যখন
ঘুড়ি ওড়াতে শিখি, আমাদের
বাড়িতে ছাদ ছিল না। একটা পাহাড়ে উঠে দিলাম উড়িয়ে... বাতাসে আমার ঘুড়িটি কোথায় যে হারাল! সেই ছিল প্রথম শোক।
প্রথমবার যখন হাসপাতালে ভর্তি হলাম, লিফট বেয়ে একা দশতলায় হাজির। নার্স বললেন, আপনার সাথে কেউ নেই?
প্রথমবার যখন হাসপাতালে ভর্তি হলাম, লিফট বেয়ে একা দশতলায় হাজির। নার্স বললেন, আপনার সাথে কেউ নেই?
হেসে
বললাম, অসুস্থতার
খবর আমি স্ট্যাটাস করি না। কী
লাগবে বলুন, কিনে আনি।
দশতলা থেকে নেমে শাহবাগের সিনোরিটায় ডিম-পরোটা খেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে মনে হলো বেঁচে থাকাটা জরুরী।
অরুণিমা নামে আমার এক বন্ধু ছিল, অন্ধ। গান করত। কী আশ্চর্য! সন্ধ্যা হলেই টের পেত সন্ধ্যা নামছে অলিম্পিয়াডের ভেনাসের মতো। বলতাম, গান করো ণিমা।
পকেটে আমার তখন ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি, বাবুর দোকানের বাকী বিল, উল্টোপিঠে লেখা;
কী সুন্দর অন্ধ!
কর্ণফুলী নদীটায় উবু হয়ে জলের ছায়ায় নিজের মুখ দেখে থমকে যেতাম। কে যেন বলছে: এই বাউল তুই অন্ধ!
দশতলা থেকে নেমে শাহবাগের সিনোরিটায় ডিম-পরোটা খেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে মনে হলো বেঁচে থাকাটা জরুরী।
অরুণিমা নামে আমার এক বন্ধু ছিল, অন্ধ। গান করত। কী আশ্চর্য! সন্ধ্যা হলেই টের পেত সন্ধ্যা নামছে অলিম্পিয়াডের ভেনাসের মতো। বলতাম, গান করো ণিমা।
পকেটে আমার তখন ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি, বাবুর দোকানের বাকী বিল, উল্টোপিঠে লেখা;
কী সুন্দর অন্ধ!
কর্ণফুলী নদীটায় উবু হয়ে জলের ছায়ায় নিজের মুখ দেখে থমকে যেতাম। কে যেন বলছে: এই বাউল তুই অন্ধ!
অরুণিমা
গান করেছিল সেই শেষবার, তুমি
কোন ভাঙ্গনের পথে এলে।
তার পরদিন অরুণিমা মারা গেল।
তার পরদিন অরুণিমা মারা গেল।
আমাদের
কনকদা রাতের বেলা একাকী গান
ধরতেন গিটার বাজিয়ে, মাই
টুমরোজ উইল অল কাম ট্রু / বিকজ আই অ্যাম স্পেন্ডিং মাই টুডেজ
উইথ ইউ।
আমার নামটা রেখেছিল ছোটফুপু। ছোটফুপুকে বলতাম, বড় হয়ে তোমাকে আমার সমস্ত রক্ত দিয়ে দেব এই সুন্দর নামটির বিনিময়ে।
তো, নার্সকে ফরমায়েস মোতাবেক সব বুঝিয়ে দিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, নার্স স্যালাইন শুরু করলেন। শুয়ে শুয়ে আরজ আলী মাতুব্বর পড়ছি। নার্স বিরক্ত হয়ে বললনে, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন। কীসব নাস্তিকদের বই পড়েন হাসপাতালে এসে।
তীব্র ব্যথায় ঘেমে যাচ্ছি। মরফিন ঢুকে গেল স্যালাইনে। ছাদের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট ডাউন করছি... নাইন্টি নাইন, নাইন্টি এইট,নাইন্টি সেভেন... ঘুমে তলাবার আগে দেখতে পাই,কী সুন্দর চোখ অরুণিমার!
আমার নামটা রেখেছিল ছোটফুপু। ছোটফুপুকে বলতাম, বড় হয়ে তোমাকে আমার সমস্ত রক্ত দিয়ে দেব এই সুন্দর নামটির বিনিময়ে।
তো, নার্সকে ফরমায়েস মোতাবেক সব বুঝিয়ে দিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, নার্স স্যালাইন শুরু করলেন। শুয়ে শুয়ে আরজ আলী মাতুব্বর পড়ছি। নার্স বিরক্ত হয়ে বললনে, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন। কীসব নাস্তিকদের বই পড়েন হাসপাতালে এসে।
তীব্র ব্যথায় ঘেমে যাচ্ছি। মরফিন ঢুকে গেল স্যালাইনে। ছাদের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট ডাউন করছি... নাইন্টি নাইন, নাইন্টি এইট,নাইন্টি সেভেন... ঘুমে তলাবার আগে দেখতে পাই,কী সুন্দর চোখ অরুণিমার!
কমিউনিস্ট
পার্টি করতেন আমার যে ভাইটা... তার
লাশ দেখতে পাচ্ছি ছায়া ছায়া...
বেঁচে গেলাম সে যাত্রা। সাতদিন আমার কোন খবর ছিল না। মা’র পাগল দশা। মাকে বলেছিলাম, বরিশাল গিয়েছিলাম গৌরনদীর দই খেতে। হাসপাতালের গল্প বলিনি...
প্রথম যেদিন এজলাশে উঠি, আমার ঠোঁট শুকিয়ে যায়... এ আমি কাকে বিচার করি... কী বিবর্ণ গর্ভবতী মেয়ে... তার গর্ভের কারণ তার লম্পট কবিরাজ দুলাভাই।
কাকে আমি লম্পট বলি, কাকে দেই সাজা। লালসালু ঘেরা আদালতে মনে হতে থাকে সেই সিনেমার দৃশ্য। খুশবন্ত সিংএর এ ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাস...
ফুপুকে আমার রক্তের ঋণ আর শোধ করা হলো না। অরুণিমাকে বলা হলো না আর যে, ওর চক্ষু লেকের মতো সুন্দর।
আমার প্রথম জন্ডিস হয়েছিল ক্লাস টেনে। কবিরাজ এসে কিসের যেন শিকড় দিয়ে মাথায় মালা বানিয়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন। বসে আছি ঘন্টার পর ঘন্টা, মালা আর বড় হয়ে গা বেয়ে নামছে না। মা বলল, ধৈর্য ধর আরেকটু...
অপেক্ষার ভারে নুয়ে আমি অপেক্ষা করতে শিখেছি সেই প্রথম, সেই প্রথম...
বেঁচে গেলাম সে যাত্রা। সাতদিন আমার কোন খবর ছিল না। মা’র পাগল দশা। মাকে বলেছিলাম, বরিশাল গিয়েছিলাম গৌরনদীর দই খেতে। হাসপাতালের গল্প বলিনি...
প্রথম যেদিন এজলাশে উঠি, আমার ঠোঁট শুকিয়ে যায়... এ আমি কাকে বিচার করি... কী বিবর্ণ গর্ভবতী মেয়ে... তার গর্ভের কারণ তার লম্পট কবিরাজ দুলাভাই।
কাকে আমি লম্পট বলি, কাকে দেই সাজা। লালসালু ঘেরা আদালতে মনে হতে থাকে সেই সিনেমার দৃশ্য। খুশবন্ত সিংএর এ ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাস...
ফুপুকে আমার রক্তের ঋণ আর শোধ করা হলো না। অরুণিমাকে বলা হলো না আর যে, ওর চক্ষু লেকের মতো সুন্দর।
আমার প্রথম জন্ডিস হয়েছিল ক্লাস টেনে। কবিরাজ এসে কিসের যেন শিকড় দিয়ে মাথায় মালা বানিয়ে পরিয়ে দিয়েছিলেন। বসে আছি ঘন্টার পর ঘন্টা, মালা আর বড় হয়ে গা বেয়ে নামছে না। মা বলল, ধৈর্য ধর আরেকটু...
অপেক্ষার ভারে নুয়ে আমি অপেক্ষা করতে শিখেছি সেই প্রথম, সেই প্রথম...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন