কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

অপরাহ্ণ সুসমিতো



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬



গড়াগড়ি


যখন একলা লাগে খুব, আমি লাল নীল গল্প বানাই। এক পায়ে শুধু মোজা পরি, মাথার চুল এলোমেলো রাখি। পকেট থেকে ভাংতি পয়সাগুলো ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাখি, কী যে ধনী লাগে তখন! কখনো জুতো পরে দেখি আমাকে বিল গেটসের মতো লাগছে কী না, নাইট রাইডারের গাড়ির ছবি দেয়ালে টাঙ্গাই।

মজমাদার আলী নামে আমার এক বন্ধু আছে, সারাক্ষণ গালি দিয়ে কথা বলে, ওনাকে ফোন করে বলি, স্যার আমার একলা লাগছে। উনি খুব মোলায়েম করে বলেন, কাকে গালি দিতে হবে? আমি বলি, আপনাকে। উনি ভয়ে লাইন কেটে দেন।

রণিমা নামে আমার এক বান্ধবী আছে, ওর বর জাতিসংঘে কাজ করে। বর না থাকলে রণিমা আমার সাথে ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা’ খেলে। রণিমাকে ফোন করলেই বোঝে যে একলা লাগার বিষয়টা। সে বলে, ধর আমি তোকে বিয়ে করলাম আর আমাদের ১১টি ছেলেমেয়ে...
আমি আর কিছু শুনতে পাই না।

শহরে কুমড়ো চাকতির মতো চাকচাক অন্ধকার নামতে শুরু করে, আমি সব পোষাক খুলে ফেলতে শুরু করি। সংবিধান বের করি। কী আশ্চর্য! নগ্ন হয়ে সংবিধান পড়তে কী যে সুখ!

আমি প্রথম যেবার আর্মস্টাডার্ম যাই মাদাম তুসো দেখতে, সেখানে এক ডাচ মেয়ের সাথে পরিচয়। আমাকে বললেন ৫০টি মুদ্রা দিলে তার সাইকেলটি বিক্রি করে দেবেন। আমি কিনে ফেললাম সাইকেলটা। মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে কান্না। বললাম, আমি কখনো কোনো মেয়েকে কাঁদতে দেখিনি। তুমি কি আরেকটু কাঁদবে?
মেয়েটা হেসে দিল। ডাচ মেয়েদের হাসি সুন্দর। আমার মন ভালো হয়ে গেল।

আমার বসের বউ আমার সাথে সোমবার ফোনে কথা বলেন। দেখতে সুন্দর। ১০০তে ৬৭। সোমবার উনি চুলে কলপ দেন আর তখনি আমাকে ফোন করেন। অসম্ভব বিশ্রী কন্ঠস্বর। অবাক বিষয়, ওনার গলা শুনলে আমার খিদে পায় খুব আর তিরতির সুরমার মতো মন ভালো হতে শুরু করে।

এক সময়ের সংবাদপাঠিকা তাহমিনা শাহাবুদ্দিনকে আমি একবার চিঠি লিখেছিলাম, চিঠিটা আমার বাবার হাতে পড়ে। বাবা আমাকে বললেন, কী রে যাদুর কাঠি বিয়ে করবি? আমার তখন সারাদিন কোলবালিশ ভালো লাগে; বললাম বাবাকে: আমি রাজি।
বাবা আমাকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলেন।

মন খারাপ করে বিসিএস পরীক্ষাটা দিলাম। প্রতিদিন কাঁদি আর পরীক্ষা দিই। আমার কমিউনিস্ট ভাই ময়মনসিংহয়ের এক ন্যাংটা ফকিরের কাছে নিয়ে গেলেন। জীবনে আমাকে ছাড়া আর কাউকে ন্যাংটা দেখি নাই। ফকিরটাকে নির্বিকার নাঙা ঘুরতে দেখে আমি লজ্জা পেলাম, সাথে সাথে সানগ্লাস পরে নিলাম। কী সুন্দর রঙীন ন্যাংটা ফকিরটা আমার সামনে ঘুরছে!
ভাই কানে কানে বললেন; তোর বিসিএসটা হবে, তুই ফকিরের মতো দিগম্বর হয়ে যা!

মন খারাপ হলে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। আঙ্গুলের নখ কাটতে হয়। কিছুক্ষণ মেঝেতে গড়াগড়ি করতে হয়, তখন কাতুকুতু লাগে, হাসি পায়।

আশ্চর্য গড়াগড়ি করার পরই আমার মন ভালো হয়ে গেল।

2 কমেন্টস্: