কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

বারীন ঘোষাল

ঘুমের গাড়ি


ট্রেন লেট করছে খুব। সুভাষ আমাকে তুলে দিতে এসেছে পুরুলিয়া স্টেশনে। টাটা যাব।

১৯৭১। ‘কৌরব’ দ্বিতীয় সংখ্যা ছাপা হচ্ছে পুরুলিয়াতে। আমি আর সুভাষ এসেছি  প্রেসে। কৃষ্ণবাবু প্রেসমালিক আমাদের টেনে নিয়ে ওঠালেন এস পি’র গাড়িতে। ছড়্‌ড়া ক্যাম্পে যেতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের শরণার্থীদের ক্যাম্পে বাংলাদেশ স্বাধীনতা উৎসব হচ্ছে, উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ। কৃষ্ণবাবু ‘যুগান্তরে’র সাংবাদিক ছিলেন।  আমরাও চললাম সঙ্গে। অনুষ্ঠান শেষে বুঝলাম আজকে প্রেসের কাজ তাকে উঠল। সুভাষ থেকে যাবে। আমার অফিস আছে কাল, ফলে আজ রাতে ফিরতেই হবে। টাটায় ফিরে সুভাষের বাড়ি থেকে আমার মোটর সাইকেলটা নেব, ওর মাকে সংবাদ দেব ... পুরুলিয়া স্টেশনেই তখন সাড়ে ন’টা।
‘বারীন, হরিমটর তো নেই, দুটো কলাই খা, সস্তায় পুস্টি’কলা খেতে খেতে ট্রেন এসে পড়ল। টাটা পৌঁছবে সাড়ে এগারোটায়। উঠে সিট পেয়ে গেলাম। ট্রেন ছাড়ার পর ঠান্ডা হাওয়ায় চোখ বুঁজে এলো সারাদিনের ধকলের পর। সবাই ঘুমোচ্ছে। ট্রেনের দুলুনিতে ঘুমের মজাই আলাদা। 

কতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছি, খেয়াল নেই। হঠাৎ ঝমঝম আওয়াজে চোখ খুলে দেখি একটা   ঝলমলে স্টেশন পেরোচ্ছে ট্রেনটা। উঁকি দিয়ে দেখি ‘সিনি’ স্টেশন পেরোচ্ছি। মানে  আমি টাটার ট্রেনে বসিনি। শালা! সুভাষকে গাল দিলাম আমাকে ভুল গাড়িতে  চাপিয়েছে বলে। এই ট্রেন তো যাচ্ছে চক্রধরপুরে। পকেটে টাটার টিকিট। এখন উপায়! গাড়ি থামার তো লক্ষণ নেই। যা থাকে কপালে, বলে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম সবার মতো। ভারতে ঘুমের গাড়িও দেখা হলো। কত বাধা। একসময় গাড়ি দাঁড়িয়ে  পড়লে অনেকের সাথে আমিও নেমে পড়লাম ব্যাগ নিয়ে। অন্ধকার স্টেশন। গাড়ি চলে গেলে স্টেশন খালি হয়ে গেল। আমি অফিসের দিকে এগোলাম। একটা হ্যারিকেন জ্বলছে। একজন লোক। বোধহয় স্টেশন মাস্টার। স্টেশনের নাম দেখলাম ‘মহালিমরুপ’। এই নামের স্টেশনের অস্তিত্ব প্রথম জানলাম। আমার বৃত্তান্ত জানিয়ে টাটার টিকিটটা দেখিয়ে বললাম, ‘টাটা জানা হ্যায় স্যরজি। টিকিট চাহিয়ে’তিনি বললেন, ‘সবেরে চার বজে টেরেন বা। অব শো যাওতআপকো উঠা দিব্‌’আমিও একটা টুলেবসে ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম আবার।

ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগতে চেয়ে দেখি স্টেশন মাস্টার বদল হয়েছে। পরিবর্ত মানুষটি একটা টিকিট বাড়িয়ে টাকা চাইছে। ‘টাটাকা টেরেন খড়ল বা’। উনি বললেন। টাকা  দিয়ে এসে ট্রেনে উঠে বসে দেখি কেউ জেগে নেই। সবাই ঘুমিয়ে। ঠিক ট্রেনে উঠলাম কিনা জানার উপায়ও নেই। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। এবার ট্রেন অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে।  দেখি ভোর হয়েছে। সবাই নেমে তড়িঘড়ি বাস ধরতে ছুটছে। জানা গেল এরা টিস্কোর কর্মচারী। রোজ এখানে নেমে কারখানার বাস ধরে। এটা ‘কান্ড্রা’ স্টেশন। টিস্কো এখান থেকে কুড়ি মাইল।

আমার তাড়াহুড়ো নেই। আড়মোড়া ভেঙ্গে মুখ ধুয়ে চা খেলাম প্রথমে। সিগারেটস্টেশনের পেছনের মাঠে পটি সারলাম জামপাতা দিয়ে। এখানে জামগাছ খুব। আর কাচ কারখানা। ঘুমের গাড়ি আর কি এমন পাবো?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন