![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৪৬ |
কবে?
পাড়া-প্রতিবেশীরা যে তোমাকে চেনে, যাকে তুমি এত
বছর নিজের ভেতর লালন করেছো প্রকাশ্যে, আমি তাকে জাগাতে আসিনি। যে-মানুষটাকে কেউ জানে
না, কেউ দেখেনি পর্যন্ত, আমি তাকে জাগাতে চাই। আমি জানি, সেই মানুষ তোমার মাঝেই বিরাজমান।
তুমি তাকে জাগাও, রঙ দাও, জলরঙে আঁকো নিজেকে। আমি খুলে রেখেছি জানালা, যাতে কালোমেঘ
জমলে তুমি পাখি হয়ে বসতে পারো নিশ্চিন্তে। ডাকতে পারো আমাকে।
বলতে পারো, ক্লান্তির কথা-উপকথা যত।
তুমি এলে আমরা কোনো বোধিবৃক্ষের নিচে বসে চোখের
নদীতে ঝাঁপ দেব, পান করব অনন্ত নীরবতা। আমি অপেক্ষার আঁচল বিছিয়ে দিন গুনছি। তুমি ফিরবে
এই প্রত্যাশায় ত্যাগ করেছি ইহলৌকিকতা। কালবৈশাখী এসেছে। উড়ে গেছে ঘরবাড়ি। তবুও বিনাশর্তে
জড়িয়ে আছি। তোমার সময় হয়নি।
ধরো, চেরি ব্লসম ফুটেছে ডালে ডালে। বাতাসে প্রেমের
গন্ধ। তখন তোমার অমীমাংসিত প্রেম এসে যদি ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়, নিঃশ্বাসে যদি গড়িয়ে যায়
বিশাল পাথর, তবে কীভাবে পাঠাবে সতর্কবার্তা? কীভাবে পুনরায় জেগে উঠবে আমার ভেতর?
আমার শূন্য মাটির বাড়ি জানে, কতটা কালো অন্ধকার
নিয়ে নামে প্রতিটি মধ্যরাত। তাই তোমার পিঠে লিখে দিয়েছি নিলামীর দিনক্ষণ। আমাদের স্মৃতিরা
বিক্রি হলে, সব কলঙ্ক মেখে উড়াল দেব সমুদ্রের দিকে।
আগামীকাল
তোমার কি একটু সময় হবে? আমার বুকের ভেতর কিছু উচাটন
শব্দ জমেছে, কিছু যন্ত্রণা। সবাই বৃষ্টি হতে চায়, ভেজাতে চায় নীরবতা, তোমার শার্টের
বোতামে মৌনতা হয়ে বসতে চায় চুপ করে। কোনো কবিতা কিংবা গল্পে দীর্ঘশ্বাস হয়ে ছুঁয়ে দিতে
চায় তোমার অভিমান।
আমার বিছানা থেকে যেটুকু আকাশ চোখে পড়ে, যে-আকাশে
আমি লিখি তোমার নাম ঠিকানা, সেটুকু পুরো আকাশ নয়, একাংশ মাত্র। সত্যের এই রূপ আমি জানি।
তারপরেও ওটুকু নিয়েই জীবনরথ। যাতে বেঁচে থাকা সহজ হয়, যাতে ক্যান্সারের মত অন্ধকারটুকু
চোখে না পড়ে, যাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ মেলাতে পারি, যাতে নিজের কাছে ফিরতে পারি
সহজে, তাই সব বিসর্জন দিয়েছি। একটা অধ্যায় মুছতে যতটা না জল লাগে, তারচেয়ে বেশি লাগে
রক্ত। আমাকে জল দিয়েছিল আকাশ, ভোরের কুয়াশা। আর রক্ত দিয়েছি আমি। এক সাগর রক্ত দিয়ে
যে-অধ্যায় বিস্মৃতির অতলে হারিয়েছে, তা ঘুরেফিরে আসে। একটা জন্মের ভেতর যে-মৃত্যু,
অপমান, অবহেলা, সেটুকু প্রমাণ দিতে একদিন শিলাবৃষ্টি হবে বুকের ভেতর। সেদিন নূহের নৌকা
নিয়ে হাজির হবো তোমার স্বপ্নের ভেতর।
তখন ভিজতে চাইলে ভোরের ট্রেন ধরে চলে এসো একবার।
উপসংহার
আমাদের প্রেম সাক্ষ্য মানে না, গন্তব্য জানে না
আমরা পাশাপাশি চলার প্রয়াসে
উপসংহার টেনে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছি
বুকের ভেতর শকুনের মত শূন্যতা খামচে ধরলেও বলছি
না,
ভালোবাসি। পাশে থাকো। শক্ত করে ধরে রাখো, যেমন
করে দু'চোখ ধরে রাখে জলকে।
আমাদের কোনো দায় নেই, দায়িত্ব নেই।
মেট্রো সামনে দাঁড়ালে দুজন উঠে যাই অপরিচিত মানুষের
মতো।
নেমে যাই যে যার স্টেশনে।
আমাদের প্রেম সাক্ষ্য মানে না, গন্তব্য জানে না।
তবুও দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষায় কিংবা মায়ায়।
জন্মস্থান
প্রতিবার তুমি এমন নিশ্চুপে ফিরে আসো,
এমন টিপটিপ পায়ে,
এমন গোপনে,
যেন মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়,
যেন ছায়ার ভেতর বেড়ে উঠছে প্রিয় বাদামগাছ।
আমি প্রতিদিন অস্তমিত সূর্যের সাথে ডুবে যাই।
ভোরের আলোয় জন্মাবো বলে
অন্ধকারের বাহু ধরে তোমার নাম লিখি।
এতবার আয়না ভেঙেছি স্বেচ্ছায়,
স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছি গোপনে।
অথচ রোজ মঙ্গলবারে তুমি উড়ে এসেছো মেঘ হয়ে।
এত মেঘ জমালে আকাশে,
আমি একফোঁটা রোদ খুঁজে পাইনি চিঠির ভেতর।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন