কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯

অলোকপর্ণা




ডান পা আগে ফেলুন


মাঝে মাঝে একটা দরজা হতে ইচ্ছে করে বিমলেরকোথাকার দরজা, কোথায় যাওয়ার দরজা, সে জানে না। শুধু ইচ্ছেমতো খোলা বা বন্ধ করে রাখা যাবে এমন একটা কাঠের দরজা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিমল মালক্ষ্মী টি স্টলে বসে বসে গরম চায়ের প্যান থেকে ধোঁয়ার দীর্ঘশ্বাস উঠেই যাচ্ছে। চিনির ডেলা  বছরের পর বছর কৌটোর মধ্যে গুম মেরে বসে আছে, যেন অভিমান এসেছিল জীবনে, নিজে পায়ে হেঁটে হেঁটে, কারোর প্রতি। কাচের গ্লাসগুলো টেবিলে টেবিলে কান্নার বলয় ফেলে রেখে উঠে চলে গেছে অনেকক্ষণএর মাঝে বসে বিমল একা একা একটা দরজা হওয়ার কথা ভাবছে

রতনের এই চায়ের দোকানে কখনো দিন হয় না। সারা গায়ে পোকামাকড় নিয়ে একটা ফ্যাকফ্যাকে সাদা সি এফ এল সবসময় জ্বলে থাকেতার পাশে ঝোলে ডিমের খাঁচা। সি এফ এলের আলো লেগে লজ্জায় লাল হয়ে থাকে মুরগির ডিমগুলো। ভাজা ডিম ৭ টাকা, ডবল ১২চায়ের ছাকনির ত্রাহি আর দুধের আস্ফালন পার হয়ে বিমলের দরজা হওয়ার সাধ জাগে। মামুলি একটা কাঠের দরজা। পালিশ করা বা পালিশবিহীন। বাইরের দিকে মেঝেতে একটা ওয়েলকাম লেখা জুটের পাপোশ রাখা। ছিটকিনি দেওয়া অথবা হাতলযুক্ত। দরজায় কোনো নেমপ্লেট থাকবে না। আইহোলও থাকবে না। এমনকি চাবিও একদিন হারিয়ে যাবে। দরজাটা শুধু যেন খোলে, হয় ভিতর থেকে নয় বাইরে থেকে। চায়ের গেলাসে চুমুক দেয় বিমল।

মানুষের কি জুতো খুলে ঢোকা উচিৎ বিমলের দরজা দিয়ে? বিমল ভাবে। জুতো না খুললেও চলবে। শুধু নির্মমভাবে পাপোশে পা না মুছলেই হলোদরজার ওপাশে কী থাকবে বিমল জানে না। বিমল ভাবে না। কিছু থাকলে হয়, কিছু না থাকলেও চলে। দরজা শুধুই যাতায়াতের মাধ্যম, গন্তব্য নয়, বিমল এও জানে। যেমন তুলিকা এসেছিল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দরজাটা খুলে দিয়েছিল। তারপর ডান পা বাড়িয়ে পার করে চলেও গেছিল বিমলকে। কিছুক্ষণ হাট খোলা অবস্থায় থেকে বিমল ধীরে ধীরে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল আবার। দরজা থেকে বেরনোর সময় ডান পা আগে ফেলা শুভ, কার থেকে যেন কবে জেনেছিল বিমল। তারপর থেকেই যে-ই বিমলকে পার করে চলে যায়, বিমল তাকে আস্তে করে বলে, “ডান পা আগে ফেলুন!”



1 কমেন্টস্: