কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৩ |
মা সম্পর্কে একগুচ্ছ
মন্দ মা
টুকটুকি
বড় ঘ্যানঘ্যানে হয়ে উঠেছে ক’দিন ধরে, নাদিরা খেয়াল করে।
‘বাড়ি
যাব! আমাদের কেমন সোন্দর বড় টিভি! নানির টিভি পেটমোটা!’
প্রথম
কদিন টুকটুকি ঠাহর করতে পারেনি, আম্মি চলে এসেছে আব্বুকে ছেড়ে, একেবারে। নানিবাড়ি আসতে
কার না ভালো লাগে! প্রথম হপ্তায় মসিদের সাথে সে বোসপুকুরের মেলায় ঘুরতে গেছিল দু;বার।
চরকি, বেলুন পেয়ে খুশি। দ্বিতীয় হপ্তায় বায়নাক্কা শুরু হল।
এই মেয়ের সামনেই তাকে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে উঠোনে টেনে চ্যালাকাঠ দিয়ে পিটিয়েছিল আনোয়ার। দু’রাত বাড়ি না ফেরায় জেরা করেছিল নাদিরা। শাস্তি।
সারা পাড়া অবশ্য আগে থেকেই জানত, মেয়েটার নাম জুঁই। রেলের ধারের ঝুপড়িতে ভাড়া নিয়ে এসেছে। এমনকি টুকটুকিও তাকে চেনে। সেবার আনোয়ার সেই মেয়েকে পিছনে বসিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে গেল বাইক চেপে। সামনের সিটে টুকটুকি। ‘মাসিটা কি সোন্দর! বাবা ওকে মুকে তুলে তুলে চাউমিন খাওয়ালো।’ ফিরে এসে গল্প করেছিল মেয়ে।
মারধোর
আগেও বিস্তর খেয়েছে নাদিরা। এতদিনে বুঝল, আর কিছু হওয়ার নয়।
পাড়ার
লোক বলল, ‘মেয়ের তালাক নিয়ে আবার বিয়ে দাও। কতই বা বয়স?’
আনোয়ার
ফোন করে জানালো, তালাক দেবে, মেয়েকে ফেরত দিলে।
টুকটুকির
ঘ্যানরঘ্যানর বাড়ে দিন দিন।
-আব্বু
থাকলে এগরোল দিত।
-
আব্বু বিকেলবেলা ক্যানাল পাড়ে বেড়াতে নিয়ে
যেত।
-আমার আব্বুর মোটরবাইক আছে…
টুকটুকির চোখদুটো ওর আব্বুর, আর রোখও। নাদিরার অসহ্য লাগে। কল টিপতে টিপতে ভাবে নাদিরা, সব্জিওয়ালা শাহিদুল গত পরশু সন্ধে নামলে গলির মুখে তার হাত ধরেছিল। নিকা করতে চায়। একলা বাঁচা বড় দায়! কে কোথায় অন্ধকারে খপ করে হাত ধরে আবার, কে জানে!
রাতে মাকে সে জানায়, টুকটুকিকে নিয়ে যাক তার বাপ। নাদিরার মা সালমা, ফ্ল্যাটবাড়ির ঝি, অবাক দৃষ্টি মেলে তাকায়। মেয়ে নাতনীকে চোখে হারায়। বুকে জড়িয়ে ঘুমায়। রাগের মাথায় এসব কী বলছে!
সালিশি বসল একমাসের মাথায়। পঞ্চায়েতপ্রধান নিজে ছিলেন। গয়নাগাটি-সাইকেল-পিতলের ঘড়া... কিছু ফেরত পাওয়া গেল, কিছু গরমিল হল। বাবার বাইকের সামনে হাসি হাসি মুখে উঠে বসল টুকটুকি।
নাদিরা শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। টুকটুকি মাকে টা-টা করতে গিয়ে কেমন ফ্যালফ্যালে হয়ে গেল। বাইক স্টার্ট নিতেই টুকটুকি হঠাৎ 'মাগোওও’ বলে কেঁদে উঠল। বাইক থামল না। টুকটুকির চিলচিৎকার শুনতে শুনতে নাদিরা থপ করে বসে পড়ল বটতলায়।
সম্পর্কের বাস্তবতা, কঠিন টানাপোড়েন - ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন