কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

অদিতি ফাল্গুনী



সমকালীন ছোটগল্প



স্যাবাথের দিনে

শনিবার ইহুদিদের সাপ্তাহিক বিশ্রাম ও প্রার্থনার দিন। সিনাগগ থেকে ফিরে এ্যালেক্সেইয়ের মত কঠোর ব্যবসায়ীও আর বাজারে যায় না। দুপুরে খেয়ে-দেয়ে খানিকটা সময় সিয়েস্তা বা দিবানিদ্রায় গড়ায়। তারপর সামোভারে সন্ধ্যার চা বসাতে বলে। কে-ও আজ দুপুরে খানিকটা ঘুমিয়েছিল। আজ আর কাল তার ইন্স্যুরেন্স অফিসে যেতে হবে না। সন্ধ্যা নাগাদ উঠে শাওয়ার নিতে যাবার আগে কী মনে করে টেবিলে বসে কে। মাথায় একটি কবিতা এসেছে। এ্যালেক্সেই তার  ঘরে ঢোকে ঠিক সেসময়।
‘কী করছো জোসেফ?’
জোসেফ সত্যি কথাটাই বলে, ‘একটা কবিতা লিখছিলাম।’
শুনে ভয়ানক অপ্রসন্ন মুখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় এ্যালেক্সেই, ‘তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।’
‘বলো এ্যালেক্সেই।’
‘তুমি ত’ চিরদিনই এ বাড়ির লক্ষ্মীছেলে ছিলে জোসেফ। দিমিত্রফের মত কথা না  শোনা, অবাধ্য ত’ কোনদিন হওনি। তবু বড় হতে হতে দিমিত্রফ তোমার উপর অনেকটা প্রভাব রাখতে পারলো, আর আমি - আমি পারলাম না? দিমিত্রফ কিনা ভদ্রবাড়ির ছেলে হয়ে থিয়েটারের অভিনেতাও হতে চেয়েছিল। বাবা-কাকারা মিলে থামালো। আবার তোমার ধরো সাহিত্যের বাতিক। অবশ্য তুমি অফিসেও যাও। আবার মাঝে মাঝে কাজ ছেড়ে ঘরে থাকো, শুধুই লেখো, আবার কাজ পেয়েও যাও অবশ্য। কিন্ত বিয়ে আর কবে করবে? ইহুদির ছেলে ইহুদি মেয়েই বিয়ে করতে হবে বৈকি। সোনিয়াকে নিয়ে একটি গুঞ্জন কানে শুনেছি, সেটা কি সত্যি?’
‘সত্যি হলেও সে আমারই দোষ। আমার - আমার মানসিক বিচলন হয়েছিল।’
‘এটা কোন কথা? মানসিক বিচলন আর দৈহিক বিচলন এক হলো?’
‘আমার একাধিক মানসিক বিচলন হয়েছে, এ্যালেক্সেই!’
যেন খোদ জিহোভার সামনে অকপটে নিজের দোষ স্বীকার করছে জোসেফ।
‘তবু মানসিক আর দৈহিক বিচলন কখনোই এক নয়। আর একটা ইহুদি মেয়ে আনার কথা যে বলছিলে? হাসি-খুশি, ডালাসে থাকে, বাবার বড় ব্যবসা, তোমার মতই মনের উড়ু উড়ু, দুয়েকবার হলেও গভীর কিছু এখনো কারো সাথে হয়নি?’
‘মানে ওকে বিয়ে করতে হলে প্রাগ ছেড়ে ডালাস গিয়ে ঘরজামাই হতে হবে!’
‘কিন্ত, আমি কী করব বলো ত’? বাবা মারা গেছেন। দুই কাকাই অনেক বৃদ্ধ।  ব্যবসা, সংসার সব কিছুর দায় আমার উপর। দিমিত্রফ বিয়ে করলো না। ওর জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে করতে তোমাকেও শয়তানে পেল। কী এক জোয়া নামে কোন্ কম্যুনিস্ট মেয়ে, যে কিনা তোমাকে কোনদিন বিশ্বাসই করলো না,  কোথাকার কোন্ হতচ্ছাড়ি নাতালী, যে তোমাকে ফ্লবেয়ার বানিয়েছিল আবার  কিনা হালে কোন্ মাদাম পোপোভা-’
‘তুমি এত কিছু জানো কীকরে?’
কে অবাক হয়।
‘জানতে হয়। সংসার চালাতে জানতে হয়। পঞ্চান্ন বছর বয়স এমনি এমনি হয়নি। তুমি আমার ষোল বছরের ছোট, এটা মনে রেখো। দিমিত্রফের জন্য  তোমাকে বসিয়ে রেখে তোমার বয়স হয়ে গেল। এদিকে আমার ছেলে দু’টোরও একটার বয়স সাতাশ আর একটার পঁচিশ ছুঁই ছুঁই। আচ্ছা এই পোপোভা কে বলো ত’?’
‘আরে দূর - কেউই না।”
‘তোমার উদ্দেশ্যে সিম্ফনী বাজিয়েছিল কোন এক ভোজসভায়? তাতেই গলে গেছিলে?’
‘না, পরে ও ফুল পাঠালে ফেরত পাঠিয়েছি।’
‘কিন্ত গতকাল তুমি ওর বাসা যে পথে সেই ব্যুলভাঁ হয়ে হেঁটে বাসায় এসেছো,  যদিও অন্য পথও আছে।’
‘এসব তুমি কী বলছো এ্যালেক্সেই? হ্যাঁ গেছি, কারণ সোনিয়ার সাথে আমার  অনেক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। আনার ঘরজামাই হব কিনা জানি না। জোয়া আমাকে কোনদিন বিশ্বাস করবে না, আর বহু বছর পর নাতালী প্রাগে সে  জোয়ার কান ভারি করার চেষ্টা করছে উল্টো। গেছি গতকাল ঐ রাস্তায়, যাব না আবার।’
‘আমি সব জানি। গোটা প্রাগের ইহুদি সম্প্রদায়ে বৃদ্ধদের পর আমিই এখন নেতা, মনে রেখো। থিয়েটার ত’ বটেই সাহিত্যও মানুষকে নষ্ট করে। মাথা বিগড়ে দেয় সবার জোসেফ। ঐ ছাই-পাঁশ লেখা রেখে এখন চায়ের টেবিলে এসো। চা খেয়ে আমরা আর এক দফা তালমুদ পাঠ করবো।’




2 কমেন্টস্:

  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. ভিষণ ভালো লাগলো দিদিয়া। আপনার লেখা সবসময়ই আলাদাকরে চোখে পড়ার মত। খুব ভাল থাকুন, নমস্কার জানাই ❤❤

    উত্তরমুছুন