কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

শুভায়ু দে



কবিতার কালিমাটি ১০২



চাঁদেলা

(১)

আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে বিছানায় যখন চাঁদ খাবো আমি।
মাথা থাকবে নোয়ানো, তার বুকের দিকে।
ওপরের চাঁদ ভুলে যাবো।
তাই ঘরের দেওয়ালের রঙ রেখেছি আকাশি।
আর একটা আয়না টাঙিয়ে রেখেছি।
পাশ ফিরলেই দেওয়ালে দেখবো জ্যান্তচাঁদ।
চাঁদের উল্টো পিঠে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আমার মাংসল আঙুল।
নভোচারীর মতো দেওয়াল ভেঙে নামবো নরকে।

তখন কি আর উপরের দিকে তাকানো চলে!

(২)

আমার মুখ জুড়ে দাগ, ব্রণ'র। মুখে অন্ধকার।
ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ওঠে চমৎকার ছবি।

চাঁদও তো সেরকমই, আমার মতো।

তবু চাঁদ সুন্দর বলে কবিতার বই ছাপা হয়!
আমাকে তো কেউ সুন্দর বললো না!

(৩)

আমার ঘরে টেলিস্কোপ নেই, জুম করা ক্যামেরা নেই।
মোবাইলে ছবি ওঠে চাঁদের, অস্পষ্ট।
তা দিয়েই এক টুকরো চাঁদ ধরে গ্যালারীতে ভরে রেখেছি আমি।

আগেই বলেছি আমি নরকের অভিযাত্রী।
ওপরে তাকানোর সাহস নেই।

যেইদিন দিঘির জলে চাঁদ ভেসেছিল,
আমি পা  ডুবিয়েছিলাম।
ছায়ায় ছায়ায় ডুবছিলাম।
আর বুক পকেটে গ্যালারীতে বন্দী এক টুকরো চাঁদ।
পা ভেসে যাচ্ছে জ্যোৎস্নায়।

সেইদিন চাঁদ আমায় কুড়ে কুড়ে খেয়েছিল।


শেষ মৃত্যু

মাঠে পেতে দেওয়া সবুজ প্রেমিকা ধান।
যেন আকাশে উড়ে চলা বুভুক্ষু পঙ্গপালের ঝাঁকের কলার ধরে নামিয়ে নেয় বুকে।
মৃত্যু নিশ্চিত তবে সেটা বৈধ।
তবু তো শেষ অগ্নিযোগ, তবু তো শেষ প্রেমাঘাত।
আর অবৈধ মৃত্যুগুলো প্রতিদিন জীবনের জানালার কোণে বোলতার বাসা হয়ে বাড়ে।
খুব গোপনে যত্নে মৃত্যুর রণসজ্জা প্রস্তুত হয়।
একদিন হাত পড়ে গেলেই, সব অভিমানগুলো হুল ফুটিয়ে মারবে।
তাহলে কি এই জীবন্ত মৃত্যুর থেকে শেষ মৃত্যু ভালো নয়?

সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগেই রেখেছি জল।
হাত ধোবে, পা ধোবে, তারপর আত্মশুদ্ধি হয়ে গেলে হাসি নিয়ে উপরে উঠো।
যেমন হাসি নিয়ে নরকে নেমেছিলে রাতজুড়ে।
মৃত্যুর জন্মান্তর হয়ে গেলো আর হাসির জন্মান্তর হবে না!

সরলরেখায় চলতে শুরু করেছিলাম।
তারপর ক্রমশ জটিল হয়ে গোল হয়ে ফিরে এসেছি ঘরে।
এ আমার যাত্রাশৈলী।
শূন্যতে পৌঁছোতে হয় শেষে।
সবাই চায়, তবে পারে না।
অসমাপ্ত শূন্যেই শেষ হয় জীবনের
কী আশ্চর্য!

কী আক্ষেপ নিয়ে চলে যাব জীবন থেকে ভাবতে ভাবতেই
প্রতি রাতে মৃত্যু আসে।

আমি গ্রহণের মানুষ।
সূর্য ওঠা দেখলে ভয় পাই, আমি ফটোফোবিয়ার শিকার হই।
তাই কিনে জমিয়ে রেখেছি গোটা কয়েক রোদচশমা।
অন্ধকারে শূন্যের জন্ম।
আলো অনুঘটকের মতো বাড়িয়ে দেয় শূন্যের আকার।
আমরা বুঝি না, ভাবি আরো জটিল পিরামিডের ওপরে চড়বো।
কিন্তু ওই যে বললাম, আসলে শূন্যরা বড়ো হয়ে যায়।
নীচ থেকে যে উদ্যমে ওপরে ওঠা যায়,
উপর থেকে সে উদ্যমে নীচে নামা যায়
  না।

শেষ বিউগলের বাঁশি শুনে নিয়েছি।
আমি এমনভাবে খেলে বেরিয়ে এসেছি মৃত্যুকে,
যে মৃত্যুও ব্রীড়ানতা হয়ে রয়েছে।
এ অধ্যাসেই আমি মৃত্যুকে পাহাড়িয়া বাঁশি রূপে দেখি।

আমি তো চিরকালই নিজেকে শঙ্কাবিলাসী আখ্যা দিয়েছি।


বাউন্ডুলে

দায়িত্বজ্ঞানহীন, যাদের সুচিন্তক বলি।
পাল্টা ঝড়ে তারাই, আজ ঘর-দুয়োর দেয়।
যারা মিষ্টি নলেনগুড়, তাদের
  মনের কালোপ্যাঁচ।
তাদের পকেট পেটো বোমে, সব পায়রা মরে যায়।

ওই পায়রা মরে গেলে, শহর আলকাতরা পায়।
আলগা কোলাপসিবল, তালা ঝুলছে দরজায়।
তালা ভয় দেখানোর খেলা, তুমি ভিতর ভিতর ভীতু।
ওরা একশো জনে এলে, দেখি কী করতে পারো?

ওই একশো জনের পোশাক, দেখো আলোয় ঝলকায়।
ওরা হাড়-হাতুরি গায়ে, ওদের পোশাক খুব মানায়।
তুমি কাজ ফুরালে কাজী, ওদের বস্তি-বাড়ি বলো।
ওরা রক্ত মজুতদার, ওরা বাউণ্ডুলেই ভালো।




1 কমেন্টস্: