নির্বাচন ২০১৮
মেয়েটার মনে হলো কে যেন তার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। এই মেয়েটার এই
একটা বিষয়, পায়ে রাজ্যের সুড়সুড়ি। ওর ছোটবোন সবসময় ওকে খ্যাপায়-
: বিয়ের সময় তোর
বরকে আগেই জানাতে হবে যে
কন্যার পায়ে পৃথিবীর
জমাট গুডুগুডু, মানে সুড়সুড়ি।
মেয়েটার শোয়াটা
অদ্ভুত টাইপ। শীতের রাতে কাঁথা পেঁচিয়ে একেবারে উলের বল হয়ে ঘুমোয়। এমনিতে ঘুম কম ওর।
তো মনে হলো কে
যেন পায়ে খোঁচাচ্ছে। কার্টুন ছবির
মতো লাফিয়ে উঠল। কেউ নেই তো
পায়ের কাছে! জানালার পর্দাটা
আলতো সরানো। জানালা গলে ভোরের রোদ ওর পায়ের পাতায়...
রোদের উপর রাগ
সঞ্চয় করতেই মনে পড়ল, আজ শুক্রবার। আজ ছুটি। আজ
অনেক ঘুম। আজ আলসেমী। আজ নো ফেসবুক, আজ নো
লাইক, নো কমেন্ট। আজ পোড়া মরিচ দিয়ে বেগুনভর্তা আর অপ্প করে ধনেপাতা ভর্তা। আজ সারাক্ষণ গান।
আবার মটকা মেরে পড়ে রইল বালিশে মুখ ডুবিয়ে। ঘোড়াড্ডিম ঘুম আর নেই বলে মনে হচ্ছে। নেলসন ম্যান্ডেলার মতো গুডবাই বলে
চলে গেছে। ইশ ছুটির সকাল, আরেকটু ঘুমানো যেত! কাল রাতে অনেক
গান শুনেছিল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। তারেক মাসুদের মুক্তির গানের কথা। আহা যুদ্ধ মানে মৃত্যুর অবারিত মিছিল হলেও আমাদের উজ্জ্বল বিজয় আছে।
মেয়েটা উঠে গেল জিমন্যাস্ট নাদিয়া কোমিনিচের মতো।
দরোজা খুলেই ডাক
পাঠালো ছোটবোনকে-
: পুটলি, মাকে বল পোড়া মরিচ দিয়ে বেগুন
ভর্তা খাবো আজ।
ছোটবোন বা মায়ের কোনো সাড়া এলো না। আচমকা চোখে পড়েটি টেবিলের উপর চায়ের কাপ, ঢাকনা দেয়া।
সোফায় বসে পা তুলে দিল টেবিলে, চায়ের কাপে সরু চুমুক দিল সুরুত করে। অফিসে বিনা শব্দে ভদ্র’চা খেতে খেতে সে ক্লান্ত। ছুটির সকালে এই মুখরিত শব্দের চায়ের মজাই আলাদা।
সোফায় বসে পা তুলে দিল টেবিলে, চায়ের কাপে সরু চুমুক দিল সুরুত করে। অফিসে বিনা শব্দে ভদ্র’চা খেতে খেতে সে ক্লান্ত। ছুটির সকালে এই মুখরিত শব্দের চায়ের মজাই আলাদা।
আহ...
জানালা খুলে দিল
একফাঁকে উঠে গিয়ে। এক ঝলক বাতাস ঢুকে গেল ওর ঘরে হানাদার বাহিনীর মতো। আল কায়েদার মতো...
সাথে ভেসে আসা
গান :
পূর্ব দিগন্তে সূর্য
উঠেছে... রক্ত লাল রক্ত
লাল...
ছোটবোন মহা উৎসাহে ঘরে ঢুকল, মুখে দুনিয়ার আভা। পেটে কথা চেপে
রাখতে পারছে না।
: শুনেছিস? মা বললো আজ
বেগুনভর্তা হবে না। আজ নতুন এক ধরনের ভর্তা করছে মা।
: কী ভর্তা রে?
: নির্বাচন ভর্তা।
: কী ভর্তা রে?
: নির্বাচন ভর্তা।
দুইবোন হেসে আর
বাঁচে না। হাসতে হাসতে
প্রায় গড়াগড়ি। জানালার পর্দা নড়ছে ভেসে আসা মিহির বাতাসের নাগরে। পূর্ব দিগন্তের গানটা তখনো বাজছে। বিমানবাহিনীর মিগ আকাশে বিজয়ের স্মারকে...
রোদটা আর খারাপ
লাগছে না। দুইবোন আয়েশ করে সুরুত সুরুত শব্দ করে চা খাচ্ছে...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন