![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬ |
রেঞ্জের বাইরে
মেসেজ করে নন্দিতা আমাকে জানিয়েছিল, তুমি অফিস থেকে বেরিয়ে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আমার পিজিতে চলে আসবে। একাডেমিতে সাড়ে ছটায় নাটক শুরু হবে। আমরা নাটক দেখতে যাব। উত্তরে আমি জানিয়েছিলাম, অফিস থেকে পাঁচটায় বেরিয়ে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তোমার পিজিতে পৌঁছনো সম্ভব নয়, ছটা বেজে যাবে। তোমাকে নিয়ে সাড়ে ছ’টার মধ্যে একাডেমিতে পৌঁছতে পারব না। তুমি বরং নিজেই একাডেমিতে চলে এসো, আমি যথাসময়ে পৌঁছে যাব। প্রত্যুত্তরে নন্দিতা জানালো, না, তুমি এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আমি অপেক্ষায় থাকব।
নিরুপায় আমি পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়ে ধর্মতলা থেকে একটা ট্যাক্সি ধরলাম। রাস্তা ফাঁকা থাকলে সাড়ে পাঁচটা বা পৌনে ছ’টার মধ্যে নন্দিতার পিজিতে ঠিক পৌঁছে যেতাম। কিন্তু বিকেলে অফিসপাড়া থেকেই পড়লাম জ্যামে। ট্যাক্সি আর এগোতেই পারে না। শেষপর্যন্ত সোওয়া-ছ’টা নাগাদ পৌঁছলাম। আমি জানতাম এরপর আর একাডেমিতে যাওয়া সম্ভব নয়। নন্দিতাকে বোঝাতে হবে আমার দেরিতে পৌঁছনোর কারণ। আমার কিছুই করার ছিল না।
পিজিতে দেখা হল নন্দিতার রুম পার্টনার সবিতাদির সঙ্গে। সবিতাদি বলল, আমি অফিস থেকে ফিরে এসে নন্দিতাকে দেখিনি। ও সম্ভবত আমার আসার আগেই বেরিয়ে গেছে। আমি অবাক হলাম। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না সবিতাদি। নন্দিতার সঙ্গে কথা হয়েছিল, আমি ছ’টার মধ্যে পিজিতে পোঁছে যাব। যদিও জানতাম ছ’টায় পৌঁছে ফিরতি পথে একাডেমিতে সাড়ে ছ’টার মধ্যে কিছুতেই পৌঁছনো সম্ভব নয়। সেকথা নন্দিতাকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু নন্দিতা গোঁ ধরে বসেছিল, আমাকে এসে ওকে নিয়ে যেতে হবে। সবিতাদি একটু হেসে বললেন, তোমাদের দুজনের ব্যাপার আমি বুঝি না। আর নন্দিতার ব্যাপার স্যাপার তো আমি বুঝতেই পারি না। শরীরটা বিশেষ ভালো না লাগায় আমি অফিস থেকে আগেই বেরিয়ে পাঁচটা পনেরোর মধ্যে পিজিতে ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু নন্দিতা ছিল না। আমার আসার আগেই ও বেরিয়ে গেছিল। সবিতাদির কথা শুনে হতাশ হলাম। নন্দিতা তাহলে আমার আসার অপেক্ষায় ছিল না! বুঝলাম না ব্যাপারটা। হয়তো তেমন কোনো জরুরি কাজ এসে পড়েছে। কিন্তু সেকথা তো ফোনে আমাকে জানাবে! আশ্চর্য! নিজে তো কিছু জানায়নি, এদিকে আমি যতবার ফোন করেছি, ফোন আমাকে জানিয়েছে, নন্দিতা ফোন ধরতে পারবে না, কেননা সে রেঞ্জের বাইরে আছে।
আমার অভিমান হওয়া স্বাভাবিক। আমি পরের দুদিন আর ফোন করে নন্দিতার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম না। তৃতীয় দিন নন্দিতার ফোন এলো। খুব রাগ দেখিয়ে বলল, তুমি সেদিন একাডেমিতে এলে না তো! আমি অবাক হয়ে বললাম, আমার তো সরাসরি একাডেমিতে যাওয়ার কথা ছিল না! তুমিই তো জোর করেছিলে, পিজিতে পৌঁছে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে একাডেমিতে যাওয়ার জন্য। একটুও বিচলিত না হয়ে নন্দিতা বলল, পিজিতে না গিয়ে সরাসরি একাডেমিতে আসার জন্য তোমাকে যে কতবার ফোন করেছিলাম! কিন্তু কিছুতেই যোগাযোগ হচ্ছিল না। ফোনে আমাকে সমানেই জানানো হচ্ছিল যে, তুমি ফোন ধরতে পারবে না, কেননা তুমি রেঞ্জের বাইরে আছ। আমি কী করব, বলো!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন