কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

অশোক তাঁতী

গোরা 


-   গোরা তুই চা খাবি তো?
-   আমি চা খাই না। তেতো লাগে।
মেয়েটা তার দিকে চায়ের ভাঁড় এগিয়ে দিয়ে বলে, তুই ছোট খা। দুধ চা তেতো হয় না।
-   সুচরিতা, ওকে চা খাওয়াতে চাচ্ছিস্? নেশাতে সারারাত হস্টেলের বারান্দায় পায়চারি করবে।
-   সেইজন্যে তো ছোট দিলাম। চা তো আর রাম নয়। অল্প অল্প চুমুক দিয়ে খা। ঠাণ্ডা লেগেছে, ভালো লাগবে।
-   আমার একটা বড়। বিকেলবেলা চা না খেলে আমার মাথা ধরে। 
গোরা লাজুক হাসল দেখে সুচরিতা বলল, তুই কী রে! আমি হলে এক ঘুষিতে বিনয়ের নাক ফাটিয়ে দিতাম।
-   গোরাচাঁদ মাজি আমার নাক ফাটাবে? সেদিনই ওর নাম বদলে গৌরমোহন করে দেব।
সুচরিতা জিন্সের পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে পোরে। - চায়ের সাথে সিগারেট না খেলে একদম জমে না।
অন্য ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, তুই খাবি, বিনয়?
বিনয় ঘাড় নাড়ল, আমার ভালো লাগে না।
-   তুই অকারণে গোরার পেছনে লাগিস কেন?
ঠিক তখনি দোকানের ভিড় থেকে কেউ একজন বলল, হিঁদুর ঘরের মেয়ে তো মেমসাহেব নয়।
-   ছেঁড়া জিন্সে জুলিয়া রবার্টস সেজে বসে আছে
-   কিছু বলবেন না। বললে মুখেমুখে বই রচনা করে দেবে।
-   এরা আবার নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবী করে।
-   শিক্ষিত মানে তো আর উন্নত নয়।
-   নৌকোর খোল ফুটো, মাস্তুলে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছে।
-   এই জন্যেই পথেঘাটে আজকাল আজেবাজে ঘটনা ঘটছে।
-   বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের দোষ কি? মুখের সামনে এমন জিন্স টিশার্ট পরে ঘুরে  বেরালে যে কেউ ছোটখাটো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে।
তারা কেউ শুনতে পায়নি এমনি করে গোরাকে চা খাওয়াতে ব্যাস্ত।
-   উফ্, জিভ পুড়ে গেলচায়ে মুখ দিতেই গোরা ছিটকে ওঠে। চল্‌কে ভাঁড় থেকে চা তার হাতের ওপর পড়ে।  
সুচরিতা পকেট থেকে রুমাল বের করে গোরার হাত মুছিয়ে দেয়। - তুই তো আচ্ছা বোকা। চাটা একটু ঠাণ্ডা হতে দে!
সে নিজের ভাঁড়ে ফুঁ দিয়ে ঠাণ্ডা করে। - নে, এটা খা। আমাকে আর একটা বড় দিন তো দাদা!  
তাদের চা শেষ হয়ে আসছে, কিন্তু গোরা ভাঁড়টা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে দেখে বিনয় চেঁচিয়ে ওঠে, সুচরিতা মুখ ঠেকিয়েছে বলে খাওয়া যাবে না? ঠোঁট কখনো এঁটো হয়?
দোকানের ভেতর থেকে নানা মন্তব্য ভেসে আসে  
-   এরা কেউ সিঁড়ির ধাপগুলোকে মানে না। নিচে থেকে ওপরে উঠতে হয় নি।  ছাদে জন্মে নিজেকে সবার চেয়ে বড় মনে করে।
-   ওঝা ডেকে আচ্ছা করে আগা পাশতালা ঝাড়াতে হয়!  
-   এগুলোকে আমার ট্যাঁস বেজন্মা বলে মনে হয়। আজকাল এমনি এমনি এমন ঘটনা ঘটছে?
বিনয় নিচু স্বরে সুচরিতার কাঁধ শক্ত করে ধরে বলল – চল্, এখানে দাঁড়িয়ে কাজ নেই।
হাতে তখনো ভাঁড়টা ধরা ছিল। সেটাকে ছুঁড়ে ফেলে, কেউ কিছু বোঝার আগে গোরা পিছিয়ে যায়। কথাটা যে বলছিল তার মুখে সজোরে ঘুষি চালিয়ে ফিরে এসে শান্ত হয়ে বলে, চল্।   

    

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন