কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

দেবযানী বসু



কালিমাটির ঝুরোগল্প



রুগির পোষাক

কোথায় কোকিল ডাকে, কোথায় বসন্ত আসে, সে সবের আর খোঁজ রাখার  দরকার নেই সায়ন্তনের ঠাকুরমার। ওপার বাংলার ভিটেমাটিছুট এক দরিদ্র পরিবারের মহিলা আজকাল বিষণ্ণ উদাস বিশেষত স্বামী মারা যাওয়ার পর।
অসুবিধার শুরু হল একমাত্র সন্তানের বিয়ে দেবার পর। পুত্রবধূ ধনীঘরের দুলালী। প্রেমবিবাহ। বৌটি তার স্বামীকে ট্যাবলেটের মতো গিলে ফেলেছে। তাদের সন্তান বছর পাঁচেক হতেই তারা দোতলার ঘরে আলাদা সংসার ফেঁদে বসল। অবশ্যই নতুন প্রজন্মের মানুষটি একমাত্র যোগসূত্র হয়ে থাকল প্রাচীন বৃদ্ধদের সঙ্গে। সম্প্রতি স্বামী বিয়োগ হতে কল্যাণী বসু চৌধুরী আরো একা হয়ে পড়লেন।  এরপর ইঞ্জিনিয়ার সন্তান তার পরিবার সহ সোজা বিদেশে উড়ে গেল আদায় কাঁচকলায় সম্পর্কের উপর শেষ পেরেকটা পুঁতে।

একবগ্গা কল্যাণীর চোখ দিয়ে একফোঁটা জলও বার হল না। এখন সারাদিন রাত  ভাবেন যে ছেলেকে একমাত্র অবলম্বন ভেবেছিলেন, আদরে শাসনে উৎকণ্ঠায়  এত সফল নাগরিক করে তুললেন, বিয়ের পর সে কেমন করে পর হয়ে গেল!  কল্যাণীর বেয়ান একেবারে হালফিল যুগের মানুষ। অর্থাৎ স্বার্থপর মনে, বাইরে আধুনিক পোশাক। কল্যা্ণীর রান্নাঘরে আঁশ নিরামিষ আলাদা। ছোঁয়াছুঁয়ি হলে খুব অশান্তি হয়। চাউমিন ম্যাগি ইডলি মোমো এসব পছন্দ করেন না। জামাকাপড়ের বাসি হয়ে যাওয়ায় ঘোর বিশ্বাস। এমনকি ঠাকুরঘরের বাতিকগুলি নিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে থাকেন সব
  সময়। বৌয়ের চুল কেটে ছোট করে ফেলায় ঘোর আপত্তি ছিল কল্যাণীর। ছেলেটি শ্বশুরবাড়ির আদর যত্নে নিজের মায়ের কাছে অচেনা দূরত্ব বাড়িয়ে নিল। আর ছোটখাটো ঘটনার তিল তালে পরিণত হল ঝগড়ার মাধ্যমে কথা বলা বন্ধ করার মাধ্যমে। লটবহর নিয়ে উড়ে যাবার পর প্রথম প্রথম ফোন হত, তারপর ফোনে শূন্যতা পড়ে থাকল।

কল্যাণীকে দেখাশোনা করার কাজের মহিলাটি একদিন এসে দেখল, সে প্রায়  অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। প্রতিবেশীরা দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালে দিয়ে এল। পাড়াব প্রতিবেশীরা জানত ওনার একাকীত্বের কথা। অনেকেই খোঁজ নিয়ে যেত  মাঝেমাঝে। মুখরা ও সুন্দরী পুত্রবধূর মুন্ডপাত করে যেত তারা। বৌমা শুধু নিজের ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকত। শ্বশুর শাশুড়িকে ন্যূনতম সেবাটুকুও দিত না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে হাই প্রেসার সুগারের রুগি রেনাল ফেলিওর করে কল্যাণী দেখতে পেলেন, জানালার ধারে তার গুরুদেবের স্ত্রী এসে দাঁড়িয়েছেন।  পরনে লুংগির পোশাক। কল্যাণী জিজ্ঞেস করলেন : আপনি এখানে এলেন কী  করে? এখানে তো আপনার থাকার কথা নয়!
: আমি এখানে আছি। অসুবিধা কী? আপনি কোথায় থাকেন?
: আমি তপসিয়া।
: আমি টালিগঞ্জে।
: হ্যাঁ জানি তো, আপনার চারতলা বাড়ি। আপনার সেই রূপ একইরকম আছে।  আপনাদের এখানে আমি এসেছি স্বামীর খোঁজে। গুরুদেবের প্রেম আমি ভুলতে পারি না। আমার শরীর খারাপ তাঁকে জানাবেন। টালিগঞ্জের বাড়ি ছেড়ে আপনি এখানে কেন থাকেন?
কল্যাণী দেখলেন ছায়ামূর্তি হাসিমুখে আপেলে কামড়াতে কামড়াতে মিলিয়ে গেল। কল্যাণী চিৎকার করে উঠলেন : আমার কবে ছুটি হবে বলে যাআআআন...



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন