কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

রোজনামচা


সোমবার, বেলা সাড়ে বারোটা

যেই একটু বৃষ্টিটা ধরেছে কাকগুলো অমনি ক্যা ক্যা করতে লেগেছেশালিখ চড়াই কাদাখোঁচা বুলবুলিগুলোও ক্যাচর ম্যাচর করে গলা ভাঙছে। পায়রাগুলো অবশ্য উড়ছে না। কার্ণিশেই বসেগাছপালাগুলো ডালপালা নেড়ে ঝেড়ে জলটলগুলো মুছে নিচ্ছে
সবই পরবর্তী বর্ষণের আগাম প্রস্তুতি
আকাশের ওদিকটা একটু ফিকে নীল। রাস্তায় গাড়ি চলার শব্দ অবশ্য কিছুমাত্র থেমে নেইবাদলা বাতাসটাও একটু গতি কমিয়েছে। মিস্ত্রীরা কাজ সাময়িক বন্ধ রেখে দুপুরের আহারে ব্যস্তউচ্ছে লতাটা কাদায় লটাপটি খাচ্ছেব্যাঙ ডাকছে। শুনেছি নদীতে জল বেড়েছে খুব। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। কারণ আমার নীল রঙের শাড়ি মাত্র একটাই। বহুবার সেটা পরেছি এবং দীর্ঘ ব্যবহারে শাড়ি ও আমি যুগবৎ ক্লান্ত। নূপুর পরলে পা চুলকায়। অষ্টসখী, কদম্ব বৃক্ষ, মত্ত দাদুরী ছায়াবাজির মতো ওয়ালমার্টের বিজ্ঞাপনেঅতঃ কিম্?
বরং কতগুলো যা তা বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সাথে যা হোক কিছু তর্কে ব্যস্ত থাকলেই দিনটা সার্থক হয়। তবে এখানেও প্রশ্ন। দিন পাওয়া যাবে। বিষয়েরও অভাব হবে না
কিন্তু বন্ধু?

মঙ্গলবার, বেলা এগারোটা পঁচিশ

টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছেতারই মধ্যে ছেলেরা মাঠে হৈ হৈ করে ফুটবল খেলছেপুরনো বইখাতা বিক্রীঅলা ছপছপ করে হেঁটে চলে গেলঅনেকদূর থেকে ভেসে আসছে দূরপাল্লার কোনো ট্রেনের শব্দ। আমি অপেক্ষায় বসে। হাতে খাতা কলম, কিন্তু তিনি কখন আসবেন সে কিছু ঠিক নেই এলেও যে কথা খুব জমে উঠবে তাও নয়। তবুও অপেক্ষার একটা মাদকতা আছেবিশেষত এমন ভেজা দিন, গাছের ডালে পেয়ারাগুলো পচে কালো, ডুমো নীলমাছি উড়ছে সেখানেঘরের কোণে পিঁপড়েরা মাটি জড়ো করে প্রায় পাহাড় করে ফেলেছে...
নাঃ তেনার আসবার কোনো লক্ষণ দেখছি না
বদলে মুহূর্তকালের মধ্যে ব্রোকার এসে ভাড়ার রসিদ বার করল

বুধবার, বিকেল পাঁচটা পাঁচ

পাখিগুলো এমন কিচিরমিচির করে চারদিক ভরিয়ে তুলেছে যে মনে হচ্ছে এই বুঝি সূর্য উঠল। অথচ কী ভীষণ মেঘলা দিন! সন্ধ্যে নামল বলেবৃষ্টির জল কোনো জায়গা শুকনো রাখেনি। বিছানায় জানালার পাশে বসে আছি। ঠান্ডা লাগছে। কিছু আগে মগরীব্ হয়ে গেছে। তার সুর শুনেছি
মাঝে মাঝে ভাবি, এক একটা মানুষ সারাজীবনই কেবল এইরকম ভেজাদিনের মেঘ, পাখির ডাক, বৃষ্টির শব্দ শুনেও কাটিয়ে দিতে পারে। তাতে লাভ তার নিজেরইআর যাবতীয় ক্ষতি বোধহয় প্রকান্ড এই মনুষ্য সমাজের! 

বৃহস্পতিবার, বেলা বারোটা পনেরো

হাওয়া বৃষ্টি এবং মেঘ তিনটেই তিনদিকে উড়ছেহা হা, হি হি, হু হুঘন সবুজ ও পাটকিল রঙা বর্ষা কোকিল পেঁপেফুল থেকে পোঁকা তুলে খাচ্ছেপুরনো চেয়ার খোলা খাতা এবং নিবিষ্ট মন নিয়ে আয়োজন সম্পূর্ণ করে আমি বসে এখন বেশ বেলা। তবু মন ভাবছে সন্ধ্যেবেলার কথা। টিউবের আলো, ঘরের মেঝেয় ছড়ানো বইপত্র, বাইরে অন্ধকার, ঝিপঝিপিয়ে বৃষ্টি... প্রকৃতপক্ষে ঠিক এইরকম সন্ধ্যেয় এইরকম চেহারা নিয়ে সময় যখন উপস্থিত হবে, মন ভাববে সকালবেলা, মেঘলাদিন, বাইরে অফিসে হাটে বাজারে যাবার তাড়া, দুপুরের রান্নার তদ্বির... একটা ব্যস্ত দিনের পালস্ রেটএইরকম একটা উদ্বিগ্ন দিনে ব্যাঙ্কের পাশবই হারিয়ে ফেলা, ভোটার কার্ড খুঁজে না পাওয়া। প্যাকেটের দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়া, বাবির ভেজা জামাকাপড় এবং তা নিয়ে বাবির অসংখ্য অভিযোগ...

এগুলো কোনো ঘটনা নয়। একটা মাত্র সকাল, একটা মাত্র সন্ধ্যে। অসংখ্য সকাল সন্ধ্যের নিচে গভীর ঘুমে চাপা পড়ে আছিযেইমাত্র ঘটনাগুলো একে একে ঘটে শেষ হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে ঘুম যেই ভাঙবে, তখনই প্রকৃতপক্ষে একটা সকাল হবে
যে সন্ধ্যেয় মন ঐরকম সকালের ছবি ভাবতে পারে, সেই সন্ধ্যের চেহারাটি ঠিক কেমন হবে, তা এই সকালে মেঘলায় বসে বসে ভাবছি

শুক্রবার, বেলা বারোটা কুড়ি

ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে

শনিবার, বেলা এগারোটা চল্লিশ

কাল ব যখন দোকানে ছিল স সেখানে গিয়েছিল, ব কে দেখে বলল, সে কী   বাড়ি যাওনি কেন? অ কিন্তু বলছিল, তুমি আজ আসবে। ব কিছু না বলে চুপচাপ চলে এলোট এটা জানতো যে ব আজ আসবে না, দেরী না করেই ট ম কে জলদি এস এম এস পাঠিয়ে হ কে বলল, আমি এই ব্যাপারটা জানি। গ বলল, কাল ব এসে ট কে বুঝিয়ে দেবে, তাহলেই সব মিটে যাবে...

অজস্র মালতীলতা, জলে ভিজে প্রবল গন্ধ ছড়াচ্ছে, গাঢ় সবুজ লতানে পাতায় বসে হলদে মৌমাছি, এরই মধ্যে কমলাডাঙার কাকীমা কানের কাছে বসে একা একাই বকবক করে যাচ্ছে
উফ্!

রবিবার, বেলা দুটো

কী রোদ!



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন