কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়

কবিতাছুট জীবনানন্দ

 -এক্সকিউজ মি
ঘাড় ঘোরাতেই আমূল চমক খেল বনলতাআমজাদের অবস্থাও তথৈবচ।
-তুমি!

সিকিউরিটি চেকিংএ দাঁড়িয়ে থাকা স্বামীর দিকে চেয়ে একটা ঠিকানা হাতড়াচ্ছিল বনলতা মুখার্জী মনের ভেতর গুমরে উঠছে হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনোখানেঅথচ খোঁজ নেই সেই গরঠিকানা

কলকাতার পাততাড়ি গুটিয়ে মুম্বাই চলে যাচ্ছে আমজাদ। এ শহরের ছায়াপথে এখনো বনলতা। ঠোঁটের আগুন নিয়ে অনন্ত প্রতীক্ষায়

আমজাদের চোখে চোখ রাখে বনলতা। কয়েকটা মুহূর্তমাত্র। কি যেন এক কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে গলার কাছে। ফিসফিস করে বনলতা,
-এখুনি জীবনানন্দ শুরু কোরো না প্লিজ!

আমজাদের বুকের ভেতর তিরতির করে উঠছে পিছুফেরা বাল্যপ্রেমস্মৃতিকোঠা আদরে রেখেছে তুলে। বনলতার রাঙানো সিঁথির দিকে চোখ রেখে শুধু নিঃশব্দ দুটো শব্দ ওঠে,
-বড় মায়া বনলতা
-জীবনটা তো কাব্য নয় আমজাদএ সত্য তোমার থেকে বেশি আর কে জানে!

আগুনজ্বলা সিঁথির দোরে পিঁড়ি পেতে বসে জীবনানন্দ। শুধু সেদিনের সেই মুখর আমজাদ মূক হয়ে আসে। অশ্রুত কো্ন তন্ত্রীতে ডাক ওঠে, 
-শতাব্দী পেরিয়ে এস কন্যে... সীমানা পেরিয়ে এস...
-আমি নারী, আমি রূপসীতবু সবার ওপরে আজও ধর্মের ধ্বজা এ তো তোমার অজানা নয় আমজাদ!
-অজানা অন্ধকা্রে আজও বিদিশার নিশা
-থাক আমজাদ। কাব্যের হাতিয়ার হতে ইচ্ছে করে না আর। তোমার স্ত্রীর নাম বললে না তো!

ম্লান হাসির রেখা ফোটে আমজাদের ঠোঁটে।
ডুকরে ওঠে বনলতা,
-তোমার বনলতা তলিয়ে গেছে আমজাদ ধর্মান্ধতার অন্ধকারে
  
বনলতার ঠিকানাহীন ঠিকানায় মনকেমন করে ওঠে আমজাদের। নিঃশব্দ গান ওঠে দুঠোঁটের ফাঁকে, তোমার নীলরঙ কষ্টে আমায় নীলাম্বরী করো, আমি সূর্যরঙে রাঙাবো তোমার সবুজ বিরহখানি...

তিরতির কাঁপতে থাকা ঠোঁট কথা কয়ে ওঠে,
-রাগিণীর বন্ধনে অসহ্য দহন আমজাদ। হায় আল্লা, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এখনও মাতাল করে মন!
-তুমি আজ আল্লা বললে বনলতা
-আমি যে আর দেয়াল মানিনা আমজাদ
-ওটুকু অন্ধগলি পেরিয়ে এস বনলতা। টুকরো আকাশ দিয়ে বৃষ্টিগুলো জুড়ব বলে দুহাতে কান্না মেখেছি
-আমার কান্না দিয়ে একটা চরিত্র গড়তে যেও না আমজাদ। ওপথে ধর্মের কানাগলির দুরূহ সংকেত
-গড়ার এই গোপন মোহে বিষাদের সরণ বাইছি বনলতা। এ মোহ ভাঙবে না আর
-আহ্‌, আমজাদ, এ অগ্নিবীনা বাজিও না আর প্লিজ
-এ তো ধর্মবোধ নয়, জীবনরহস্য! জীবন আনন্দ।
-জানি না। আজ আর জানতেও ইচ্ছে করে না আমজাদটুকরো করো তোমার জীবনানন্দের বন্ধন

আমজাদের ইচ্ছেপাখি তবু উড়ান দেয়। পালকে তার নির্মেদ প্রেম 

চোখের জল গোপন করে এগিয়ে যায় বনলতা।

বাতাসের কানে কানে ফিসফিস করে আমজাদ,
-আমার জীবনানন্দ জয়ী হোক বনলতা


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন