কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শুভশ্রী পাল

 


ব্যক্তিগত গদ্য

প্রলাপ এবং পোয়াতি শোক


কথনবিশ্ব


(১)

লাজুক মনের পাশে এসে বসে মুখচোরা উত্তাপ। এসব অস্থিরতার দৃশ্য পেরোনোর সময় গাল ভিজে যায় নিশ্চুপ নোনা জলে... এক শান্ত শীতলপাটি স্পর্শ আঁকড়ে ধরতে আমি হাতড়ে বেড়াই স্মৃতি। প্রিয়বন্ধুর মৃত ছায়া ওষুধের  বড়ি হাতে ভাষাহীন চোখে দাঁড়িয়ে থাকে মাঝ পুকুরে। পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে আমাদের  বিচ্ছেদগত শোকের মুহূর্ত। পোয়াতি শোকের শরীরে কোনও স্ফীতি ফুটে ওঠে না, তবুও বেড়ে চলে অশ্রুমোতির ওজন... মোম-রং পোশাক পরে ডুব  দিই পুকুর ঘাটে, চোখ তুলতেই ঝরে পড়ে আন্তরিক স্পর্শসুলভ দৃশ্যরা। আমি শুঁয়োপোকা হয়ে উঠি আর সাজিয়ে তুলি মনোরম পৃথিবী... এখানে জঙ্গল ঘিরে ধরে কোলে তুলে ঘুম পাড়ায় আমার যাবতীয় অস্থিরতা, বন্যপ্রাণ চুমু খায় গালে। আমি কাঁধে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি চোখ-জ্বালা এড়াতে।

 

(২)

জ্বরের গায়ে মায়ের হাত ঠেকে গেলে বুঝি অমন শীতলপাটি কোল আর অন্য কোথাও নেই। আমি ওম মেখে পাশ ফিরি, ঘাম দিয়ে জ্বর ফিরে গেলে, মা গা মুছিয়ে দিয়ে জানতে চায় জ্বর আসার সময়। মুখচোরা আমার কেঁদে ওঠা হয় না তবুও... উত্তাপ নেমে গেলে আমাকে মায়ের অভিভাবক হয়ে উঠতে হবে। পুকুর ঘাটে আর ছায়া পড়ে না নাগালের বাইরে থাকা স্মৃতিদের... আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত গড়ালে ফিরে আসে উত্তাপ, পিছনে মৃত আশ্রয়ের সারি... মাঝ-পুকুর... ক্রমশ একা হয়ে উঠি।  খুবই একা। যেখানে মন নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে নীরবতা পালনের আর্জি জানায়...

 

(৩)

আমার কুকুর, পাখি, হনুমানেরা ফিরে গেলে মন খারাপ আরো তীক্ষ্ণ হয়ে বিঁধতে থাকে। এসব কথা ডাক্তারকে বললে আরো কীসব লিখতে থাকে প্রেস্ক্রিপশনে, অপাঠ্য লিপিতে। শুভাকাঙ্ক্ষী নামের লোকটা বলে ছ’বছর আগের আমিতে ফিরে যেতে। জীবন তো কোনও রিওয়াইন্ড বটন রাখেনি শরীরের গায়ে। টুকরো টাকরা স্মৃতির খাঁজ তুলে এনে দেখি সেসব আর আগের মতো জোড়া লাগে না। কাউকে ভালবাসা তো দূর অস্ত, আমার বিন্দুমাত্র যত্নবোধও বোধহয় আর অবশিষ্ট নেই কারো জন্য। গুটিকয় পুরনো সম্পর্করা ঘিরে আছে আমার ভগ্নাংশ জুড়ে। প্রিয়  বান্ধবী রঙের জামা পরা মেয়েটি কোল পেতে দিয়ে আমাকে ডাকে। সন্তানতূল্য ভাই প্রতিটি পদক্ষেপের আগে দিদির কলিংবেল চেপে জানান দেয়। তবুও কেন এত অবসাদ? আমার মন কেমন হয় হনুমান চলে যাবার জন্য। আমি হাঁটতে গেলে বাউন্ডারি লাইন জুড়ে আমার অপেক্ষায় থাকা সারমেয়দের দেখে বুকের ভেতর লাবডুব লাবডুব শব্দ টের পাই। কোনও মানুষের জন্য কেন মনে ঢেউ ওঠে না? মানুষের মতো দেখতে হয়েও আমি দু’পেয়ে জগৎ থেকে উলম্ব দূরত্বে  দাঁড়িয়ে আছি যেন ভিনগ্রহের মহাকাশযানের অপেক্ষায়, যারা এসে বলবে আমি তাদের দলের লোক...

 

 


1 কমেন্টস্: