কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৯

দেবযানী বসু




ঢোলকে বাজা দাদরা

'
লঙ্কামরিচ লঙ্কামরিচ' তালটা একটা গানের তাল হতেই পারে। যেমন শোলাঙ্কিদের কলেজে টেবিল বাজানো ডিমপারুটি ডিমপারুটি তাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ওদের ময়নাপাখিটা মোবাইলের রিংটোন, রিক্সার প্যাক প্যাক, বাইকের ভরররর, সাইকেলের ক্রিং ক্রিং সবই অনুকরণ করে শোনায়। এর উপর কেমন আছ,  গুডমর্নিং, শোলাঙ্কির ডাকনাম বুবাই বুবাই করে চেঁচাবে। কখনো হ্যালো হ্যালো মা মা করে চেঁচাবে। ওকে বোঝানো যায় না যে মা নেই। 

আপাতত শোলাঙ্কি ও স্বপ্ননীল। প্রচুর বাংলাগান লেখে সিনেমার জন্য। স্বপ্ননীল বিয়ের
একবছরের মাথায় ডিভোর্সী। তারপর এখন সদ্য স্নাতক শোলাঙ্কির সঙ্গে প্রেম। ওর কাকা বলেছে কবিতা নিয়ে এতকাল ঘষলি। কী লাভ হল তাতেশ? সিনেমার গান লেখ।
আকাশবাণীতে কথা বলিয়ে দেব। কাকা বেশ প্রভাবশালী মানুষ। শোলাঙ্কি ওর মৃত মাকে খুব স্বপ্নে দেখে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে বোঝে ও মায়ের স্বপ্ন দেখছিল। তারপর উঠে জলত্যাগ করে জলযোজনা করে শোবার পর প্রেমিকের স্বপ্ন শুরু হয়। স্বপ্নগুলো বাস্তবের সঙ্গে প্রায় একরকম। বাস্তবে দেখা হবার পর প্রথম দিকটা ঝগড়া করে কাটে। মধ্যিখানে কিছুটা প্রেম। আবার সময় শেষের দিকে ঝটাপটি লেগে যায় ঝগড়া। 

গান লেখা নিয়ে বেশ কয়েকবার ব্যঙ্গ করেছে স্বপ্ননীল। শোলাঙ্কি মাসির বাড়ি চলে যাবে স্থির করে নিরাপদে নির্বাধায় লিখবে বলে। সেখানেও পাড়ার সবাই জেনে যায় আর তার ফলে সবাই খুব সমীহ নিয়ে তাকায় ওর দিকে। শোলাঙ্কি ওয়াশরুমে খাতাপেন রেখে দিয়েছে। পড়ার ঘরে একটা ডায়রি-পেন, আর শোবার ঘরে খাটের মাথার তাকে একসেট। শোলাঙ্কির বোন ঘুমে পাশ ফেরার সময়ে দেখেছে দিদিকে উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইলের আলো জ্বেলে লিখতে।

সম্প্রতি ওর গলায় গুন্গুন্ করছে একটা গান ‘ফাঁকি দিয়ে উড়ে গেল প্রাণের পাখি আর এল না’ -- গওহরজানের গাওয়া প্রথম রেকর্ড করা। শোলাঙ্কির মাসির বাড়ির ওয়াশরুমটা স্বপ্ননীলদের বাড়ির ওয়াশরুম হয়ে যায়। স্বপ্ননীলের মা ওয়াশরুমের দরজার ফাঁক দিয়ে খাতাপেন ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। নিজের বাড়ি হলেও স্বপ্ননীল প্রেম করতে ভয় পাচ্ছে। অতএব সে নিজের বাড়ি ছেড়ে বন্ধুর বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে। শোলাঙ্কি লিখল ‘ডিলিট করা ছবিগুলো ফিরে আসে / এখন বাথটাবে অল্প জোয়ার / পরাগরেণু মাখা ঠোঁট দুটো হাসেতুমি হতে পারো আজ ঘোড়সওয়ার’ 

স্বপ্ননীলের মা ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছেন ‘জামাকাপড় কাচা হলো? এক
সপ্তাহের মধ্যে পঞ্চাশটা গান লিখতে হবে মনে আছে তো?
শোলাঙ্কি দরজা খুলে দ্যাখে ওর নিজের মা দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্নে জীবন্ত মা ওর চুল আঁচড়ে দেয়। তারপর শোলাঙ্কির ডাইরিটা নিয়ে চলে যায় ‘আমি আসছি অফিসে জমা দিয়ে। ঘুম না আসলে এই ওষুধ রইল’ 

শোলাঙ্কি দ্যাখে, যে ওষুধের পাতাটা মা কাজে লাগিয়েছিলেন পৃথিবী ছাড়ার আগে সেটা
মেঝেতে পড়ে আছে। শোলাঙ্কি একটা একটা করে ট্যাবলেট বাথটাবে গুলে দিতে থাকে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন