কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শুক্লা মালাকার




কারসাজি


অবশেষে  রথীনবাবু জেগে উঠলেন  সঙ্গে সঙ্গে প্যান্টের একটি বিশেষ জায়গায় হাত দিতেই টের পেলেন যা হবার হয়ে গেছে  তাঁর এই পরাজয়ের কথা কাউকে  বলতে পারবেন না  পঞ্চাশ হাজার গেছে যাক, আবার রোজগার করতে পারবেন  কিন্তু তাঁর বড় গর্ব ছিল, তিরিশ বছরের পাটনা কলকাতা ট্রেন সফরে  তাঁকে কেউ বোকা বানাতে পারে নি যত চালাক বাটপাড় হোক তাঁকে কাবু করা  সহজ না আন্ডার প্যান্টের ভিতরের পকেটে লাখ টাকা অব্দি ক্যাশ নিয়ে আসা যাওয়া করেছেন, কেউ কাবু করতে পারে নি আজ এইভাবে প্রেস্টিজ ঝুলল! সেই অহংকারের মুখে কালি লেপে দিয়ে গেল ব্যাটা!
ফাঁকা ট্রেন কারশেডে দাঁড়িয়ে। হ্যাচোর প্যাচোর করে নেমে এলেন। সঙ্গের ব্যাগটা কাঁধে ফেলে কলকাতার দিকে হাঁটা লাগালেন। কার মুখ দেখে যে বেরিয়েছিলেন, সেটাও ঠিক করে মনে করতে পারছেন না।

হাওড়া স্টেশনের আঠেরো নম্বর প্লাটফর্মে বউ মেয়ে নিয়ে বসে আছে নিমাই। পুরুলিয়া যাবে। বাবার অসুখটা কিছুতেই সারছে না। আবার হসপিটালে নিয়ে যেতে হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে বউ অনিমার পাশে গিয়ে একটু গলা খাঁকারি দিল। মেজাজ এখনো সেই সপ্তমেই কিনা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে।
-      এবার বুড়ো টসকে যাবে মনে হচ্ছে দিলু যা বলল, আশা নেই
-      সব্বাই টসকে যাক, এই তো চাও তুমি যাক! সব যাক! ভগবানের কাছে মানত করেছি বুড়োবুড়ি দুটো তোমার গুণপনা  জানার আগে যেন মরে ভূত হয়! মেয়েটারে অব্দি ছাড়লে না!
-      কী করব বল! ইচ্ছে ছিল না  এত ফাট দেকাচ্ছিল, সামলাতে পারলাম না
-      তাই বলে মেয়েরে দিয়ে এসব পাপ কাজ করাবে? ওর কচিমনে একবার দাগ ধরলে আর উঠবে?
-      আর করবো না, বিশ্বাস যা! লোকটার হাবভাবেই বুঝেছিলাম মাল ঘাঘু! মালকড়ি সব সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে  তুই বলার পরেও যখন চা ফিরিয়ে দিল, আশা ছেড়েই দিইছিলাম  দেকছিলি না বারে বারে নিজের কেত্তন গাইছিল  তিরিশ বছরে ওনারে কেউ নাকি বোকা বানাতে পারেনি  এত গুমোর! আমার বুদ্ধি কম! মেনে নিতে পারলাম না রে, কেমন জেদ চেপে গেছিল বুঝলি!
-      তাই ঝালমুড়ির ঠোঙা মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিলে!
-      হি! হি! ফুলির হাত থেকে লোকটা যখন মুড়িটা নিয়ে গালে দিল, পেট মুচড়ে এমন হাসি পাচ্ছিল! নে শালা! তোর ফাট সব জলে!
একথায় নিমাইয়ের বউ হেসে ফেলল বলতে গেলে তারও হাসি পেয়েছিল কী  ভাগ্যি রাগটা চেপেছিল! 
-      তুই বল! বারে বারে যে বলছিলি ব্যাটা, তোরে অচেনা কেউ কোনদিন কিচ্ছু খাওয়াতে পারেনি, তাতে আমার মতো পাকা বাটপাড়ের জেদ  চাপবে  কিনা!  আমিও কাজ সেরে ফাট দেখালু-  
নিমাইয়ের চোখ একটা থলথলে পেটের লোকের গায়ে আটকে গেছে কথা শেষ না করে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পিছু নিল হাতের ইশারায় বউকে পিছনে আসতে বলে এগিয়ে গেল 
-      আরে! বাড়ি যাবে না! বাবা না হসপিটালে! উফ! এ লোক কাজ পেলে দুনিয়া ভুলে যায়


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন