কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯

সুবল দত্ত




অন্তিম কুরুকুল      
         
আমার এখানে ফুটফুট করছে দিনের আলো, কিন্তু ফোনের ওপাশে যেন ঘন দুঃসহ আঁধার, যদিও ও আমার এখান থেকে মাত্র আশি কিলোমিটার দূরে। এটা ও বলছে না, ওর গলার আওয়াজে বুঝতে পারি। ও ভয় পেয়ে নিশ্চয় অন্ধকার একান্ত কোণে ঢুকে রয়েছে। কিংবা ভয়ানক অবজ্ঞায়, বহুজনের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার।

হ্যালো, কী রে বল কী বলবি? ফিসফিস করে কেন, একটু জোরে বল। ভয় পাচ্ছিস? আজ তোর বড়দার ক্রিয়াকর্ম জানি। নিশ্চয় তোর সব ভাইবোনেরা এসেছে। দারুণ  জমঘট। না? সেরকম কিছু নয়? তোর দাদা ভাই বোনেরা কারা এসেছে তবে? কেউ না? সেকী রে? তোর তো সাকুল্যে ছয় ভাই আর দশ বোন। জীবিত। শুনেছি সাতটা নেই। তোর বড়দারই তো আট মেয়ে আর এক ছেলে। ছেলের অপেক্ষাতে পর পর মেয়ে হচ্ছিল। ছেলেটা যখন নবম গর্ভে তখন ভাগ্যিস সঞ্জয় গান্ধীর কোপে পড়েনি। তা ছেলে তো হীরেজুয়েল। প্রায় চল্লিশ বছর বয়েস হলো এখনো নাকি কলেজে  পড়ছে। কী বললি? কী কলেজ? বেশ্যালয়? তা হবে। আচ্ছা এখন ওখানে সবার বিয়ে বাচ্চা এমনকি নাতিপুতি মিলিয়ে মনে একশ কী বললি? তারও বেশি? হ্যাঁ  তো হেলদি ব্রিডিং কুরু বংশ, হবে না? তোকে অনেকে চেনে না? বলছিস না একই খুন? একই বংশ? অবশ্যি তুই তো নবম সন্তান। তারওপর তোর কপর্দক শূন্য অবস্থা। তোকে কে পোছে! আমার আবছা মনে পড়ে আমি যখন তোদের বাড়িতে যেতাম তখন তোর পাশে শুতাম। ঢালাও বিছানা। সর্বসাকুল্যে বাবা মা ছেলে মেয়ে নিয়ে কুড়িজন। তারমধ্যে দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেছে, সেখানে নেই। আধো ঘুমে অস্বস্তি। তোর বাবা মা উদোম। জড়াজড়ি করে আমাদের পাশেই শুয়ে সবরকমের ক্রিয়াকী বলছিস? ভাল লাগছে না? আচ্ছা বল তাহলে কী বলবি! তুই বলছিস  ঘাটে ওঠার জন্যে কেউ ছিলো না? আচ্ছা বেনেগাছ পুঁতেছিল কিনা পুকুরঘাটে? না? একটা পুটুস ঝাড়ের ডাল ঘরের এক কোণায়? স্নান ওখানেই? হবিষ্যি অন্ন রান্না হচ্ছিল না? হোটেল থেকে মুর্গা রান্না চলছিল। আর তুই কী করছিলিস? তুই মুখে  আগুন দিয়েছিস? তুই পালন করছিস? একমাত্র ছেলে বেঁচে থাকতে? আচ্ছা, তুই যে করলি তো তোর কি লাভ কিছু টাকা? কী বললি, কিছু না? বড়দার আত্মার শান্তি হোক। বুঝেছি রে বুঝেছি। হিন্দুধর্ম জাহাজ রসাতলে যাবার আগে এক দুজনই জাহাজি থাকে জাহাজের সাথে নিমজ্জিত হতে। বুঝলি রে? এই তোদের মত। খেতে পরতে পাস না, কোনো প্রতিবাদ নেই, যে মারা গেছে ও যারা জিন্দা, তাদের কল্যাণের কাজে লেগে থাকে। হ্যাটস অফ।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন