কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

ঝিলম ত্রিবেদী



কবিতার কালিমাটি ১০২



কথা দিলাম

আজ রাতে একটা পরিচ্ছন্ন পাঞ্জাবি দুলছে হাওয়ায়। আজ রাতে। হাওয়ায় দুলছে ঘর। ঘরের সহোদর গাছের, মেয়েলি শরীর দুলছে হাওয়ায়। তারপাশে অফুরন্ত অফুরান শিকড়। প্রোথিত প্রেতের মত দুলছে হাওয়ায় আজ রাতে!
তোমাকে দেখিনি আমি কতদিন ইশকুলের মতন
তেঁতুল ঠোঁটের কোণে, চোখে যেন ইতুপুজো দেয়
গ্রামের মেয়েরদল
নিরক্ষরতা অভিযান
হাফছুটি হবে তুমি, আমি হব রথতলা হাট!
দুলে দুলে পড়ে কারা। ‘ইতি’ লেখও চিঠির প্রথমেই। কিছু কি বলার আছে- সব কথা শেষ নয় বুঝি? গামছা শুকিয়ে গেছে, সেই কোন বিকেলবেলায়। লুঙ্গির গায়ে আঁকা দূরের পাহাড়ি ঝাউবন। নিরালা। স্তব্ধতার তীর। দ্বিপ্রহর পড়ে আছে। দুপুরেরা পড়েই তো থাকে... একাকী বাদাম খায়- খোসা উড়ে যায় সেইখানে, যেখানে এখন তুমি তাকিয়ে রয়েছ নিমপাতা! ধানের গাভীন ক্ষেত, মহিলারা সুর করে গায়। আবছা আলোর সাথে আবছায়া আঁধারের গান। সেইখানে সে যে থাকে। সেইখানে কুঞ্জের পথে, এখনও তোমার মায়া বিছিয়ে রেখেছ একা একা-
শরীরের থেকে চোখ উড়ে যায় তোমার শরীরে
এখনও শরীর থেকে সন্ধের শাঁখ ভেসে আসে
আজকের রাত বড় ব্যথায় সুনীল হয়ে আছে
হাওয়ায় উড়ছে কিছু টুকটাক টুকরো পালক
কাপড় শুকিয়ে গেছে, তুলবে না কোথায় গেলে গো
যাও মেঘ ব'লো তারে- আমি মরে যাব কথা দিলাম!

(বিনয় মজুমদারের জন্য)


পলতাপাতা

পাতা খসে, সারাদিন পাতা খসে... পাতা
ঠাকুরমা ঝাঁট দেয়
জড়ো করে পাতার অধিক কিছু
একে কি বিস্ময় বলে-
পাতার অধিক এই কিছু
জড়ো করে ঠাকুরমা, জড়ো করে, সারারাত ভরে ওঠে পাতা
রাত্রে আগুন হবে
সেঁকবে শরীর আর ঘা
মানুষেরা...
রাত্রে আগুন হবে স্থির আলোচনা
বসবে অবুঝপারা পাড়া
পোহাবে আকাশিরঙ
পোহাবে আকাশময়ী তারা...
ভেসে যাবে কন্যাদায়
সকলের ঘরে বিয়ে হবে
শিশুর ঠোঁটের মত কচি শীত, নিহিত দুপুর-শাড়ি
বাদামি গাছের ডালে, ডালে ডালে, ঝালর ঝোলাবে
এ-ই-স-ব
জড়ো করে ঠাকুরমা
পাতার উপর কারুপাতা
আলপনা জড়ো করে, ঘোড়ানিম গাছের আশিস
পাড়াটি পুণ্যবতী
মেয়েরা শিকলহীন হেথায়
পাতা খসে সারাবেলা, বারোমাস পাতা খসে যায়...


লেপচাজগৎ

বুন্দ বুন্দ গিরে, ফির আয়ে দুধিয়া সকাল
রতিয়া কাটে না পিয়া, দেখ তোর কেমন আঘাত!

কুয়াশায় আয়
পাশে বস
শীত শীত মেরুহীন চাদর
উড়ে উড়ে যায় পালকেরা
পাশে বস
হাত পাত হিমেলে, অনন্ত আয়ুরেখায়...

মুখে তোর বরষার চান্দেরি আহা
গালে মোর ভিগে তেরে হোঁট
আজাও আজাও তোহে বরখা পুকারে মেরি

চন্দনে আঁকা বাহুডোর...
বরফিয়া বরফিয়া
তুলো তুলো
গুঁড়ো গুঁড়ো হাওয়া

আকাশে আকাশে দেখ মেঘের মেঘেলি আসা যাওয়া-
আয় কাছে
বস ভীরু আঁখি-
আজ এই কুয়াশায় পাখিঠোঁটে মিশে যা না পাখি!



4 কমেন্টস্:

  1. অনেক গুলো লেখা একসাথে পড়ে খুব ভালো লাগছে। অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছে। তোমার লেখা সবসময় আনন্দ দেয়।

    উত্তরমুছুন
  2. বরাবরের মতো পাঠমুগ্ধ!!

    দ্বিতীয় কবিতাটার সাথে সবচেয়ে বেশি একাত্ম হতে পারলাম!!

    বিনয়কে নিয়ে কবিতাটির জন্যে বিশেষ ধন্যবাদ !!

    উত্তরমুছুন