উমাপদ কর

 

কবিতার কালিমাটি ১৪৬

কবিতা - এক

 

যা দেখিনি, তার ঘ্রাণে ঘিলু ঘন থেকে

তরল হতে থাকে

তরলে গন্ধ আর বেয়াদপি করতে

পারে না।

যা শুনিনি, তার মায়া সারাশরীরে

এমন বিদ্যুৎ খেলিয়ে দেয়

কাঁপুনি কমতে চায় না

কোনও সোহাগে।

 

স্বাদ পাইনি, স্পর্শ পাইনি যার

তার তাপে শরীর পুড়ে খাক

পোড়াজিভে কথা আটকে আসে

শরীর শুয়ে পড়তে চায় বরফে।

 

একজন মানুষ আর-একজন মানুষের

সমাধির পাশে ফুল রেখে আসে

 

কবিতা - দুই

 

নদীর বাইরে অন্য এক নদীকে খুঁজি

আশ্চর্য এই, পেয়ে যাই

ক্ষীণ হলেও স্রোত

বুক-পেট জলতল

 

জিজ্ঞাসা করি, কোত্থেকে আসছ

বোনটি?

কিছু একটা উত্তর শুনি

কিন্তু জগদীশ স্যারের মতো

ডিকোড করতে পারি না

‘মহাদেবের জটা হইতে’

বিবেচনার - সব নদী মহাদেবের জটা

থেকে যাত্রা শুরু করে!

 

বয়েছি শালতি, কেটেছি সাঁতার,

পাড়ে-পাড়ে হেঁটে গেছি দিন পরদিন

কখনও আমার সঙ্গে-সঙ্গে চলেছে

কখনও বিপরীতে গেছে জানিয়ে

কোনওদিন জিজ্ঞাসা করা হয়নি

দিদি, তুমি যাচ্ছো কোথায়?

নদীশব্দের মধ্যে ও বাইরে মজে আছে

 

কবিতা - তিন

 

কত কত যে লাগে একটা জীবনে!

নাভিতে আগুনসেঁক, মুখে মধু

চাকভাঙা হলে ভালো হয়

প্যারাম্বুলেটর ও আয়াপিসি

মাসি ডাকতে ইচ্ছে হয়তো

কিন্তু মা শিখিয়েছে পিসিমনি

 

বিশুদ্ধ সরিষার তেলের সঙ্গে

ইটালিয়ান অলিভ-অয়েলের দ্বন্দ্ব

এই একটা জীবনের জন্য

ঋতুর ফল, এখন অবশ্য সবজি

সময় অনুসারে বাজারে আসে না

বছর-ভর সবুজ বাঁধাকপি জীবন উৎসর্গে

 

গ্রামার-বিজ্ঞান-ইতিহাস বই

ভাষার জন্য রুলটানা কাগজ – খাতা

গৃহশিক্ষকের বেশি বয়সের ছাতা

স্কুলের বসন্তদিনের পঞ্চমী

রংবাছা শাড়ি ও কার্ড নিয়ে অন্যস্কুল

সব এই একটা পাখিখাওয়া জীবনের জন্য

 

সব স্মৃতি আওড়াতে নেই এক নারী জীবনে

কত কত্ত লাগে, লাগে ভালোবাসা ও শূন্যতা

স্বাধীনতা লাগে না? লাগে তো,

কোনও জীবন স্বাধীনতা পায় কি! কত কত্ত লাগায়