কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

অভিজিৎ বসু

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬

 


রোববার

ছিলে মেঘ

বা চান গোলাপ

হয়তো অনুভবের বিশেষণের বিছানা।

সবাই গল্প বলতে চায়। গল্প। গল্প ভেতরে আটকে থাকলে মানুষ অন্যকে খুন করতে পারে। টাইপ রাইটারের শব্দ। ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ। সমকামী মেঘ উড়ে যাচ্ছে ধূসর প্রান্তরের দিকে। আহত শরীরের মিছিল। এতো বড় পরিত্যক্ত অফিসে একা। একসময় গমগম করতো মানুষ। আর এখন ভুতুড়ে। বুকের মাতাল আরশোলা। আগুনে জ্বালানো শব্দ।

এখানে একটা বাতাসে ঝুলে আছে ক্যালেন্ডার। আর কালো কালিতে লেখা রোববার। ক্যালেন্ডারে রোববাার থাকা স্বাভাবিক। তবে অন্যরকম এই রোববার। রোববারে অসংখ্য দাগ দেওয়া। খুব ভালো না করে দেখলে বোঝাই যায় না।

আজ কী বার? শনি, রবি, সোম বা শুক্রবার! বেঁচে থাকার সময় বার নিয়ে চিন্তা করলে মানায়। অফিসে যাবার বার, কবে বন্ধ সেই বার, বৌয়ের সাথে শোবার বার, প্রেমিকার সাথে ঘুরতে যাবার বার, ওষুধ খাবার বার, দাড়ি কামানোর বার, শ্মশানে গিয়ে ধূপকাটি মোমবাতি জ্বালাবার বার। আকাশ কালো করা ঝড় দেখার বার।

কিন্তু এখন ওসবের বালাই নেই। অনেকদিন হলো এই ঘরে ভালো লাগে না। তখনই রোববারের সব দাগ হাওয়া হয়ে গেল। যে অন্ধকার ঘরে ম্যাজিক হবে একদিন। আলো আসবে। আলো।

আজ কি হলো? এখানে ব্লগ, এক্স আর ইনস্টাগ্রাম দক্ষতা দেখানোর ইনডিকেটর নেই। আলো আসবে। সাহিত্য-টাহিত্য পরে, আগে বিপ্লব। কেমন একটা ধাঁধা। চেনা ফিকশনে পিছন থেকে ছুরি চালানো।

আলোয় ঝলমল করে উঠলো। মাতাল ঘ্রাণে, ডায়াফ্রামের শাদা স্থিরচিত্র চোরাজানের ধাক্কায় চলিত ভাষায় রূপান্তর।

শেষ অবধি ছয়টি বাদুড় উড়ে গেল। একটা হাত, একটা ইমেজ, দোহারসঙ্গীত। শূন্যতার ভেতর দুটি চোখ। সবুজ। একদম বোতলগ্রিন। মেয়েটির জন্য গভীর রাতে সরে যেত শরতের মেঘ। মেয়েটির নাম ইরাবতী। কিম-কি-দুকের সিনেমা দেখলে, অমিয়ভূষণের উপন্যাস পড়লে, মালের বোতল খুললে, ডিনারের সময় দেয়ালে ভেসে উঠতো মাঁতিসের শিল্প, ফিশফ্রাই, ট্রিপল-এক্স অথবা চুনোমাছের ভাজি সবখানে ঘুমন্ত অসুখ। ভালোবাসা ঘিরে নাচ। ইরাবতী আসবে একদিন।

হয়তো স্বপ্ন। হয়তো মিথ্যা। হয়তো আত্মহননের বিছানা। হাত নেমে আসে চোখের শূন্য ডিসট্যান্সের কাছাকাছি। চেনা শরীরের গন্ধ। ইরাবতী। এতোটা সময় পরে আসলে!

:তোমাকে ভুলতে পারলাম না।

:কাকে?

:কাকে আবার, তোমাকে। তোমার শরীরের গন্ধ খুব টানে। আজতো রোববার, এই দিনটা পারফেক্ট। আসার সময় তোমার প্রিয় আলো-ছায়া নিয়ে এসেছি সঙ্গে করে।

:কাম্যু, সার্ত্র, নীলঅক্ষরে হলুদবই। পাবলো নেরুদার কবিতা। খুন-ধ্বংস-রক্ত। ম্যাজিকালি আর রিয়েলিজমের মধ্যে কনট্রাস্ট।

:এই বদ্ধঘরে কি লেখালেখি মানায়?

:অনেকদিন আদর করিনি তোমায়। এসো ইরাবতী রুক্ষ জমিতে মরি আরেকবার।

দুজনেই পোশাক খুলে খুলে মাতাল-ড্যান্স। বুনো হয়ে গেল চারপাশ। এই পৃথিবী এখন আমাদের। অমরত্বের স্বাদ। গোলকধাঁধার রিয়াল লাইফ দূরে ঠেলে কী জম্পেশ সাক্ষাৎকার তথাকথিত কাটতি লেখকের! লেখক দানবে রূপ নেয়। সাহিত্যে রোমান্টিসিজম। চিৎকার করে পড়তে থাকে কেউ।

আজ কী রোববার? তার আগে চুমোর টানে আকাশ কালো করে ঝড়… দুজন মানুষ লিখে যেতে থাকে, দুজন পাগল হবো একসাথে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন