কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

অর্ঘ্য দত্ত বক্সী

 

বিনয়ের কাব্যভাবনা - আমার বিনয়ভাবনা ও স্কিৎজোফ্রেনিয়া  

 


স্কিৎজোফ্রেনিয়া হল a sane reaction to a insane environmental circumstances. অসম্ভবরকম ভাইব্রেট হতে থাকা চারপাশটার মধ্যে স্থির এক বিন্দু এই স্কিৎজোফ্রেনিক রোগী আর reference frameটা তাই সবাইকে সব্বাইকে স্বাভাবিক ধরে আর সেই স্থানু মানুষটাকে abnormal! আমরা প্রায় ধরে নেব যে বিনয়ের স্কিৎজোফ্রেনিয়া ছিল আর তার সঙ্গে এটাও আগাম জানিয়ে রাখব যে ম্যাডনেস নিয়ে কোন রোমান্টিকতা করতে আমরা এই লেখাটি লিখছি না।  প্রকৃতপক্ষে সাইকোঅ্যানালিটিক চিকিৎসা ধরেই নেয় যে সাইক্রিয়াটিস্ট ঈশ্বরের স্থান দখল করে সুউচ্চ মিনারে বসে আছেন আর মানসিক রোগী যেন ড্রেনের আরশোলা!! একজন সাইক্রিয়াটিস্ট রোগীকে শুধুই অর্থনৈতিকভাবে exploit করার যন্ত্র হিসাবে ভাবেন। তার সঙ্গে ক্যাপিটালিস্ট ব্যবস্থার বুর্জোয়াদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু মনোচিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর যা প্রয়োজন তা অন্যসব চিকিৎসার ক্ষেত্রের থেকে অনেক ভিন্ন প্রকৃতির। প্রাথমিকস্তরে রোগী পরিষেবা চায় না... চায় friendship to share, to be listened, to make catharsis বা ব্যাপক অর্থে relationship  যাকে পয়সার বিনিময়ে দেওয়া একপ্রকার prostitution তো হতে পারে!!

Psychology তে diagnostic criteriaর থেকে মিসলিডিং কিছু আর নেই কারণ DSM ম্যানুয়াল ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। একটি experiment করা হয় যেখানে ১০জন সম্পূর্ণ সুস্থ মনোবিদ স্কিৎজোফ্রেনিয়ার বিবিধ রোগলক্ষণ বলে সহজেই মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায় এবং বেশকিছুদিন তাদের সময় লেগে যায় এটাই প্রমাণ করতে যে তারা সুস্থ। এই ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সন্দিহান হয়ে পড়ে ও বেশকিছু সত্যিকারের স্কিৎজোফ্রেনিক রোগীকে তারা নকল ভেবে ভর্তি নিতে চায় না। সুতরাং স্কিৎজোফ্রেনিয়া সম্পূর্ণভাবেই qualitatively লক্ষণভিত্তিকভাবে উপর উপর দেখে নির্ণীত একটি রোগ যার ফলে ব্রেনের কোন অংশের কোন abnormality বাইরে থেকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। যেন ধরেই নেওয়া হয় কানে অস্বাভাবিক শুনছে বা অস্বাভাবিক দেখছে (hallucinationই বা কাকে বলব?) মানেই স্কিৎজোফ্রেনিয়া!

মানসিক সমস্যার ডাক্তারবাবু, আপনি একমাত্র সেই সমস্যারই সমাধান করতে পারেন যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে আপনি নিজে গেছেন এবং যাকে ওভারকাম করে বেরিয়ে আসার অভিজ্ঞতা আপনার আছে, কারণ বিশেষ করে এই রোগটি হলে কি অনুভূতি হয় বা কিজাতীয় experience তার sensory organs feel করে তা না জেনে শুধু কিছু লিথিয়াম সোডিয়াম লিখে দেওয়াটাই এযুগের চিকিতসাপদ্ধতি কিন্তু প্রাচীনকালে তা পদ্ধতি ছিল না তখন ছিল ওঝা বা পুরোহিত বা shaman. তাদের ভর হত । তারা ঈশ্বরীয় spirit থেকে আনকনশাসের গোল্ডেন ট্রেজার থেকে সাধারণ মানুষের মনের সমস্যার সমাধান করতেন সেই ব্যক্তির মানসিক স্টেটে গিয়ে তাকে ফিল করে এবং নিজে সেই সমস্যার সমাধান করে নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসা করতেন। তাই কুলকুণ্ডলিনীর প্রথম জাগরণে পশুপ্রতীক হল মকর বা কুমীর যে হঠাত জলে পড়া যোগীকে গিলতে আসে কিন্তু গুরু নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে সেই পরিস্থিতিকে কিভাবে জয় করতে হবে তার উপায় বাৎলান। ভর আমাদের উপমহাদেশে আর আফ্রিকায় এক অতি কমন জিনিষ। আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি ও পূর্বপুরুষদের আত্মার শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি অন্তরের আত্মার শক্তিতে আমরা সব বিপদ থেকে মুক্তি পাব rather than materialistic way. তাই আমাদের সাইকোলজিকে American আর western European মনস্তত্বের বিজ্ঞান দিয়ে বিচার করার কোন যুক্তি নেই  আর স্কিৎজোফ্রেনিয়া আদৌ কোন সমস্যা কিনা সে প্রশ্নও আছে। capitalist world এর অচলায়তনের repression, exploitationmaddening rationalisation এর বিরুদ্ধে স্কিৎজোফ্রেনিয়া হল মুক্তি ও সৃষ্টিশীলতার জেহাদ। একজন সাধারণ মানুষকে স্কিৎজোফ্রেনিয়া অতিমাত্রায় সৃষ্টিশীল করে যে তোলে তা শুধু দার্শনিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয় ... বাস্তবপ্রত্যক্ষ। এবার মহাশয় আপনি বলবেন সে তো ভ্রম...error...sensory hallucination. কিন্তু যে মুহূর্তে আপনি ভ্রমটি দেখছেন তখন কি তাকে ভ্রম বলে নিজেই চিহ্নিত করতে পারেন? যখন দড়িতে সাপ দেখছি তখন আমি  সাপই দেখছি দড়ি দেখছি না। পরে ভ্রম ভাঙ্গলে বুঝতে পারছি যে দড়িকে সাপ দেখেছিলাম। কিন্তু আমার সেই moment এর ভয় অভিজ্ঞতাটা বা creativity টা কিন্তু ভুল নয়, তা প্রত্যক্ষবাস্তব। সুতরাং আমরা যদি মেনেও নিই স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগ তার positive aspect যে মস্তিষ্কের অতিকর্মময়তা যার ফলে এক unique creativity এর নতুন দিগন্ত খুলে যায় ... মানুষের অন্য সবার থেকে unique ভাবতে পারার সম্ভাবনার ক্ষমতা এত যে বাড়ে যায় তা তো এক আশীর্বাদ বা দৈববর। হিসাব না মেলানো বীভৎস animal instinct বাস্তবটার মুখোশ এক লহমায় টেনে ছিঁড়ে খুলে দিয়ে মুহূর্তে স্কিৎজোফ্রেনিয়া আমাদের ম্যাচিওরড করে দিয়ে যায়।  দ্বিতীয়ত আপনার সাপ ও দড়ি সম্বন্ধে বাস্তব জ্ঞান আছে... আছেই না হলে সাপ কি বস্তু না জানলে আপনি ভ্রমবশতও দড়িতে সাপ দেখতেন না। ভ্রমবশত কি আপনি ঘোড়ার ডিম দেখেন? তা অবাস্তব। সুতরাং ভ্রমেও অন্তত একটি কার্যকারণ যুক্তিশৃঙ্খলা পাওয়া যাচ্ছে। আপনি সাপ আর দড়ির যে স্টিমুলাস তার মধ্যে discrimination করতে পারেননি আপনার ইন্দ্রিয় দিয়ে তাই আপনি ভ্রম দেখেছেন। আপনার সুতরাং সব কটি cognitive functionই যেমন perception আর memory কাজ করছে। আপনার মেমোরি যে কাজ করছে তার প্রমাণ আপনি দড়ি ও সাপ উভয়কেই পূর্বজ্ঞান থেকে রিট্রিভ করছেন এবং যা আপনি উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষ্যকরণ করছেন তা নেই ও বলা যাবে না তা আছে তাও বলা যাবে না ... তা অনির্বচনীয় ...undecided. ভ্রম আপনাকে যা দিয়ে গেল তা হল এক highly creative experience যা স্বপ্নেও মানুষ পায় যখন সে “ABSURD” স্বপ্ন দেখে এবং তা যে একটি bliss এবং তার মাধ্যমেই যে শ্রেষ্ঠ collective symbolগুলি উঠে এসেছে ও সভ্যতাকে শুভের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে তা সবাই জানেন।

প্রাচীনকালে তাই পাগলদের মোটেও আধুনিক যুগের মতো মানসিক শক্তিতে দুর্বল, অর্থনৈতিকভাবে অচল ও লায়াবিলিটি আবার সামাজিক প্রস্টিজের পক্ষে অসম্মানজনক ও তার আগ্রাসনকে (ক্ষেপে যাওয়া) physically বিপদজনক বলে বিবেচনা করা হত না। তাদের ছিল অবাধ গতি... তারা ছিলেন সাধুর মতোই মুক্ত ও দিব্য স্বভাবজাত ও ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মিডিয়াম। আধুনিক যুগ যখন তার inbuilt দর্শন বদলে rationalও ক্যাপিটালাইজড হয়ে উঠল তখন তারা asylum নিয়ে এসে এদের জনবিচ্ছিন্ন করল আর শুরু করল এদের চিকিৎসা (নিজেরাই এদের ভাগ্যবিধাতা হিসাবে self acclaim করে) যেন এরা অস্বাভাবিক এই বোধে ...আর সেই যুগ থেকে এদের alienated হয়ে যাওয়ার শুরু যার চরম প্রকাশ ফ্রয়েডীয়ান স্কুল এবং ক্রমশ উত্তরাধুনিক যুগ anti-psychiatry anti-Oedipus দিয়ে এর প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে উঠছে।

মানসিক হাসপাতাল বা rehab গুলোর একটা পলিটিক্স আছে তা হল এই পরিবেশে টিকে থাকতে গেলে আপনি সুস্থ হোন বা অসুস্থ আপনাকে একটি লেবেল অবধি মানসিক রোগগ্রস্ত (অন্তত বাহ্যিক লক্ষণে) করে নেওয়া হবে সেই স্টেটে বাধ্য হয়ে না গেলে আপনি সেই environment কে মানাতেই পারবেন না আপনি এত odd হয়ে যাবেন যে total systemটাই তখন প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়াবে অন্য সব কিছু কিছু এখনও বোধ আছে এমন man-made পাগলদের কাছে। এমনকি অতিরিক্ত ধূমপান ছাড়াতে আসা এক “client”ও এখানে চিকিৎসা করাতে এসে সেই ভুলভুলাইয়া অজানী দেশের না জানি কী রোগ স্কিৎজোফ্রেনিক হয়ে যায় ও তারপর সেখানেই শুরু হয়ে যায় তার সেই না-রোগের চিকিৎসা এমনই হল মানসিক হাসপাতাল। সে যেন নিজেই নিজের desireকে রিপ্রেস করার desire করল!! করতে বাধ্য হল। বস্তুত desire কোন কিছুর অভাব বোধ থেকে জাত নয়। একথা আমাদের ভারতীয় দর্শনও আলোচনা করেছে তার মত করে।  ডিজায়ার যে তার জন্য প্রয়োজনীয় objectএর ( যাকে লাঁকা বলছেন object a) এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি desire machine desire production system তৈরি করে যা autonomousযার ভিত্তিতে এই capitalist economy এর চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব ভেঙ্গে পড়ে আর মানুষকে না ফ্রয়েডের আশ্রয় নিতে হয় systemএর চাপানো ইদিপাস রিপ্রশন থেকে মুক্তির জন্য না তাকে মার্ক্সের আশ্রয় নিতে হয় বুর্জোয়াব্যবস্থা ভাঙ্গার সক্রিয় বিপ্লবের রসদ যোগাড় করতে। desire নিজেই একটি বিপ্লব আর সেই তার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় complimentary parts যোগাড় করে নিয়ে নিজেই আত্মবলেবলীয়ান একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হিসাবে গড়ে উঠতে পারে। যদি বিপ্লবের প্রয়োজন হয় তবে desire এর প্রবল libidinal sexual flow নিজেই তাকে নিয়ে আসবে এ বিশ্বাসে ভর করে উত্তরাধুনিক ভাবুকরা আনলেন স্কিতজোঅ্যানালিসিসের দর্শন যা postmodernism এর যাবতীয় literary বৈশিষ্ট মেনেই রাইজোম্যাটিক, স্বয়ংক্রিয় ও চক্রবৃত্তবৃদ্ধি ক্রিয়া। মনে হয় আধুনিকতা আবার যেন ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে দাঁড়াল আর উদার postmodern তার দিকে সকরুণ বুদ্ধের দৃষ্টি নিয়ে তাকাল।

আসলে economy আর পলিটিকাল অ্যান্ড সোশ্যাল সিস্টেম মানসিক রোগকেও করে তোলে ছোঁয়াচে। rehab সত্যিই তাই এমন এক তীর্থ যেখানে ... u can check out any time u like but u can never leave .... এবং এই vicious circleই বিনয়কে ১৬টা শক দিইয়েছে। যেখানে শক থেরাপি লোবোটমি বাতিল হয়ে ক্রমশ মেডিকেশনও বাতিল হওয়ার পথে কারণ মাদকের মতোই mental drugsও বিরাট এক নেশা এবং নেশা ছাড়াতে যে drug dependency চলে এল তা বন্ধ করলে তার যে withdrawal তাও এক client এর সহ্যসীমার বাইরে!! মানসিক চিকিৎসার মানবিক মুখ এখন তাই talk therapy, client centred therapy... বহুবিধ positive, humanistic existential approach যা মানুষকে আত্মার মত অবিকারী অমৃতের সন্তান হিসাবেই ভাবছে।

বিনয়ের ‘কাব্যভাবনা’ (ধূসর জীবনানন্দ গ্রন্থের অন্তর্গত, কবিতীর্থ) প্রসঙ্গ নিয়েই এই টেক্সটটি আর ভাবছিলাম এ লেখা যেমন context কে ছেড়ে free flow করে যাচ্ছে যেমন খুশি তেমনই হঠাত বিনয় নিজের ‘কাব্যভাবনা’ নিয়ে বলতে গিয়ে চিরাচরিত কেন লিখি জাতীয় থোড়বড়িখাড়ার বদলে অমন  অদ্ভুতুড়ে পাগলামি বলতে বসলেন কেন? প্রথমত যে কথাটি বললাম হ্যাঁ তাই যে বিনয় এই ম্যাসেজ আগেই জানিয়ে নিলেন যে তিনি এর উত্তরে ধাঁধা ইঙ্গিতেই কথা বলবেন...কথা বলবেন semioticsএর গূঢ় দর্শনের মোড়কে দ্বিতীয়ত এই লেখ্যকৃতিটিকে এমনভাবেই centrifugalকরে নির্মাণ করলেন তিনি এবং তাতে  decontextualisation ধারণাকে( linguisticভাবে) যে ভাবে ফর্ম হিসাবে পাওয়া গেল তা থেকে বোঝা গেল শুধু কাব্যভাবনা নয়... তিনি লিখতে বসেছেন জীবনভাবনা জীবনদর্শন ও জীবনস্মৃতি ... যার অনেকটাই জুড়ে আছে তার আত্মজীবনীমূলক কবিতা ও মানসিক রোগ।

প্রথমত বিনয়ের এই লেখাটি পড়ে আমরা তাকে উন্মাদ ভাবতেই পারি। কি “হাসিচ্ছলে"ই না তিনি বলছেন দেখো আমার কি ভীষণ paranoid schizophrenic লক্ষণ!! সাধারণ এক সাইকোলজিস্ট এই লক্ষণ শুনেই বলবেন thought broadcasting হয়ে যাচ্ছে বা মনের চিন্তা অন্যে জেনে ফেলছে এই জাতীয় delusionএর symptom এটি। আবার সেই চিন্তার reactionও পাওয়া যাচ্ছে। এক অবাস্তব কথোপকথন চলছে ২০ মাইল দূরে থাকা দুটো মানুষের মধ্যে। এমনকি ঠাকুরনগরনিবাসী ও কলকাতানিবাসী দুজনের মধ্যে communication চলছে মনে মনে !! এমনকি যাবতীয় বিষয়েই কবি নিজের reference বা context পাচ্ছেন যেমন এমনকি টিভিতে যে প্রোগ্রাম চলছে বা খবর পড়া হচ্ছে তা সব তাকে নিয়েই!! এগুলি হল signature diagnosis criteria of acute schizophrenia. মনোবিদ ভাববেন external projection হচ্ছে যা আর defence mechanismএর control এ নেই। আপনাদের মনে পড়বে ভ্রমের কথা যেখানে আমার মনের সাপকে আমি দড়িতে প্রজেক্ট করেছিলাম। বিনয় কিন্তু এই সাড়ে তিন পাতা দিয়ে তার বিনয় মজুমদার জীবনতত্ত্ব বলে দিয়েছেন সাংকেতিকভাবে। সেই মনোবিদই যদি এই লেখাটি পড়েন, এই স্যাটায়ারিস্টিক সান্ধ্যভাষামূলক অথচ  চরম শান্ত অমোঘ casual  আর সুস্থির শান্তিমগ্ন এই লেখাটি ও তার যদি সাহিত্যবোধ ও নিজের পেশার যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা থাকে তবে আমি নিশ্চিত তার তবে লাঁকার মতোই একটি সুবিখ্যাত পারলয়েড লেটার নিয়ে পেপার লেখার বাসনা হবে...তারও আর ম্যানুয়ালে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার কি লক্ষণ লেখা আছে সেই টিয়াপাখি বিদ্যা মনে পড়বে না... তিনি যা হবেন তা হল ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ ...

হ্যাঁ বিনয় মজুমদার এমন একজন মানুষ যিনি utterly introvert. তবে তিনি যেমন খুব গভীরভাবে কারোর সঙ্গে মিশতে চান না, নিজেকে অতিপ্রকটভাবে পরের কাছে মেলে ধরতে চান না তেমন complete isolationও তিনি  সহ্য করতে পারেন না এ এক অনন্ত টেনশন তৈরি করে যে কোন schizoid মানুষের মনে। বিনয় তাই বেছে নিয়েছেন মধ্যপন্থা। তিনি communicate করছেন কিন্তু ফিজিক্যালি নয়।

আমরা দেখব যে এই ছোট্ট লেখাটির মধ্যেও বিনয় ছোট ছোট প্রসঙ্গান্তর এনেছেন...আপাত contextহীন কিছু কথা বলেছেন। যাকে decontextualisation হিসাবে আমরা আগেই চিহ্নিত করেছি ( যেমন ৩ নং পাতায় উৎপল ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথোপকথন)। আবার একই সঙ্গে তিনি context এর উপর এতই বেশি জোর দিয়েছেন যে উভয়কেই abnormal লাগে!! তিনি বলেছেন কারও কবিতা যদি মুখস্থ থাকে তা মনে মনে আবৃত্তি করা গেলে কবি যত দূরেই থাক তার মুখ দেখা দেবে । তার দিকে তখন চেয়ে তাকে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলা যায়!! অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে গোটা প্রসেসটাকে তিনি ১ ২ ৩ ৪ এভাবে সাজিয়েছেন যেন ফোন ডায়াল করার সর্বজনবিদিত পদ্ধতি

অনেক বিষয় ছুঁয়ে এমনভাবে প্রসঙ্গটি বলা যা এত বহুস্তরীয় যে একটু একটু করে ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে ঢুকতে হবে। বিনয় চিরকাল লিখে গেছেন দিনলিপিমূলক আত্মজৈবনিক কবিতা ... তা সে যে কোন বিষয় নিয়ে ... না-কবিতাই লিখে গেছেন তিনি। এবং তাতে নেই কোন নির্মাণের চাতুরি নেই অপ্রয়োজনীয় সৌন্দর্যায়ন বা অভিনব বিষয়ভাবনার প্রচেষ্টা। তার কবিতা আদতেই decontextualised...যেমন তার মানসিক গঠন তেমনি তার কবিতা। তিনি ও তার কলম এক। তিনি ঠিক যেমন তার কবিতা ১০০% তেমনই... এর মধ্যে অন্য কিচ্ছু নেই । এ এক mundaneness  যা তার কবিতায় বড়ই প্রকট। তবুও তিনি কবি...নিজেকে ১০০% নিজের কবিতায় contextualiseকরেন তিনি...শুধু নিজেকেই... তিনি যার মূলগত নেচারই হল decontext বেসড। এই হল dualityএর জায়গা যেখানে sanity আর insanity তার validity হারিয়ে ফেলে। একইসঙ্গে তার context decontext করার ... প্রয়োগ ও নিবারণক্ষমতা এতই অমোঘ যে তা সত্যিই তা অস্বাভাবিকরকমের।  আর একেবারে শেষে এসে তিনি দিয়ে দেন একটি jerk...একটি ভূকম্পন...যা সদম্ভে ঘোষণা করে যে হ্যাঁ এটি কবিতাপদবাচ্যই আর এর লেখক আমি একজন সুস্থ মানুষ...কবি হিসাবে সম্মানের দাবিদার।

বিনয়ের কাছে এক পাঠক কবি কবিসত্ত্বা ও কবিতাসত্ত্বা অভেদ। যদি মেমোরি যথার্থভাবে কবির কবিতা বা contextটি মনে রাখতে পারে তবে আলাদিনের দৈত্যের মতোই ব্রেনের সিস্টেমের ক্লু কবিতাসিস্টেম থেকে কবিকে উদয় করবে। আলাদিনের প্রদীপ ও আলাদিনের দৈত্য অভেদ। signifier signified এর ক্রিয়াভিত্তিক দিকটি বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য যেখেনে তার ভিত্তি অধ্যাত্মবাদ ও উপলব্ধি, পুরাণ ও প্র্যাকটিস, ইতিহাস ও দর্শনও বটে। বিনয়ের কাছে ঈশ্বরীর সৃষ্টি যেহেতু সার্বভৌম ও সমগ্র সত্ত্বা হিসাবে আসে তাই আলাদা করে কবি কবিতা স্মৃতি signifier signified context subject এগুলি আলাদা থাকে না। এক পঞ্চবিংশতি প্রকৃতিতত্ত্বের অন্তর্গত হয়ে যায় সব। Collective হয়ে যায়। All that is outside, also is in inside বোধ হয়। কবিতা সংকলন এর ক্ষেত্রে বিনয় স্মরণযোগ্য কবিতায় বিশ্বাস করতেন এবং বলতেন যতদিন বিনয় মজুদারের নাম reference হিসাবে ব্যবহৃত হবে ততদিন তিনিও জীবিত থাকবেন। কবির মধ্যে কবিত্ব থাকে, পাখির মধ্যে থাকে পাখিত্ব, পাথরত্ব থাকে না, তাই ঈশ্বরীর নিয়ম। তাই কবি মরে গেলে পাখি মরে গেলে তবু যদি context থেকে যায় তবে তবে সেই কবিত্ব পাখিত্ব জীবিতই থেকে যায়!!

ফুকো ম্যাডনেস ও সিভিলাইজেশনে যে rational structured ভাষার ব্যবহার করেছিলেন তাকে আক্রমণ করেছিলেন দেরিদা। এবং এই বিন্দু থেকেই বিনয় ও তার abnormality ও তার abnormal ভাষার প্রসঙ্গ চলে আসে। বিনয় ভাবের ঘরে চুরি করেননি। তার কবিসময়সারণী যত এগিয়েছে unique থেকে uniqueতর এক জার্নালধর্মী কবিতায় চলে গেছেন তিনি নিরলঙ্কার। তার ঘটনাহীন অর্থহীন খাদ্যহীন চরম পলিটিক্সের শিকার insecure পরিস্থিতিতে কবিতা নিয়ে নির্মাণ নির্মাণ খেলা তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। তার বিষয়, উপমা, রূপক সব সাধারণ...অসাধারণভাবে সাধারণ...abnormally normal! আর তাই দিয়ে main streamএর শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিতে পেরেছেন তিনি। না, বিনয় অনুকরণ করা সম্ভব নয়। তার কারণ এই নয় তিনি জটিল...তার কারণ তিনি অস্বাভাবিকরকম অসম্ভবরকম extraordinarily ordinary!!  বস্তুত যা কেউ একবার শিখলে ভোলে না যেমন semantic memory (মাতৃভাষা স্মৃতি) যেমন engineering এর সংজ্ঞাগুলো ... একটি প্যাটার্ন যা বারবার চিন্তনে অনুশীলনে তৈরি হয় এক মানুষের unique thought structure and personality patternA signature of a particular person। তাকে একেবারে বিনা defense mechanism এর বাধায় ড্যাম  থেকে ছাড়া জলের মতো তোড়ে প্রবাহিত হতে দেওয়া কবিতার নাম বিনয়ী কবিতা বা ‘না-কবিতা’ বা একান্ত বিনয়ীই কবিতা! একবার বলুন তো “কেন আরো একটি চাকা লিখতে পারছি না” এ জাতীয় হতাশা হীনমন্যতা আমরা কোথাও বিনয়ে পেয়েছি?!! হাগা মোতা খাওয়া কথা বলার মতো তার কবিতা লেখা যাকে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন যেন হাই তোলা তাই তো আমরা পেয়েছি এই নিষ্কাম প্রাজ্ঞ কবিটির কাছ থেকে... বুদ্ধের মতো!!

বস্তুত বিনয় বরাবরই তার কবিতায় পাঠককে কবির সঙ্গে আইডেন্টিফায়েড হতে দেন নি যেমন কিনা রূপকথাগুলোয় রাজপুত্রের সঙ্গে আমরা হয়ে যাইতিনি বরাবর বজায় রেখেছেন এক কাব্যিক alienation যার আশ্রয় তার নিজেরও দরকার ছিল নিজেরই সুস্থতার জন্য। এবং তিনি বরাবরই বড়ই অভিমানী তাকে নিয়ে পাগল পাগল পলিটিক্সে। বিনয় তাই নিজের মত করে একইসঙ্গে পাঠক ও সমুদয় ‘হাঙর’দের (ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, পিঠে ছুরি মারা কবিরা) মুখে ঋত্বিকের মতোই ছুঁড়ে দিয়ে রাখলেন এই কাব্যভাবনা থুড়ি থাপ্পড় যে যাকে তুমি বলছ আমার মানসিক রোগ স্কিৎজোফ্রেনিয়া যাকে বলছ আমার দুর্বলতা তাই আমার greatest weapon কারণ তাকে আমি তত্ত্বতঃ জেনে হজম করে ফেলেছি।তুমি ভাবছ আমি সাপভ্রম দেখছি এবং আমিও চাই যে তুমি সেই ভ্রম নিয়েই থাকো!! আমার মধ্যে এই স্কিৎজোফ্রেনিক লক্ষণের উর্ধে আছে অমোঘ শান্ত সংযত casuality যা তোমার  melancholia/mania principle ছুঁতে পারে না। না পারে তোমার স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগলক্ষণের ফলাফল হিসাবে সন্দেহবাতিকতা আত্মহত্যাপ্রবণতা aggression বা depression কিছুই ছোঁয় না আমায় অথচ দেখ তোমার মেডিক্যাল স্কিৎজোফ্রেনিক রোগলক্ষণের পাখিপড়া বুলি!! আমার চারপাশ আমার দ্বারা এমতই নিয়ন্ত্রিত যে আমার DESIRE SYSTEM যাকে যেভাবে আমি চাই দেখে কথা বলে নিতে বা কাজ করিয়ে নিতে পারি এমনকি হে ডাক্তার তোমাকে দিয়েও!!! হ্যাঁ আমি বিনয় মজুমদার... I am the CONTEXT!!!

না এই লেখাটিতে একেবারেই বিনয়ী নন আমার বিনয়...

Project Guide: দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ...  ভ্রান্তিগুলি একান্তই আমার


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন