কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

কাজল সেন



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬



শূর্পণখা (পুং)


বিয়ের আগে থেকেই আশঙ্কাটা ছিল। বিয়ের যখন সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে, তখন মা বাবাকে বারবার তার আশঙ্কার কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছিল রশ্মিতা, পাত্রর নাড়ি নক্ষত্রের পাশাপাশি এটাও যেন খোঁজ নেওয়া হয় যে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তার নাক ডাকার বদভ্যাস আছে কিনা! যদি থাকে, তাহলে তার সঙ্গে যেন সম্বন্ধ না করা হয়।

রশ্মিতার রাতের নিশ্ছিদ্র ঘুম খুবই জরুরি। সম্প্রতি ভার্সিটিতে কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জালানের তত্ত্বাবধানে গবেষণার কাজ শুরু করেছে। সারাদিন স্টাডি এবং ল্যাবরেটরির কাজ সেরে সন্ধ্যে নাগাদ যখন সে বাড়িতে ফিরে আসে, তখন  সত্যি সত্যি খুবই শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েআবার বাড়িতে ফিরেও রাতের খাওয়া সেরে আর একপ্রস্থ বসতে হয় বই ও জার্নাল নিয়ে। শুতে শুতে রাত সাড়ে বারোটা বা একটা। এরপর চাই একটা সলিড ঘুম। না হলে পরের দিন এনার্জি পাবে কী করে!

কিন্তু রশ্মিতা যাই বলুক না কেন, পাত্রীর বাড়ি পাত্রের বাড়ির লোকেরা সম্বন্ধ করতে এলে একথা তো জিজ্ঞেস করা যায় না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় পাত্রের নাক ডাকে কিনা! সুতরাং নাক ডাকার প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে যে পাত্রের সঙ্গে রশ্মিতার বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করা হলো, সেই পাত্র অর্থাৎ দিগঙ্গন খুবই উচ্চশিক্ষিত, চাকরিক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুদর্শন।  

ঘটি বাড়ির বিয়ে, তাই সারারাত বাসর জাগা, ঘুমের কোনো ‘সিন’ই ছিল না।  পরদিন শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে কালরাত্রি। দুজনেরই ঘুমের পালা, কিন্তু আলাদা আলাদা। বিয়ের তৃতীয় দিনটিই হচ্ছে তাৎপর্যপূর্ণ দিন, সবদিক থেকেই। রশ্মিতা  বিয়ের দিন রাত জেগে কালরাত্রিতে মড়ার মতো ঘুমিয়ে বৌভাত ও ফুলশয্যার দিন তরতাজা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মাথার মধ্যে যে আশঙ্কাটা সমানেই নড়েচড়ে ভ্রমণ করছিল, তা কিছুতেই তাকে স্বস্তি দিচ্ছিল না। দিগঙ্গন যত ভালোই  বর হোক না কেন, বিশাল পণ্ডিত বা বিরাট অঙ্কের মাইনের ম্যানেজার, যদি ঘুমের ঘোরে নাক ডাকে আর রশ্মিতার ঘুমের চোদ্দটা বাজিয়ে দেয়, তাহলে রশ্মিতা দিগঙ্গনকে কিছুতেই মেনে নেবে না বা একই ঘরে শোবার জন্য রাজি হবে না।

দিগঙ্গনের এসব ব্যাপার আদৌ জানা ছিল না। সে সারা শরীর ও মন জুড়ে  অনাগত রাতের প্রথম মিলনের স্বপ্ন মাথায় নিয়ে উৎসব বাড়ির বিভিন্ন কাজে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। দুপুরে বৌভাতের আসর, সন্ধ্যায় প্রীতিভোজের পর বিভিন্ন স্ত্রীআচার সেরে যখন তাকে একদঙ্গল বাড়ির মেয়ে-বউ মজাকি করতে করতে ফুলশয্যার ঘরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল, তখন সে রীতিমতো হকচকিয়ে গেছিল। কোনো মেয়ের সঙ্গে এভাবে একলা ঘরে নিশিযাপনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তার দুরবস্থা অনুমান করে অগত্যা রশ্মিতাকেই উদ্যোগী হতে হলো। কিছুক্ষণ আলাপ ও প্রলাপের পর কিছুটা আদর, আলতো চুমু, সারাজীবন একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার, সবই হলো। তারপর যথারীতি সারারাত জাগার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়ল। না, রশ্মিতা ঘুমোয়নি, মটকা মেরে পড়েছিল। আর তখনই শুরু হলো দিগঙ্গনের নাসিকাগর্জন।

তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল রশ্মিতা। এখনই একটা তীরধনুক চাই। শূর্পণখার (পুং) নাক উড়িয়ে না দিলেই নয়!  

2 কমেন্টস্:

  1. কাজলদার গল্প এমনিতেই বেশ সুখপাঠ্য হয়, এবারে নামকরণ এবং গল্পের বিষয়বস্তু রসিক পাঠকের ভালো লাগতে বাধ্য।

    উত্তরমুছুন