কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬


অনির্দিষ্ট

ঘরে ঢুকতেই সুনির্মাণের -- সে কোন পরিযায়ী নয় -- এমনতর মনে হল। তাকে বসানো হলো বাঁ-দিকের দেয়াল ঘেঁষা একটা চেয়ারে। দেয়ালটা আংশিক তোলা, প্রায় মানুষ সমান, তারপর ছ-সাত ফুট ছেড়ে আরও একটা দেয়াল। এই দেয়াল দুটোর মাঝে যে ছোট একটি ঘেরাটোপ তৈরী হয়েছে, সেখান থেকে শোনা যাচ্ছে কয়েকজনের হাসাহাসি, অধিকাংশই মেয়ে। সুনির্মাণের ডানপাশের চেয়ারটা ফাঁকা ছিল, সেখানে অচেনা একজন বসল। একটু সরে যাবার চেষ্টা করতেই সে বলল, কোথায় যাচ্ছো, খুউউব আরাম করে বসো।

সুনির্মাণের কাউকে চেনে না তাই ঘরটা দেখতে লাগল। দেয়ালগুলো তীব্র কালো। নিবিড় হলুদ একটা বাল্বের আলো, পুরনো মনে হয়। মনে হয়, কী যেন একটা -- কল্পনার বাইরে এমন কিছু --  তার জন্য অপেক্ষা  করে আছে। ডানদিকের দেয়ালে সেটা আরও খানিকটা স্পষ্ট -- সেথায় দাঁত ভাঙা চিরুনি, ছেঁড়া কাগজ ও পোস্টার, তথা দুর্গন্ধে ভরা ডাস্টবিনে শিশুদের দলাপাকানো দেহ! পরিত্যক্ত জীবন যেন এই প্যাস্টেল কালারের অপটু হাতেও মূর্ত্ত হয়ে উঠেছে।

ওর পিছনের দেয়ালে পাশাপাশি দুটো দরজা। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ভেসে আসছে চাপা স্বরের কথোপকথন। ইতিমধ্যে সামনের চেয়ারে এসে একজন বসল, বয়স ষোল-আঠারো হবে বা, পরনে অতি ছোট জিন্স, প্রায় যৌনাঞ্চলের কাছাকাছি গিয়ে থেমেছে। থাইযুগলের কাছে জিন্সের প্রান্তদ্বয়ে সুতো ওঠা সংস্কার, নীল সুতোর ফাঁকে উজ্জ্বল বাদামি উরুসীমা চোখ টানে। যথেষ্ট খরচ করে মেকআপ করা মুখ। ধীরে ধীরে ঘর ভরে গেল। প্রথমেই সামনে বসে থাকা মেয়েটার ডাক পড়ল। আনিশা। গান ও কবিতা শোনাবে। পরে একে একে প্রায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পারফর্ম করলেও সুনির্মাণকে কেউ ডাকলো মনা। সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

অনুষ্ঠান এখন শেষের মুখে। আনিশার মনে পড়লো পিছনে বসে থাকা সুনির্মাণের কথা। সে পিছনে ঘুরে তার নাম জেনে পরে দেখা হবে বলে চলে গেল। “পাশে-বসা” -- আগেই আলাপ সেরে নিয়েছিল। সেও বিদায় নিল। যাবার আগে বলল, তুমি দেখছি ভারি লাজুক। সব ঠিক হয়ে যাবে। থাকবে তো এখন, আরও দেখতে পাবে। আমি চলি। সুনির্মান এতক্ষণ প্রায় কিছুই শোনেনি। কিন্তু "থাকবে তো এখন" কথাটা শুনে ফেলল।  সত্যিই তো, সে থাকবে কোথায়? তার কান্না পেয়ে গেল। অলকার কথা মনে পড়ছে। যন্ত্রণার এই জীবন তো সে শেষ করেই দিতো যদি না অলকার সাথে দেখা হত। পরম স্নেহে অলকা তাকে কাছে টেনে নিয়েছিল। তার কাছেই শুনেছিল ওদের লড়াই-এর কথা, সংগঠনের কথা। তিনদিন পর সুনির্মানকে ‘বান্ধব’এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে আসতে বলল।

কিন্তু অলকাদি কোথায় গেল? তাকে ছেড়ে? মনে পড়ল অলকাদিকে এখনো দেখেনি। বড় ভয় করছে তার। এক এক করে ঘরটা খালি হয়ে যাচ্ছে, এমনকি আনিশাও .... কি করবে সে এখন, কোথায়ই বা যাবে, প্রায় কেঁদে ফেলে আর কি, এমন সময় সুনির্মাণ .... দেখতে পেল, দ্বিতীয় ঘরের দরজা খোলা। অলকা এগিয়ে আসছে ... অলকাই?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন