কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শুভলক্ষ্মী ঘোষ




ধর্ম-অধর্ম

              
- আচ্ছা, এই যে! এই মাদুরটা... এইটার দাম কত?… এই যেএএ, বলি ওওও মেয়ে, এইটার দাম কত?
- কোনটে মাসিমা? ফুলি ধড়ফড় করে উঠে বস সেই দুপুর থেকে মেলায় বসে থাকতে থাকতে শেষবেলায় ফুলির চোখ লেগে গিয়েছিল
- আরে, এই যে, এই সবুজটা
- এইটে? এইটে দেড়শ
- দেড়শ? বল কী? তো গলা কাটা দাম গো! কমাও, একটু কমাও, সবাই তো কমাচ্ছে একশ করে দেবে? দিলে দাও, নিচ্ছি
ফুলি মাথা নাড়ে মাদুরখানা আপনমনে ভাঁজ দেয় মনে পড়ে, এই মেলাতেই গেল বছর মা কেমন লাভ রেখে অনেকগুলো মাদুর বেচেছিল ফুলি পারে না লোক আসে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাদুর দেখে, নাড়াচাড়া করে চলে যায় ফুলি মুখ গুঁজে বসে থাকে
- আরে, ওই একশই ঠিক আছে... যথেষ্ট... দাও, দাও, ভালো করে মুড়ে দাও রাত হয়ে যাচ্ছে এদিকে!
ফুলি কথা বাড়ায় না বিক্রিবাটা তেমন একটা নেই সারাদিনের পর তবু তো ক’টা টাকা, বেশী জোর করলে আবার যদি না নেয়! ঘরে মা’টা সেই  কবে থেকে শোয়া  ঘুসঘুসে জ্বর, ঘংঘঙে কাশি, বুক চাপা সর্দি, মাথা ভার, মুখে স্বাদ নেই, পেটে খিদে নেই পরাণখুড়োর পথ্যিও পড়ল কয়েক দাগ, তাও শরীরখানা যুত হয় না খুড়ো বলেছে রক্ত পরীক্ষা করতে লাগবে নাকি... তবে গিয়ে যদি অসুখ ধরা পড়ে!
                  
মাদুরখানা বেচে ফুলি একটু দম নেয় বোতল থেকে একঢোক জল খেয়ে পাশে তাকাতেই বাটিকছাপা কালো-লাল বটুয়াখানা চোখে পড়ে - আরে, এতো সেই ওনার বটুয়াটা না, এইমাত্র মাদুর নিয়ে গেলেন যিনি?... কী কান্ড, নির্ঘাত ভুলে ফেলে গেছেন, কী হবে এবার! ফুলি বটুয়াখানা হাতে  নিয়ে এদিক ওদিক তাকায় ভিড়ের মধ্যে মুখটা খুঁজে পায় না দোকান ফেলে যেতেও পারে না কোথাও রাত বাড়ে সেদিনের মত মেলা শেষ হয় ফুলি বটুয়া আগলে বসে থাকে, কেউ নিতে আসে না! ফুলি ঠিক করে বটুয়াখানা মেলা অফিসে জমা দিয়ে আসবে, যার জিনিস সে সময় মত নিয়ে নেবেখন দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে মেলা অফিসের দিকে যেতে যেতে বটুয়াখানা আনমনে খুলতেই ফুলির বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে এক তাড়া কড়কড়ে পাঁচশ টাকার নোট, মাদুলি মতন কী একটা দিয়ে  জানি গোল করে পাকানো! কম করে হলেও, হ্যাঁ... তা প্রায় হাজার পাঁচেক কী তার বেশীই হবে! কোনো পুজো-টুজোর জন্য রাখা, না কি? অমন মাদুলি জড়ানো কেন? মানসিক করা ছিল? ফুলি তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে... পলক পড়ে না অনেকক্ষণ মা’র হাড় বের করা শুকনো দড়ি পাকানো চেহারাটা মনে পড়ে যায় শুধু তো রক্ত পরীক্ষা না, তারপর ওষুধ আছে... ডাক্তার আছে... কদিন একটু যত্ন, একটু ভালো খাওয়া দাওয়া...  অনেকটা খরচ... অনেকগুলো টাকা লাগবে...




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন