কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

অজিত দেবনাথ

 

কবিতার কালিমাটি ১৪৬


জীবন

 

বাতাসের পাড় ধরে সরে যায় অপূর্ণ গোধূলির দীর্ঘশ্বাস

কোনো এক নিঃশব্দ মুহূর্তে ছুটে ছুটে যায় ভাঙা আলপিনের মতো ধূসর স্মৃতি-সরণি ধরে

শুকনো পাতার অস্পষ্ট সংকেতে 

ঘনকালো সন্ধ্যার অদৃশ্য সিঁড়ির ঝোপে

আর খসে পড়া চাঁদের ভগ্ন মুখ

পড়ে থাকে রাস্তার সরল আঁধারে

দেয়ালে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রক্তাক্ত প্রজাপতি শঙ্কিত ডানা

ছড়ানো ছিটানো পাথরের টুকরো

কোথা থেকে উড়ে আসে, কোন পর্দার আড়াল ছিন্ন করে

প্রান্ত নেই, সেতু নেই, শুধু বিমূর্ত রেখার নিপুণ আঁচড়...

ওই যে দৃশ্যগুলো হেঁটে যায় বিন্দু বিন্দু আলোর মধ্যযামে

গাছের আড়ালে ঝুপসি কুয়াশার ঝুম ঝুম শব্দে

কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে আবার ভেসে যায় জানালার সামান্য ব্যবধান টপকে

 মৃদু পায়ে, পাহাড়ি খাদ পেরিয়ে গভীর জঙ্গলে

পিছনে পড়ে থাকে আলো-নেভানো একাকী, নিশ্চুপ রাত, আধ বোজা চোখে কিছু অসম্পূর্ণ স্বপ্ন

আর খসে পড়া চুলের পাশে একরাশ আশ্চর্য পৃথিবী

সারি সারি পিঁপড়ের অপূর্ব হাসি, এইটুকুই জীবন-

রোদ বৃষ্টির ভিতর শুয়ে থাকা লুকোনো আরেকটি নির্জন, নিঃসীম জীবন।

 

একফালি অলস রোদ

 

একফালি অলস রোদ পেরিয়ে যায় পাহাড়ের উদাসীনতা মুছে

গুচ্ছগুচ্ছ কালোচুলের নিস্তব্ধ ঝরনার টানে

আকাশের আশ্চর্য প্রান্তর পেরিয়ে

যেখানে গভীর বৃষ্টিপাত জঙ্গলের প্রাচীর টপকে ঢেউ তুলে চোখের কার্নিশে

কোনো এক বর্ষাঋতুর ঠোঁট ছুঁয়ে

দিগন্তের আড়ালে কুয়াশার স্তর শবযাত্রার মতো হেঁটে যায় সন্ত্রস্ত নদীর চরে

সন্ধ্যার ভারী বাতাস উড়ে যায় বনপথ ডিঙোতে ডিঙোতে,

নিঃসঙ্গ খামের অদৃশ্য আশ্রয়ে-

করুণ রক্তমাংসহীন নির্জন স্টেশনের অজস্র কান্নার তাঁবু ছিঁড়ে

আর মৃত্যুর নিভৃত মুখ থামেনি কোথাও,

রক্তবাহী শিরার ব্যবহৃত সংলাপের জোয়ারে

কিংবা বিষণ্ণতার বিষাক্ত বিপদসংকেতে

অজানা ক্ষতচিহ্নের ভিতরে জেগে ওঠে একাকী অতীতের স্তব্ধ চাঁদ, বিভক্ত রহস্য

ঘড়ির কাঁটার পাঁচিল ছুঁয়ে যায় নীরবতার কম্পাস

পাশ ফিরে শোয় আহত রাত

সে-ই বিবশ চুলের  কাছে পড়ে থাকে

ভাঙা চিরুনির আয়ত মুখ,

আশ্রয়হীন করুণ শঙ্খের করতলে।

 

শূন্যতার সরু পথ

 

এই নগ্ন কুয়াশার তরঙ্গ কোথায় যে বয়ে যায়

উদ্দেশ্যহীনতার বেশে কেবল কিছু স্মৃতি জমে গাছের পাতার বিভঙ্গে

অনন্তকাল, ধূসর রেখায় বন্দি বিষণ্ণ কোনো পুকুরের নিরাভরণ শিয়রে

ঢলে পড়া চাঁদের নির্নিমেষ দৃষ্টি গেঁথে আছে শ্যাওলার স্তব্ধ তটে, আবছা অন্ধকারের মালকোষে

মাঝে মাঝে ঝরে পড়ে বৃষ্টির ভাঙাচোরা ফুলদানি

সুরঙ্গপথে বয়ে যায় নৌকা-ভর্তি মেঘ

ভারী হয়ে আসে বিবশ বিকেল

চোখে নিহত সূর্যের মলিন পৃষ্ঠা

শরীরের ভিতরে ভাঙা চাঁদ, আর বাতাসের নিষ্পাপ খামার

এরাও ঘুরে বেড়ায় শান্ত অনুষঙ্গে, ভিড় করে পুঁথির মুখোশে

জেগে ওঠে চেতনার উষ্ণ প্রহরে

ছায়ার মতো টিপটিপ করে হাঁটে, ছন্দ হয়ে মিশে ঘুমের পাহাড়ে

কোনো এক শ্রাবণের খোলা ঘুঙুরে...

ফিরে আসে আবক্ষ মূর্তির বিতানে, শূন্যতার সরু পথ ধরে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন