কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

দেবযানী বসু

নেপথ্যে


মাখনলাল মিত্রের সংগ্রামী জীবনে নিঃসঙ্গতা ছাড়া কোনো সমস্যা নেই। নিঃসঙ্গতা ফুসফুসেও ঢুকে যায়। সামান্য কাশি হয়। ফসফরাস গোত্রের কাশি। বহুদিন ধরে পেটে ক্যান্সারে ভুগে স্ত্রী মারা গেছে। শেষের দিকে সে মাখনলালের শরীর ও মনে, কোথাও আর ছিল না।

স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে মাখনলাল খিটখিটে হয়ে উঠল। কাউকে পাশে পায় না যে অকিঞ্চিৎকর কিছু কথা বলে মনে আরাম পাবে। পুত্র পুত্রবধূ ও নাতিকে কখনও সহ্য করে, কখনও দূরে সরিয়ে দেয়। বিশেষত পুত্রবধূর লীলাচঞ্চল রূপটি সে সহ্য করতে পারে না। সারাক্ষণ মুখিয়ে থাকে এই কে এলো কার সঙ্গে কথা বলল! স্বামীর  বন্ধুদের সঙ্গে অত কথা বলার কী আছে! আর নিজের ছেলে যে মন মেনিমুখো হবে, কে জানত! পুত্রবধূ যার পর নাই সুন্দরী। পুত্র নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। মাখনলালের মোটামুটি আয়। লুমটেক্স কারখানার শ্রমিক। আর মিল বন্ধ হতে পাওনা গন্ডা এখনো পাওয়া হয় নি। মিত্রমশাই একসময়ে কৃষ্ণকলির মতো একটি মেয়েকে, যার নাম কিনা জ্যোৎস্না, ভালোবেসেই ঘরে এনেছিল। আর পুত্রবধূ, প্রকৃত অর্থে রাধাবর্ণা, কিন্তু নাম শ্যামলী। বর করে ঘরে তোলার পর রসিকতা করেছিল, আসলে শ্যামলী শ্যামলীনা, কারণ ছেলের নাম শ্যামল (না-শ্যামলী)শ্যামলীও জানে শ্বশুরের ঝগরাটে নালিশমুখর স্বভাব। শ্যামলালের সিকিউরিটি গার্ডের এজেন্সি। মাখনলাল এই অফিসে হিসেবপত্তর চিঠিচাপাটির কাজ করে। সেই সুবাদে কর্পোরেশন অফিসে যাতায়াত। এই এরকমই চলত যদি না মাস কয়েক আগে পঞ্চান্ন বছর বয়সে নতুন করে প্রেমে পড়ত বলা ভালো, মহিলাটি নজরে পড়াতে বাধ্য করে।

এই অঞ্চলটি শ্রমিক অধ্যুষিত, ফলে বহু বিহারি হিন্দুস্থানি পরিবারের বসবাস। বৈভবী পান্ডে, চল্লিশোর্দ্ধা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য দপ্তরের অস্থায়ী কর্মী, অমিতাভ বচ্চনের হাল্কা  বাংগালি সংস্করণ মাখনলালকে পছন্দের কথা ভাইকে জানিয়েছিল। আর মিত্রমশাই আজ বিকেলে দু’একজন বন্ধু ও ছেলে-ছেলে বউকে আবার বিয়ের কথা আলোচনা করবে  বলে জানিয়ে কর্পোরেশন অফিসের ক্যান্টিনে যখন চা খাচ্ছে, তখন এক যুবক নিজেকে  বৈভবীর ছোটভাই বলে পরিচয় দিল। সে চিনতে পারল, শ্যামলীকে এর বাইকের পিছনে চড়তে দেখেছে। ঠিক সে সময়ে ইয়া মোচোয়ালা এক ব্যক্তি লাফিয়ে সামনে  লো হুঙ্কার দিয়ে মুন্নিসাদি কী করে হবে হম দেখ লেবে’মুন্নির ভাই কিছু বলার আগে চকচকে চাকু বেরিয়ে পড়ল। মাখনলাল স্থির বটে, তবে তার একটা পা নাচছে তীব্র গতিতে। তখন চারিদিকে আর্তনাদ ও হুড়োহুড়ি।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন