কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

তথাগত চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬


ভ্রান্তি

“ঠিক আছে, মায়ের টিকিটটাও কেটে নাও না! ওনার যখন যাওয়ার ইচ্ছা... তাছাড়া পুরী তো সারা জীবনে একবারও যাননি উনি। তোমাকে নিয়েই তো কেটে গেল সারাটা জীবন, ঘোরার আর সময় পেলেন কোথায়?” সর্বাণীর কথায় বেশ অবাকই হয়েছিল অর্চিষ্মান। একটু অভিমানের সুরেই বলেছিল, “তা বলে বিয়ের পর আমরা প্রথম বেরোচ্ছি, সাথে মা গেলে ব্যাপারটা কেমন যেন”...

অর্চিষ্মান কথাটা শেষ করার আগেই সর্বাণী থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, “ব্যাপার কিছুই না, উনি হোটেলে আলাদা ঘরেই তো থাকবেন। তোমার দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক থাকলে ওনার উপস্থিতি কোনো সমস্যাই নয়। বারবার উনি আমাদের সাথে নিশ্চয়ই বেরোতে চাইবেন না। বয়সও তো হচ্ছে, নাকি? এরপর ঘুরতে গেলে  আমরা দু’জনেই যাব। ব্যস মিটে গেল। একজন বয়স্ক মানুষ শ্রীক্ষেত্রে যেতে চাইছেন, না কোরো না”।

পুরী এক্সপ্রেসে শেষপর্যন্ত সত্তর ছুঁই ছুঁই প্রতিমা দেবী তাঁর সদ্য বিবাহিত পুত্র, পুত্রবধূর সাথে মনের আনন্দে উঠে পড়েছিলেন। সে অর্থে বলতে গেলে এটাই অর্চিষ্মান আর সর্বাণীর মধুচন্দ্রিমা। তাদের সেই যাপনের মধ্যে নিজের উপস্থিতি নিয়ে প্রথম প্রথম কুন্ঠা থাকলেও সর্বাণীর অমায়িক ব্যবহারে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিলেন প্রতিমা দেবী।

পুরী স্টেশনে গাড়ি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশ দেরিতেই পৌঁছেছিল। প্রতিমা দেবীর প্রথম রাতভোর ট্রেনযাত্রা, গাড়িতে পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি তাঁর। অর্চিষ্মান, সর্বাণীও স্বাভাবিক ক্লান্তির শিকার। ফলত, প্রথম দিনেই সমুদ্রস্নানে কারোরই  তেমন আগ্রহ ছিল না। প্রতিমা দেবী বলেছিলেন, “আজ থাক, শরীরে যেন জুত পাচ্ছি না। আগামীকাল সবাই মিলে স্নান করব সমুদ্রে”।

সমুদ্রমুখী একটি সুন্দর হোটেলে অর্চিষ্মানরা উঠেছিল। বারান্দার কাছ থেকে সমুদ্র চমৎকার দেখা যায়। সোনালী বালির তটভূমি, মানুষের কোলাহল, সমুদ্রের আওয়াজ – প্রতিমা দেবী মুগ্ধ হয়ে গেলেন।

সেদিনই বিকেলে সমুদ্রতটে একসাথে ঘুরতে গেলেন সবাই। দুপুরের খাওয়ার পর সামান্য ভাতঘুমে ক্লান্তির রেশ অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। ঢেউ পায়ের কাছে এসে ভেঙ্গে পড়ছিল অবিরাম। অর্চিষ্মান সর্বাণীকে পাশে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গিয়েছিল বেশ অনেকটা পথ। প্রতিমা দেবী একটু পিছিয়েই পড়েছিলেন। একাকী অবস্থায় – পুত্র এবং পুত্রবধূর সান্নিধ্য থেকে সাময়িক আলগা হয়ে।

কিন্তু হঠাৎই প্রতিমা দেবীর মনে হল – সর্বাণী কি অর্চিষ্মানকে তাঁর কাছছাড়া করে দিতে চাইছে? নাহলে দু’জনে কেন এগিয়ে গেল অতটা সামনে, মা যে পেছনে একা পড়ে গেছে এটুকু খেয়ালও নেই ওর! সেই ছোট্ট অর্চিষ্মান, ওর বাবা চলে যাবার পর কীভাবেই না বড় করে তুলেছে সে। কোথায় ছিল তখন এই  সর্বাণী? তখন অর্চিষ্মানের জগত জুড়ে শুধুই মা আর মা। আর আজকে...

প্রতিমা দেবী অনুভব করতে পারছেন তাঁর ভেতরে অস্বাভাবিক এক প্রতিক্রিয়া দানা বেঁধে উঠছে ক্রমশ। রাগ নাকি কোনও অভিমান? কী করবেন এখন তিনি?  সদ্যবিবাহিত পুত্র, পুত্রবধূর সামনে চলে যাবেন? নাকি ওদের ডেকে নেবেন  নিজের কাছে? কিছুতেই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না প্রতিমা দেবী।


1 কমেন্টস্: