কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

ধারাবাহিক উপন্যাস   




                                                 
যে চিঠি অতিশূন্যতাকে পড়তে

 (৭)
   
তো বাঁচ। কে বারণ করেছে? কথাটা শোনার পর এটাই আসে ভেতরে। যখন বিতস্তা বলল, আমি মুহূর্তে বাঁচি!
একটা হা হা হাসি আসা উচিত ছিল। মুহূর্তে বাঁচ? মুহূর্তকে উপলব্ধি করতে করতেই মুহূর্ত চলে যায়। তাহলে মুহূর্তে বাঁচছ বোঝ কী করে? চলে গেলে বোঝ? সে তো অতীতে বাঁচা! বাঁচছ এবং ভাবছ? তার মানে কিকী বলছ তা তুমি নিজেই জান না। কখনো বুঝে বুঝে নিশ্বাস নেবার চেষ্টা করে দেখেছ? দম বন্ধ হয়ে যাবে।  বাঁচার মানে বানিয়ে নিয়েই বাঁচে লোক। মুহূর্ত তার মধ্যে দিয়ে বয়ে যায়। কখনো  সে মানে মেলে, কখনো মেলে না। মিললে অনায়াসে ভবিষ্যৎ-এর দিকে তাকানো যায়। না মিললে অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখতে হয় কেন মিলল না! কিন্তু বর্তমান, যা মুহূর্ত, যা পলায়নপর, তাকে ধরা যাবে না। তুমিও তাকে ধরতে পারবে না।  পারনি। শুধু যা করছ তার অজুহাত হিসেবে মুহূর্তে বাঁচাকে খাড়া করছ। যদি বেঁচেই  থাক তাহলে তোমার চোখে এত অসন্তোষ কিসেরতোমার ভেতরে এত অ্যাসিড কেন তাহলে? নিজে নিজেকে অতিক্রম করতে পারছ না। যত পারছ না তত জট পাকাচ্ছ। যত জট পাকাচ্ছ তত তাকে খোলার সম্ভাবনা তোমার কমছে। শরীরে অলস, মস্তিষ্কে অলস। তুমি কী জট ছাড়াবে? তার উপর আছে তোমার লোভ যত পাও তত  পেতে চাও। দেবার হাতে কিছু নেই তোমার। তাই কিছুই ছাড়তে পার না। সব চাই  তোমার। সব চাই। এত কনট্রাডিকশন সামলাবে কী করে? তাই মুহূর্তে বাঁচার এই অজুহাত! হাসি আসা উচিত ছিল। কিন্তু ক্লান্তি আসে। তোমার আঙুলে একটা স্বপ্নের আঙটি পরাতে চেয়েছিলাম, তাই আমার আঙুলে বিষ উঠে আসে। সে বিষ আমার গলা জড়িয়ে বেঁচে থাকে। তাই ক্লান্তি আসে। তাই এই কমেডির দৃশ্যকে আমার ট্র্যাজিক মনে হয়। যেন সেই জোকারের সার্কাসের এরিনা পেরোনোর পর, অবসন্নভাবে একটা জলের পিপের উপর পা দোলানো।
মুহূর্ত আগে যে ছেলেটি রাত পাহারায় বদলি বসল মুহূর্ত পরেই তাকে সেলাই করে  দিল অটোমেটিকের গুলি। ফ্লেয়ার উঠেছিল। রাতের আকাশ ঝলমল করেছিল। জঙ্গলের মধ্যে এখানে গাছগুলো একটু ঘন। টানা চলে গিয়েছে। ফ্লেয়ারের আলোয় দেখা যাচ্ছে বেশ কটা ছায়ামূর্তি। দ্রুত জায়গা বদল করছে। বাহিনীর কমান্ডার লাফিয়ে উঠল।
- চেঞ্জ! পজিশন চেঞ্জ!
ইংরেজি বলছে কুর্মীর ছেলে। মাহাতর ছেলে, মুন্ডার মেয়ে শুনছে। ওরা শিখেছে ওদের  মিলিটারি ট্রেনিং-এর সময়। বস্তারে ট্রেনিং নিয়ে এসেছে ওরা। মেদিনীপুর থেকে বস্তার গিয়েছে হেঁটে। রাতেভিতে জঙ্গলের পর জঙ্গল আর পাহাড় নদী পেরিয়ে।
যার গুলি লাগল তাকে টেনে নিয়ে সরে যাচ্ছে দুটি মেয়ে। ফ্লেয়ার আবার জ্বলবে। তার মধ্যেই সব। আমার খুচরো সম্বল বলতে মোবাইল, পিঠের রুকস্যাক, পকেটের সিগারেট-লাইটার। সব নিয়েই মাটিতে ব্যাগে মাথা দিয়ে শুয়েছিলাম। মাথার উপরে জ্বলজ্বলে আকাশ দেখতে বেশ লাগছিল। তারায় তারায় ভরে আছে। হাতের কাছেই নেমে এসেছে তারাগুলো। এমন তারার মালায় ভরা আকাশ বুকের মধ্যে গেঁথে যায়। তারাগুলো ফেড-আউট হয়ে ডেকে ওঠে অন্ধকার। অন্ধকার খেয়ে জ্বলে উঠছিল সিটি সেন্টারের আলোগুলো। বিতস্তা তার আঙুলের দিকে চেয়ে বলছিল মুহূর্তের কথা।  কিছুক্ষণ আগে যখন ওর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন আমাকে দেখেও যেন দেখেনি ভাব করে চলে গেল। সামনের দোকান থেকে সিগারেট কিনল। আশ্চর্য হয়েছিলাম প্রথমে। এখানে, অফিসে আমাকে না চেনার কী আছে? ফেরার সময় চাপা গলায় আমাকে বলে গেল এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াতে।
কেন? আমার মাথাটা ধক্‌ করে জ্বলে উঠল। কত লুকোতে হবে? কেন লুকোতে হবে? বিতস্তাকে আমি তো লুকোচ্ছি না? তাহলে বারেবারে আমাকে লুকোচ্ছে কেন? বাড়িতে লুকোয় তার একরকম মানে আছে। সেখানে ওর আত্মীয়রা আমাকে ভয় পায়, ঘৃণা করে। আমি বিতস্তাকে ওদের থেকে কেড়ে নিচ্ছি। এখানে কেন? এই কেনটার মানে ভাবতে ভাবতে হাঁটতে শুরু করলাম। দেখলাম বিতস্তা এগিয়ে গেল ওর অফিসের দুই কলিগের কাছে। দুজনকেই আমি চিনি। ওদের মধ্যে সেই ছেলেটাও আছে। সেই ছেলেটা, যাকে সকালে বিতস্তার বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছিলাম। তার আগের সারা রাত ছিল বিতস্তার বাড়ি।
বন্ধু? যার সঙ্গে শরীর শরীর খেলা যায়! যে কাজ করে দেয় সময়-অসময়ে! যাকে বলা চলে যে এই অব্দিই আমাদের খেলা! এর বেশি চেও না। কোনো ঘর না,  কোনো সম্পর্ক না। এমন নানা বন্ধুকে ছিপের ডগায় ঘুরিয়ে চলেছে বিতস্তা। প্রত্যেকের প্রয়োজন নির্দিষ্ট তার কাছে। সেই অনুযায়ী গন্ডী কাটা আছে। এবং বিতস্তার স্বভাব হলো এই খেলাটা লুকিয়ে লুকিয়ে চলা। তাই আমাকে লুকোতে হচ্ছে।  এই কলিগ ছেলেটি সাম্প্রতিক কালে বিতস্তার প্রয়োজন মেটাচ্ছে। শরীর এবং অন্য। তাই বিতস্তা মুহূর্তে বাঁচা দিয়ে আমাকে বোঝাতে চাইছে আমার গন্ডীটা কোথায়!  অর্থাৎ আমি যেন প্রশ্ন না করি। শুধু বিতস্তাই কথা বলবে এবং বাকিরা শুনবে। সেই বলা-শোনার ব্যাত্যয় হলেই বিতস্তা বলবে, বেশ্যা নাকি?
বিতস্তার ঠোঁটটা মুহূর্তে কুঁকড়ে গেল ভা্লো করে দেখলাম বিতস্তার মুখটা। ঘৃণার   একটা হলদে রঙ লেগে আছে চ্যাটচ্যাটে। ঘটনাটা আদ্ধেক শুনেই বেরিয়ে এলো উত্তেজনাটা।
সেদিন অনেকটা মদ মাথায় ঘুরছিল। গান-বাজনার আড্ডা চলছিল। বিতস্তা কলকাতায় ছিল না। মাথাটা ভারী। সুব্রতর নিচের ঘর থেকে উঠে এসে ছাদের  আলসেতে মাথা দিয়ে শুয়েছিলাম। মেঘগুলোর আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে চোখটা টেনে এসেছে। নিচের ঘরের ওই বিরক্তিকর কোলাহল কানে আসছিল না। ঘুমের  আমেজ এলোহঠাৎ মনে হলো কেউ যেন মাথার চুলগুলো নিয়ে খেলছে। আস্তে আস্তে  একটা ঠোঁট নেমে এলো ঠোঁটের মধ্যে। স্বপ্ন নাকি? না। স্বপ্ন না। ঝটকায় উঠে  বসলাম। উঠতেই শ্রাবণী সরে গেল।
এই অব্দি শুনেই বিতস্তার ঘৃণা বেরিয়ে এলোহাসি পেল আমার। আগের মঙ্গলবার  বেড়াতে যাবার কথা ছিল আমাদের। ট্যাক্সিতে অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে বিতস্তা মেসেজ করছিল কোথায় যাওয়া যায় ইত্যাদি নিয়ে হঠাৎ লেখা বন্ধ হয়ে গেল।  আমি ওর বাড়ির ধারে কাছেই তখন। মিটিং শেষ হয়ে গিয়েছে আমার। ভাবলাম সারপ্রাইজ দিই। ওর বাড়ির কাছে গিয়ে ওকে ফোন করব। আমার যেতে যেতে ও বাড়ি পৌঁছে যাবে।
বাড়ির গেটের কাছে দেখলাম ভেতরের দরজাটা খোলা। ভেতরে ও আর ওর সেই অফিস কলিগ হিতেশ। দেখা যাচ্ছে সামনে মদের বোতল আর চাট। এরপরে গাঁজা। তারপরে বিছানা। একবারও আমাকে বলেনি যে আজ হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি কেন ফিরছে অফিস থেকে। বিতস্তার যে কাকা লোকাল গার্জিয়ান ওর এবং পাশের বাড়িতে থাকেন তিনি নিশ্চয়ই অফিস ট্যুরে। তাই হিতেশকে ডেকে নিয়েছে।
গত শীতেই ওকে একইভাবে দেখেছিলাম বিক্রমের সঙ্গে। ওর অভিন্নহৃদয় বন্ধু বলে যার পরিচয় দিয়ে থাকে বিতস্তা, তার সঙ্গে শুয়ে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছিল। প্রেগন্যান্ট নাকি তা নিয়ে রসিকতা করেছিল বান্ধবীর সঙ্গে যা আমি শুনে ফেলেছিলাম। সেই বিতস্তা অন্যকে বলছে বেশ্যা! এবং এই বিতস্তাই যখন প্রথম  আমার কাছে এসেছিল তখন বলেছিল, বরের সঙ্গে থাকতে পারেনি ওর যৌনতার  সমস্যা আছে বলে। যৌনশীতলতা আছে ওর।
ধীরে ধীরে বুঝেছিলাম সেটাও মিথ্যে আসলে। এটা ওর কৌশল, কতটা ওর প্রতি পুরুষটি নিষ্ঠ হবে, তা বোঝার। এটা শুনেও যদি ওকে চায় তাহলে ওর পক্ষে তাকে  নিয়ে খেলতে সুবিধে হবে ইচ্ছে মতোন। কেউ সব দিয়ে ফেললে তাকে দিয়ে সব  করানো যায়; এটা ওর দর্শন, রণনীতি ও রণকৌশল।
- চল, ওঠা যাক!
বিতস্তার মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আর বেশিদিন তাকানো যাবে না।  মুখোশটা একেবারেই খুলে গিয়েছে। কুৎসিত মুখটা দেখা যাচ্ছে। এবারে শুধু বিসর্জনের পালা। শ্রাবণীর ঘটনায় ভেতরে একটা ক্লেদ জমেছিল আমার। মনে হয়েছিল আমি কী তবে ইন্ধন দিয়েছিলাম কিছু! এখন মনে হচ্ছে এ সব কিছুই লাগে না। শুধু জান্তব কিছু প্রবৃত্তিই যথেষ্ট। যা বিতস্তার ভেতরে থিকথিক করছে। ওকে ভালোবেসেছিলাম। ঘৃণাই তার পরিণতি।
বিতস্তা চেয়েছে আমি যেন প্রশ্ন না করি। রাষ্ট্র চেয়েছে আমি যেন প্রশ্ন না করি। আমি প্রশ্ন করতে গেছিলাম সেই জঙ্গলে। সকালে বাস থেকে নেমে যে চায়ের দোকান বলা হয়েছিল, সেই চায়ের দোকানে যাই। সেখান থেকে সাইকেলে কিছুটা। তারপরে  বাইকে। বাইক থেকে হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের গভীরে। জানতে চেয়েছিলাম,  ঘাঁটি এলাকা গড়ার পরে কী হবে! মুক্তাঞ্চল এ ভাবে হয়ে যাবে? রাষ্ট্রর শক্তিকে একটু বেশি বেশিই অবজ্ঞা করা হচ্ছে নাকি? জানতে চেয়েছিলাম, মূলবাসীদের ঘরে ঘরে পুলিশ ঢুকল সবাই উত্তেজিত হলোআপনারা বিষ্ফোরণ ঘটালেন কেন? এক  মুখ্যমন্ত্রীকে মেরে কী করতে চেয়েছিলেন? এক মুখ্যমন্ত্রী গেলে আর এক মুখ্যমন্ত্রী আসবে। আপনারা কি নিহিলিস্ট?
কিছুদিন আগে জানতে চেয়েছিলাম গলতোড়ার ওসি-র কাছে, আধা সামরিক বাহিনী যে আপনাদের চাকর-বাকর ভাবে, কেমন লাগে? ওসি পারলে তখনই গারদে  পোরেন। অথচ আমি শুনেছি আধাসামরিক বাহিনীর কমান্ডার বলছে, এই পেটমোটা পুলিশ ওই উর্দি পরে সাজানো সং। কাজে আসে না। চারটে লোক মিলে তেড়ে গেলেই শালারা বাপ বাপ বলে দৌড়য়। একদিকে প্যান্ট খুলে যায়, অন্যদিকে বন্দুক কেলিয়ে যায় কাঁধ থেকে। এরাই শালা নষ্টের গোড়া। রাতবিরেতে টাকা খাবে আর লোকের ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র দল করে ভেঙে আসবে। মেয়েছেলের মাইতে হাত দেবে। পাছায় হাত দেবে। তারপরে শালা পাল্টা কেলানি এলেই তখন থানার গেট বন্ধ করে বসে  থাকবে। খালি ওপরে ফোন করে কাঁদবে ফোর্সের জন্যভেরুয়ার দল। আধাসামরিক বাহিনীর কমান্ডার মনে করেন আঞ্চলিক পুলিশ তাঁদের বাহিনীর জুতো পরিষ্কার করার কাজ শুধু করতে পারে। খুব বেশি হলে জামাকাপড় কাচার কাজ। ওসি বাপবাপান্ত  করে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রায়। সঙ্গে সাংবাদিকের পরিচয় না থাকলে পারলে ওখানে গুলিই করে দিত। উত্তেজনায় লোকটার ভুঁড়িটা সুমো রেসলারদের মতো নাচছিল।
বিদ্রোহী বাহিনীর কমান্ডার বলল, এ প্রশ্নের উত্তর দেবে পার্টির রাজনৈতিক কমিশার।  পার্টির অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাত্ত্বিক নেতা। নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি  বললেন, জনতার ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে হয়। বিপ্লবের স্বার্থেজনতার সাহস বাড়ে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, এ ভাবে বনে জঙ্গলে ঘাঁটি এলাকা গড়ে গড়ে কত শ বছর  লাগবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে? জনতার ইচ্ছেকে গুঁড়িয়ে দিতে নেমেছে আধা সামরিক। সামরিক বাহিনীকেও নামানো হবে আধা সামরিকের ছদ্মবেশে। আজ পুলিশ ঘর ভেঙেছে, বদমাশি করেছে, তার ফলে আপনারা বিষ্ফোরণ ঘটাচ্ছেন মন্ত্রী মারতে! কাল  গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে দরকারে। কোলের থেকে শিশু তুলে নিয়ে আগুনে ছুঁড়ে দেবে। সন্ত্রাসকে রাত্রের ঘুমের মধ্যেও ঢুকিয়ে দেবে। কিনে নেবে একাংশকে টাকায় আর মদে। সোর্স এবং ইনফর্মার বানাচ্ছে টাকা ছড়িয়ে। মিলিটারি অফিসাররা আসবে অপারেশনের দায়িত্বে। পেছন থেকে তারা চালাবে। পোড় খাওয়া অফিসার সব। রাস্তায় লরির থেকে ঘুষ আর বালি কিম্বা গাছের চুরি থেকে টাকা কামানো নিয়ে মাথা ঘামিয়ে মাথা নষ্ট করেনি। তাদের পেছনে থাকবে বিপুল বড় কমান্ড ইউনিট। যারা রণনীতি ও রণকৌশল বানাবে। সামলাবেন কীভাবে?
একদিন সকলেই বুঝে যাবে অন্যজন আছে। একদিন সকলেই জেনে যাবে ব্যবহার করা  হচ্ছে। একদিন বয়সের চামড়া ঢলে যাবে। ছোট চোখটা আরো ছোট হয়ে লুকিয়ে পবে চামড়ার কোটরে। হনুগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে আসবে। হাঁটুতে টান লাগবে। ধীরে ধীরে চলতে হবে। ঠোঁটগুলো আরো পুরু হয়ে বেরিয়ে আসবে নিগ্রিটো মুখের ছাঁচ। সেদিন পাশে কে থাকবে বিতস্তা? কে তখনো চোখের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হবে? মনে পড়ে, তোমার পাশে তোমাকে না ছুঁয়ে কত দীর্ঘদিন কাটিয়েছি? শুধু তোমার পাশে  হেঁটে যাবার ভালোলাগায়? তোমার রণনীতি ও রণকৌশল শুধু তোমাকেই ভিখিরি  করে দেয়।
- যত বুদ্ধি বাড়বে তত বোধ তাকে বলবে তোমার সম্প্রসারণের অর্থ অন্যত্র  সঙ্কোচন অন্যের জায়গা তুমি কমিয়ে দিচ্ছ। এ তোমার কিসের খিদে? অন্য প্রাণ কি তোমারই মতো একই জীবনের শর্তে পৃথিবীতে আসেনি?
- তবু তো তুমি সাম্রাজ্য বাড়িয়েছিলে।
- না, আমি নিজেকে সম্প্রসারণ করেছিলাম।
- কলিঙ্গ জ্বালিয়ে? ধ্বংস করে? হত্যার বিস্তীর্ণ স্তুপের উপরে তোমার সাম্রাজ্যের  সৌধ অশোক!
- নিঃসঙ্গতার ফসল সাম্রাজ্য। সবার সাম্রাজ্যই এক রাস্তা ধরে আসে।


(ক্রমশঃ)

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন