কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬



ফেরৎ


নিয়মমাফিক ফেরৎ বোধহয় দেওয়াই যেত…
কোনও একটা, বন্ধুদিবসে গালভরা চ্যাটবাক্স ভরিয়ে দেওয়াই যেত। অ্যাকোরিয়ামের রং-বাহারী পাথরের মত সে-সব থিতিয়ে পড়তো একসময়। আর তোরা বা আমরা, চার-চারটে মাছ হয়ে ভেসে বেড়াতাম।
সহজভাবে বলতে গেলে, কঠিনভাবে বলাটা সহজ। তাহলে বরং আজ একটু কঠিন কাজটাই করা যাক্…

শেষ দুটো লাইন ছিল, আমাদের আজকের কানমাছির চোখ বাঁধার রুমাল। এবার যতক্ষণে তোরা আমাকে না ধরছিস, ততক্ষণে আমি ওদিকটা হয়ে আসি। সুদে-আসলে কড়ায়-গন্ডায় সব আজ ফেরৎ দেবো।
বেশ… তাহলে শুরু করা যাক্…
হয়তো কোনওদিন ভাবিনি, চাউমিন আর পাঁউরুটির পোলাও ছাড়াও, একদিন আমাদের মধ্যে ভাগ করার অনেক কিছু থাকবে। পাওয়া না-পাওয়া, চাওয়া না-চাওয়া…

নাহ্… ওসব বড় কঠিন শব্দ। আজ সবকিছু সহজ হবে। সবকিছু…
খানিকটা আমাদের বন্ধুত্বের মতই।
তবুও, স্কেল-পেনসিল নিয়ে, কোনওদিন বসা হলো না, মাপা হলো না গভীরতা, কলেজ ফিরতি বিকেলগুলোর।
কঠিন হয়ে গেল?
মোটেই না…
এদিকে আয়;
চুপটি করে বসে শোন বরং।
এই যে তোরা, অনর্গল গবেষণা চালাচ্ছিস বায়োডাটা-র নকশা নিয়ে…
আর এই যে আমি…  ঠান্ডাঘরের চার দেওয়ালে খোদাই করে যাচ্ছি আমাদের ভালোবাসা। একদিন যখন তোরা খুব বড় হবি, আঙুল বুলিয়ে চেখে দেখবি সে-সব। আমি হয়তো তখনও, ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে রোজকারের পসরা দেখে দেখে ভাববো। ভাববো, আমার প্রথম স্যালারিতে তোদের উপহারের কথা।
হাজারো কথার ভিড়ে যখন আমরা হারিয়ে যাই, ঠিক তখনই হাল্কা করে একটু দূরে সরে গিয়ে আমি আমাদেরকে দেখতে পাই।
সেদিনও দেখেছিলাম তোদের। মাএর হাতে যেদিন চুড়ির বদলে, স্যালাইনএর চ্যানেল ছিল।  আমার ক্লান্ত চোখের ছায়ায়, ওই তিনটে চেহারার ভেতরে একটা অসম্ভব কান্না তৈরী করছিল… পাশে পাওয়ার আনন্দে গলা ধরে আসছিল।
এটার কোনও স্ক্রিনশট্ পাইনি। এটার কোনও হ্যাশট্যাগ…
এইভাবেই বৃষ্টি পড়ছিল একদিন… সেক্টর ফাইভের রাস্তাজুড়ে অথবা গড়িয়া প্ল্যাটফর্মে। তোর আর আমার অনিশ্চয়তাগুলো ভিজে যাচ্ছিল সমান তালে। আর, হাঁ করে চেয়ে দেখছিল, আমাদের ছয়-ছয় বারো টাকার পেয়াঁজি।
তোর বাগবাজার ঘাট,
তোর ওয়েব ডেভলপমেন্ট কোর্স,
তোর ট্রাভেল ব্লগ,
সবটাই আসলে আমার,
আমাদের…
যেমন করে আমার সব উচ্চারণ, সব বানান ভুল আসলে তোদের।
আসলে কি জানিস তো;
ভরদুপুরে, মোড়কে করে, ওটায় আসলে কবিতা ছিল না, ছিল অনুপ্রেরণা…
যেমন করে, এটাও আসলে গল্প নয়, ধার করা শব্দে ‘বেঁচে থাকার গান’…
সহজভাবে বলতে গেলে…
এ ভাই,
কঠিন হয়ে গেল না তো?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন