কবিতার কালিমাটি ১০২ |
জীবন
মনের ভিতর খাঁ খাঁ করে রোদ
ঝাঁ ঝাঁ করে রোদ মনের ভিতর
কান্নার চোখে ফুলে ওঠে শিরা
মনে হয় যেন কত জন্ম’র
এখানে তো নেই আকাশের গায়ে
চাদরে টাঙানো চাঁদের আলো
রোজ দু'বেলা যুদ্ধ কেবল
দুই দু'গুণে চার মেলানোর
ক্যানিং ফেরত লোকাল ট্রেনে
স্টেশনে এসে রাত দশটার
পড়িমরি এই জীবনের ভারে
জীবনকে দেখি বাঁচা সস্তার
শাপলার আঁটি পাঁচটাকা পিস
ঝিঙে, কাঁকরোল, লালশাক চার
হাঁপাতে হাঁপাতে রাত দশটায়
কিনে আনি পেঁপে পনের টাকার
ঘাড় নিচু থাক সকালসন্ধে
একঘেয়ে চল পুরনো নিয়ম
ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো আয়ুর দখলে
ঠকে ঠকে চল অনমনীয়
এই কি জীবন? এই কি চেয়েছি
ঠুকরে ঠুকরে গোঁয়ার অন্ধ?
জীবনের মানে ভালো তো কোথাও
নাকি সবটুকু শুধুই মন্দ?
খুব কি কঠিন খুঁজে বের করা
জীবনের ঠিকঠাকই সংজ্ঞা?
জীবন যেমন ফুলপাতা নয়
তেমনই তো নয় ভুল অঙার
সুযোগ পেলে পালাতেই পারি
ফেলে রেখে ভ্রম, মরিচিকা, ঘুণ
রোজকার এই মরে বেঁচে থাকা
জীবনের নামে কালিমা দ্বিগুণ
এপার থেকে জল মুছলেও
ভিজে থেকে যায় ওপারের কাচ
জলে ডুবুডুবু জীবন শেখায়
একই মুদ্রার বিভিন্ন নাচ
যেখানে তুমি নেই
মুক্তো ছুঁয়েছ কি?
লিখেছ মুক্তি
তুমি কি খেতে খেতে
আগুন শুঁকেছ?
আমি তো কোনোদিকে
তাকাতে পারি না
গেরুয়া ভ্রমে মজে
শরীরে পুড়ে যাই
তালার ঘরে মন
চাবিও নেই আর
পেঁপের দুটো চারা
বুজেছে চোখ কি?
আমি কি ফিরে যাব?
ফেরার পথ কই?
আগুন দিও তবে
জিভেতে ছোঁয়াব
আগুন যদি দাও
এখুনি গিলে খাই
এ পোড়া মনে আর
বাসনা কিছু নেই
দেওয়াল খুঁড়ে খুঁড়ে
ছায়া যে ধরেছি
যেখানে তুমি নেই
যেখানে তুমি আজ
যে আমি নিজের মতো
ওর জন্য আমি আমার মতো হতে পারিনি কখনও
এতবার বারণ করেছি তবু
ভিতরে বসে বসে দলা পাকায়
গুটিয়ে তোলে, ছেড়ে দেয়
নাস্তানাবুদ করে হরবখত
ভয়ের কথা বলে সারাদিন
অথচ ঝড়কে কলা দেখিয়ে
ছুটে যায় পিচ্ছিল ঘাসের দিকে
ফড়িং-এর জিভ ধরে দোল খায়
গান ধরে খোনা গলায়
লোকে তো বিরক্ত হবেই
তারা শ্লোগান দেয়, মিটিং মিছিল করে
ধিক্কার জানায় লোকসমাগমে
তবু কী এক নাছোড়বান্দা স্বভাবে
ও একাই টিকে থাকে বছরের পর বছর
আপন ভাবে আনমনা
ঘাড় থেকে যতবারই নামাতে যাই
ততবারই কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে থাকে
নিষ্পাপ জন্তুর মতো
এতশত সামলে আমার
আর নিজের মতো হওয়া হয় না
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন