প্রজাপতি,
সিঙাড়া ও সোনালি ত্রিভূজ
দুর্গাপুরের
প্রজাপতি আকন্দ গাছ থেকে আমের মুকুলে বসলে রূঢ়ে বৃষ্টি হতে পারে?
সিঙাড়াটা
খাওয়ার ঘণ্টা পাঁচেক পর সোমেশ্বরের মনে হল পারে, অবশ্যই পারে। এমনকি নিউজিল্যান্ড
উপকূলে একশোটা তিমি মারা যাবার পেছনেও দুপুরে দেখা ঐ প্রজাপতিটা থাকতে পারে।
সিঙাড়াটা
বেশ মুচমুচে ছিল। সোমেশ্বর সাধারণত সিঙাড়ার ভেতরের তরকারিটা খায় না। এই সিঙাড়ার
ভেতরে অদ্ভুতভাবে তরকারি নেই – ডুমোডুমো আলু, তাও আবার খোসা ছাড়ানো। কিছু মৌরি
ফোড়ন আর কুচো কাঁচা লঙ্কা। এক কামড় দেবার পর মনে হল আগর বড় রুস্ত জমিন তো
সিঙাড়াহেস্ত। সোমালিয়ার লোকে কেন সিঙাড়া খায় না সে বুঝতে পারে না। সিঙাড়ার
ত্রিকোণ নাকি কোনো মানব অঙ্গের মতো। সোমেশ্বর যখন সিঙাড়া উপভোগ করছিল তখন রাঢ় বা
রূঢ় কোথাও বৃষ্টি নেই, নিউজিল্যান্ড উপকূলে এড়িয়ে তিমিরা ঘুরছিল। সন্ধ্যের এই সময়ে
প্রজাপতির যাপনও সে দেখেনি।
অঞ্জন
প্রশ্ন করে, দাদা আর একটা নেবে ?
আজ
তিনদিন হল সে সেদ্ধভাত খাচ্ছে। পারিবারিক ব্যাপার। তৃতীয়দিন সন্ধ্যেবেলা দুটো
সিঙাড়া খেলে নিয়মভঙ্গ হবে ভেবে সে দ্বিতীয়টা খেলোনা। বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে
শুয়ে পড়ে। রাত বারোটা দশে ফোন বেজে ওঠে, ইউনিট সিনক্রোনাইজ হয়ে গেছে।
কোন্
ইউনিট, কেন সিনক্রোনাইজ, সেই খবরে তার কি লাভ ভাবতে ভাবতে বেশ কিছুক্ষণ সময় চলে
যায়। তারপর সে বুঝতে পারে পেটে একটা চিনচিনে ব্যাথা। বাথরুম ঘুরে আসে, ফ্ল্যাটের
নীচে গেটের বাইরে মেন রাস্তায় সিকিউরিটি মুন্নার পায়চারি দেখে। দু’একদিনের মধ্যে
হঠাৎই বেশ গরম পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনোর উপস্থিতি নাকি দুর্গাপুরের গরমের
কারণ। মুন্নার পায়চারি দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা এক চক্কর মেরে নেয়। বিছানায় যেতে
ব্যাথাটা চাগিয়ে ওঠে। ড্রয়ার ঘেঁটে পুরনো একটা এনজাইম খেয়ে নেয়। এক্সপায়ারি ডেটটা ঠিক
বোঝা যায় না। সময় আর অবস্থা, এই দুইয়ের সিনক্রোনাইজ হওয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে
বুঝতে পারে।
মুন্নার
আগে ছিল খালেক। সে কাজ ছেড়ে দিয়েছে।
সোমেশ্বর
ভাবল, খাবারের কোনো ধর্ম আছে? সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম কারণ গরু আর শুয়োরের চর্বি।
তাদের মেসে রান্না করত নবীন, জৈন ধর্মের। নবীনের জ্যাঠা একাহারী নিরামিষাশী। খাবারের
সাথে ধর্মের যোগ বিশাল। সিঙাড়া মধ্যপ্রাচ্যের। দশম শতাব্দীর ইরানি ইতিহাসবিদ আবোলফজল
তারিখ-ই-বেয়াগি বইতে সিঙাড়ার কথা বলেছেন। দিল্লির সুলতান, মুঘল বাদশাদেরও প্রিয়
ছিল সিঙাড়া। এখন তার পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সে ঠিকঠাক ধর্ম মানে না, তাই হয়ত
বমির সাথে সিঙাড়ার টুকরো বেরিয়ে আসতে চাইছে। এই সুন্দর সোনালি ত্রিভূজ সোমালিয়া বা
সোমেশ্বরের উপভোগের জন্য নয়।
ভাবল,
বমির সাথে ব্যাথাটা কমে যেতে পারে। সারা পৃথিবী জুড়ে নানা রকম পরিবর্তন হলেও তার
পেটের ভেতরে অবস্থা একই থাকে। তোলপাড় হয়ে মুখ থেকে বেরনো কিছু আগ্নেয় লাভা তার
নমুনা মাত্র। তাই শেষ রাতের এক্সপ্রেসের মতো কানের পাস দিয়ে শব্দের বর্ষণ হতে পারে
জেনেও সে পাশের ঘরে শোয়া বউকে ডাকতে বাধ্য হয়। আর প্রভাতের ব্রাহ্ম মুহূর্তে সে
নার্সিংহোমে পাচার হয়ে যায়।
অসংখ্য
ইঞ্জেকশান, পেট চাপাচাপি ইত্যাদির পর সোনোগ্রাফির ছবির মধ্যে সে দেখতে পায় ব্ল্যাক
এন্ড হোয়াইট একটা সিঙাড়ার ভেতর আলুর পুর। রেডিওলজিস্ট বললেন ওটা ৮.৫ মিমি মাপের
পাথর। আলুর টুকরোটা কি করে পাথরে পরিণত হল সে বুঝতে পারে না।
শুধু বোঝে যে পাথর একান্তই অখাদ্য।
excellent .laglo........... @avishek ghosh
উত্তরমুছুন