কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

চিরশ্রী দেবনাথ



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬



যে সময় প্রবাহিত    

টিভির খবর দেখতে দেখতে ক্লান্ত  নিকিতা। লক ডাউন বাড়ছে তো বাড়ছেই। কলেজ বন্ধ সেই কবে থেকে। দুর্বল নেট ওয়ার্কের জন্য অনলাইনে যে ক্লাসগুলো  হয় খুবই আঁধাখেঁচরা। বইপত্র ঘেঁটেঘুঁটে নিজেই নোটপত্র বানাচ্ছে। মা এসে বড় এককাপ চা আর মুড়ি ও ডালের বড়া কয়েকটি দিয়ে গেলো। আজ    বোধহয় ডালের বড়া দিয়ে কিছু রান্না হবে বাড়িতে বা ডালের সঙ্গে ডালের বড়া। জানলার বাইরে বৃষ্টিভেজা টগর ফুলের গাছ। পাঁচিলের উপর ঝেপে আছে উপচানো হলুদ, পাড়ার বেড়াল বসে আছে পাঁচিলের ওপর। বেড়াল নাকি করোনার খতরনাক বাহক। একটি পোড়ামত ডালের বড়া দিয়ে ঢিল মারল  নিকিতা। বেড়ালটি নেমে পালিয়ে গেলো। ম্যাসেঞ্জারে শায়রকে অললাইন দেখে ওকে ফোন করল, কী রে পড়া কেমন চলছে? শায়র খুব নিরাসক্ত উত্তর দিল, চলছে রে, কী হবে পড়ে?  টাকা রোজগার করতে হবে রে। টাকাই সব। সংসারের অবস্থা ভালো নয়। তোর তো চিন্তা নেই, তোর বাবা সরকারি চাকরি করে। তোদের জাত আলাদা! একটু যেন শ্লেষের হাসি দিয়ে শায়র ফোন রাখল।

করোনা শুরু হওয়ার আগে একদিন শায়র অন্যমনস্ক ভাবে নিকিতার চুল ঘেঁটে দিয়েছিল। সেই মাধুর্যকে বুকের মধ্যে চালান করে দিয়ে নিকিতা করোনা কালকে  উপভোগ করছিল। আচমকাই মনে হলো ভাইরাসটি বড় নিষ্ঠুর তো! আজকাল  বাড়িগুলো কেমন নিঝুম লাগে।  

কলিংবেলের শব্দ হতেই মাস্ক  লাগিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল নিকিতা।  
বড়মাসী, একটু গ্রামের দিকে থাকে। আরে এসো এসো! না রে, আসতে পারবো না। কত রাস্তা ঘুরে এলাম। কাল রাতের  ঝড়বৃষ্টিতে আমাদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলো রে। পচে যাবে তাই এইসব ঝিঙে, পটল, কুমড়ো তোদের জন্য নিয়ে এলাম। আর পুকুরের মাছ। কী খাচ্ছিস তোরা কে জানে লক ডাউনের বাজারে! বলেই বড়মাসী মানে মায়ের দূরসম্পর্কের বোন চলে গেলো। মায়ের আসার  অপেক্ষাও  করল না। অবশ্য মা বেশি পছন্দও করে না এই মহিলাকে। তবে নিকিতার খুব ভালো লাগে, তিনিও প্রায়ই বেহায়ার মতন আসেন। মা যা থাকে ঘরে তাই দিয়ে ভাত খাইয়ে দেন, একটু রঙ চটে যাওয়া শাড়ি মাঝে মাঝে দেন মাসীকে।

কে এসেছে? বলেই সামনে ব্যাগ দেখে নিকিতার মা থমকে গেলো। সব বাইরে  থেকে ধুয়ে তুলতে হবে। ব্যাগ খুলে দেখা গেলো শুধু সব্জি নয় আম, লিচু, পাকা কাঁঠাল, নাড়কেল সেইসঙ্গে বড় এক প্যাকেট ঘরে তৈরি মুড়ি। বড়মাসী এসেছিল, নিকিতা ঠাণ্ডা গলায় বলল। হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি, মায়ের গলার স্বর খুব মৃদু শোনালো, একটু বসতে বললি না রে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন