![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬ |
কুসীদ
অনেকগুলো টাকা চুনা লেগে গেল জয়দেবের। নকুল সামন্ত পুরনো খদ্দের। বহুবার টাকা নিয়েছে। ফেরতও দিয়েছে সময়মত। নামকরা সাট্টাখোর হলেও কোনদিন কথার খেলাপ করেনি। সপ্তাহ তিনেক হল পাঁচহাজার নিয়েছিল। সুদ দিতেও শুরু করেছিল। আজ সকালে হঠাৎ শোনা গেল, নকুল গতরাতে মারা গেছে। এখন টাকাটার কী হবে! নকুলের তো ফ্যামিলি ছিল না!
ফুলু এসেছিল। “নকুলদা নাকি তোমার টাকা মেরে দিয়ে গেল?” ফুলুর কী হাসি!
জয়দেব ফুলুর সাথে
অভ্যাসমত শুলো। যাওয়ার সময় ফুলু আবার সেই অদ্ভুত হাসিতে
বলল, “তুমি শালা
পাক্কা সুদখোর!” জয়দেব পাত্তা দিল না।
শিশির এলাকার কারো
হাড়ির খবর জানে না, এমন নয়। রাস্তায় জয়দেবকে দেখে বলল, “গায়েগতরে টাকা
শোধ হয়ে গেল?”
জয়দেব গম্ভীরভাবে
বলল, “কী বলতে
চাইছিস?”
“বুঝলে না!” জয়দেব চুপ করে আছে দেখে শিশির হেসে বলল, “ফুলু এম.এল.এ-র ছেলের কেপ্ট। তুমি ওর সাথেই… দম আছে মাইরি, তোমার!”
জয়দেবের শিরদাঁড়া
বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।
“তুতো দাদা নকুলের দেনা ও শোধ করে দিল।” শিশিরের কথায় জোর
ধাক্কা খেল জয়দেব।
“ভোটের খরচের জন্য পার্টিফান্ডে দশলাখ টাকা দেবেন।” এম.এল.এ-র ছেলের হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে জয়দেব শুধু বলল, “পারব না।”
“আপনি জানেন এর ফল কী হতে পারে?”
“জানি। আমাকে মেরে ফেললে যদি দশলাখ
টাকা যোগাড় হয়, তাহলে তাই কর। বড়জোর হাজার দশেক দিতে পারব। বহুদিন হল সুদ খাটানোর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি।”
ফুলুকে দেখে জয়দেব জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবি?”
“তোমার তো খুব সাহস? মুখের ওপর ঠাস করে বলে দিলে কথাটা?”
“ধানাইপানাই করলে কী লাভ হত? কী আর করবে, বড়জোর মেরে ফেলবে। জানতাম, মারবে না। এই দশ হাজারই ওর কাছে অনেক। টাকাটা কি তুই নিয়ে যাবি?”
ফুলু মাথা নেড়ে
জানালো, ও নিয়ে যাবে না।
“তবে তোর কাছে আমি ঋণী।” জয়দেবের কথায় ফুলু অবাক হয়ে তাকালো।
“তোর সাথে কত শুয়েছি। কোনদিন জোর করিনি। তুইও বাধা দিসনি। দুজনেরই সায় ছিল। তাই না?”
ফুলু কিছুই বলল
না। ওর চাউনি ভিজে উঠেছে।
“সেদিন তুই এলি। পরে শুনলাম, তুই নাকি নকুলের দেনা শোধ করতে এসেছিলি! তাই?”
একটু থেমে আবার শুরু করল, “আমি সুদখোর, প্রচুর লোকের দীর্ঘশ্বাস আছে আমার ওপর। এসব আমি জানি। কিন্তু কারো সঙ্গে শুয়ে আমি কোনদিন টাকা উশুল করিনি রে! ধিক্কার জন্মে গেল নিজের ওপরেই। দিলাম সব ছেড়ে। প্রচুর টাকা লস হয়ে গেল। ভাবলাম কিছুটা দীর্ঘশ্বাস বোধহয় মোছা গেল। নাও হতে পারে!”
ফুলুর চোখ দিয়ে
টপটপ করে জল পড়ছে।
জয়দেব দশহাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারপর একদিন কাউকে কিছু না বলে চলে গেল এলাকা ছেড়ে। ও ভেবেছিল, ওর জন্য কে-ই বা আছে মনখারাপ করার! বরং বলবে, ‘আপদটা বিদেয় হল’।
জয়দেব ভুল ভেবেছিল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন