কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

শ্রেষ্ঠা সিনহা

 

সমকালীন প্রতিবাদের লোকনাট্য : আলকাপ

 


প্রস্তাবনা

আচার্য ভরত প্রণীত ‘নাট্যশাস্ত্র’ অনুযায়ী নাটক একাধারে দৃশ্যকাব্য এবং রূপক। কারণ নাটকে ব্যক্তি- অভিনেতার ওপর নাট্য-চরিত্রের গুণ আরোপিত হয়, তাই সেখানে নাটক রূপক হিসাবে খ্যাত। দশ রূপকের মধ্যে অন্যতম একটি রূপক নাটক। ভরতের রচনায় নাটক সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট বিধি-নিয়ন্ত্রিত আলোচনা বর্ণিত হয়েছে। “নাট্যশাস্ত্রের প্রথম অধ্যায়ে ভরত নাটককে লোকবৃত্তানুকরণ বলেছেননানা ভাব ও অবস্থাযুক্ত লোকনাটকের কথাই তিনি উল্লেখ করছেন। অবশ্য ভরত কথিত দশরূপকের মধ্যে নাটক, দিম, ব্যায়োগ প্রভৃতির মধ্যে উচ্চশ্রেণির বিখ্যাত  লোকদের কাহিনি উপস্থাপিত হয়, কিন্তু প্রকরণ, প্রহসন প্রভৃতি রূপকে সাধারণ লোকই স্থান পেয়েছে।’’ অথচ দেখা যায় ‘নাট্যশাস্ত্র’ রচনার বহু পূর্ব থেকেই বাংলায় নাট্যাভিনয়ের প্রচলন ছিল।  তারপর সেখানে অর্থপূর্ণ অঙ্গ-ভঙ্গি এবং সংলাপ যুক্ত হয়।

“বৈদিক যুগেই যজ্ঞ ও উৎসব উপলক্ষ্যে নৃত্য, গীত ও বাদ্যের অনেক বিবরণ পাওয়া যায়। অবশ্য মহিলা মহলেই গীত ও নৃত্যের অধিক প্রচলন ছিল।...বেদের মধ্যে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন পুরাণে নাটকের সংলাপের আকারে কিছু কিছু উক্তি-প্রত্যুক্তি দেখা যায়। ঋগ্বেদের উর্বশী ও  পুরূরবা, ইন্দ্র ও বরুণ প্রভৃতির কথোপকথন দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা যায়। বৈদিক যুগে নৃত্য প্রথমে ছিল ছন্দোবদ্ধ পদচারণা। তারপর সেই নৃত্যের সঙ্গে সঙ্গীত যুক্ত হয় এবং আরো পরে  অর্থপূর্ণ হাবভাব, অনুকরণমূলক অঙ্গিভঙ্গি ও সংলাপ যুক্ত হয়। এসবের মধ্যেই নাটকের আদি উপকরণ নিহিত ছিল।’’ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই ভারতেও নাটকের উদ্ভব হয়েছিল ধর্মীয় লোক-উৎসব থেকে। নাটক প্রথম পর্বে ছিল ‘নৃত্যগীতবহুল লোকনাট্য’সময়ের প্রবাহে নৃত্যগীতের অংশটি বর্জিত হয়ে সংলাপের গ্রহণীয়তা বৃদ্ধি পায়এবং “নাটকও পরিবর্তনশীল, শিথিলবদ্ধ লৌকিক রূপ থেকে দৃঢ়বদ্ধ, অপরিবর্তনীয় ক্লাসিকরূপে পরিণত হয়।’’

কিন্তু ক্লাসিক নাটকের প্রবর্তন সত্ত্বেও তার পাশাপাশি সব দেশে একটি লোকনাট্য ধারার প্রচলন রয়েছে। আসলে ক্লাসিক নাটকের সীমাবদ্ধতা শিক্ষিত বিদগ্ধ উচ্চশ্রেণির  দর্শক মহলের মধ্যে এবং তার রচয়িতাও উচ্চশ্রেণির ব্যক্তি। অপরদিকে লোকনাট্য বাংলার প্রান্তিক জন-জীবনের একটি বিনোদনের মাধ্যম, যা তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তির বৈদগ্ধ্যপূর্ণ রচনা নয়  বাংলা লোকনাট্য একটি জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম। এই লোকনাট্য ধারার অন্যতম একটি জনপ্রিয় অংশ আলকাপ লোকনাট্য সামাজিক, পারিবারিক কিংবা রাজনৈতিক বা পৌরাণিক ঘটনাকে আদিরসের মোড়কে রঙ্গ-রসিকতার মারফত উপস্থাপিত করে আলকাপের কুশীলবরা। বোলান লোকনাট্যটির মত আলকাপ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নয়; নিম্নবর্গের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষই এই লোকনাট্যে অংশগ্রহণ করে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও আলকাপ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই লোকনাট্যটি সংলাপ প্রধান নাট্যাভিনয় হলেও এখানে গানের আধিক্য লক্ষ করা যায়। তাৎক্ষণিক সংলাপ, ছড়া ও গান রচনার মাধ্যমে দর্শকের মনোরঞ্জন, আলকাপের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। মূলত পাঁচ রকমের বিষয় সংবলিত এই লোকনাট্যটি— গান, নাটক, সঙ, কবিয়ালি, শাস্ত্রকথা এবং সমগ্রটাই ছড়ার সুরে গীত হয়। আলকাপের মূল আকর্ষণ হল ছোকরা অর্থাৎ নারীবেশী পুরুষচরিত্র এবং কেপে অর্থাৎ মজাদার চরিত্র—যাদের ঘিরে অন্যান্য শিল্পীরা আবর্তিত  হন

গবেষক নির্মলেন্দু ভৌমিকের মতে, “সমস্ত বঙ্গীয় লোকনাট্যের মূল রীতি এবং প্রকরণের সঙ্গে আলকাপের অর্ন্তকাঠামোর সংগতি এবং সম্পর্ক আছে। গম্ভীরা মূলত মালদহের জনপ্রিয় এক লোকসংস্কৃতি। আদি-গম্ভীরার লোকায়াত রূপে শিব মুখ্য ভূমিকায় না থাকলেও, ক্ষীণভাবে হলেও গম্ভীরা শৈব-ঐতিহ্য সম্পৃক্ত।” যদিও পরবর্তীকালে শিবের উপস্থিতি গম্ভীরায় অনিবার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু নিম্নবর্ণীয় হিন্দু এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মাধ্যমে আলকাপ পরিবেশিত হয়। রঙ্গব্যঙ্গের বহু সমধর্মী উপাদান মালদহের গম্ভীরা এবং আলকাপে মিশে গেছে।  যেহেতু এটির বিষয়বস্তু  গ্রামীণ লোকজীবন তাই আলকাপ একটি অসাম্প্রদায়িক লোকনাট্য বলা যায়সাধারণত আলকাপ  বর্ষার পর গোটা শীতকাল ধরে অনুষ্ঠিত হয় বা বছরের অন্যান্য সময় মেলা কিংবা উৎসবে আলকাপ অভিনীত হয়।

বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম পরিচায়ক আলকাপ। আদিরসের প্রাবল্য সমন্বিত এই লোকনাট্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর মিশে আছে। যার সঙ্গে প্রান্তিক জনগণ খুব সহজেই একাত্ম হয়ে উঠতে পারে। যেমন সত্যপিরের পুজো কিংবা বনবিবির পালা উপলক্ষ্যে দুই  সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ একাত্মতায় পর্যবসিত হয়; ঠিক তেমনভাবেই আলকাপ অভিনয়ের মাধ্যমে এই সম্প্রীতির সমন্বয় সাধিত হয়।

 

‘আলকাপ’-এর সূত্ররেখা

আলকাপ লোকনাট্যটির সর্বাধিক প্রচলন রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। কিন্তু এটির সূচনা হয়  মালদহেমালদহ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে আলকাপ। যেমন-  বীরভূমের উত্তরাংশ, বর্ধমানের উত্তর এবং পশ্চিমাংশ, মালদহের দক্ষিণাংশ, বিহারের সাঁওতাল  পরগণা জেলার পূর্বাংশ এবং বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীর পশ্চিমাংশ ইত্যাদি অঞ্চলে আলকাপ জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীকালে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিশেষত জঙ্গীপুরে আলকাপ সবথেকে  বেশি সমাদৃত হয়।

‘আলকাপ’ অপেরার বিজ্ঞাপন

প্রখ্যাত গবেষক আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে, “গম্ভীরা গান হিন্দু দেব-দেবীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও মুসলমান সমাজে কালক্রমে তা স্বতন্ত্র রূপ ধারণ করে, পরবর্তীকালে সেটিই আলকাপ হিসাবে পরিচিত হয়।”৫  অর্থাৎ তাঁর মতে গম্ভীরা গানের পরিবর্তিত রূপ হল আলকাপ। বিনয় ঘোষ মহাশয় মন্তব্য করেছেন, “আলকাপের বর্তমান আনুষ্ঠানিক যে রূপ তা  বহুপ্রাচীন লোকায়ত ধারা থেকে ক্রমে উদ্ভূত হয়েছে। আর সেই উৎস অনুসন্ধান করতে গেলে আদিবাসীদের নানান রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্তর পর্যন্ত যেতে হয়।”৬  অর্থাৎ তিনি আলকাপের উৎস সন্ধানে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে উপনীত হয়েছেন

লোকসংস্কৃতির অন্যতম গবেষক ড. ফণী পাল এইবিষয়ে মন্তব্য করেছেন,  “আলকাপের জন্ম ২০০ বছরের পূর্বে বলে ধরা যায় না।”  বীরেশ্বর বন্দোপাধ্যায় আলকাপের উৎস প্রসঙ্গে বলেছেন, “আলাকাপের সৃষ্টি মালদায়। মালদহের মোনাকয়সার ভবতারণ সরকারের  হাতে এর সৃষ্টিসেখান থেকে তার শিষ্য বোনাকানা আলকাপকে জনপ্রিয় করে তোলে। আর বোনাকানার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েই মুর্শিদাবাদের ধনপতনগরের ঝাকসু মণ্ডল আলকাপকে মুর্শিদাবাদে জনপ্রিয় করে তোলে। তারপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে আলকাপের বিভিন্ন দল গড়ে ওঠে।”

মালদহের জনপ্রিয় গম্ভীরা লোকনাট্যের গানে শিবের উপস্থিতি এবং তাকে কেন্দ্র করে  নাট্য-বিবর্তনের প্রয়োজন না হওয়ায়, গম্ভীরার মধ্য থেকে সাহিত্য অংশ নির্বাচন করে তার সঙ্গে   কখনও লোককথা, উপকথা কিংবা আর্থ-সামাজিক বিষয় অঙ্গীভূত করে অথবা স্থানীয় লোক-আঙ্গিককে তার সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়ে লঘু-রসাত্মকভাবে অভিনীত রূপ হল আলকাপ। গ্রামীণ  জনজীবনের রূপ-বৈচিত্র্য আদিরসের আদলে প্রকাশই হল আলকাপের বৈশিষ্ট্য।

সমালোচক মহল আলকাপের উৎপত্তি সম্বন্ধে অভিমত পোষণ করেছেন, যে ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যম হিসাবে আলকাপের উৎপত্তি। তৎকালীন সময়ে সরকার প্রায় সমস্ত গণমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে আলকাপ শিল্পীরা এই লোকনাট্যের প্রচ্ছায়ায় সেই দমন-পীড়নের ইতিকথা জনসমক্ষে তুলে ধরত। “প্রাক্‌-স্বাধীনতা পর্বে  সুধী প্রধান প্রমুখ সন্ধানীদের দৃষ্টিতে আলকাপের অনন্য সম্ভবনা সেভাবে চিহ্নিত হয়নি। গণনাট্যের নেতৃত্ব তেমন গুরুত্ব দেননি আলকাপের ওপর। স্বাধীনতার সমসময়ে এবং জমিদারি প্রথার বিলোপের প্রতিক্রিয়ায় আলকাপ নবরূপ ধারণ করে। ঝাকসু, সমীরুদ্দিন সরকার, নিরঞ্জন মণ্ডল, কালিচরণ ঋষি, নৈমুদ্দিনের মত বহু প্রতিভাবান এবং শিক্ষিত মানুষ আলকাপে যোগ দেয়।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ স্বয়ং বিশ শতকের মধ্য পর্বে পাঁচের দশকে আলকাপ দলের সদস্য ছিলেন। খালেদ নৌমানের রচনায় জানা যায়, “প্রথম দিকে ওস্তাদ ঝাকসুর দলে পার্শ্ব অভিনেতা হিসাবে কিছুদিন যুক্ত থাকলেও পরে ওস্তাদ হিসাবে তিনি(সিরাজ) আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।”১০ সিরাজ সাহেব বলেছেন তাঁর বাল্যকালে ভাগীরথীর পশ্চিমকূলে অর্থাৎ রাঢ় অঞ্চলে নারীর ছদ্মবেশে একজন পুরুষ সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ গান গাইত, যারা ছ্যাচড় দল হিসাবে পরিচিত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমার বাল্যকালে আমি দেখিছি এই ছ্যাচড় কিন্তু অত মনোসংযোগ করে দেখিনি১৯৫০-৫১ সালে যখন আলকাপের দলে ঢুকলাম তখন দেখলাম এই ছ্যাচড়ের আরও সুংসবদ্ধ রূপ হচ্ছে আলকাপ।”১১

১৯৫০-৫১ সালে মালদার রহিমপুর অঞ্চলে দেখা যায় মনিরুদ্দিন বিশ্বাস আলকাপের একটি ভাল দল প্রতিষ্ঠা করে। এই মণিরুদ্দিন বিশ্বাস মালদা জেলার একজন বড়মাপের আলকাপ ওস্তাদ ছিলেন। তার কাছে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর অঞ্চলের চাঁই সম্প্রদায়ভুক্ত ধনঞ্জয় নামক একজন ব্যক্তি আলকাপ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং এই ধনঞ্জয়ের মারফত আলকাপ লোকনাট্যটি জঙ্গীপুরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

 

‘আলকাপ’-এর অভিনয়-পর্যায়

আলকাপ অন্যান্য লোকনাট্যের মতই একটি স্বতন্ত্রসূচক রীতিতে অভিনীত হয়। মূলত ১৫ থেকে ১৬ জন কুশীলব সম্মিলিত ভাবে আলকাপ পরিবেশন করে থাকে। অভিনেতা ছাড়াও কত্তা অর্থাৎ    ছোকরা-জোকার, দোহার, গায়ক, বাজনদার, ছড়া-গায়ক, বাঁশিবাদক প্রমুখ শিল্পী উপস্থিত থাকে।  সমগ্র আলকাপ দলের মধ্যে দুজন শিল্পী প্রধান—কত্তা বা কেপে অর্থাৎ কৌতুককারী চরিত্র এবং ছোকরা অর্থাৎ নারীবেশী পুরুষ চরিত্র। এই ছোকরা চরিত্রটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ পুরুষ নারীর ছদ্মবেশে মোহিনী মায়ায় সম্মোহিত করে অন্যান্য পুরুষ চরিত্রকে।

‘আলকাপ’ লোকনাট্যের বন্দনা অংশ

গম্ভীরা লোকানাট্য শিবকে উদ্দেশ্য করে অভিনীত হয়। কিন্তু আলকাপ অভিনীত হয় মোড়লকে উদ্দেশ্য করে। “গম্ভীরায় কেবল শিবের বন্দনা হয়ে থাকে। আলকাপে বিভিন্ন দেব-দেবীর বিশেষত সরস্বতীর বন্দনা শোনা যায়। আবার কখনো কখনো শিব বন্দনাও শোনা যায়। আসলে আলকাপ খোলা আসরের গান। গম্ভীরায় ছোকরাদের স্বতন্ত্র কোনো নাচ-গান হয় না। এবং নারীদের অংশগ্রহণ নেই।”১৩  আলকাপ ব্যতীত বাংলার বহু লোকনাট্যে নারীবেশে সজ্জিত ছোকরা  দেখা  যায়। যেমন—জলপাইগুড়ির ‘চোর চুন্নী, বীরভূমের ছ্যাচর-লেটো, মেদিনীপুরের ভাঁড়যাত্রা ইত্যাদি

আলকাপ অভিনয়ের আসরে শিল্পীরা বিশিষ্ট সাজসজ্জা এবং লৌকিক বাদ্যযন্ত্র ও সুর সহযোগে অভিনয় করে থাকেসেই গানের ভাষা লৌকিক এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট। বন্দনার  মাধ্যমে এই লোকনাট্যের সূচনা হয়। এই বন্দনা অংশ থেকে ছড়া-গান পর্যন্ত যা কিছু পরিবেশিত হয় সবই আলকাপ দলের তাৎক্ষণিক সৃষ্টি। “প্রচলিত আলকাপে পাই (১) বন্দনা (সমবেত ভাবে) (২) ছোকরাদের (২/৩ জনের) গান ও নাচ (৩) কেপে এবং ছোকরার দ্বৈত সঙ্গীত, রঙ্গরসিকতা (৪) ওস্তাদের ছড়া (৫) কাপ— কৌতুক কাহিনি (৬) ছোকরার গান।... আলকাপে রঙ্গ বেশি, গম্ভীরায় ব্যঙ্গ বেশি। বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনায় গম্ভীরা সর্বজনকে আকর্ষণ করে। আলকাপ সেখানে সংকীর্ণ গ্রাম্য পারিবারিক সীমা লঙ্ঘন করতে পারেনি।”১৪

আলকাপ লোকনাট্যের এই ‘কাপ’ অংশ থেকেই আলকাপ কথার সৃষ্টি। এই ‘কাপ’ অংশ নির্দিষ্ট একটি কাহিনি বিশিষ্ট যা নাট্যরূপেই অভিনীত হয়। কিন্তু এই অংশটি লিখিতরূপে  কিংবা শিল্পীদের মুখস্তরূপে থাকে না যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আলকাপ অভিনীত হয়, দলের ওস্তাদ সেই বিষয়কেন্দ্রিক গল্প শিল্পীদের কাছে মৌখিকভাবে বিবৃত করে চরিত্র নির্দিষ্ট করে দেন  অভিনেতারা নিজেদের বিচক্ষণতা অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে সংলাপ রচনার মাধ্যমে অভিনয় করে ফলে একই ‘কাপ’, একই কাহিনি, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সততই পরিবর্তিত হয়। আসরে অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে অভিনেতার অভিনয় শুরু হয় এবং পাঠ সমাপ্তিতে বসে পড়ার মাধ্যমে অভিনেতার প্রস্থান ধরা হয়আবার স্থান পরিবর্তনের জন্য অভিনেতা আসর প্রদক্ষিণের করে তার নির্দিষ্ট   গন্তব্যের কথা বর্ণনা করে দর্শককে অবহিত করেকিন্তু দূরবর্তী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আসর প্রদক্ষিণের পাশাপাশি অভিনেতা মুখে যানবাহনের আওয়াজ করে, বিষয়টি পরিস্ফুট করে— এভাবেই গ্রামবাংলায় আলকাপ অভিনীত হয়।

আলকাপ সাধারণত সন্ধ্যাবেলা থেকে সারারাত্রি ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। এটির  অভিনয় এবং গানের সুর এত উচ্চগ্রামের যে যাত্রায় ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের পরিশীলিত সুর এখানে লক্ষ করা যায় না। আলকাপের আবেদনই স্থূল প্রকৃতির। তাৎক্ষণিক সংলাপযুক্ত হওয়ায় যাত্রার মত দীর্ঘ রির্হাসাল আলকাপের অঙ্গীভূত নয়। অভিনেতারা সংলাপ বলে এবং ছোকরা আদিরসাত্মক নাচ-গান পরিবেশন করে। দৃশ্যান্তর, পোষাক পরিবর্তন কিংবা পট পরিবর্তনের জন্য অভিনেতারা বিভিন্ন প্রকার অঙ্গভঙ্গি এবং মুখে আওয়াজ করে দর্শকের মনোরঞ্জন করে।

প্রথমদিকে আলকাপে সাজসজ্জা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কেবলমাত্র ছোকরা অভ্র ও কালি সহযোগে তার চরিত্র অনুরূপ সাজসজ্জা করত। এছাড়া বাকি অভিনেতারা সাধারাণ পোশাকেই অভিনয় করত। কিন্তু পরবর্তীকালে যাত্রার প্রভাবে আলকাপ-দলেও চরিত্র অনুসারী পোশাক ও সাজসজ্জার আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। প্রথম দিকে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে ঢোল, করতাল, বাঁশি  এবং হারমোনিয়াম ব্যবহৃত হলেও যাত্রার প্রভাবে এই লোকনাট্যে খোল, ড্রাম, বেহালা, সেতার ইত্যাদি ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়।

সংলাপ-প্রধান লোকনাট্য হলেও আলকাপে গানের আধিক্য রয়েছে। এই গানে টপ্পার সুর এবং বাংলার বহু লোকগীতির সম্মিলিত হয়েছে। বর্তমানকালে বাংলা চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত বহু  গানের সুর আলকাপের গানে মিশ্রিত হয়েছেসাধারণত দাদরা এবং কাহারবা তালে আলকাপের গান রচিত হয়।

আলকাপের অভিনয় বৈচিত্র্যতার কারণে বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম গবেষক বিনয় ঘোষের মতে, “আলকাপ হল হাস্যকৌতুক-উদ্দীপক অভিনয়১৫ সাহিত্যিক মুস্তাফা সিরাজের মতে, আলকাপ হল“আল বা তীব্র খোঁচাযুক্ত ব্যঙ্গ রসাত্মক নাটক১৬ এই লোকনাট্যের দুই বড় ওস্তাদ ঝাকসু বলেন, “আলকাপ হল রগড় হাসিতামাশা-মেয়েছেলের কেচ্ছা।”১৭ মনকীরের মতে, “আল মানে রঙ্গ এবং কাপ মানে সঙ’’১৮—অর্থাৎ তার মতে আলকাপ মানে সঙ সেজে রঙ্গ করা।

 

‘আলকাপ’-এর প্রতিবাদ সত্ত্বা

আলকাপ মূলত লোকনাট্য হলেও এর কাহিনিতে প্রতিবাদ সত্ত্বার পরিচয় মেলে। পূর্বেই উল্লেখিত  হয়েছে আলকাপের উৎপত্তি ঘটেছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। “ব্রিটিশ সরকার গান-বাজনা-সভা-সমিতি সব কিছু নিষিদ্ধ করলে গ্রামের শিল্পীরা বনের মধ্যে গিয়ে কেউ রাজা, কেউ প্রজা, কেউ জমিদার সেজে অভিনয় করত এবং কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতো আলকাপ করছি।”১৯  ব্যঙ্গের প্রচ্ছন্নতায় অভিনয়ের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের দোষ-ত্রুটিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরে গণজাগরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলে এই লোকনাট্যটি। “প্রাক্‌-স্বাধীনতা পর্বে সুধী প্রধান প্রমুখ সন্ধানীদের দৃষ্টিতে আলকাপের ওপর। স্বাধীনতার সমসময়ে এবং জমিদারি প্রথার বিলোপের প্রতিক্রিয়ায় আলকাপ নবরূপ ধারণ করে। ঝাকসু, সমীরুদ্দিন সরকার, নিরঞ্জন মন্ডল, কালিচরণ ঋষি, নৈমুদ্দিনের মত বহু প্রতিভাবান এবং শিক্ষিত মানুষ আলকাপে যোগ দেয়।”২০

‘আলকাপ’ অভিনয়ের একটি দৃশ্য

তৎকালীন সময়ে পেশাদারি থিয়েটারের জাতীয়তাবাদী ভাবধারা যখন কলকাতা কেন্দ্রিক শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মহলে নিবদ্ধ ছিল, তখন আলকাপ লোকনাট্যটি গ্রাম-বাংলার প্রান্তিক জনজীবনে জাতীয়তাবাদের প্রভাব সঞ্চারিত করেছিল।

রসিকতার সঙ্গে বিদ্রূপের কড়া চাবুক মিশিয়ে রচিত আলকাপে ইংরেজদের অত্যাচার,  নিপীড়ন জনসাধারণের সামনে প্রতিফলিত হয়েছে। “মালদা জেলার মানিকচক থানার রহিমপুর নিবাসী আলফাজ, অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার শিবগঞ্জ মোনাকয়সার ভবতারণ সরকার, বোনাকানা প্রমুখ শিল্পী ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা ইংরেজদের অপকীর্তি জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করার জন্য একধরনের নাট্যাভিনয়ের ব্যবস্থা করেন, তা পরবর্তীকালে ‘আলকাপ’ নামে খ্যাত হয়।”২১

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত ‘বৈতালিক’ শীর্ষক উপন্যাসে দেখা যায়, রাজদ্রোহী অতুল মজুমদার ‘বংশী মাস্টার’ নামে আত্মগোপন করে যোগেন কে সমকালীন জমিদার মহাজনের শাসন, শোষণের বিরুদ্ধে গান বাঁধতে উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীতে যোগেনের লেখনীতে ব্যাপ্ত হয়—

“ মহাজনরক্তচোষা

জমিদার ফোঁস মনসা

দারোগা সে লাটের ছাওয়াল

মোদের হৈল কাল।

বাঁচার নামে বিষম জ্বালা,

পরান হৈল ঝালাপালা,

ওই তিনটি শালাকে মারি খেদাও

ঘুচুক এ জঞ্জাল।’’২২

আলকাপ ভগবান শিব কেন্দ্রিক গম্ভীরা গানের মুসলিম সংস্করণ বা হিন্দি ভাষায় অভিনীত রাজধারীর বাংলা সংস্করণ নয়। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক-আদিরসাত্মক প্রহসন আলকাপ  সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিবাদের মাধ্যম হয়ে ওঠে। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে উচ্চশ্রেণি নিম্নশ্রেণির ওপর হুকুম চালায়, নিপীড়ন করে। সাধারণ জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে এগুলির প্রতিরোধ যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনভাবে প্রতিরোধও অসম্ভব। ফলে প্রান্তিক জনগণের প্রতিবাদের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে তির্যক রঙ্গব্যঙ্গ।

“গম্ভীরায় সমাজচেতনায়, আক্রমণের বর্শা-মুখ রাজনৈতিক শাসক এবং অর্থনৈতিক শোষণের দিকে ফিরে যায়। রং, তামাশার মধ্য দিয়ে সমালোচনা এবং ব্যঙ্গ গম্ভীরায় প্রাধান্য বিস্তার করে। আলকাপ প্রমোদমূলক। যে-কোনো ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক চরিত্র সামান্য মোড়ল, মুখরা যুবতী, দরিদ্র গৃহবধূ কেউ বাদ যায় না আক্রমণ থেকে। জনগোষ্ঠীর বাইরের ‘বদবাবুরা’ গম্ভীরা বা হোলির  গানে আক্রান্ত হয়আলকাপে গ্রাম্য সমাজের মন্দ মানুষেরা ব্যঙ্গের পাত্র হয়। সংগত কারণে ঝাকসু বলেছিলেন, “পরিবার লিয়ে আলকাপ, সমাজরাষ্ট্র লিয়ে গম্ভীরা।”২৩ গণশত্রুদের চিহ্নিতকরণের এই অনায়াস সম্ভবনাকে ব্যবহার করেছিলেন ‘বৈতালিক’ উপন্যাসের চরিত্ররা। কিন্তু যথাযথ উত্তরসূরির অভাবে মালদহ মুর্শিদাবাদে প্রগতিশীল গণ-আন্দোলনের উর্বর ক্ষেত্র ছিল না।

শ্রেণি-সচেতনতার বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাইরে থেকে মেহনতি শ্রমজীবীদের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপ ‘বৈতালিক’ উপন্যাসের যোগেনের প্রসঙ্গ বলা যায়। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের থেকে লক্ষযোজন দূরে থাকা প্রান্তিক জনগণ ধারণা স্বভাবতই অস্পষ্ট। “তাই চোখে দেখা সামাজিক কর্তৃত্ব মোড়ল, মহাজন, ধনীলোলুপ জোতদার অনায়াসে আক্রান্ত হয় আলকাপে। আর আধা-সামন্ত সমাজের মূল্যবোধে জড়িত থাকে আলকাপের রচয়িতা, অভিনেতারা। তাই গণ-ঐতিহ্যে প্রগতিবাদী প্রগতিশীলতার মধ্যেই প্রতিফলিত হয় পশ্চাদপদ চেতনার পদচ্ছায়া।”২৪

 

লোক-আঙ্গিকে ‘আলকাপ’

লোকসংস্কৃতি বলতে বোঝায়, একই ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক পরিবেশে বিশেষ এক জনগোষ্ঠীর যে আচার-আচরণ, জীবনচর্চা, সাহিত্য, শিল্প, ললিতকলা ইত্যাদির ঐতিহ্য-অনুযায়ী অনুশীলন যে স্বাভাবিক পারঙ্গগমতা অর্জন করে। অর্থাৎ লোকসংস্কৃতি হল একটি  জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দর্পণ। লোকসংস্কৃতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়— (১) বস্তুনির্ভর লোকসংস্কৃতি  (২) বস্তুবিহীন লোকসংস্কৃতি। বস্তুনির্ভর লোকসংস্কৃতি বলতে লোকসাহিত্যকে বোঝায় আর বস্তুবিহীন লোকসংস্কৃতি বলতে লোকনৃত্য, লোকখাদ্য, লোকপোষাক ইত্যাদিকে বোঝায়।  আলকাপ যেহেতু বাংলার একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য এবং তা লোকভাষার সমন্বয়ে রচিত তাই এটি বস্তুনির্ভর লোকসংস্কৃতির অন্তর্গত। আলকাপের গঠনরীতি থেকে শুরু করে তার অভিনয় রীতিতেও লোক-আঙ্গিক স্পষ্টত প্রতিফলিত হয়

আলকাপ দলের সৃষ্টি এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আলকাপ দল/ অপেরা গুলি ঝাকসু মন্ডল, ভবতারণ সরকার কিংবা পরবর্তীকালে মণিরুদ্দিন বিশ্বাসের মতন ওস্তাদের মাধ্যমে জনগণের কাছে সমাদৃত হলেও; আলকাপের প্রথম স্রষ্টা কিংবা রচয়িতা সম্পর্কে কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আসলে লোকনাট্য তথা লোকসাহিত্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল সেখানে কোনো নির্দিষ্ট রচয়িতার পরিচয় পাওয়া যায় না।

একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশই হল লোকসাহিত্য। যেখানে কৃত্রিমতার আবিলতা পরিলক্ষিত হয় না। এছাড়া আলকাপের গঠনরীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আসরে উপনীত হওয়ার পূর্বে তাৎক্ষণিক সংলাপ রচনা। দলের প্রধান কিংবা ওস্তাদ আসর শুরু হবার পূর্বে অভিনেতাদের নাটকের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন এবং আসরে অভিনেতারা অবতীর্ণ হয়ে চরিত্রানুযায়ী তৎক্ষণাৎ সংলাপ রচনা করে কাহিনিকে অগ্রসরতা দান করে। ফলত আলকাপের কোনো লিখিত সংলাপ পাওয়া যায় না।

‘আলকাপ’-লোকনাট্যে কেপে এবং ছোকরা অভিনীত দৃশ্য
অন্যদিকে যেহেতু এই লোকনাট্যটি  গ্রামীণ জনজীবনের পারিবারিক সুখ-দুঃখ কেন্দ্রিক, ফলে প্রাত্যহিক জীবনসমস্যা নিয়ে শিল্পীরা সজাগ থাকত। যা রঙ্গ-রসিকতার মাধ্যমে অভিনীত হয়। অনেক সময় আর্থ-সামাজিক প্রসঙ্গের সঙ্গে রাজনৈতিক, পৌরাণিক কাহিনিও প্রতিফলিত হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের সমকালীন ঘটনা বিষয় হিসাবে উঠে আসে আলকাপে।

পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গবেষক মহল তাদের গবেষণায় আলকাপের মৌখিক রূপ লিপিবদ্ধ করে বিবৃত করেছেন। আসলে যেকোনো লোকসাহিত্য মাত্রই তা মৌখিক সাহিত্য হিসাবে গণ্য হয়। এটি মৌখিক সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিষ্ট সাহিত্যের লিখিত রূপেই লিপিবদ্ধ হয় কিন্তু আলকাপে এহেন কোনো বিষয় দেখা যায় না। কিন্তু পঞ্চরসের ক্ষেত্রে দেখা যায় যাত্রার প্রভাবে শিল্পীরা লিখিত পাঠ মুখস্থ করে আসরে অভিনয় করেযা তার লোকবৈশিষ্ট্যকে ক্ষুণ্ণ করে।

প্রসেনিয়াম থিয়েটারের আদলে গড়ে ওঠা সাধারণ রঙ্গালয়ে বাস্তবানুসারী মঞ্চসজ্জা ও দৃশ্যপটের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। কিন্তু বাংলা যাত্রায় মঞ্চসজ্জা কিংবা দৃশ্যপটের ব্যবহার বর্জিত হয়। চারদিক খোলা মঞ্চে অভিনেতারা খালি গলায় চরিত্রানুযায়ী পাঠ করত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাট্যরচনার দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ শান্তিনিকেতন পর্বে মঞ্চের ‘চিত্রপট’-এর পরিবর্তে দর্শকের ‘চিত্তপট’-এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তাঁর মতে নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে নাট্যকারের লক্ষস্থল হওয়া উচিত দর্শকের অন্তস্থল, যার ফলে সে কল্পনার মাধ্যমে নাটকে নিহিত থাকা বার্তাটি অনুধাবন করতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে রবীন্দ্রনাথ বলেন যাত্রা অভিনীত হয় চারদিক খোলা মঞ্চে, সেখানে অভিনেতা ও দর্শকরা প্রায় একই সমতলে উপস্থিত থাকে, “পরস্পরের বিশ্বাস ও আনুকুল্যের প্রতি নির্ভর করিয়া কাজটি বেশ সহৃদয়তার সহিত সুসম্পন্ন হইয়া ওঠে।’’২৫ বাংলা লোকনাট্যের ক্ষেত্রে যাত্রার অভিনয় পদ্ধতির অনুকরণ দেখা যায়। তবে যাত্রার বিবর্তনের ইতিহাস লক্ষ করলে খোলা মঞ্চের ব্যবহার এবং সাজসজ্জার আধিক্য চোখে পড়ে।

কিন্তু আলকাপ সহ অন্যান্য লোকনাট্যে মঞ্চ কিংবা সাজসজ্জার ব্যবহার তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে কলা-কুশলীবরা এবং দর্শকরা একই সমতলে সহবস্থান করে। অভিনয়ের আসরে অভিনেতারা উঠে দাঁড়ায়ে পাঠ শুরু করে, যা তাদের প্রবেশ হিসাবে গণ্য হয় এবং পাঠ শেষে তারা বসে পড়ে, যা অভিনেতার প্রস্থান হিসাবে ধরা হয়। বোলান ও গম্ভীরা সহ অন্যান্য লোকনাট্যে দেখা যায় আসরে শিল্পীরা অর্ধচন্দ্রাকারে সামনের দিকে এগিয়ে আসে এবং অনুরূপভাবে পিছিয়ে যায়। যাত্রায় পরবর্তীসময়ে পেশাদারী থিয়েটারের আদলে সাজসজ্জা লক্ষিত হয়। আবার যাত্রার প্রভাবে পঞ্চরসে অভিনেতারা চরিত্রানুযায়ী সাজ এবং পোষাকের ব্যবহার শুরু করে। যার ফলে আলকাপের প্রাথমিক স্তরে ছোকরা চরিত্র অভ্র এবং কালি সহযোগে তার চরিত্রানুযায়ী সাজ সম্পূর্ণ করত।

কালপ্রবাহে দেখা যায় এখানেও ছোকরা সহ অন্যান্য অভিনেতারা সাজসজ্জা এবং চরিত্রানুসারে পোষাক প্রচলিত হয়। ফলে লোকনাট্যের স্বভাবধর্মগত লোকগুণ ক্ষুণ্ণ হয়। এছাড়া নারীবেশী পুরুষচরিত্রের পরিবর্তে নারীদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। “স্বাধীনতার পড়ে আলকাপকে বিকশিত হতে দেখি জঙ্গীপুর সীমান্তে— বীরভূমে- মালদহে-বিহারের সংযোগস্থলে। গম্ভীরা থেকে পৃথক করে ঝাকসু মণ্ডল জানালেন যে “গম্ভীরা রাষ্ট্র লিয়ে আলকাপ পরিবার লিয়ে”। গ্রাম্য ক্ষুদ্র চাষির দু-সতীন, বিয়ে পাগল ছেলে বা মেয়ে, হাস্যকর মোড়লেরা, মুখরা স্বার্থপর নারীরা আলকাপে প্রধান হয়ে উঠতে লাগল... ছোকরা এবং তাদের অতিরঞ্জিত নারীভাব মায়া হয়ে গুরুত্ব পেল ঝাকসু, নৈমুদ্দিনের চেতনায়।”২৬

প্রসঙ্গত বলা চলে নারীবেশী ছোকরাদের অতিরঞ্জিত ভাবের পটভূমিকায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজে প্রণীত ‘মায়া মৃদঙ্গ’ এবং নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত ‘বৈতালিক’ ভিন্ন মেরুতে সরে আসে। আবার অন্যতম প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের মাদকতা-পূর্ণ যাত্রার সঙ্গে মালোদের লোকসংস্কৃতির সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের পরিচয় মেলে।

এছাড়া পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে আলকাপে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রেও লোকবাদ্যের পাশাপাশি যাত্রার ফলে সেখানকার বাদ্যযন্ত্র খোল-ড্রাম ইত্যাদির প্রচলনের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের ব্যবহৃত সুরের আদলে গানের কথা দেখা যায়। আবার কখনো কখনো গানে সাধু ভাষার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—

“চাষিতে চাষ করে জমিতে কলাই বোনে

ভাত দিয়ে মাখলে পরে।

ডাল দিয়ে মাখলে পরে

সাপ সুপা সুপ...”২৭

 

প্রথমদিকে আলকাপে অশ্লীল ভাষা প্রযুক্ত সংলাপের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন ‘ছড়াকাটা’ অংশে দেখা যায়—

“শিবো হে মলাম মলাম হে চুলকানির জ্বালাতে

শালা এমনি বেইমান রাখে না মান

চুলকায় সব জা’গাতে।

শিবো মলাম মলাম হে চুলকানির জ্বালাতে।।

চুলকে দিয়া ছিলকা উঠ্যা হয়ে গেল ঘা

ঘেরে নিল দুই পুঠ্যা (পাছা) আর গোটা গা

বাকি তো আর নাই হাত আর পা।”২৮

এইভাবেই হাসি-তামাশার মাধ্যমে কৌতুকের দৃষ্টিতে সমালোচনা, পর্যালোচনার মাধ্যমে আলকাপের লোক-আঙ্গিকতা বিদ্যমান।

 

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রতিবেশি-রাষ্ট্র বাংলাদেশে বহুল পরিমাণে সমাদৃত লোকনাট্য আলকাপ। এটি বোলান কিংবা গম্ভীরা লোকনাট্যের মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গীভূত নয়। কিন্তু আলকাপে আদিরসের   প্রাবল্য থাকায় এটি শিক্ষিত জনগণের কাছে ততধিক গৃহীত নয় এবং এই কারণেই প্রথমদিকে আলকাপের কোনো র্নিদিষ্ট মন্ডপ ছিল না। মূল-গায়ক কিংবা দলের ওস্তাদই সমগ্র দলের খরচ  নির্বাহ করত। তারপর গ্রাম-বাংলায় আয়োজিত বিভিন্ন মেলার কর্তৃপক্ষ জুয়ারিদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আলকাপ দলের বায়না করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে আলকাপের পরিমার্জিত রূপ প্রকটিত হয়।

আসলে গ্রাম্য উৎসব কিংবা মেলায় আলকাপ অভিনয় নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে। “কৃষি বিপ্লবের সূচনা থেকেই গ্রামে অনুষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। জুয়ারীরা ব্যাপকভাবে আলকাপের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে। তারা ব্যবহার করে কবিগান এবং বাউল গানের পাল্লাকেও। ঝাকসু প্রমুখ অনেকে জনগণের ওপর নির্ভরশীলতা হারিয়ে, অধিকতর অনুষ্ঠান এবং অর্থের প্রত্যাশায় আলকাপকে পঞ্চরসে পরিণত করেন। উচ্চবর্গের যাত্রা-নাটকের বাহ্যিক অনুকরণে স্বভাব নির্জিত হয়ে আলকাপ পথ হারায়। কৃষিবিপ্লবের মধ্যপর্বে পঞ্চরস পরিণত হয় পঞ্চরস অপেরায়। অনেকে এতে মূলধন বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। শহুরে যাত্রা এবং হিন্দি সিনেমার গ্রামীণ সংস্করণ ছিল এসব পঞ্চরস অপেরা। জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয় সমূহ, মেয়েদের যৌন আবেদনমূলক নাচ-গান প্রাধান্য পায় পঞ্চরস অপেরায়। মদ, জুয়া এবং পঞ্চরস অপেরার ত্রিবেণীর মিশ্রিত ঘোলা স্রোত থেকে মুখ ফেরায় জীবনবাদী প্রগতিশীল সাধারণ  মানুষ২৯

বিশ শতকের আটের দশক থেকে আলকাপের আঙ্গিকে বদল লক্ষ করা যায়। এই সময় থেকে এটি পঞ্চরসে পরিণত হয়। যদিও জানা যায় ওস্তাদ ঝাকসু, সুবল সরকার, মণিরুদ্দিন বিশ্বাস, সুধীন দাস, ফিরোজ মন্ডল প্রমুখ কলা-কুশীলবরা আলকাপের আঙ্গিক ও রীতি যথাযথ রেখে এটিকে আরও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দেবার চেষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু অবশেষে দেখা গেল আলকাপ শেষপর্যন্ত পঞ্চরসেই পরিণত হয়। সেই নাচ, গান, কৌতুক অভিনয় যার মাধ্যমে আদিরসের প্রগলভতা যুক্ত দর্শক মনোরঞ্জক বিষয়ে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু আলকাপের অমার্জিত বক্তব্যে মার্জিত রূপের সঙ্গে শহুরে সভ্যতার আবিলতা মিশ্রিত হওয়ায় লোকনাট্যের লোকস্বভাব খণ্ডিত হয়। এছাড়াও দেশভাগ পরবর্তীকালীন সময়ে উদ্বাস্তু জনগণের অনেকে আলকাপ দলে নাম নাম নথিভুক্ত করে। তাদের মধ্যে নারীরাই সিংহভাগ। তারা জীবিকা হিসাবে আদিরসের প্রাবল্যযুক্ত এই লোকনাট্যকে গ্রহণ করে। ফলে একদিকে যেমন তারা আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল হয়ে ওঠে আবার দলপতিদের মুনাফার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে গ্রামীণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা লুপ্ত হয়।

“উনিশ শতক থেকেই লোক-ঐতিহ্যকে শাসক শোষকরা তাদের অনুকূলে এবং স্বার্থে ব্যবহার করতে থাকে। অন্যদিকে প্রগতিশীলেরা লোকঐতিহ্যকে সমাজ পরিবর্তনের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করে থাকেন।”৩০ সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে সংগঠিত হওয়া বিপ্লবের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে লোকগাথা, গল্প, গান ইত্যাদি। সোভিয়েত রাশিয়ায় গোর্কির নেতৃত্বে লোকসংস্কৃতিকে প্রগতির স্বার্থে ব্যবহারের পন্থা, পদ্ধতি আলচিত হয়েছিল। আমাদের সমাজেও সংস্কৃতিকে ব্যবহারভাবে প্রযুক্ত করে চলেছে শাসক-শোষকেরা অথবা প্রগতিশালী পরিবর্তনকামীরা। এই চল্মান ইতিহাস মানুষের ইচ্ছা সংযুক্ত এক প্রবাহ। রঙ্গব্যঙ্গ, প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের আস্ফালনের মাধ্যমে প্রবাহমান আলকাপ লোকনাট্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যিক।

 

তথ্যসূত্র

১। ঘোষ, অজিতকুমার, ‘নাট্যতত্ত্ব ও নাট্যমঞ্চ’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ১৭৮

২। তদেব, পৃ ১৭৯

৩। তদেব, পৃ ১৮০

৪। ঝা, শক্তিনাথ, ‘আলকাপ’, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পৃ ১

তদেব, পৃ ২

৬। পাল, ফণী, ‘আলকাপ ও লোকসংস্কৃতি’, প্রজ্ঞা বিকাশ,  কলকাতা, পৃ ২৬

ঘোষ, বিনয়, ‘পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি(৩য় খন্ড)’, পুস্তক প্রকাশক, কলকাতা, পৃ ৬৪২

৮। তদেব, পৃ ৬৪২

৯। ঝা, শক্তিনাথ, ‘আলকাপ’, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পৃ ১৩

১০। নৌমান, খালেদ, ‘মুর্শিদাবাদের কবিতা চর্চার ধারা’, পুস্তক বিপনী, কলকাতা, পৃ ১১২

১১। তদেব, পৃ ১১৭

১২। ঝা, শক্তিনাথ, ‘আলকাপ’, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পৃ ১০

১৩। তদেব, পৃ ১৪

১৪। ঘোষ, বিনয়, ‘পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি(৩য় খন্ড)’, পুস্তক প্রকাশক, কলকাতা, পৃ ৬৫০

১৫তদেব, পৃ ৬৫৩

১৬। নৌমান, খালেদ, ‘মুর্শিদাবাদের কবিতা চর্চার ধারা’, পুস্তক বিপনী, কলকাতা, পৃ ১১৯

১৭পাল, ফণী, ‘আলকাপ ও লোকসংস্কৃতি’, প্রজ্ঞা বিকাশ,  কলকাতা, পৃ ৩২

১৮। তদেব, পৃ ৩২

১৯। বিশ্বাস, দেবব্রত(সম্পা.),‘বাংলা নাটকে প্রতিবাদী চেতনা’, নবজাতক প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ ১০

২০ পাল, ফণী, ‘আলকাপ ও লোকসংস্কৃতি’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ৩৪

২১। বিশ্বাস, দেবব্রত(সম্পা.), ‘বাংলা নাটকে প্রতিবাদী চেতনা’, নবজাতক প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ ১০

২২। গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ, ‘বৈতালিক’, বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, পৃ ৬০

২৩। ঝা, শক্তিনাথ, ‘আলকাপ’, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পৃ ৫৫

২৪। তদেব, পৃ ৬০

২৫। ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ‘প্রবন্ধ সমগ্র’, বিশ্বভারতী, পৃ ৬৭৮

২৬। ঝা, শক্তিনাথ, ‘আলকাপ’, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পৃ ৪০

২৭। তদেব, পৃ ১৩০

২৮। তদেব, পৃ ১৩৪

২৯। তদেব, পৃ ১৩৯

৩০। তদেব, পৃ ১৫০

 

গ্রন্থপঞ্জি

(আকর গ্রন্থ)

ঝা, শক্তিনাথ। আলকাপকলকাতা : তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ডিসেম্বর ২০১০।

(সহায়ক গ্রন্থ)

গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ। বৈতালিককলকাতা :  বেঙ্গল পাবলিশার্স, চৈত্র, ১৩৫৩।

ঘোষ, অজিতকুমার। নাট্যতত্ত্ব ও নাট্যমঞ্চকলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, অগাস্ট ২০১৭।

ঘোষ, বিনয়। পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতিকলকাতা : পুস্তক প্রকাশক, জানুয়ারী ১৯৫০।

চক্রবর্তী, বরুণকুমার। বাংলা লোকসাহিত্য চর্চার ইতিহাস। কলকাতা : পুস্তক বিপণি, জানুয়ারী ১৯৯৯।

চৌধুরী, দর্শন। বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসকলকাতা : পুস্তক বিপণি, নভেম্বর, ২০১৬।

পাল, ফণী। আলকাপ ও লোকসংস্কৃতিকলকাতা : প্রজ্ঞা বিকাশ, ২০১০।

বিশ্বাস, দেবব্রত(সম্পা.)বাংলা নাটকে প্রতিবাদী চেতনাকলকাতা : নবজাতক প্রকাশনী, ২০১১।

সৈয়দ সিরাজ, মুস্তাফামায়া মৃদঙ্গকলকাতা :  মন্ডল বুক হাউস, মাঘ ১৩৭১।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন