কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

তৌহীদা ইয়াকুব




এ সময়ের ডাইরি 




আজ ২৯শে মার্চ।
আমি যে শহরে থাকি (পারপিনিয়) সেই শহরটা ফ্রান্সের দক্ষিণে। প্যারিস থেকে ১০০০কিমি দূরের ছোট্ট আর খুব সুন্দর একটা শহর এটা। এখানে সারা বছর সারা পৃথিবী থেকে ট্যূরিস্ট আসে। একপাশে  সমুদ্র আর বাকী তিন পাশে প্রচুর ছোটবড় পাহাড় ঘেরা। সবচেয়ে উচু যে পাহাড় তার নাম কানেগু। এই মুহূর্তে আমার রান্না ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে কানেগুকে দেখছি। মাথায় সাদা বরফ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা  ছেঁড়া মেঘ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে থমকে আছে। আজ বেশ পরিস্কার আকাশ। যদিও রোদ নেই তেমন। জানালা থেকে আমাদের বিন্ডিংএর পেছিনটা দেখা যায়। ওখানে একটা চিন্ড্রেন পার্ক। লোহার চেয়ার বসানো। মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে এসে ওইসব চেয়ারগুলোতে বসে গল্প করে। এখন বিকেল ৪টা বাজে। অন্য সময় হলে বাচ্চাদের কিচিরমিচির শোনা যেত। আর এখন সব নিস্তব্ধ। চারপাশ মৃত্যুর সংবাদে আতংকিত। আক্রান্ত মানুষের কাতর নিঃশ্বাসে ভারী।

৩০শে মার্চ।
সারাদিন বৃষ্টি, মেঘ, অন্ধকার হয়ে ছিল। অথচ বসন্ত শুরু হয়ে গেছে এ মাসের ২২ তারিখে। ঘরে বসে  দূরের চেরি ফুল ফোটে থাকা দিগন্ত, পিচ, এ্যাপ্রিকট, এ্যাপল, ন্যাকটারিন, কিউয়ি কত কত ফলের একর একর জমিতে ফুল ফোটা শুরু হয়ে গেছে, ঘরে বসে স্মৃতি খুঁজে মেলে ধরি। কিছুই যেন আগের মতো নেই। 

ইচ্ছে হলেই এখন আমরা বাইরে যেতে পারি না। সব লকডাউন। শুধু ফার্মেসি, ব্যাংক আর গ্রোসারিশপ খোলা থাকে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। অনলাইনে একটা ফর্ম দেয়া আছে। প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য বের হতে হলে সেই ফর্ম প্রিন্ট করে তা পূরণ করে সাথে নিয়ে যেতে হবে। ফর্মে বের হওয়ার টাইম উল্লেখ  করতে হবে। আর পরিবারের একজন শুধু বের হতে পারবে। ১ ঘন্টার বেশী বাইরে থাকতে পারবে না। রাত ৮টায় সাইরেন বেজে উঠে তারপর থেকে কারফিউ শুরু হয়ে ভোর ৬টা পর্যন্ত জারি থাকে। মেঘলা আকশের মতই মনটা থমথমে হয়ে আছে। মনে হয় চারপাশে কোনো জীবন নেই। শুধু রাত ৮টায় সবাই নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসপাতালে কর্মরত সকল কেয়ারার নার্স  ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে হাততালি দিয়ে তাদের প্রতি সম্মান আর ভালবাসা পাঠায়।

৩১শে মার্চ দুপুর।
আজ বন্ধু বেয়াথ্রেস ফোন করেছে। লকডাউনের পর আজই ফোনে কথা হলো ওর সাথে।  এই অসামাজিক সময় ওকে অনেকখানি বিপন্ন করে তুলেছে। বলছিলো নানা উৎকণ্ঠার কথা। স্পর্শহীন দূরত্বের কথা বলতে গিয়ে ফরাসি  চুম্বনের কথা মনে করে বলল, এরপর হয়তো আমাদের এতদিনের সংস্কৃতিকে আর সেভাবে পালন করতে পারব না। দ্বিধা তৈরি হয়ে গেলো মনের ভিতর। (দেখা হওয়ার পর ফরাসীরা মুখে ‘বোঞ্জো’ বা বেশী আন্তরিক হলে ‘সালু’ বলার পর গালে গাল লাগিয়ে বাতাসে চুম্বন ছুঁড়ে দেয়, চুম্বনের শব্দ শোনা যায়)।  এই অসময়ের তীব্রতায় জীবনের সব রঙ যেন খসে পড়েছে। এখন শুধু নোনা ইট দেখে যাওয়া। এত উন্নত দেশের নাগরিক হয়েও বেয়াথ্রেস বাস্তবতা বোঝে, অর্থকষ্ট বোঝে, ক্ষুধা বোঝে। আমাদের দেশের কথাও বলছিলো। খেটে খাওয়া,  দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের ক্ষুধার কথা ভেবে দুঃখ প্রকাশ করেছে বারবার।

১লা এপ্রিল ২০২০।
এই শহরে বাস করে মোট ২ লক্ষ মানুষ। ভীষণ নিরিবিলি এই শহর সবসময়।  শুধু গাড়ি চলাচল দেখে এই শহরকে সচল মনে হতো। এখন সেটুকুও বন্ধ। একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে চারপাশ। ওঘর থেকে টিভির শব্দ আসছে। দূরে কানেগুকে দেখছি, সব সময়ের মতই অভূতপূর্ব তার রূপ। খবর পাঠিকাদের  প্রতিটা উচ্চারণ এখন মৃত্যুর গন্ধে উদ্বিগ্ন। এ শহরের এক মহল্লার নাম সেন্ট  জ্যাক।  জিতান, মানে জিপসিদের বাস ঐ মহল্লায়। এই শহরের সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত মানুষগুলো এই মহল্লার। ওইসব গলির মোড়ে এ্যাম্বুলেন্স পুলিশ ভ্যান সাদা এ্যাপ্রণের আনাগোনা। টিভি এসব মন খারাপ রেখে যায় আমার এই  প্রবাস ঘরে। জিপসিদের প্রতি আমার একটা দূর টান থাকে। এদের শতশত  বছরের পূর্ব পুরুষরা এসেছিলো ইন্ডিয়া থেকে। বিজনেস এসোসিয়েশনে আমাদের অনেক কলিগ জিপসি। ওদের একজনের নাম ‘পানি’। একদিন আমি বলেছি পানি মানে আমাদের ভাষায় ওয়াটার। ও উচ্ছসিত হয়ে বলেছে ওদের জিতান  ভাষাতেও তাই। তারপর থেকে সে একেকটা শব্দ নিয়ে আসে মিলিয়ে নিতে। এতদূর থেকে ওদের নাক, চোখ, পা, মানুষ,  আমাদের শব্দকগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। একটা অজানা টান অনুভব করি।  

আজ পৃথিবীর অসুখ। এই দুর্দিনে সব মানুষ একসাথে লড়ছে অজানা ঘাতকের বিরুদ্ধে। একদিন একসাথে মানুষের জয় হবে, চারপাশে জীবনের গন্ধমাখা রোদ উঠবে! আর এর মধ্যেই কত কত অবিস্মরণীয় গল্প তৈরি হয়ে যাচ্ছে যা আড়াল  তুলে বের হবে বৈদূর্য্যময় আলোর মত  বিজয়ের দিনে। আর থেকে যাবে  আমাদের পরেও হাজার বছর। এবার অপেক্ষা পৃথিবীর সব মানুষের একসাথে জিতে যাওয়ার।


২রা এপ্রিল ২০২০।
এই আবাসিক এরিয়ার নাম সাঁ মাগতা বা সেন্ট মার্টিন। আমার ঠিক পিছনের বিল্ডিঙে একজন ষাটোর্ধ মহিলা থাকেন। উনি একাই থাকেন। ভীষণ ফুর্তিবাজ। ইস্টার, বড়দিন বা নিউ ইয়ারে তো কথাই নেই প্রায় সারা বছর ওনার বারান্দা ঘ
ঘেরা জানলা সুন্দর করে সাজানো থাকে। প্রতি সন্ধ্যায় অনেক অনেক মোম  জ্বলে। তার জানালার পাতলা পর্দা ঠেলে নানা রঙের আলো বের হতে চায়। মাঝে মাঝে মিউজিক বাজে। ওনার একলা ছায়া পর্দায় প্রে, জেশ্চার পশ্চার দেখে বোঝা যায় উনি নাচছেন। আজ বেশ কয়দিন যাবত দেখছি, বারান্দার দরোজা আর জানালায় সাটার তোলা। চিন্তা হচ্ছে কোথায় উনি? সুস্থ আছেন তো? মনে মনে বলি- s'il vous plaît restez en bonne santéবার বার একটা অশুভ চিন্তা না চাইলেও এসে যাচ্ছে। এত মৃত্যুর গন্ধ আমাকে ভাল কিছু ভাবতেই দিচ্ছে না।

৩রা এপ্রিল ২০২০।
আজ ফ্রান্সে মৃত্যুর সংখ্যা দেখে, বাংলাদেশ থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব যে যেখানে আছে সবাই ফোন করছে। জানতে চাইছে আমরা কেমন আছি। সবার  কাছে খবর চলে গেছে ফ্রান্সের এই মর্মান্তিক দুর্দিনের। আজ মৃতের সংখ্যা ৪৭১জন, কিন্তু গত কয়েকদিনের নার্সিংহোমের মৃতের সংখ্যা ৮৮৪জন যোগ করে হয়েছে ১৩৫৫জন। নার্সিংহোমের ইনফেক্টেড-এর সংখ্যা ১৭৮২৭জন। এই  সংখ্যা যোগ করে মোট ইনফেক্টেড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩০৬০ জনে। কী করুণ কী বিপন্ন এ সময়! ভীষণ উৎকণ্ঠার ভিতর শ্বাস নিচ্ছে মানুষের পৃথিবী। 

এর ঠিক বিপরীতে একই সময়ে প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে তার নিজস্ব রূপ যৌবন। অনেক জায়গায় রাস্তার কংক্রিটের ফাক ফোঁকর ভেদ করে উঠে এসেছে লতাগুল্ম। বাইরে প্রকৃতি বসন্তপ্রবণ।

৪ঠা এপ্রিল ২০২০।
আমাদের এ শহরের নদীর নাম লা তেত। সেই নদী থেকে কেটে আনা একটা খাল চলে গেছে আমাদের পাশের মেইন রোডের ঐ পাড়ে। শহরের ভিতরের এই খালগুলোতে সব সময় দল বেধে বন্য হাসের দল ঘুরে বেড়ায়। আজ সকালে দেখি রাস্তা পার হয়ে এসে আমাদের বিল্ডিঙের পেছনের ঘাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেইসব হাসের দল।

একবার খুব সুন্দর পাহাড়ের উপরের একটা গ্রামে গেছিলাম। গ্রামটার নাম এস্প্যারাহজা। সে  গ্রামে যেতে এস্টাজেল নামে আর একটা গ্রাম পার হতে হয়। কি ভীষণ বড় বড় পাহাড় জঙ্গল পার হয়ে যাওয়া। এর মাঝে রাস্তার পাশে সাইন দেয়া সাবধানে স্পিড কম করে যেতে। কারন জঙ্গল থেকে যখন তখন যে কোন প্রাণী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রাস্তার মাঝে চলে আসতে পারে বা রাস্তা পার হয়ে যেতে পারে অন্য পাশের জঙ্গলে। সেদিন আমাদের গাড়ির নিচে এক নীল রঙা বন মোরগ পরে গিয়েছিল। বাকি রাস্তা জুড়ে ছিল আমাদের মন খারাপ। ওই সব রাস্তায় শুনেছি এখন সব বন্য প্রাণী হাঁটা চলা করছে নির্দ্বিধায়।
হয়তো 
কিছু হাত অসহায় ছিল প্রার্থনায়
মানুষের মুঠো ভরে উঠেছিল রক্তে ও ঘৃণায়
হয়তো-
আকাশ সীমা ভাগ করে নেয়া অনাচার
মাটিতে গেঁধে দেয়া সিমান্তের পিলার।
এইসব ঘরবন্দি বিপন্ন করাল সময় এখন আমাদের। অথচ বাইরে ঐন্দ্রজালিক উজ্জীবিত অনন্য আলোর পৃথিবী।

৫ই এপ্রিল ২০২০।
ঘরবন্দি অকাজ অবসর জমে উঠেছে। আজকাল তারিখ মনে থাকলেও বারের নাম মনে থাকেছে না একদম। রাতে ঘুমুতে দেরি, সকালে উঠতে দেরি। প্রায় সকালেই ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে একেবারে ব্রাঞ্চ করে ফেলি। গত ১৬ই মার্চ শপিং করে এনেছিলাম। এরপর আমরা আর ঘরের বাহির হইনি। ফ্রেশ সব্জি ফল শেষ হয়ে গেছে বেশ কয়দিন। এখন ফ্রজেন কিছু সব্জি দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। এদিকে মায়দাও শেষ হয়ে গেছে। বন্ধু জেনিফার ফোন করে জানিয়েছে আসে পাশের কোন গ্রোসারি সপে ময়দা পাওয়া যাচ্ছে না। mais c'est bien que la boulangerie encor ouverte pour nous. আহা আমরা বাঙালিরা না হয় ভাত হলেই হয় ওদের তো ময়দা ব্রেড কেক না হলে চলে না। যাক বুলেঞ্জারি খোলা আছে এটা ওদের জন্য স্বস্তির।  কাজেই চাল, ওটস, এসবই ভরসা এখন। শেষ যেদিন বাজার করতে গিয়েছিলাম ওইদিন ব্রেড, ময়দা আর চালের সেলফ সব ফাকা হয়ে গিয়েছিলো। প্যানিকড হয়ে পড়েছে সব মানুষ।
 
৬ই এপ্রিল ২০২০।
গতকাল ঘুমুতে যাবার আগে ড্যানিয়েল আর আনিকের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। আজ সকালে তাই ফোন করে কথা বলেছি। ড্যানিয়েলের ওপেন হার্ড সার্জারি হয়েছে ৪ বছর আগে। তারপর থেকেই নানান জটিলতা মাঝে মাঝেই হসপিটালে দৌড়োতে হয়। আর সারা বছর নার্স কেয়ারার বাসায় রুটিন করে আসে দেখে যায়। এই সময় আনিককেও একদম বের হওয়া নিষেধ করে দিয়েছে। কেয়ারার দরকারি সব কেনাকাটা করে দিচ্ছে। শুনে ভাল লাগলো। বিকেলে ক্যারন ফোন করেছে। এখন আমাদের ফোনই সম্বল যোগাযোগের জন্য। সে থাকে পাহাড়ের উপরে একটা গ্রামে, নাম ছেরে (Céret)ওই গ্রাম পুরোটাই দর্শনীয় ট্যুরিস্টদের কাছে। পাহাড় ঝর্ণা সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্য। ছেরে ( Cérét) যেমন উপচে পড়া রূপের জন্য সবার কাছে পরিচিত তেমনি এখানকার চেরি সব চেয়ে বিখ্যাত। মে মাসের মাঝামাঝিতে এখানকার কৃষকরা সাবার আগে এক বক্স চেরি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ডকে পাঠাবে তারপর চেরির মেলা হবে। সেই মেলা আসেপাশের শহরের মানুষের কাছেও খুব প্রিয় আর সুপরিচিত। দূর দূর থেকে মানুষ আসে দেখতে। মৌসুমের প্রথম চেরি কিনে নিতে। তারপর কৃষকরা সেই চেরি বাজারে তুলবে এটাই নিয়ম চলে আসছে। এবার কি হবে জানি না কেউ। আমাদের এক বন্ধু ট্যারি, সে একজন কৃষক। তার চেরি ফলের বাগান আছে। ট্যারির কথা উঠতেই ক্যারন আর আমি চেরি ফলের গল্প শুরু করে দিয়েছিলাম।

কাল মনে করে আবশ্যই পো আর বারবারার খোঁজ নিতে হবে। ওরা স্বামী- স্ত্রী, ব্রিটিশ। বারবারা একটা কোম্পানির মার্কেটিংএ কাজ করেছে আর পো ছিলো ব্যাংকার। রিটায়ারম্যান্টের পর ওরা চলে এসেছে এখানে। বাড়ি কিনেছে। কানেগু পাহাড়ের পশ্চিম পাশে একটা গ্রাম, নাম ফ্রাদ, সেই গ্রামে। সমতল থেকে ৮৫ মিটার উপরের এক পাহাড় ঘেরা ওই গ্রাম। মনে আছে ওরা প্রথম যেদিন আমাদের শপ এ এসেছিলো সেদিন পো আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিল, এখানে বসবাস করতে আমাদের কেমন লাগে। আমারা কেমন আছি এখানে। অনেক কথার মাঝে আমি বলেছিলাম এখানে আমাদের দেশীয় কিছুই পাওয়া যায় না এমনকি কাঁচা মরিচও পাওয়া যায় না, শুনে সবাই হেসে উঠেছিলো। পরের সপ্তাহে ওরা আবার এসেছিলো। কোথা থেকে খুঁজে আমার জন্য ২শ গ্রাম কাচা মরিচের একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছিলো। তারপর থেকে ওদের সাথে   আমাদের একটা সম্পর্ক দিনদিন নিবিড় ও গভীর হয়ে উঠেছে। বয়স হয়ে গেছে দুজনেরই। কিভাবে বাজার ঘাট সব মেনেজ করছে কে জানে। আমাদের বাসা থেকে ওদের বাসা প্রায় ৪৫ কিমি দূরে। ছেলেমেয়েরা কেউ কাছে নেই। নাহ বড় ভুল হয়ে গেছে। আর ভুলে গেলে চলবে না কাল একটা ফোন করে ওদের খোঁজ নেব। 

গত ১৮ দিনে আমাদের খাবার দাবার অনেক কিছুই শেষ হয়ে গেছে। বাজার না করলেই নয়। অথচ বাইরে কোথায় সেই আততায়ি ঘাতক লুকিয়ে আছে কে জানে। ভীষণ ভয় করছে। বাঁচতে হলে বাইরে যাওয়া চলবে না আবার বাঁচতে হলে খেতে হবে, খেতে হলে বাইরে যেতে হবে। জটিল পাটিগণিত এখন মানুষের জীবনের দুর্মর বাস্তবতা।

একটু আগে সূর্য ডুবে গেলো। তারো আগে সাইরেন বেজে গেছে । বিষণ্ণ অন্ধকার নেমে এলো স্থির স্তব্ধতায়। কি হবে আগামি কাল? এই পরবাস থেকে নিজ দেশের কথা ভাবি আরো বেশী অসহায় লাগে। এইসব মৃত্যুর দিন কি করে পারি দেবে আমার গরিব অভাগা দেশ? ভয় হয়! জগত সংসার কেঁপে উঠে, জরাগ্রস্থ শ্বাসে  ক্ষিণ হৃদপিন্ডের উঠানামা। জীবন আছে। তাই স্বপ্নও আছে।

আজ পৃথিবীর অসুখ। এই দুর্দিনে সব মানুষ একসাথে লড়ছে অজানা ঘাতকের বিরুদ্ধে।  একদিন একসাথে মানুষের জয় হবে,  চারপাশে জীবনের গন্ধমাখা রোদ উঠবে ! আর এর মধ্যেই কত কত অবিস্মরনীয় গল্প তৈরি হয়ে যাচ্ছে যা আড়াল তুলে বের হবে বৈদূর্য্যময় আলোর মত  বিজয়ের দিনে আর থেকে যাবে আমাদের পরেও হাজার বছর। এবার অপেক্ষা পৃথিবীর সব মানুষের একসাথে জিতে যাওয়ার।













0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন