কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়




বলনকেতার রিমোট কন্ট্রোলে সমীর খুলছে খুল যা সিমসিম



এই এক অভ্যাস। দিক নেই বিদিক নেই, কেবলই নতুনের মোহ। সব পেয়েছির দেরাজ ডাক দিয়েছে কোন সকালে। আমি এটা ওল্টাই ওটা পাল্টাই। ইচ্ছেরা ঘুরে ঘুরে মরে লুকোনো গুপ্তধনের আশায়। অন্ধকা্র স্টেশনগুলোতে আলোর প্রতিশব্দ খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে মেথি শাকের গন্ধ এসে ঝাপট দেয় গোপন দরজার রিমোট কন্ট্রোলে। অদৃশ্য আলোর সংকেত থেকে খুব সাবধানে আমার আমিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখি। অনুশাসনহীন আঙুল রাখি মলাটে। প্রচ্ছদের মুখ নিয়ে আর একটা মুখের রেখা টানি। ভেতরের সম্ভাব্য বিষয় নিয়ে অসম্ভবের টানাবোনা। চারপাশ হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি আর আলতো উচ্চারণ - খুল যা সিমসিম খুল যা সিমসিম। যেন মলাট ওল্টালেই কাঙ্ক্ষিত ঐশ্বর্য। যেন এখনি ফস করে জ্বলে উঠবে আলাদিনের সলতে আর অক্ষরের ভেতর উন্মুক্ত হয়ে পড়বে রহস্যময়ীর গোপন অলঙ্কারসকল।


দরজা
        ঘোর ও বেঘোর
                                এবং দরজা
                                                        বন্ধ দরজা
                                                                        চাবিসমেত
আমি চাবি খুলে নিই হুক থেকে
আমার চারপাশ থেকে খুলে যায়
                                          সময়
সময়ের হাতে চৌকাঠ হারানো ভূত ও ভবিষ্যৎ
                                                                বহুজাতিক
আমি সময়হীনতার ভেতর
                                 এক পা
                                         এক পা

টাইম এন্ড স্পেসের ধারণাগুলো
ওলট
        পালট 
সূত্রের হাতি ও ঘোড়া
এমন বাঁকবদল যেন
                         আমি নয়
                                        তুমি নয়
আমার অবস্থানই পাটরানি 
আমি ভাবি             আমি তবে কে
খোলা সমীরে বাতাসের মন্ত্র
                                  তুমি কেউ নও
                                                        অনন্তের এক উপাদান মাত্র

সংজ্ঞাবদল। বাকবদল। ভাষাবদল। বাঁকবদল। বদল। বদল। আমি এক বদলের মুখোমুখি। অথচ কী নামে ডাকব বলো তোমায়। প্রচলিত নাম ধাম মুলতুবি রেখে আমি বৃষ্টিতে অভ্যস্ত হতে শিখি। ক্রমাগত ভিজতে ভিজতে ছাতা হারানোর দুঃখুগুলো কখন যে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় মাঙ্গলিক বচনের তোড়ে। প্রথা ভাঙছে। ফর্ম ভাঙছে। কাঠামো ভাঙছে। এত যে ভাঙছে কোথাও শব্দ ওঠে না। শুধু এক নিমগ্ন শব্দোচ্চারণ। নিঃশ্বাসের ভেতর অনিঃশ্বাসের মন্ত্রণা। এমন অনায়াস এমন সাবলীল যেন কোনো নির্মাণ নেই, গড়ে ওঠার প্রয়াস নেই। স্থিরচিত্র এই অনন্তে দিগন্ত ফুটিয়ে তোমার যাত্রা। অথচ কোথাও পদশব্দ নেই। অশ্রুত বিগব্যাং মনে পড়ে। কীভাবে মিথ্যে শূন্য নঞার্থকে বাজিয়ে দিলো ব্রহ্মাকর্ষণ। কীভাবে  অণুকণা জুড়ে জুড়ে বস্তুজগৎ। নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাজেনি কোথাও। ব্রহ্মাণ্ডের মতো কেবলই সচেতন প্রসারণ। কেবলই গড়িয়ে যাওয়া এক থেকে বহুস্বরে এক থেকে বহুভ্রূণে এক থেকে বহুবীজে -

শুরু নেই শেষ নেই
অনন্ত প্রবাহের পাতা
কেবলই খুলে খুলে যায়
                           একটার পর একটা
                                                        একটার পর একটা
নতুন ভ্রূণ ফুটছে
                        গর্ভ থেকে গর্ভান্তরে
আমি হাতড়ে বেড়াই
                         তাদের জন্মরহস্য
চিহ্নায়ণের ঘরে খুঁজতে বেরোই
                                        পরিচয়পত্র
আমি কান পেতে শুনি
                                বহু কণ্ঠস্বর
খুঁজে বেড়াই তাদের সম্পর্কসূত্র
যোগবিয়োগের অঙ্কগুলোয় সংকলনের চিহ্ন বসাই
আঙুলে লেগে যায়
                        খেলা ভাঙার খেলা
যেন ভাঙবে বলেই গড়ে উঠছিল
                                         খেলার পরিসর
গোল দেবার মোহ নেই
জিতিয়ে দেবার মাহাত্ম্যও নেই
জয়ের ভেতরবাড়িতেই পরাজয়ের বাসা
এমন যুগলবন্দি
যেন চৌরাশিয়া বেজে উঠবে জাকিরের অন্দরমহলে
---------------------  


যে কবির বলনকেতা থেকে এইসব তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

কবি ও লেখক সমীর রায়চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৩ সালে ২৪ পরগণার পাণিহাটিতে।  কলকাতার আদি নিবাসী সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সন্তান। হাংরি আন্দোলনের অন্যতম কবি যিনি সাহিত্য ও বিজ্ঞানকে একটি মঞ্চে একত্রিত করে নবতর একটি সাহিত্যচিন্তা প্রণয়ন করেন যার নাম দেন "অধুনান্তিক"। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা: কৃত্তিবাস(ফণীশ্বরনাথ রেণু সংখ্যা), হাংরি বুলেটিন, শাশ্বত (বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় সংখ্যা), সংক্রামক (হিন্দি) এবং হাওয়া ৪৯। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ঝর্ণার পাশে শুয়ে আছি, আমার ভিয়েৎনাম, জানোয়ার, মাংসের কস্তুরীকল্প, পোস্টমডার্ন কবিতাগুচ্ছ, বিদুরের খড়ম, নির্বাচিত কবিতা; ছোটগল্পের বই: সিগারেটের তিরোভাব ও অন্যান্য, ছাতা হারানোর বর্ষাকালীন দুঃখ, পোস্টমডার্ন গল্পগুচ্ছ, খুল যা সিমসিম; প্রবন্ধের বই: কবিতার আলো অন্ধকার, পোস্টমডার্ন কবিতা বিচার, পোস্টমডার্ন বিড়ালের সন্ধানে, উত্তরাধুনিক প্রবন্ধ সংগ্রহ। পোস্টমডার্ন কাব্যতত্ত্বের পৃষ্ঠপোষক সমীর রায়চৌধুরী এই কাব্যতত্ত্বের ওপর বহু বই সম্পাদনা করেন, পোস্টমডার্ন: অধুনান্তিক, পোস্টকলোনিয়ালিজম: উত্তরঔপনিবেশিকতা ইত্যাদি। তাঁর আরো তথ্য উইকিপিডিয়ায়, https://en.wikipedia.org/wiki/Samir_Roychoudhury



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন