ধারাবাহিক
উপন্যাস
স্বর্গ এসেছে নেমে
(২)
প্রিন্সিপ্যাল স্যর কলেজের সম্মান রক্ষায় তৎপর। প্রতিদিন কোন না কোন কলেজের এমন কিছু খবর থাকবেই দৈনিকে। কোথাও অধ্যক্ষ ঘেরাও কোথাও বা ছাত্রদের হাতে অধ্যক্ষ বা শিক্ষক নিগ্রহ। এমন ঐতিহ্যসম্পন্ন একটি কলেজ যার সাথে বিশিষ্ট এক গুণীজনের নাম জড়িয়ে আছ সেই কলেজে এই ধরনের ঘটনা কোনমতেই বাঞ্ছিত নয়। এই কলেজও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়নি কখনো তা নয়, কিন্তু এমন একটি ঘটনা এই প্রথম। এতক্ষণে অধিক রক্তপাতের কারণে বৈশ্বানর অচেতনপ্রায়। প্রিন্সিপ্যাল আর শিক্ষকেরা সমবেত হয়েছেন জরুরী নোটিশে। এসময়েই এন্ট্রি নিল অনঙ্গ সান্যালের প্রাইভেটকার। গাড়ি থেকে নেমে সোজা তিনি চলে এলেন প্রিন্সিপ্যাল রুমে। তাঁকে দেখামাত্র প্রিন্সিপ্যাল আর কয়েকজন শিক্ষক ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অজুহাতবাচক কিছু বলবার জন্য এগিয়ে এলেন তাঁরা। অনঙ্গবাবু তাঁদের নিরস্ত করলেন যথেষ্ট সম্মান দেখিয়ে, তারপর সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এটা আপনাদের কলেজের ব্যাপার, তাই আপনাদের অনুমতি প্রয়োজন। অনুমতি দেবেন কি দেবেন না সেটা আপনাদের ব্যাপার, কিন্তু আমি তো ছেলেটাকে মরে যেতে দিতে পারি না। অনেক দেরী হয়ে গেছে, এখন ওকে ডাক্তার না দেখালে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে’। কথা শেষ করেই বেরিয়ে এলেন অনঙ্গবাবু। ড্রাইভারের সাহায্য নিয়ে গাড়ির সিটের উপর শুইয়ে দিলেন চেতনাহীন বৈশ্বানরকে। মাথার কাছে বসে মনস্বিনী বইয়ের ব্যাগটা রেখে দিল বৈশ্বানরের মাথার নীচে, যদি একটু আরাম হয়, এই ভেবে। অব্যবহৃত একটি রুমাল দিয়ে চেপে ধরে থাকল জখম জায়গাটা, রক্তক্ষরণ যতটুকু বন্ধ রাখা যায়। অনঙ্গবাবুর পেশেন্ট। উনি নিজে এসেছেন রুগী নিয়ে, সঙ্গে মেয়েও রয়েছে। অতি তৎপর হয়ে উঠলেন নার্সিংহোমের ডাক্তারেরা। স্যালাইন, ব্লাড সব কিছুরই ব্যবস্থা হয়ে গেল তৎপরতার সঙ্গে। এর মধ্যে মনস্বিনীর বন্ধুরা ফোন করে জানতে চাইল ব্লাডের প্রয়োজন আছে কিনা। যদি কোন রকম সাহায্য প্রয়োজন হয় মনস্বিনী যেন জানাতে দ্বিধা বোধ না করে। মনস্বিনী তাদের জানিয়ে দিল সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে, তবে দরকার হলে অবশ্যই তাদের জানানো হবে। অনঙ্গবাবুর নির্দেশ, যত কম সময়ে বৈশ্বানরের আরোগ্য সম্ভব তাই যেন করা হয়, টাকার জন্য চিন্তা নেই। এর মধ্যেই প্রিন্সিপ্যালের ফোন। অনুরোধ, যেন থানাপুলিশে খবর না যায়। ঘটনাটাকে যেন সাধারণ অ্যাকসিডেন্ট হিসাবেই দেখানো হয়, ইত্যাদি। অনঙ্গবাবু জবাবে জানিয়ে দিলেন, সে ব্যাপারটা নয় তিনি সামলে নেবেন কিন্তু তাঁর দুর্বৃত্ত ছেলেদের সামলানোর দায়িত্ব কার? প্রিন্সিপ্যাল যথাসম্ভব বিনীত ভাবে জানালেন, এ ব্যাপারে শীঘ্রই তিনি একটি মিটিং ডাকবেন এবং তাতে অনঙ্গবাবুর উপস্থিতি একান্তই বাঞ্ছনীয়। এর কোন জবাব দিলেন না অনঙ্গবাবু। সদাব্যস্ত মানুষ তিনি। ডাক্তারদের আর একবার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে মনস্বিনীকে বললেন, ‘চল মা, তোকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আমি কাজে বেরবো’। মনস্বিনী অনুমতি চাইল বাবার কাছে, ‘যতক্ষণ না বৈশ্বানরের জ্ঞান ফেরে ততক্ষণ আমি থেকে যাই বাবা’! এক মুহূর্ত কি ভাবলেন অনঙ্গবাবু তারপর ‘আচ্ছা তাই হোক, জ্ঞান ফিরলে সঙ্গে সঙ্গে আমায় খবর দিবি কিন্তু, আমি চলে আসবো’ বলে বেরিয়ে গেলেন তিনি। কেবিনে অচেতন বৈশ্বানর আর মনস্বিনী। এই প্রথম, মনস্বিনী তাকিয়ে দেখল বৈশ্বানরকে। কৃষ্ণকায়, মুখাকৃতি মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের। এরা রাজবংশী। এই প্রজাতির মানুষদের ব্যাপারে মনস্বিনীর মনে উদগ্র কৌতূহল। বই, অন্তর্জাল কিছু বাকী রাখেনি সে এদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করার মানসে। জেনেছে এরা ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত। শাস্ত্রগ্রন্থে বিশ্বাস থাকুক না থাকুক, তথ্য বলে, ক্ষত্রিয় নিধনকারী পরশুরামের ভয়ে এরা আশ্রয় নিয়েছিল পর্বতের গুহায়। তখন থেকেই এরা ম্লেচ্ছ হিসাবে সমাজে ব্রাত্য। কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল মনস্বিনী। ঘোর কাটতেই আবার সেই মুখের দিকে দৃষ্টিপাত। সুদর্শন নয় কিন্তু সৌম্য শান্ত মুখখানি। ভাবে মনস্বিনী, এমন একটি তরুণ হৃদয়ে কোথায় লুকিয়েছিল এতখানি তেজ! অতগুলো মারমুখো ছেলের বিরুদ্ধে একাই দাঁড়ালো বুক চিতিয়ে! প্রায় তিনবছর আছে বৈশ্বানর তাদের আউট হাউসে। বাবার জারি করা অলিখিত নিয়মটি মেনেই কোনদিন বৈশ্বানরের কোন ব্যাপারে কৌতূহল দেখায়নি সে। আজ বন্ধুদের কাছে বিস্তারিত জানতে পেরে কেমন একটা ভাল লাগায় ছেয়ে গেল মনটা। ঘটনাটি ঘটে যাবার পর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে খবরটা জানানোর জন্য ফোন করেছিল বাবাকে। ব্যস্ত মানুষ অনঙ্গবাবু। অনেক সময় ফোন বেজে যায়, রিসিভ করা হয়ে ওঠে না। অস্থির হয়ে উঠছে মনস্বিনী। ক্ষোভ জমা হচ্ছে তার মনে। কথা না হোক, ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় না থাকুক, বৈশ্বানর তো জানে, কে মনস্বিনী। সে কলেজে উপস্থিত অথচ কিছুই করা সম্ভব হছে না তার পক্ষে। মরিয়া হয়ে আর একবার ফোন করল বাবাকে। এবার বাবা ফোন না ধরলে নিজেই সে দায়িত্ব নেবে বৈশ্বানরের। না, এবার হতাশ হতে হল না তাকে। অনঙ্গবাবু ফোন ধরতেই বেশ কিছুটা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল তার কথায়। বলল, ‘বাবা তোমার আশ্রিত যারা তাদের বিপদে কে নেবে তাদের দায়িত্ব’? বাবা জানতে চাইলেন কার কি বিপদ। সংক্ষেপে ঘটনাটি জানালো মনস্বিনী তার বাবাকে। তারপর তো সমস্ত দায়িত্ব তুলে নিলেন বাবা নিজের হাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের তোয়াক্কা না করে। এখন বৈশ্বানর চিকিৎসাধীন নার্সিংহোমে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে গেল মনটা।
ডাক্তার
নার্স বার বার দেখে যাচ্ছেন বৈশ্বানরের জ্ঞান ফিরল কিনা। মনস্বিনী তাকিয়ে আছে স্থির
দৃষ্টিতে, কখন ওর আঙুল নড়ে উঠবে কিম্বা চোখ খোলার চেষ্টা করবে ও। এরমধ্যে দু দুবার ফোন এসে গেছে বাবার। তাঁর কথায় উৎকণ্ঠার আভাষ
লক্ষ্য করেছে মনস্বিনী। এমন একটি ছেলের জন্য কে না উৎকণ্ঠিত হবে। এমনই কিছু ভাবছিল
মনস্বিনী ভাবনায় ছেদ পড়ল। নার্স এসেছে বিপি চেক করতে। নার্স বেরিয়ে যাচ্ছে। জানা হল
না তো আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, জ্ঞান ফিরছে না কেন এখনো। দরজার দিকে দু পা এগিয়ে
গেল মনস্বিনী নার্সের খোঁজে। থমকে দাঁড়ালো। কেমন একটা গোঙ্গানির আওয়াজ যেন। ছুটে এল
বেডের কাছে। যা ভেবেছিল সে তাই তো। হাতের আঙুল নড়ছে বৈশ্বানরের। আধখোলা চোখ। কিছু যেন
বলার চেষ্টা করছে বৈশ্বানর। তার মানে চেতনায় ফিরছে সে। একটা খুশীর জোয়ার যেন বয়ে গেল
সারাটা হৃদয় প্লাবিত করে। উত্তেজনায় চিৎকার
করে বলে উঠলো মনস্বিনী, ‘ওয়েল ডক্টর, সিস্টার, কাম সুন, হি হ্যাজ কাম ব্যাক টু হিজ
সেন্সেস’। ছুটে এলো ডাক্তার নার্স একযোগে। ডাক্তার জানতে চাইলেন, কেমন বোধ করছে বৈশ্বানর।
মাথা নেড়ে জানালো বৈশ্বানর, ভাল আছে সে। ওদিকে অনঙ্গবাবুকে জানালো মনস্বিনী, জ্ঞান
ফিরেছে বৈশ্বানারের। চোখ আধখোলা। কাকে যেন
খুঁজছে বৈশ্বানর। মনস্বিনী প্রশ্ন করে নিজেক, কাকে খুঁজছে ও? বেডের সামনে এগিয়ে গিয়ে
দাঁড়ালো মনস্বিনী। কোন প্রতিক্রিয়া নেই। এখনো তো পূর্ণ চেতনায় ফেরেনি বৈশ্বানর, তাছাড়া
ও জানবেই বা কি করে, ওর অচেতন পর্বে কি
কি ঘটে গেছে।
এক মুহূর্ত বিলম্ব করেননি
অনঙ্গবাবু। মনস্বিনীর ফোন পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে নার্সিংহোমে পৌঁছে গেছেন তিনি।
অনঙ্গবাবু পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই যেন সারা মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ল স্বস্তি আর আনন্দের আভা।
মনস্বিনী অবাক বিস্ময়ে দেখল, যেন সমস্ত যন্ত্রণা উধাও হয়ে গেছে বৈশ্বানরের তার বাবার
আগমনে। ডাক্তার এলেন, জানালেন অনঙ্গবাবুকে, বৈশ্বানরকে অন্তত দুদিন থাকতে হবে নার্সিংহোমে
অবজারভেশনের জন্য। অনঙ্গবাবু সস্নেহে হাত রাখলেন বৈশ্বানরের মাথায়। বললেন, আর ‘দুটোদিন মাত্র। কাটিয়ে দাও বৈশ্বানর’। লক্ষ্য করলেন
অনঙ্গবাবু, বৈশ্বানরের চোখে তীব্র অনিচ্ছার প্রকাশ। সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘ডাক্তারবাবুরা
রয়েছেন, আর আমি তো রোজই আসবো তোমাকে দেখতে’। এতক্ষণ বাবার কথায় বৈশ্বানরের চোখে মুখে
সমস্ত অভিব্যক্তি লক্ষ্য করেছে মনস্বিনী। এখনও
দেখল বাবার শেষ কথাটিতে কেমন শিশুর মত আচরণ। বাবা রোজ দেখতে আসবেন শুনে কেমন
আপন করা হাসি দেখা দিল ঠোঁটে। নিজেকে নিয়ে কম বিস্মিত নয় মনস্বিনী। যার সঙ্গে সোজাসুজি
কোন পরিচয়ই ছিল না, কি করে আজ তার ব্যাপারে এতটা কন্সার্ন্ড হয়ে পড়ল! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
বাবাকে তাড়া লাগালো মনস্বিনী, ‘চল বাবা। ওদিকে মা আগুন হয়ে আছে। দুজনের কপালেই আছে
আজ, দেখো’। ঘটলও তাই। রে রে করে ধেয়ে এলেন কুন্তলা বাপ মেয়ের দিকে। ‘কি, কোথায় কাটানো
হল এতটা সময় বাপবেটি মিলে? ঐ কুষ্মান্ড ছেলেটার জন্য তো? সব শুনেছি আমি কলেজফেরতা ছেলেমেয়েদের কাছে। পাকামি করতে গেছে তো বেশ হয়েছে,
মার খেয়েছে। ওর জন্যে এত আদিখ্যেতা কিসের, অ্যাঁ’?
কুন্তলা দেবী পয়সাওয়ালা
ঘরের মেয়ে। তার বিচক্ষণ পিতৃদেব চিনতে ভুল করেননি ভাবী জামাতা বাবাজীবনকে। চোখ বুজে
তুলে দিয়েছিলেন অতি আদরের একমাত্র কন্যাকে অনঙ্গবাবুর হাতে। স্বল্পপুঁজির ব্যবসায় অঢেল
অর্থের যোগান দিয়ে ব্যবসায়ীমহলে এক বিশিষ্ট
স্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাকে। সেই গুমোরে কুন্তলাদেবী ছড়ি ঘোরাতে চেষ্টা করেন বাপ মেয়ের
উপর। পড়াশোনা এগোয়নি বেশীদূর। গ্রামগঞ্জের মেয়েদের ক্ষেত্রে যেমন হয়ে থাকে সাধারণত,
বার তেরো হতে না হতেই পাত্র দেখা শুরু তারপর একটি শুভদিন দেখে শ্বশুরঘর পাঠিয়ে দেওয়া।
কুন্তলাদেবী তখন চোদ্দ পেরিয়ে পনেরতে পা রেখেছে সদ্য। কুন্তলার বাবা মহাদেব ঘোষাল শহরে
এসেছিলেন জমির মামলার তদারকি করতে। ফেরার পথে দেখা করে যাবেন তেলকলের মালিক বাল্যবন্ধু
সনাতনের সঙ্গে। পূর্ণ যুবক অনাথ অনঙ্গ সান্যাল তখন সনাতনবাবুর বিশ্বস্ত কাজের লোক। এমনই বিশ্বস্ত যে
তার উপর সমস্ত দায়িত্ব ন্যস্ত করে সপরিবার অনিশ্চিত কালের জন্য বেরিয়ে পড়তে পারেন তীর্থভ্রমণ।
ঘোষাল মশাই কথায় কথায় বন্ধুকে অনুরোধ করে বসলেন তার কন্যার জন্য একটি পাত্রের খোঁজ
দিতে। সনাতনবাবুর মুখের ডগাতেই ছিল পাত্রের নাম। বললেন সবিস্তারে অনঙ্গ সান্যালের কথা।
একথাও বললেন, প্রবল ব্যবসায়িক বুদ্ধির অধিকারী অনঙ্গ, ওর দরকার কিছু পুঁজি। স্বল্প
পুঁজি থেকে কি করে তাকে বিশাল এক ধনভান্ডারে পরিণত করা যায় সে যেন ওর মস্তিষ্কের কোষে
কোষে লেখা আছে। বন্ধুর উপর সুগভীর বিশ্বাস মহাদেব ঘোষালের। হাত ধরে অনুরোধ করে গেলেন
বন্ধুকে, তিনি যেন অনঙ্গকে রাজি করিয়েই ছাড়েন। তার দিক থেকে সাড়া পেলেই তিনি এগোবেন,
একথাও বলে গেলেন। একটি মাত্র সন্তান তার। সুপাত্র পেলে আজ কথা তো কাল বিয়ে। সুপাত্র?
সনাতনবাবু কোন ওজর দেখিয়ে ডেকে নিলেন অনঙ্গকে। পাত্র দেখে তো মহাদেববাবুর মাথায় হাত।
রাজপুত্তুরের মত সুদর্শন যে ছেলে সে কেন বিয়ে করতে যাবে তাঁর কালোকু্ৎসিৎ মেয়েটাকে।
তবে হ্যাঁ, প্রয়োজন মানুষকে কিইবা না করতে বাধ্য করে! তবে এই বাধ্যতার ভবিষ্যৎ ফল এমন
কিছু হবে না তো, যাতে দুটো জীবনই সর্বনাশের হাড়িকাঠে বলি হয়ে যায়! মহাদেববাবু জেনে
নিলেন অনঙ্গ জামালদহ গ্রামের বর্ধিষ্ণু সান্যাল পরিবারের ছেলে। মা বাবা দুজনকে হারিয়ে
অত বড় বংশের ছেলে আজ কারো মুখাপেক্ষী। মহাদেববাবু একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন মুহূর্তের
জন্য। আপাততঃ আর কোন কথা নেই। অনঙ্গ বিনীতভাবে মহাদেব আর সনাতন বাবুর কাছে অনুমতি চেয়ে
নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মহাদেববাবু গলা নামিয়ে বললেন সনাতনবাবুকে, ‘খুব ভাল পাত্ররে
সনাতন, কিন্তু সে কি আমার মেয়েকে পছন্দ করবে? সনাতনবাবু বন্ধুকে নিশ্চিন্ত করে বললেন,
‘কোন চিন্তা নেই ভাই, সেই ছোট্টটি থেকে আমার কাছে আছে অনঙ্গ, নিজের সন্তানের মতই, তবে
কতদিন আর এ ভাবে জীবন কাটাবে, ওর একটা সুব্যবস্থা হয়ে গেলে আমিও দায়মুক্ত হব। অভিভাবক
হিসাবে আমার তো একটা দায় থেকেই যায়, তাই না? আর পছন্দের কথা বলছিস? ওটা আমার ওপর ছেড়ে
দে। এইটুকু জেনে রাখ, অনঙ্গ আমাকে দেবতার মত ভক্তি করে’। দুই অভিভাবকের মধ্যে এই কটি
কথাই শেষ পর্যন্ত পাকা কথার মর্যাদা পেল। এক শুভদিন মহাদেববাবুর গ্রামের বাড়ির উঠোনটাকে
যেন মেলাপ্রাঙ্গনের চেহারায় পালটে দিল। আহূত অনাহূত অভ্যাগতেরা সাক্ষী রইল ছাঁদনাতলায়
অনঙ্গ আর কুন্তলার দৃষ্টিবিনিময় পর্ব।
(ক্রমশ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন