কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

সুভশ্রী সাহা

 

সমকালীন ছোটগল্প



স্বজন

বাবা কাল ভোরে চলে গেছেন পরপারে। মাত্র চব্বিশঘণ্টা, আর তার মধ্যেই সুর-তাল-লয় সব কেটে গেছে বাড়ির। ঘুম থেকে উঠে দীপুর মুখটা পুরো তেঁতো এখন! একমাত্র শুভ এসে পৌঁছাতে পারেনি, বাকি চার ভাইবোন এসেছে তারা। অবশ্য ডিভোর্স হয়ে যাবার পর নীতু আপাতত মায়ের কাছেই আছে। দীপু পন্ডিচেরিতে কলেজে পড়ায়, বিয়ে করেনি। বাকি চারজনের সংসার আছে, কিন্তু কেউই এ শহরে নেই।  শুভ একেবারে বিদেশে। নীতু হয়ত এখন পাকাপাকিভাবে কলকাতাতেই থাকবে। কে জানে! কিন্তু কাল যা খেয়োখেয়ি দেখল ভাইবোনেদের মধ্যে, অতি জঘন্য! তলায় তলায় পাঁক, কে কাকে ছেটাবে তারই চেষ্টা! অসহ্য!

সে বিয়ে করেনি একটু আলগা থাকে বলে, তাতেও  কত সমস্যা এদের! অথচ সেকি কোন কর্তব্য করেনি? বাবা মার অসুখবিসুখে টাকা পাঠায়নি? যখন যা যা বলেছে মা! কিন্তু কাল মা সম্পূর্ণ চুপ করে রইল অথচ নীতা আর মিতার কথায় মা দিব্যি সেফগার্ড। খালি এককথা সংসারে, অমন একটু-আধটু ঠোকাঠুকি হয়েই যায়, চুপ কর তোরা! আশ্চর্য! বাবা তো ভালোই পেনশন পেতেন, তাও মা কি মান্থলি কিছু আশা করে তার থেকে? বলেনি কেন তাহলে? কই শুভ যে ডলারে মাইনে পায়, তার বেলায় আশা নেই কেন? মনে তো হয় না, না চাইলে সে কিছু পাঠায়!

শুভকে পড়াতে তো কম খরচা হয়নি বাবার! দাদাও কি কম? নিজে সরকারি কলেজে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে বারবার বলছে লোকজনের সামনে, প্রচন্ড কর্তব্য করে বলে র‍্যালা দেখালো অথচ দীপুও কি সরকারি কলেজে পড়ে অধ্যাপক হয়নি? চাইলে সেও বড় শহরে বা কলকাতায় পোস্টিং নিতে পারত, কেন নেয়নি তার পরিবার কি জানে না কারণটা? বিদিশা যখন না বলেকয়ে তার প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে গেল বিয়ের পর, সেই অপমান কেমন করে মেনে নিয়ে সে বেঁচেছিল, শুধু সেই জানে। তখন তো সবাই তার পাশে ছিল! এখন সেটা হয়ে গেল স্বার্থপরতা! বিদিশার সঙ্গে বিয়েটা কারা দেখেশুনে দিয়েছিল? ছি:! কাল সে ফিরে যাবে পন্ডিচেরিতে, সেরকম হলে আবার কাজের আগে আসবে। দীপু বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিচে এল, এককাপ চা দরকার। নিচে নেমেই সে অবাক হয়ে গেল, বড়বউদি চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ঘুরছে, নীতা রান্নাঘরে।

--লুচি হচ্ছে রে দীপু। মা রান্নাঘর থেকে হাসি হাসি মুখ বাড়ালো।

--মেজদা তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে আয়, দাদা বসে আছে তোর জন্য। মিতা টেবিলে ব্রেকফাস্টের প্লেট সাজাতে সাজাতে বলল।

দাদা বসার ঘরে ফোনে কার সাথে কথা বলছে। কানে এলো তার - শুভ আসবে কী করে অতদূর থেকে?  আমি বারণ করেছি! বলেছি যা আচার আছে কিছুটা পারলে করে নিস ওখানেই! দীপুটাও তো একলা মানুষ, অত নিয়মকানুন মানা একা একা হয় নাকি? - হ্যাঁ, ও কাজ পর্যন্ত এখানেই থাকবে। যা পারব করবো আমরা ভাইবোনেরা। বাবার বয়েস হয়েছিল, অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন, চলে গেলেন। এখন মা আছেন। তার যাতে কোনোও রকম - হা হা হা সে তো বটেই গো! সংসারে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগবেই বরুণদা! যতই দূরে থাকি সব, তবুও মা আছেন, মার কাছে সবাই আসতে পারব, এটুকু পাওয়া তো রইল! তাই না?

দীপুর নাকে এখন বাড়িময় লুচির সুঘ্রাণ!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন