কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

প্রশান্ত গুহমজুমদার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৩


মহালয়া

           

যা ভয় করেছিল, তাই হল। আঙুল ফসকে মার্বেলের মেঝের উপর পড়ল কাপটা। কী চমৎকার শব্দ! অসীম ভয়ে ভয়ে তাকালো পিছনে। নির্বিকার ঝুমুর।  কিন্তু অসীমের ভেতরটা কী যে এক আতঙ্কে কুঁকড়ে গেল! এই-ই হয়। মাল্টিটাস্‌কিং কোনদিন তার দ্বারা হয় না। অথচ অভ্যাস কত কিছু পাল্টে দেয়! এখন ভোরে ওঠে। গাছে জল দেয়। ফুল তোলে। নিয়ম করে বাজার। ঝুমুরকে হিসেব বুঝিয়ে দেয়।

অসীম আরো কিছু করে। বিছানা পাতে। তোলে। আকাশ বুঝে জানলা টানে, খোলে। পাউচ থেকে কন্টেনারে তেল ঢেলে দেয়। বস্তা থেকে চাল টিনে ঢোকায়। নিয়ম করে ঝুমুরের চওড়া ফোন চার্জে বসায়। তবু এখন ঝুমুর ফুট কাটলো, যা পারো না, করতে যাও কেন! যত্তসব অকম্মার ঢেকি! এখন এই কাঁচ পরিস্কার কে করবে শুনি? অসীম সাবধানে ঝুমুরের সামনে চায়ের কাপটা রাখে। মেয়েকেও  দেয়। ও প্রাণপণ ভুলে যেতে থাকে, দীর্ঘ প্রশাসনিক চাকরিজীবন।

এসবের মানে কিন্তু অসীম একেবারে গৃহপোষ্য নয়। সন্ধ্যাবেলা ও বেরোবেই।  দুপুরে ইচ্ছেমতো বই পড়বেই। রাত্তিরে দু’পেগ নেবেই। মোবাইলে সিনেমা  দেখবেই। কারো ক্ষমতা নেই ওকে আটকাবে। এ নিয়ে কত অশান্তি! অসীম যে কে সেই।

পুজো এসে গেল। দু’বছর পরে এবার যেন মানুষ একটু বেশি সাহসী। পাড়ায়  পাড়ায় সেজে উঠছে থিমের কাঠামো। একদিন পর মহালয়া। মনে পড়ে অসীমের, শীত শীত ভোর, রেডিওয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আর শিউলি কুড়িয়ে এনে মায়ের হাতে দেওয়া। এখনো কি সেই হলুদ বোঁটার আশ্চর্য শিউলি ফোটে!

পাড়ায় একটা পুজো হয়। তার তোড়জোড় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এবার জোশ্‌টা কিছু অতিরিক্ত। মহালয়া হবে ভোরে। এখন রাত্রে মাংসের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। ক্লাবের ছেলেদের উল্লাস ফেটে পড়ছে শব্দবাজিতে, ডিজে-তে। অসীম জানে, পাশের বাড়িতে অসুস্থ একজন মহিলা আছেন। আর তার এক স্বামীপরিত্যক্তা মেয়ে। রাত্রি একটা নাগাদ ও আর সহ্য করতে পারলো না। গেট খুলে সোজা ক্লাবের ছেলেদের হুল্লোড়ের মধ্যে।

-ভাই, ডিজে-টা একটু বন্ধ করবে? আর তোমাদের ঐ ক্র্যাকারের শব্দ? তোমরা বোধহয় জানো, ঐ বাড়িতে হার্টের একজন পেশেন্ট আছেন।

-তো? আমরা কি করতে পারি? নার্সিং হোমে নিয়ে যান। নিদেন পক্ষে হাসপাতালে।

জড়ানো গলায় এমন উত্তর শুনে অসীম আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলো না।

-তোমরা এত ইডিয়ট কেন? মানুষের সুবিধে অসুবিধে একটু বুঝবে না? বন্ধ করো এ সব এক্ষূনি! না হলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।

-ওরে! এ কে রে? মাঝরাত্তিরে পুলিশ দেখাচ্ছে! ধর্‌তো শ্লা ওর মুখটা। খানিক  বিদেশী ঢেলে দিই।

যে ক’টা জানলা খুলেছিলো, চটপট বন্ধ হয়ে গেল।

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টলমলে তরুণটিকে লক্ষ্য করে অসীম একটা চড় ছুঁড়ে দিলো।

পিছনে শুনতে পেলো, ঝুমুর আর নীপা আপ্রাণ চিৎকার করছে।

এত সবের মধ্যে অসীম খেয়ালই করেনি, মদ্যপ একটা রড তার মাথা লক্ষ্য করে নেমে আসছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন