কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

সৌগত চট্টোপাধ্যায়

কীর্তন                       

-টুক টুক...
-এই সকাল সকাল এত চেল্লাস না তো!    
-তুমি ঘুমাও গে, ওখানে একটা ছায়া দেখলাম, একটু দেখে আসি
 -তোর এখন গরম রক্ত, ঘুরে বেরা, কোনো শালা কিন্তু ঘরের ভিতর ডেকে খাওয়াবে না
-তোমার সব শেষ নাক ডাকাও গে, আমি আসি
-এককালে আমিও ঘুরতাম রে
-শোনো, তোমার ঐসব বস্তা পচা কথা অনেক শুনেছি, সেই এককালে বিরাট চেহারা ছিল, ষাঁড়ের ঘাড়ে চেপেছিলে, এপাড়া সে তোমার ছেলে মেয়েতে ভর্তি, দুর্ঘটনা, পাছা ভাঙা, সব শুনেছি, নতুন কিছু বল
-রাগছিস কেন, বোস বোস, কাল কেমন খেলি?
-যেমন খাই, ঝগড়া ঝামেলা বাওয়াল করে পাড়াটাতে ফালতু কয়েকটা যা আছে না!
-তুই তো মধুমাসেও ঐ পাড়াতে গেছিলি
-ওর থেকেই খেলাম
-কালুর কি খবর, আজকাল দেখতে পাই না
-ওকে আর কালু বলা যাবে না, আগের দিন খচে বোম হয়ে গেছিল ,জ্যাক বোলো
-তাই নাকি, কি বলছিলটা কি?
-রেগে বলে উঠল, ‍‌আমি তোদের মত নেড়ি নয়, আমার বাবা বিদেশি     
-হ্যাঁ, বিদেশীর অবৈধ সন্তান তা কোথায় গেছে মালটা?
-অন্য পাড়াতে থাকে, একটা নীল বাড়ির দরজায় বাঁধা থাকে খুব খুশিতে আছে
-কিছু বলিস নি?
-বললাম, এত কম বয়সে স্বাধীনতা হারালি?, খেস্যার হাসি দিয়ে বলল, তোদের স্বাধীনতা মানে তো শুধু পাড়া বেড়ানোকোনো কাজ নেই ওর, ভালো ভালো খাচ্ছে আর গুলতানি দিচ্ছে বাড়িটাতে আরেকটা আছে বেড়াল মুখি, বলল,চুটিয়ে লাইন মারছি ঐ মালটির নাকি হেবি গরম, কি সব শো করে
-শো! আমাদের আবার শো!
-ইয়েস আমাদের শো, একটা শো হয়, অনেককে ডাকে, বিভিন্ন রকম আওয়াজ করতে হয়, ওরাই বলে দেয়, কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে থাকে
-তুই এত সব খবর কিভাবে জানলি?
-আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা হল, আরো কিছু সময় হত, শালা পাড়ার মাতব্বর গুলো চেল্লাতে আরম্ভ করে দিল। 
- কালুটাও ভেড়া হয়ে গেল, স্বাধীনতার মানেই কেউ বুঝল না
-কাকা তুমি আর মেলা বোকো না, স্বাধীনতা কি, খায় না মাথায় দেয়, একশ আট তোমাদের ঐ স্বাধীনতায় খাওয়ার কোনো চিন্তা নেই এর থেকে বড় স্বাধীনতা আর হয় নাকি ?
-কিন্তু এই য়ে খাচ্ছিস, ঘুরছিস, হাগছিস, ভাদ্রমাস, মানে তোদের মধুমাসে ...
-মাস দুই আগে কি হয়েছিল মনে আছে ?
-সে তো অনেক কিছুই হয়, কোনটা মনে রাখব?                            
-একটা গাড়ি বেপাড়ার জনা পঞ্চাশকে এপাড়াতে ফেলে গেছিল, মনে আছে? ওদের সাথে ঝগড়া করে আমাদের কতজন চলে গেল মনে আছে?                                      
- তা থাকবে না কেন ? তার দুসপ্তাহ পরে মাঠে কত লাশ দেখলাম আমাদের কতজন মরে গেল বল তো ছবি উঠল, কত লোক এল, কয়েকদিন পালা করে খাবার পেলাম, তারপর সব কিছু চুপ                                                                          
-হ্যাঁ রে সামনের গাড়িটা থেকে কারা যেন নামছে এক, দুই, তিন, চারজন আছে কখন এল? খেয়াল করিনি তো!                                                     
-কাকা গতি ভালো নয়, তুমি একবার ডাক দাও                                                 
-আর পারি না চেল্লাতে                                                               
-কাকা, এপাড়া তোমাকে খাওয়ায়, ওঠ, চেল্লাও... ভুক ভুক        
সঙ্গে সঙ্গে পাড়া কেঁপে উঠল ভুক ভুক কিছু সময় পরেই এই ভুক ভুক আওয়াজের মধ্যেই গাড়িটার চলে যাওয়ার আওয়াজ শোনা গেল যাওয়ার আগে একটা কিছু ছড়িয়ে দিল চারপাশে                                                                          

অন্ধকার মুছে আস্তে আস্তে আলো ফুটল পরের দিন কাগজের প্রথম পাতাতে খবরটা অনেকের চোখে পড়ল, অজানা কারণে এগারোটা কুকুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন