প্রতিবেশী সাহিত্য
কমলা
সুরাইয়া (দাশ)-এর কবিতা
(অনুবাদ : সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়)
কবি পরিচিতি
কমলা সুরাইয়া (দাশ)। জন্মঃ
৩১শে মার্চ ১৯৩৪, মৃত্যুঃ ৩১শে মে ২০০৯। কেরলার মালাবার জেলার
পুণ্যয়ুরকুলামে কমলা দাসের জন্ম হয়। কোনোদিন তিনি স্কুলে
যাননি এবং মাত্র
১৫ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। খুব অল্প বয়সেই কাব্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এই কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পলেখিকা
ইংরাজীতে কবিতা লিখেছেন, মালয়ালমে লিখেছেন উপন্যাস
এবং ছোটগল্প। তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘মাধবীকুট্টি’। ১৯৯৯ সালে এই নারীবাদী
সাহিত্যিক ৬৫ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর নতুন নাম হয় কমলা সুরাইয়া। Vayalar Award, Asan World Prize, Asian Poetry Prize, Kent Award, Sahitya Akademi Award-প্রাপ্ত এই সাহিত্যিক পুণের
হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে ‘The Sirens’ (কবিতা), ‘Summer in Calcutta’ (কবিতা সংকলন), ‘The Descendants’ (কবিতা সংকলন), ‘Only Soul Knows How to Love’ (কবিতা
সংকলন), ‘My Story” (আত্মজীবনী), ‘Alphabet of Lust’ (উপন্যাস), ‘Padmavati the harlot and other Stories’ (ছোটগল্প সংকলন) ইত্যাদি অনেক সাহিত্যকর্ম তিনি রেখে গেছেন।
হিজড়েদের নাচ
গরম ছিল, খুব গরম, হিজড়েরা নাচতে আসার
আগে, ছড়ানো ঘাগরা গোল গোল ঘোরে, করতালেরা
সশব্দ আঘাত পায়, আর ঘুঙুরেরা ঝনঝন করে, ঝনঝন
ঝনঝন করে... আগুনে গুলমোহর গাছের নিচে, উড়ন্ত
লম্বা খোঁপাদের সাথে, জ্বলে ওঠা কালো চোখে, তারা নেচেছিল
আর নেচেছিল, ওহ, রক্তাক্ত হওয়া অবধি তারা নেচেছিল... তাদের গালে
সবুজ উল্কি, চুলে জুঁইফুল, কেউ ছিল কালো,
আর কেউ প্রায় ফর্সা। তাদের কন্ঠস্বর কর্কশ,
তাদের গান ছিল দুঃখের; তারা প্রেমিক -প্রেমিকার
মৃত্যুর গান গেয়েছিল কিংবা জন্ম না হওয়া শিশুদের...
কিছুজন ঢোল বাজিয়েছিল; বাকিরা তাদের দুঃখী বুক চাপড়ে
বিলাপ করেছিল, আর ফাঁপা আনন্দে মোচড় খেয়েছিল। তাদের
প্রত্যঙ্গগুলো সরু আর শুকনো; চিতার আগুনে
আধপোড়া কাঠের মতো, এক রকমের দুর্ভিক্ষ আর পচন
ছিল তাদের সবার মধ্যে। এমনকি কাকেরাও গাছে গাছে
নিশ্চুপ হয়ে গেছিল, আর শিশুরাও বড় বড় চোখে, নিঃস্পন্দ;
সবাই এই অসহায় প্রাণীদের খিঁচুনি দেখছিল
তখন আকাশটা চড়চড় শব্দ করে উঠলো, বাজ পড়লো, আর বিদ্যুৎ
আর বৃষ্টি, এক রকমের বন্ধ্যা বৃষ্টি যা থেকে ধুলোর গন্ধ বেরোলো
চিলেকোঠায় আর টিকটিকি আর ইঁদুরের পেচ্ছাবের গন্ধ...
কৃষ্ণ
তোমার দেহ আমার কারাগার, কৃষ্ণ,
এর বাইরে আমি দেখতে পাই না।
তোমার আঁধার আমায় অন্ধ করে,
বিজ্ঞ পৃথিবীর কোলাহল রোধ করে তোমার প্রেমশব্দেরা।
শব্দেরা
আমাকে ঘিরে শুধুই শব্দ, শব্দ আর শব্দ,
তারা আমাতে পাতার মতো গজায়, থামায় না
তাদের ধীর গতির বেড়ে ওঠা
ভেতর থেকে... কিন্তু আমি নিজেকে বলি, শব্দেরা
এক রকমের উৎপাত, তাদের থেকে সতর্ক হও, তারা
অনেক কিছুই হতে পারে, একটা
গহ্বর যেখানে ছুটন্ত পায়েদের থামা উচিত, দেখার
জন্য, পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্রোতে ভর্তি এক সমুদ্র,
এক জ্বলন্ত বাতাসের বিস্ফোরণ অথবা
একটি ছুরি যা তোমার প্রিয় বন্ধুর গলা
কাটতে খুবই আগ্রহী... শব্দেরা এক রকমের উৎপাত, কিন্তু।
তারা আমাতে গাছের পাতার মতোই বেড়ে ওঠে,
কখনো আসা থামায় না,
নীরবতা থেকে, কোনো গভীর কিছুর ভেতর...
গরম ছিল, খুব গরম, হিজড়েরা নাচতে আসার
আগে, ছড়ানো ঘাগরা গোল গোল ঘোরে, করতালেরা
সশব্দ আঘাত পায়, আর ঘুঙুরেরা ঝনঝন করে, ঝনঝন
ঝনঝন করে... আগুনে গুলমোহর গাছের নিচে, উড়ন্ত
লম্বা খোঁপাদের সাথে, জ্বলে ওঠা কালো চোখে, তারা নেচেছিল
আর নেচেছিল, ওহ, রক্তাক্ত হওয়া অবধি তারা নেচেছিল... তাদের গালে
সবুজ উল্কি, চুলে জুঁইফুল, কেউ ছিল কালো,
আর কেউ প্রায় ফর্সা। তাদের কন্ঠস্বর কর্কশ,
তাদের গান ছিল দুঃখের; তারা প্রেমিক -প্রেমিকার
মৃত্যুর গান গেয়েছিল কিংবা জন্ম না হওয়া শিশুদের...
কিছুজন ঢোল বাজিয়েছিল; বাকিরা তাদের দুঃখী বুক চাপড়ে
বিলাপ করেছিল, আর ফাঁপা আনন্দে মোচড় খেয়েছিল। তাদের
প্রত্যঙ্গগুলো সরু আর শুকনো; চিতার আগুনে
আধপোড়া কাঠের মতো, এক রকমের দুর্ভিক্ষ আর পচন
ছিল তাদের সবার মধ্যে। এমনকি কাকেরাও গাছে গাছে
নিশ্চুপ হয়ে গেছিল, আর শিশুরাও বড় বড় চোখে, নিঃস্পন্দ;
সবাই এই অসহায় প্রাণীদের খিঁচুনি দেখছিল
তখন আকাশটা চড়চড় শব্দ করে উঠলো, বাজ পড়লো, আর বিদ্যুৎ
আর বৃষ্টি, এক রকমের বন্ধ্যা বৃষ্টি যা থেকে ধুলোর গন্ধ বেরোলো
চিলেকোঠায় আর টিকটিকি আর ইঁদুরের পেচ্ছাবের গন্ধ...
কৃষ্ণ
তোমার দেহ আমার কারাগার, কৃষ্ণ,
এর বাইরে আমি দেখতে পাই না।
তোমার আঁধার আমায় অন্ধ করে,
বিজ্ঞ পৃথিবীর কোলাহল রোধ করে তোমার প্রেমশব্দেরা।
শব্দেরা
আমাকে ঘিরে শুধুই শব্দ, শব্দ আর শব্দ,
তারা আমাতে পাতার মতো গজায়, থামায় না
তাদের ধীর গতির বেড়ে ওঠা
ভেতর থেকে... কিন্তু আমি নিজেকে বলি, শব্দেরা
এক রকমের উৎপাত, তাদের থেকে সতর্ক হও, তারা
অনেক কিছুই হতে পারে, একটা
গহ্বর যেখানে ছুটন্ত পায়েদের থামা উচিত, দেখার
জন্য, পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্রোতে ভর্তি এক সমুদ্র,
এক জ্বলন্ত বাতাসের বিস্ফোরণ অথবা
একটি ছুরি যা তোমার প্রিয় বন্ধুর গলা
কাটতে খুবই আগ্রহী... শব্দেরা এক রকমের উৎপাত, কিন্তু।
তারা আমাতে গাছের পাতার মতোই বেড়ে ওঠে,
কখনো আসা থামায় না,
নীরবতা থেকে, কোনো গভীর কিছুর ভেতর...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন