কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬


সঙ্গী

এমন মারকাটারি রূপ নিয়ে গরীবের ঘরে মেয়ে জন্মালে সুবিধা অসুবিধা দুইই হয়। কোনো বড়োলোকের ছেলে বা তার বাবা এমন রূপসী মেয়েকে দেখলেই বিনা খরচে মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে বসে। কখনো কখনো মেয়ের বাবার আর্থিক অবস্থাকে সুবিবেচনায় এনে উল্টে বেশ কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেয়। অন্যদিকে অসুবিধাটা হয় এমন মারকাটারি রূপের মেয়ের একটু বয়স বাড়লেই তাকে পাড়ার যুবক ছেলেদের কাছে বারবার হেনস্থার শিকার হতে হয়। সব সময় মেয়েটির এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সদা ভয়, কখন কী হয়।

কলকাতা থেকে দত্ত বাড়িতে এবারের পূজোয় দত্ত গিন্নির ভাইপো তমাল এসেছিল গ্রামের পূজো দেখতে। পূজো প্যান্ডেলে গরীব তাঁতি শ্যামসুন্দরের সাড়ে আঠেরো বছরের মেয়ে পারুলকে দেখে তমালের মাথা বিগড়ে যায়।

শ্যামসুন্দর বা তার স্ত্রী নমিতা লক্ষ্য করেছে তাদের মেয়ে পারুল এই বয়সী মেয়েদের মতো পাড়া-বেড়ানি মেয়েদের মতো নয়। কখনো কোনো ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতেও দেখেনি। কিন্তু পাড়ার বেশ কয়েকটি বখাটে ছেলে যে পিছনে টোন টিটকারী মারে না, তা নয়। তবে ওসবে পারুলের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।

পূজোর দুমাসের মধ্যেই রূপে পাগল হয়ে তমাল পারুলকে বিয়ে করে কলকাতায় নিয়ে চলে গেল। পাড়ার লোকেদের চোখ টাটিয়ে উঠল। নিজেদের মেয়েদের কথা ভেবে শুধু বলত, শ্যামসুন্দরের কপালখানা এখন চওড়া মাঠ হয়ে গেল। একেই বলে কপাল! তাঁতির ঘরে জন্মেও মেয়েটা রাজরানী হয়ে গেল গো!

পাড়ার প্রতিবেশীদের গোপন ইর্ষা আর তির্যক কথাবার্তা প্রথম প্রথম অসহ্য হলেও ধীরে ধীরে সয়ে এসেছিল।

বিয়ের তিন মাসের মাথায় তমাল পারুলকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলো। তাদের দেখে শ্যামসুন্দর আর নমিতার আনন্দ উপছে পড়ছে। কীভাবে এবং কতরকম ভাবে জামাইকে খাতির যত্ন করবে সে কথা ভাবতে  ভাবতে তাদের ঘাম ছুটে যাওয়ার দশা। শত হলেও একদিকে বড়ো ঘর অন্যদিকে কলকাতার জামাই বলে কথা! নমিতা তমালকে বলল,

-- খুব কষ্ট হয়েছে না এতদূর থেকে আসতে? তুমি হাত পা ধুয়ে বোসো বাবা, আমি তোমার জলখাবারের ব্যবস্থা করছি।

-- না, তার দরকার নেই। আমি পিসির বাড়িতে চলে যাবো। আপনাদের মেয়ে রইল।

আকাশ থেকে পড়ল নমিতা। বাইরে থেকে এই কথা শুনে শ্যামসুন্দরও ঘরে ঢুকল। তাদের মুখে কোনো কথা ফুটছে না। পাশে পারুল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক কষ্টে নমিতা বলল,

-- কেন? কী হয়েছে? একথা বলছ কেন?

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে তমাল বলল,

-- না বললেও নয়। আমাকে তো বলতেই হবে, তাই বলছি।

-- হ্যাঁ বাবা বলো, নমিতা বলল।

-- আপনার মেয়ে আমার সঙ্গে নয়, আমার বোনের সঙ্গে এক বিছানায় রাত কাটাতে বেশি পছন্দ করে। ওতেই নাকি ওর তৃপ্তি…


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন