কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮


বিপণন

রমিতার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল তার ঠিক বিয়ের আগেই। বই প্রকাশের দিন দশেক পরে রমিতা ডাকযোগে একটা চিঠি পেল। চিঠিতে  লেখকের নাম-ঠিকানা নেই। লেখকের বক্তব্য ছিল, তিনি রমিতার কবিতার বইটি পড়েছেন। পড়ে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন যে, বইটি তিনি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখতে আগ্রহী। রমিতা যদি বইটির এককপি স্থানীয় বাজারের ‘বুক কর্নার’এ রেখে আসে, তাহলে তিনি সেখান থেকে বইটি কিনে নেবেন।

চিঠি পড়ে আপ্লুত রমিতা সেদিন বিকেলেই এককপি রেখে এলো ‘বুক কর্নার’এ। এই প্রথম তার কবিতার বই কেউ কিনতে চাইল। উচ্ছ্বসিত ও উত্তেজিত রমিতা পরদিন বিকেলেই হাজির হলো ‘বুক কর্নার’এ। শুনল, বইটা কেউ এসে কিনে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কে তিনি, নাম কি, কেমন দেখতে, দোকানের কর্মী কিছুই মনে করে বলতে পারল না। রমিতার আনন্দ হচ্ছিল খুব, তবে কিছুটা বিষণ্নও ছিল, বইয়ের প্রথম ক্রেতা কে, তা জানতে না পেরে।

দিন দশেক পরে আবার একটা চিঠি। আরও দশকপি বই দরকার।  বন্ধুদের তিনি বইটি উপহার দিতে আগ্রহী। তবে এবার ‘বুক কর্নার’এ নয়, বরং স্টেশন সংলগ্ন ‘বুক সেন্টার’ থেকে তিনি দশকপি কিনে নেবেন। সেই দোকানে রমিতা যেন বই রেখে আসে। অগত্যা রমিতাকে দৌড়াতে হলো ‘বুক সেন্টার’এ। এবং অবাক কান্ড, পরের দিন খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারল, সেই দশকপি বইও বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু কে কিনেছেন, তা জানা গেল না।

এদিকে রমিতার বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। প্রস্তুতি চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। বিয়ের মাত্র দু’দিন আগে আবার চিঠি। এবার পঞ্চাশকপির অর্ডার। বই পৌঁছে দিতে হবে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরের একটি বইয়ের দোকানে। কী যে করে রমিতা! বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের স্কুটিতে পঞ্চাশকপি বই চাপিয়ে ছুটল সেই দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকানিকে বই ও নিজের ফোন নম্বর দিয়ে এলো, বই বিক্রি হলেই যেন তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। মজার ব্যাপার, যখন গায়েহলুদ পর্ব চলছে, দোকান থেকে ফোন এলো, একটু আগেই তার  পঞ্চাশকপি বই বিক্রি হয়ে গেছে। কেউ একজন একাই পঞ্চাশকপি কিনেছেন। দোকানের কমিশন বাদ দিয়ে বই বিক্রির টাকা রমিতা যেন সময় করে এসে নিয়ে যায়।

বিয়ে মিটে গেল, বৌভাত মিটে গেল, ফুলশয্যাও মিটে গেল। নতুন বরকে বগলদাবা করে দ্বিরাগমনে এসে রমিতা চতুর্থ চিঠি পেল। এবার আর এক-দশ-পঞ্চাশ নয়, একশ কপির অর্ডার। বই পৌঁছে দিতে হবে বড়বাজারের বড় বইয়ের দোকান ‘বুক কাউন্টার’এ। রমিতা হতবাক। তার কবিতার বইয়ের এত ডিমান্ড! আশ্চর্য! যদিও কিনছেন অবশ্য একজনই, কিন্তু তিনিও তো আর এত বই ঘরে জমা করছেন না! নিশ্চয়ই অন্যদের পড়তে দিচ্ছেন! রমিতা হিসেব  করে দেখল, সে মোট দুশো কপি বই ছাপিয়েছে। প্রকাশের পর বন্ধুদের বিলি করেছে পনের কপি। ক্রেতা ইতিমধ্যেই কিনেছেন একষট্টিকপি। আরও একশকপি দিলে তার কাছে থাকবে চব্বিশকপি। 

দ্বিরাগমন মিটিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে রমিতা দোকানির ফোন পেল, একশকপি বই এইমাত্র বিক্রি হয়ে গেল।

 


1 কমেন্টস্: