কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

মেঘ অদিতি

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬


অভয়দাস লেন ও একটি উড়ন্ত সসার

সকালটাকে দু’হাতে ছড়িয়ে সদর দরজার বাইরে পা রাখলো অবনী। যদিও সকাল কিন্তু অনেকদিনই আলো তত আর সপ্রতিভ নয়। আশেপাশের প্রায় সব বাড়ির দরজা হাট করে খোলা। এতকাল এখানকার মানুষগুলো নিজেদের দরজা যতটা সম্ভব বন্ধ রাখত। আজকাল খোলা পড়ে থাকে। দোরগোড়াতে কুণ্ডলী পাকিয়ে একটা কুকুর শুয়ে আছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে অবনী। নিঃস্তব্ধ চারপাশ। নৈঃশব্দ্যের ভাষা বোঝার চেষ্টাতে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ও। তারপর সোজা হাঁটতে শুরু করে। কুকুরটাও অবনীর সাথে হাঁটে। লেজ নাড়ানো ছাড়া ওর মুখ থেকেও কোনো আওয়াজ বের হয় না। 

নিয়ম করে রোজ হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা বেলা গড়ালে অবনী তারপর ঘরমুখো হয়।

আজ সে হাঁটছিল খানাখন্দ ভরা অভয়দাস লেনের দিকে। প্রবল গরম পড়েছে। দরদর করে ঘাম হচ্ছে। কুকুরটা এখন আর সাথে নেই। গন্তব্যহীন, একাই হাঁটছে অবনী। পুরো শহর ফাঁকা। কে বলবে কোনো এককালে প্রবল জ্যামের জন্য এ শহর বিখ্যাত ছিল। ওর ভাবনার মাঝে কানের পাশ দিয়ে কী একটা সাঁই করে চলে গেল। অবনী ঘাড় ঘোরালো। কিছু দেখতে পেল না। পাখি? অবনী ভাবার চেষ্টা করল, এ শহরে শেষ পাখি সে কবে দেখেছে… এসব কথা মনে এলে তার ভাঙা চোয়ালে বিষণ্ণতা উঁকি দেয়। মনে পড়ে আলাদা করে আর শহর  কোথায়? দেশগুলোই বা কোন কাঁটাতারে আর নিজেদের আলাদা করে রেখেছে!  চাইলে অবনী এখন হাঁটতে হাঁটতে ঘুরে আসতে পারে পৃথিবীর আনাচ কানাচ।

বেলা কত এখন? রুমির ঘুম ভাঙলো কি না কে জানে!

অবনীর মণিবন্ধে অনেকদিন কোনো ঘড়ি নেই। মুঠোফোন সে ফেলে দিয়েছে বহু আগেই।

আকাশের দিকে মুখ তুলল। আকাশ থম মেরে আছে। হঠাৎ রুমির জন্য ভাবনা হলো। সে ফিরতে চাইল। কিন্তু ফের ওর মাথার ওপর দিয়ে কিছু একটা বার দুয়েক ঘুরপাক খেল। মুখ তুলল অবনী। নাহ, কিছুই নেই। বেরুবার আগে ও ড্রয়ারটা তালা দিয়ে এসেছিল তো? ভুল হবার কথা নয়। বাড়ি ফিরে তড়িঘড়ি টেবিলের সামনে সে দাঁড়ায়। যেটুকু সামান্য ঝটপটানোর শব্দ এখনও বেঁচে তা এই ড্রয়ারের ভেতরই। আজ সেটুকুও কেন নিশ্চুপ! রুমি কি ঘুমাচ্ছে?

সাবধানে ড্রয়ার খুলল। রুমি জেগে। অবনীর ডায়েরিটার পাতায় রুমি কীসব লিখছে। অবনী ফিসফিস করে ডাকলো, রুমি?  রুমি মুখ তুলল। ইশারা করল ডায়েরিটার দিকে। অবনী কিছুটা ঝুঁকে দেখল রুমি শিরোনামে লিখেছে, অভয়দাস লেন ও একটি উড়ন্ত সসার। তারপর অনেকটা ফাঁকা রেখে নিচে গোটা গোটা অক্ষরে আজকের দিনক্ষণ দিয়ে অবনীর মৃত্যুর তারিখ লেখা।

রুমি, রুমি… তুমি জানলে কী করে, আজ অভয়দাস লেনে গেছিলাম? আর  উড়ন্ত সসার? রুমি উত্তর করল না। অবনীর মনে পড়ল, অভয়দাস লেনে ওর মাথার ওপর দিয়ে, কানের পাশ দিয়ে অদৃশ্য কিছু একটার সাঁই করে চলে যাওয়া। 

অবনী দ্রুতহাতে ড্রয়ারটা বন্ধ করে দিল।

 


1 কমেন্টস্: