্য। তার শিক্ষা দীক্ষা অন্যরকম, সে বলতে শেখায়, "আমার আছে", সে প্রাপ্তির প্রাচুর্যকে চিনতে শেখায়। সমস্যা তার সাথে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ, তাই তাকে জর্জরিত করতে পারে না, মনে অশান্তি সৃষ্টি  করতে পারে না। জীবনে এই আভিজাত্য আয়ত্ত করতে পারলে বেঁচে থাকা তখন আনন্দের অহংকার হয়ে ওঠে।

--- তখন আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত মনে করবেন?

--- কেবল তাতেই হয় নাকি? উত্তরপুরুষের কথা ভাবতে হবে না? নইলে নিজের প্রতিষ্ঠার শিকড় গভীরে পৌঁছবে কেমন করে?

--- উত্তরপুরুষ? তারা তো একভাবে প্রতিষ্ঠিত সে দেশে?

--- তারাও উত্তরপুরুষ বটে, কিন্তু ঐ শব্দের অর্থ যে গুটিয়ে রাখা মাদুরের মতো, পেতে বসার সময় খুলতে খুলতে বহুদূর ছড়িয়ে যায়। এদের মধ্যে যদি সেই প্রতিষ্ঠা ছড়িয়ে দিতে না পারলে আর ভাবনায় আভিজাত্য কোথায়!

--- কেমন করে?

--- দেখবেন প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই কোনো না কোনো একটা জাগ্রত দেবতার থান থাকে। কৈশোরে, যৌবনে, এমনকী প্রৌঢ়ত্বে এসেও একসময় কুসংস্কার জ্ঞানে মনে মনে সেগুলোকে বাতিল করতাম। কিন্তু এখন কী যেন এক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা দেখতে পাই ঐ দেবতার থানগুলোতে। বিশ্বাসের জোরে মানুষই সেগুলোকে জাগ্রত করে তোলে। সেখানে অপচয় দেখতে পাই, বস্তুগত এবং ভাবনাগত দুইই। যত সামান্যই হোক, নিজেদের প্রয়োজন সংক্ষেপ করে সেই অপচয় ঘটায় তারা। পয়সার খরচ, সময়ের খরচ, ভাবনার খরচ, সব অকুণ্ঠ চিত্তে মেনে নেয় তারা। এরমধ্যে এখন আভিজাত্যের এসেন্স পাই আমি। যেদিন এই পর্দানশিন আভিজাত্যকে তারা সাড়ম্বরে বাইরে এনে দাঁড় করাবে সেদিন বুঝব সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া হলো আমার।

চোখে তখন প্রশংসা অনুপ সিংহমশাইয়ের, কিন্তু কোন এক ব্যথা যেন পিছন থেকে টেনে ধরেছে তাকে, তাই সে পথ পেল না। সিংহমশাই বললেন, যেন নিজের কথা নয়, কারো শেখানো কথা বললেন, "উদ্যোগ সাধু নিশ্চয়, কিন্তু সেখানে এই বাড়িটার ভূমিকা কী?" অর্কবাবু বললেন, "খুব সামান্য নয় তা। দেবতার ঐ থান যেম , অনেকটা তেমনই। এর প্রসিদ্ধি একদিন তাদের বিশ্বাসের সংস্কার হয়ে দাঁড়াবে যে এখান থেকে প্রতিকার মেলে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের একটা ব্যবস্থা থাকবে যাতে আর্থিক উন্নতি হয়, আর থাকবে একটা কাউন্সেলিং সেন্টার যেখান থেকে নিয়ত শেখানো হবে বেঁচে থাকাকে কেমন করে উৎসব করে তুলতে হয় প্রতিদিন"। অনুপ সিংহমশাই বলেছিলেন, "হোক, তাই হোক তবে!"


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন