ঋতুসংহার
ছোটবেলায় দাদুর উপহার দেওয়া একটা বইতে এটা পড়েছিলুম ।
“এই গল্পটা আমি শুনেছিলুম আমাদের কলেজে অতিথি অধ্যাপক ডক্টর নরম্যান ডাভিড-এর কাছে; উনি এসেছিলেন ‘জিওগ্রাফিকাল ইকনোমেট্রিক্স’ বিষয়ে বক্তৃতা দেবার জন্য। আমার রাফখাতা থেকেই তুলে দিচ্ছি। (১)
আমি সে সময়ে পলিনেশিয়ায় একটি কর্পোরেট মিটিঙে ব্যস্ত ছিলাম, আমার তদানীন্তন দেহরক্ষী আফজল কসাকজাই কহিল যে, স্বদেশে বার্ষিক নিলামের দরপত্র জমা দিবার মেয়াদ কল্যই শেষ হইবে, আমি যেন আড়িপাতার যাবতীয় ব্যবস্হা দ্রুত করিয়া ফেলি ও রাজধানীতে কর্পোরেট অফিসের যন্ত্রপালকে নির্দেশ দিই যে, প্রতিদ্বন্দ্বীদিগকে যেন চিহ্ণিত করিয়া ফেলা হয় ও তাহাদিগকে যত টাকারই চাহিদা হউক, মিটাইয়া দিবার প্রয়াস করিতে হইবে। এবং যদি তাহারা টাকার লোভে আকৃষ্ট না হয়, তাহা হইলে উহাদের পার্থিব জগতে বসবাসের অধিকার কাড়িয়া লওয়া হউক, এবং তদর্থে একখানা ঘোষণাপত্র প্রতিটি মিডিয়ায় জারি করা হউক। কসাকজাইকে আমি যে কথাই বলি না কেন, সে উহার হস্তধৃত খোকা-কমপিউটারে সেইগুলি তৎক্ষণাত ধরিয়া রাখে। (২)
এতটা লিখিবার পর আফজল কসাকজাই হঠাৎ কহিল, স্যার, আমি আপনার এই গল্পে থাকিতে রাজি নই, আপনি কথা দিয়েছিলেন যে, আমাকে কর্পোরেট হাউসের প্রধান করিবেন এবং আমিই ঘোষণাপত্রটিতে স্বাক্ষর করিব, এখন এসব কী পাঁয়তাড়া ভাঁজছেন, বুঝিতে পারিতেছি না।
উহাকে বলিলাম, ঠিক আছে, তোমার পরিবর্তে আমি অন্য কোনো চরিত্রকে আমার দেহরক্ষীর দায়িত্ব দিব, তোমাকে আরেকটি গদ্যে প্রধান চরিত্র দিব। আফজল কসাকজাই রাজি হইয়া গেল। (৩)
এই বৎসর দেশের দুইটি ঋতু, গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল, নিলাম হইবে এবং যে কর্পোরেট হাউস নিলাম জিতিবে, সেই হাউসটি যেথায় ইচ্ছা এক-একটি ঋতুকে তুলিয়া লইয়া যাইতে পারিবে। আমি ছক কষিয়া রাখিয়াছি যে, গ্রীষ্মকালটিকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীগণের উপর চাপাইব এবং সেই অঞ্চলগুলিতে শীতকালীন ফসলের দাদন দিব। বর্ষাকালটির যাবতীয় মেঘ রাজকোষে জমা থাকিবে। বসন্তঋতুর নিলাম এই বৎসর হইবে না, কেননা গাছপালা-ফুলফল তাহাদের কোটা দুই বৎসর পূর্বেই ফুরাইয়া ফেলিয়াছে।
পশুপক্ষীগণ যথেষ্ট বুদ্ধিধারণ করে, সে কারণে তাহারা মানাইয়া লয়, বসন্তকালের অনুপস্হিতিতে সন্তানোৎপাদন মুলতুবি রাখে। আপনাদের দেশে মানুষের দেহে বসন্তঋতুর অতি-প্রয়োজনের কারণে, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আমি এক প্যাকেট করিয়া গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মিশ্রণ ঘটাইয়া বসন্তঋতু তৈয়ারি করিয়াছি ।”(৪)
ছোটবেলায় দাদুর উপহার দেওয়া একটা বইতে এটা পড়েছিলুম ।
“এই গল্পটা আমি শুনেছিলুম আমাদের কলেজে অতিথি অধ্যাপক ডক্টর নরম্যান ডাভিড-এর কাছে; উনি এসেছিলেন ‘জিওগ্রাফিকাল ইকনোমেট্রিক্স’ বিষয়ে বক্তৃতা দেবার জন্য। আমার রাফখাতা থেকেই তুলে দিচ্ছি। (১)
আমি সে সময়ে পলিনেশিয়ায় একটি কর্পোরেট মিটিঙে ব্যস্ত ছিলাম, আমার তদানীন্তন দেহরক্ষী আফজল কসাকজাই কহিল যে, স্বদেশে বার্ষিক নিলামের দরপত্র জমা দিবার মেয়াদ কল্যই শেষ হইবে, আমি যেন আড়িপাতার যাবতীয় ব্যবস্হা দ্রুত করিয়া ফেলি ও রাজধানীতে কর্পোরেট অফিসের যন্ত্রপালকে নির্দেশ দিই যে, প্রতিদ্বন্দ্বীদিগকে যেন চিহ্ণিত করিয়া ফেলা হয় ও তাহাদিগকে যত টাকারই চাহিদা হউক, মিটাইয়া দিবার প্রয়াস করিতে হইবে। এবং যদি তাহারা টাকার লোভে আকৃষ্ট না হয়, তাহা হইলে উহাদের পার্থিব জগতে বসবাসের অধিকার কাড়িয়া লওয়া হউক, এবং তদর্থে একখানা ঘোষণাপত্র প্রতিটি মিডিয়ায় জারি করা হউক। কসাকজাইকে আমি যে কথাই বলি না কেন, সে উহার হস্তধৃত খোকা-কমপিউটারে সেইগুলি তৎক্ষণাত ধরিয়া রাখে। (২)
এতটা লিখিবার পর আফজল কসাকজাই হঠাৎ কহিল, স্যার, আমি আপনার এই গল্পে থাকিতে রাজি নই, আপনি কথা দিয়েছিলেন যে, আমাকে কর্পোরেট হাউসের প্রধান করিবেন এবং আমিই ঘোষণাপত্রটিতে স্বাক্ষর করিব, এখন এসব কী পাঁয়তাড়া ভাঁজছেন, বুঝিতে পারিতেছি না।
উহাকে বলিলাম, ঠিক আছে, তোমার পরিবর্তে আমি অন্য কোনো চরিত্রকে আমার দেহরক্ষীর দায়িত্ব দিব, তোমাকে আরেকটি গদ্যে প্রধান চরিত্র দিব। আফজল কসাকজাই রাজি হইয়া গেল। (৩)
এই বৎসর দেশের দুইটি ঋতু, গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল, নিলাম হইবে এবং যে কর্পোরেট হাউস নিলাম জিতিবে, সেই হাউসটি যেথায় ইচ্ছা এক-একটি ঋতুকে তুলিয়া লইয়া যাইতে পারিবে। আমি ছক কষিয়া রাখিয়াছি যে, গ্রীষ্মকালটিকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীগণের উপর চাপাইব এবং সেই অঞ্চলগুলিতে শীতকালীন ফসলের দাদন দিব। বর্ষাকালটির যাবতীয় মেঘ রাজকোষে জমা থাকিবে। বসন্তঋতুর নিলাম এই বৎসর হইবে না, কেননা গাছপালা-ফুলফল তাহাদের কোটা দুই বৎসর পূর্বেই ফুরাইয়া ফেলিয়াছে।
পশুপক্ষীগণ যথেষ্ট বুদ্ধিধারণ করে, সে কারণে তাহারা মানাইয়া লয়, বসন্তকালের অনুপস্হিতিতে সন্তানোৎপাদন মুলতুবি রাখে। আপনাদের দেশে মানুষের দেহে বসন্তঋতুর অতি-প্রয়োজনের কারণে, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আমি এক প্যাকেট করিয়া গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মিশ্রণ ঘটাইয়া বসন্তঋতু তৈয়ারি করিয়াছি ।”(৪)
১. দাদুর রাফখাতা, প্রকাশক চপলচন্দ্র সরখেল, বটতলা, কলিকাতা, ১৮৫৭
২. Collected Works of Dr Norman David, Editor Ann Vermer, London School of Geographical Econometrics, London. 1921.
৩. আফজল কসাকজাই-এর আত্মজীবনী, সম্পাদনা শাকিল হুমায়ুন, মতিন পাবলিশার্স, চট্টগ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৬৫.
৪. ‘প্যাকেটে বসন্তঋতু’, প্রাপ্তিস্হান: ওয়াং স্ট্রিট, পাট্টায়া, থাইল্যাণ্ড
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন