ধারাবাহিক
উপন্যাস
তাহার নামটি
তাহার নামটি
(চার)
শেখর
স্যারের ক্লাস শুরু হয়েছে আধ ঘন্টা হলো। নীল সালোয়ার, যে কিনা আজ হলুদ স্কার্ট পরে
এসেছে,
সে অঞ্জনের দিকে কিছুতেই তাকাচ্ছে না। অথচ ক্লাস শুরুর আগে
তাকে ফেরত দিয়ে দেওয়া বায়োলজি নোটবুকের মধ্যে টি. পি. মাইতির বইয়ের ফটোকপির
পাতাগুলোও রয়ে গেছে, বেখেয়ালে। দেহের বিভিন্ন জায়গা থেকে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে
অঞ্জনের, এল হসপিটাল রুল মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে হলুদ স্কার্টের
সাথে চোখাচোখি
হয়ে যায় অঞ্জনের।
ইশারায় সে নোটবুকটা ফেরত চায়। কিছুক্ষণ পরে ‘এ
হাত ও হাত’ হয়ে যখন নোটবুক এসে পৌঁছয়, অঞ্জন খুব
সাবধানে শেখর স্যারকে আড়াল করে নোটবুকটা খোলে। অনেক খুঁজেও টি. পি. মাইতির হদিস
মেলে না। - তবে কি কোথাও পড়ে গেল পাতাগুলো? অঞ্জন চোখ বোলায় শতরঞ্চিতে, এস এন দে,
ক্যাল্ক্যুলেটার, পেন আর অঙ্কখাতা ছাড়া সেখানে কিছু নেই। - তাহলে! কেউ ঝেড়ে দেয়নি তো? খুব
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অঞ্জন ‘এ হাত ও হাত’দের দেখে। সবাই এপ্সাইলনের মতো মুখ
করে বসে আছে। - তবে গেল কোথায়?
পড়া
শেষ হতে অঞ্জন বেরিয়ে সাইকেল স্ট্যান্ডে এসে সাইকেলের তালা খুলতে থাকে-
“জুলপি,
তোর স্কুল আছে আজকে?”
অঞ্জন
দেখে হলুদ স্কার্ট দাঁড়িয়ে সাইকেলের সামনে।
“না,
কেন?”
“আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দে তাহলে”
“কোথায়
তোর বাড়ি?”
“চল
তো আগে, বলছি”
“তুই
বসবি সাইকেলে?”
“না,
তুই চালাবি আর আমি দৌড়ব তোর পিছন পিছন”
“ইয়ে,
আচ্ছা, দাঁড়া”
অঞ্জন
সাইকেলে উঠে বসলে হলুদ স্কার্ট চড়ে বসে পিছনে।
বাঁদিক,
ডানদিক। আরও বাঁদিক, ডানদিক পার করে, নীল মারুতি দাঁড়ানো যে বাড়ির সামনে, তার ঠিক
পরেরটায় এসে থামে অঞ্জনের সাইকেল।
“স্কুল
তো নেই, প্রথমবার এলি, ভিতরে আয়”
“ইয়ে,
মানে, কাকু কাকিমা...”
“অফিসে”
“ও”
“কিন্তু
দাদু আছে”
“আচ্ছা”
“কিছু
বলবে না, চাপ নেই, চলে আয়। সাইকেলটা সামনেই স্ট্যান্ড করে রাখ, তালা দিয়ে দে, কিছু
হবে না।”
হলুদ
স্কার্টের পিছন পিছন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসে অঞ্জন। বসার ঘরে ঢুকলে হলুদ স্কার্ট
বলে, “বোস, আমি আসছি একটু”
বিড়ালের
পেটের থেকেও নরম সোফায় বসে অঞ্জন সারা ঘরের এদিক ওদিক দেখে। হলুদ স্কার্টের নানা
বয়সের নানা ছবি দেওয়ালে টাঙানো। ছবিতে সে নানা সময় নানা রঙের পোশাক পরা।
কিছু
পরে হলুদ স্কার্ট ঘরে আসে, তার হাতে এক গ্লাস শরবত। এক চুমুকে গ্লাস খালি করে
অঞ্জন ফেরত দেয় তাকে। টি টেবিলে খালি গ্লাস রেখে হলুদ স্কার্ট বসে পড়ে অঞ্জনের
পাশে। অঞ্জন একটা দারুন গন্ধ পায় হলুদ স্কার্টের গা থেকে। গন্ধটা খারাপ না ভালো
বুঝতে পারে না। গন্ধটা, গন্ধটার মতোই।
“অঞ্জন,
তোর কী
মনে হয়?”
“কী ব্যাপারে?”
“এই
যে তোকে ডাকলাম আজকে, কেন?”
“তোকে
ড্রপ করতে হতো,
তাই...”
“আচ্ছা,
তাই?”
“তা
নয়?... তাহলে কেন ডাকলি?”
হলুদ
স্কার্ট হঠাৎ অঞ্জনের খুব কাছে চলে এসে স্থির দৃষ্টিতে অঞ্জনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অঞ্জন ভয় পেয়ে যায়, আর টের পায় হলুদ স্কার্ট এক হাতে কখন যেন অঞ্জনের পেনিস আঁকড়ে
ধরেছে। দুম করে ঘেমে যায় অঞ্জন,- “...এটা ঠিক না...”
“কী ঠিক না?”
“আমি
এরকম নই”
“এরকম
নস?”
“না”
“তাহলে
টি. পি. মাইতি পাঠালি যে নোটবুকে?” হলুদ স্কার্ট অঞ্জনকে ছেড়ে দেয়।
বড়
করে শ্বাস ছাড়ে অঞ্জন, “ও... ওটা ভুল করে, চলে গেছে, সরি”
“সরি!
ইয়ার্কি হচ্ছে?”
“না,
মানে...”
“বেরিয়ে
যা এক্ষুনি, না হলে দাদুকে ডেকে আনব!”
অঞ্জন
ছিটকে উঠে পড়ে সোফা থেকে, সিঁড়ির দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। ফিরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তোর নামটা যেন কি...?”
“বাঞ্চোৎ!...
ভাগ এখান থেকে!” চিৎকার করে ওঠে হলুদ স্কার্ট।
অঞ্জন
পালাতে থাকে।
কাবেরী
ঘরে ঢুকে দেখেন রঞ্জনা শান্ত হয়ে খাটে বসে আছে। তার হাতে একটা বাবল র্যাপ,
অন্যদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে সশব্দে বাবল ফাটিয়ে চলেছে এক এক করে।
“মুখে
একটু ক্রিম লাগাতে তো পারিস! যা দশা!”
“যাও
তো!”
একটু
কোমল হয়ে কাবেরী বলেন, “তুই যে এত শিগগির দেকা করতে রাজী হ’বি, আমি তো ভাবতেও
পারিনি, দাদাকে বলেচিলাম, দেকবেন আবার পাঁচিলের গায়ে কিচু লিকে না বসে, যা
খান্ডান্নির মতো
রাগ!”
“বিরক্ত
কোরো না” পট্ পট্ আওয়াজ করে রঞ্জনা বাবল ফাটিয়ে চলে।
“কী এমন রাজকায্যটা তুই করচিস!
ওই তো ফট ফট করে ওগুনো ফাটিয়ে চলেচিস, তায়
আবার বিরক্ত হবার কি আচে!”
“তুমি
বুঝবে না,”
বলে রঞ্জনা বিছানা থেকে একটা চিঠি মুখের সামনে তুলে ধরে, প্রেরকের নামের জায়গায়
লেখা, ইন্দিরা চৌধুরী।
“হ্যাঁ,
আমি তো কিচুই বুজি না,
সব তোরাই বুজে উদ্দার করেচিস”, কাবেরী বেরিয়ে আসতে আসতে শোনেন, “আর শোনো, ভাইকে বোলো ওকে
আর ওই জুলপিকে জ্যে দেখা করতে বলেছে...”
ছাদে
পিমকে কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে রাজীব।
পাশের বাড়ির ছেলেটাকে কেন এরা জুলপি বলে ডাকে, কাবেরী জানেন না। ছাদে এসে দেখেন, সেও
দাঁড়িয়ে তাদের ছাদে। দুই ছাদে কথোপকথন
চলছিল, তাকে দেখে তারা থেমে যায়।
“এই
যে, তোমাদের নাকি দাদা দেকা করতে বলেচেন,”
রাজীব
একটু অবাক হয়, “কেন?”
“সে
আমি বলতে পারব না, জিজি বলল জানিয়ে দিতে, জানিয়ে দিলাম”,
রাজীব
বলে, “ওকেও দেখা করতে বলেছে?” অঞ্জন শঙ্কিত হয়ে পড়ে।
“তাই
তো বোললো”, নিজের কাজে চলে যান কাবেরী।
কাবেরী
চলে গেলে অঞ্জন বলে, “জ্যে মানে তোর জ্যেঠু? রাজীব, উনি জানতে পেরে যাননি তো!”
“কী জানবে?”
“টি.
পি. মাইতি?”
“ধুর,
পাগল নাকি!
দুলালদা জীবনে চুপকি দেবে না, তুই চাপ খাস না তো!”
“তাহলে
আমাকেও কেন দেখা করতে বলেছেন?”
“আমি
কী
জানি, বিকেলে পড়ার পর দেখা করে নেবো”
“আচ্ছা”
“আর
সিন বল, শুনলাম খুব নাকি ড্রপ করে দেওয়া হচ্চে!”
“ধুর,
ওসব আমার দ্বারা হবে না”
“কীসব?” ভ্রূ নাচিয়ে জিজ্ঞেস
করে রাজীব।
“ছাড়
না, এই টি. পি. মাইতিটা জোগাড় করলি কোত্থেকে?”
“জোগাড়
করিনি, ওটা বাড়িতেই ছিল”
“বাড়িতে
ছিল? তোদের বাড়িতে আবার এসব কে পড়ে?”
“কে
জানে, ছোটবেলায় ওটা পেয়েছিলাম দিদি আর আমি। বোধহয় বাবা জোগাড় করেছিল। বাবার পরে ওটা পড়ে থাকত
স্টোররুমে।
তারপর একদিন দেখলাম দিদি খবরের কাগজে মলাট দিয়ে নিজের
বইয়ের আলমারিতে রেখে দিয়েছে।”
“সে
কী
রে! তোর দিদি এটা পড়ে!”
“কে
জানে, ও মাল পুরো তারকাটা, আমি ওকে ঘাঁটাই না, কখন কী করে বসে! দেখেছিস তো, তুই
পেচ্ছাপ করে চলে যাওয়ার পরে পাঁচিলের গায়ে কি লিখে দিয়েছে!”
“হ্যাঁ,
দেখেছি”
“হুম,
তুই চাপ নিস না, কোনো কাজের কথা হবে, তাই জ্যে ডেকে পাঠিয়েছে”, রাজীব পিমের পিঠে
মুখ গুঁজে দেয়।
“এই,
আমায় একটু দিবি ওকে?”
“পিমকে?
এই নে।”
এক
ছাদ থেকে অন্য ছাদে চলে যায় পিম।
অঞ্জন তাকিয়ে দেখে পিমের চোখদুটো লাল, ঠিক ওই হলুদ স্কার্টের
লাল টপের মতো। “রাজীব, মেয়েটার নাম কী রে?”
“কোন্
মেয়ে?”
“ওই
যাকে ড্রপ করেছি”
“যাসশালা, নামই জানিস না! মাল, এটা
বলিস না যে তুই সারা রাস্তা কথা বলিসনি ওর
সাথে...” সন্দেহের চোখে তাকায় রাজীব।
“সত্যিই
তেমন কথা হয়নি”
“কী রে তুই, পাগল না তুলসীগাছ!”
সন্ধ্যা
হতে মশার কামড়ে ঘুম ভেঙে যায় রঞ্জনার। হাঁটু চুলকাতে চুলকাতে সে উঠে বসে। হাত বাড়িয়ে
জ্বালিয়ে দেয় নাইট ল্যাম্প। কী
মনে হতে টলতে টলতে উঠে আসে আলমারির দিকে। হাতড়িয়ে বের করে আনে টি.
পি. মাইতি।
আবার টলতে টলতে খাটে এসে বসে।
একবার দরজার দিকে ঘুমচোখে তাকায়।
ভেজিয়ে রাখা দরজা দিয়ে পাশের ঘর থেকে অন্ধকার
ঢুকে আসছে এঘরে। পাশের ঘরে চিরুদার আসার কথা। অন্ধকার, মানে এখনও কেউ আসেনি পড়তে।
পাতা
উলটে এক জায়গায়
এসে রঞ্জনা বইটা মুখের সামনে তুলে ধরে-
“ত্রিভুজের
উপরিভাগে মৃদু ও পুনঃ পুনঃ আঘাত করা হইলে স্পৃহা জাগ্রত হয়, অবিলম্বে স্পৃহা সমগ্র
দেহভাগকে উদ্দোলিত করে। নারী শরীরকে উদ্দোলিত করিবার ইহা একটি পন্থা, এবং ইহা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। নিম্নের
চিত্রে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা
করা হইল,
কী
উপায়ে এই উদ্দোলন আয়ত্ত করা সম্ভব।” নিচের ছবিগুলো দেখার জন্য রঞ্জনা বইটা আরো কাছে নিয়ে
আসে।
তার এক হাত ঢুকে আসে জামার তলায়। কিছুক্ষণ পর ভিজতে থাকে।
সিঁড়ি
দিয়ে উঠে আসছিল অঞ্জন।
আজ কেউ আসেনি এখনও। রাজীবদের ঘর অন্ধকার। পাশের ঘরটা কখনো খোলা থাকতে দেখেনি
অঞ্জন। আজ দেখল, সেখান থেকে লাল নাইট ল্যাম্পের আলো এসে পড়ছে বসার ঘরে। বসার ঘরের
স্যুইচ বোর্ডের কাছে এগোতে অঞ্জন শুনতে পায়, কে যেন যন্ত্রণায় ছটফট
করছে। আন্দাজে পাশের ঘরের দরজায় এসে সে থমকে যায়,
রাজীবের দিদি!
লাল
আলোয় একটা চকচকে সাপ, ভেজা বিছানায় ছটফট করছে, সাপের এক হাতে সাপের মণিটা চেপে ধরা।
অঞ্জনের
সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসে।
রাজীবদের
বাথরুমটা যেন কোনদিকে...
(ক্রমশ)
বাবুরাম সাপুড়ে! কোথা যাস বাপুরে?
উত্তরমুছুনফাটিয়েছিস...
- সাঁঝবাতি
Hahahaha 😂
উত্তরমুছুন